প্রতীক্ষার শেষ দিনে

ভাঙ্গা মন (নভেম্বর ২০১৯)

সাবিত মুনতাহির
  • ৫৮৪


জীবনটা যেন চলছিল একাকী নিজের মতো করে।পৃথিবীতে সত্যিই ভালবাসা বলতে কিছু আছে তা দীপু একদমই বিশ্বাস করত না।সারাক্ষণ শুধু লেখাপড়া,খেলাধুলা আর বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে থাকতো ছেলেটা।সে জানতো না দুটি হৃদয়ের অনুভবে পবিত্র ভালোবাসার সৃষ্টি হতে পারে।

দীপু ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।লেখাপড়ায় বেশ ভালো।তার স্কুল জীবন কেটেছে জেলা শহর থেকে খানিকটা দূরে ছোট্ট একটি গ্রামে।মেধাবী ছাত্র,সাবলীল কথাবার্তা আর মার্জিত আচার আচরণের জন্য সবাই থাকে ভালোবাসতো।পরিবারের একমাত্র ছেলে হিসেবে হিসেবেও পরিবারে ছিল তার বেশ আধিপত্য।
স্কুল জীবনে অনেকেই দীপুকে প্রেম নিবেদন করেছে কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি,সবাইকে দিপু প্রত্যাখ্যান করেছে। এস.এস.সি. পরীক্ষায় স্কুলের মধ্যে সেরা রেজাল্ট করে বিভাগীয় শহরে পা রাখে দীপু । সেখানে শুরু হয় তার নতুন জীবন।

আজ দীপুর দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে।সকাল ৯টা বাজে। বৃষ্টির কারণে হালকা ঠান্ডা লাগছে।দীপু এখনো ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ মিতুর ফোনে ঘুম ভাঙলো।
ফোনের ওপাশ থেকে মিতু বলছে,কিরে তোর ঘুম এখনও ভাঙ্গেনি?
এত সকালে ফোন দিলি কেন?জানিসতো আমি সকালে একটু বেশি ঘুমোই।দিলি তো ঘুমের বারোটা বাজিয়ে।
মিতু বলল,দশটায় রেজাল্ট বের হবে সে খেয়াল কি তোর আছে?তুই এখনি ক্যাম্পাসে যা।
তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে ক্যাম্পাসে গেল দীপু।অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর রেজাল্ট বের হলো।দীপু ডিপার্টমেন্টে ১ম হয়েছে।সে আজ বেশ খুশি।

এদিকে আবার পথশিশুদের জন্য কাজ করে দীপু।তার কিছু সিনিয়র ভাই আর কিছু বন্ধুরা মিলে পথশিশুদের জন্য একটা স্কুলও গড়ে তুলেছে।স্কুলটি রেলস্টেশনের পুরনো একটি সমিতি ঘরে তৈরি করা হয়েছে।স্কুলের নাম দেয়া হয়েছে "প্রত্যাশা"।শুধু স্কুলই নয় তারা সবাই মিলে ক্যাম্পাস থেকে টাকা সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে ১দিন স্টেশনের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ১বেলা খাবারের ব্যবস্থাও করে থাকে।
আজ বিকেলে প্রত্যাশাতে ক্লাস নিতে হবে। বিকেল ৪টা বাজে।সবাই প্রত্যাশাতে উপস্থিত।আজ স্কুলে নতুন একজন এসেছেন।উনি অবশ্য তাদের পরিচিত কেউ নন।এক বড় ভাইয়ের সামান্য পরিচিত এক ছোট বোন।প্রত্যাশার সকলের সাথেই মেয়েটার পরিচয় পর্ব শেষ।শুধুমাত্র দীপু ছাড়া।দীপু আগে থেকেই একটু এমন,কারো সাথে নিজে গিয়ে পরিচিত হয় না।খানিকটা ইগো আছে বলতে হবে। দীপু বাচ্চাদের ক্লাস নিচ্ছে।মেয়েটা ভাবছে ক্লাস শেষ করেই হয়তো ওর সাথে কথা বলবে দীপু। কিন্তু না,ক্লাস শেষ করেই দীপু বাচ্চাদের সাথে ছবি আঁকা আঁকি নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলো।মেয়েটা বুঝতে পারছিল দীপু তাকে একটুও পাত্তা দিচ্ছে।
বেশ রাগ নিয়েই দীপুর কাছে গেল সে।
Excuse me.........!!
দীপু: জ্বি বলুন।
আমি অনু আর আপনি ?
দীপু : আমি দীপু।
অনু বলল,তো কিসে পড়ছেন ?
দীপু :ইঞ্জিনিয়ারিং।
অনু :আর আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ার।
দীপু :পিচ্চি।
অনু:একটু রেগে,কি বললেন ?
দীপু:বললাম, ভালো।
অনু :আচ্ছা আপনি এমন কেন?
দীপু :কেমন?
অনু: অনেকটা সরল অংকের মত।দেখতে মনে হয় খুব সহজ কিন্তু ভেতরে অনেক প্যাচ।
দীপু বলল,ঠিক ধরেছেন কিন্তু আপনার থিওরিটায় একটু ভুল আছে।সরল অংক দেখতে যতটা কঠিন মনে হয় বাস্তবে কিন্তু তা না,একবার বুঝে গেলে খুবই সহজ আর যদি না বুঝেন তাহলে সারা জীবনের ফল মেলাতে পারবেন না। তাই আগে বুঝতে শিখুন।
অনু হেসে বলল,আমি কিন্তু ছোট থেকেই সরল অংক খুব ভালো বুঝি। বলতে পারেন অংকের জাদুকর।
মেয়েটার হাসিটা অত্যাধিক সুন্দর।মেয়েদের হাসি যে এত মায়াবী হতে পারে তা ওর হাসি দেখেই প্রথম অনুধাবন করল দীপু। অসম্ভব মায়ামাখা মুখের হাসিটা।যতটা সুন্দর করে হাসতে পারে,ঠিক ততটা যত্ন করে ভালোবাসতে পারবে হয়তো।

বাসায় ফিরে দীপু শুধু বারবার ঐ মেয়েটার কথাই ভাবছে।হঠাৎ যেন ছেলেটা কেমন হয়ে গেল।এর আগে তো কখনো এমন হয়নি।বারবার নিজেকে প্রশ্ন করছে কেন শুধু ঐ মেয়েটার কথাই মনে পড়ছে.!!
এদিকে অনুরও একই অবস্থা।ফেসবুকে অনেক খোজাখুজি করে দীপুকে খুঁজে বের করে,আর রিকুয়েস্টও পাঠিয়ে দেয়।দীপু অনুর রিকুয়েস্ট দেখে রীতিমত অবাক।
রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার একটু পরেই অনুর মেসেজ.....
চিনতে পেরেছেন??
হ্যা,অবশ্যই।অংকের জাদুকর।ঠিক ধরেছি তো?
অনু বলল,হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন।তো কি করছেন?
শুয়ে শুয়ে ভাবছি..!
এভাবে মেসেজে কথা শুরু হতে থাকে,প্রথম দিনেই সারারাত কথা চলে।
দীপু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ।সবকিছুই যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে । সারাক্ষন অনুর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে,আর অনুর সাথে যতই কথা বলছে ততই তার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
তবে কি অনু কে সে .............................
না... না... না...এ হতেই পারে না।এত সহজেই কাউকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।তোমাকে দুর্বল হলে চলবে না দীপু ! বি স্ট্রং !!এসব বলে নিজেকে কন্ট্রোল করছে দীপু ।
একদিন পর আবারও প্রত্যাশাতে দেখা হলো অনুর সাথে।দীপু আজকে অনেকটা দেরি করে প্রত্যাশাতে গেলো।অনুর মুখে অপেক্ষার প্রখর ছাপ প্রকাশিত হচ্ছিলো।বেপারটা দীপু ঠিকই বুঝতে পারে।প্রতিদিনের মত আজও ক্লাস শেষ হলো।
ক্লাস শেষে অনু বলল,আপনি কি চা খান?
দীপু : জ্বি,রং চা।আদা আর লেবু দিয়ে হলে ভালো হয়। কিন্তু কেন?
অনু :আমিও খুব পছন্দ করি তাই।চলেন একসাথে চা খাওয়া যাক ।
দীপু না করতে পারিনি।কথা বলতে বলতে চলে এলো স্টেশনের রহিম চাচার দোকানে।চা খেতে খেতে আরো অনেক বিষয় নিয়ে কথা হলো।অর্ধেক চা শেষ করেই দীপু চায়ের বিল দিতে গেল।এ ফাঁকে অনু দুজনের চায়ের কাপ পরিবর্তন করে নেয়।আর এ বিষয়টা দীপু ফিরে এসে বুঝতে পারে।এ ঘটনা দীপুকে আরও অনেক বেশি দুর্বল করে দেয়।বাসায় ফিরে শুধু অনুর কথাই ভাবতে থাকে দীপু। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।বারবার এমন হচ্ছে কেন? তাহলে কি অনুকে সে ভালবাসে?এমন হাজারও প্রশ্ন অস্থির করে দিচ্ছিল দীপুকে।
আর ঐদিকে অনু,সারাক্ষণই দীপুর মেসেজের অপেক্ষায় থাকে।দীপু কখন ফ্রি হবে,কখন মেসেজ করবে,কখন কথা হবে। অনু যখন পড়তে বসে তখনও বাসার সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বইয়ের বাজে ফোন রেখে মেসেজে কথা বলে আর অংক কষতে গিয়েও দীপুর ছবি আঁকে।মাঝেমধ্যে অনুর মা তার ফোন নিয়ে গেলে ফোন চুরি করে হলেও সারারাত দীপুর সাথে কথা বলে।
দীপু জানে অনু তাকে ভালোবাসে আর অনুও জানে দীপু তাকে ভালোবাসে ।কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছে না।

আজ "পহেলা ফাল্গুন"।ষড়ঋতুর বসন্তের প্রথম দিন।অনু বায়না ধরেছে তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে।বাইরে হালকা বৃষ্টি পড়ছে।এই গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতেই অনুর জন্য অপেক্ষা করছে দীপু।একটু পরেই রিক্সা নিয়ে এসেছে অনু।
অনু :সরি,সরি।বাসা থেকে অনেক ঝামেলা করে বের হতে হয়েছে,তাই দেরি হয়ে গেল।আর ভিজতে হবে না।এবার রিক্সায় এসো।
দীপু :আচ্ছা,আমরা কোথায় যাচ্ছি তাই বল।
অনু :এই রিক্সা আজ সারা দিনের জন্য ভাড়া করেছি।পুরো শহর ঘুরবো তোমার সাথে।তোমার কোন সমস্যা নেই তো?
দীপু :না।
অনু :আচ্ছা দীপু,তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?
দীপু :কই না তো,
অনু :তোমার চোখ বলছে তুমি মিথ্যে বলছো।আমি তোমার চোখ স্পষ্ট পড়তে পারছি।
দীপু কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
অনু হঠাৎ দীপুর হাত দুটো আঁকড়ে ধরেছে।
অনু :দীপু প্রথম যেদিন তোমার সাথে আমার দেখা হয়,সেদিন থেকে তোমাকে ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারছিনা।জানিনা আমার কি হয়েছে,তবে এর নাম যদি ভালোবাসা হয় তবে আমি তোমাকে ভালবাসি দীপু।তোমার হাতটা ধরেই বাকিটা পথ পাড়ি দিতে চাই।
দীপু :দেখো অনু এটা হয়তো কখনও সম্ভব নয়।
অনু :কেন সম্ভব নয় দীপু ?
দিপু :তুমি আর আমি একই পৃথিবীর ভিন্ন গ্রহের দুটি মানুষ।সেটা নিশ্চয়ই তোমার জানা।
অনু:কি বলতে চাও তুমি?
দীপু :বলতে চাই,আমি মুসলিম আর তুমি হিন্দু।আমাদের সমাজ ব্যবস্তা এটা কখনো মেনে নিবে না।তাই এটা কখনো সম্ভব নয়।
অনু : আজ আমরা ভিন্নধর্মী দুটি মানুষ বলেই কি আমাদের ভালবাসার অধিকার নেই ?
দীপু :আছে।কিন্তু...........
অনু :আমি আর কোনো কিন্তু শুনতে চাচ্ছি না।আমি কি তাহলে ভেবে নিবো যে তুমি আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছো ??
দীপু অবাক দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এই প্রথম তার জীবনে স্থায়ীভাবে কেউ ঠাই করে নিয়েছে।
অনু :কি ভাবছো দীপু ?
দীপু :এই যে তোমাকেও "ভালোবাসি"।
এভাবেই শুরু হয়ে অন্যরকম একটি ভালবাসার গল্প।

যতই সময় যাচ্ছে তাদের ভালোবাসাটা যেন ততই গভীর হচ্ছে।ক্যাম্পাসের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অনুর সাথে দেখা করা আর বাসা থেকে প্রাইভেটের নাম করে দীপুর সাথে ঘুরতে যাওয়া আজকাল ঘনঘন হচ্ছে।বিকেল হলেই স্টেশনে চায়ের বেঞ্চিতে বসে চা ভাগাভাগি করে খাওয়া,ভরদুপুরেও রেল লাইন দিয়ে হাতে হাত রেখে গন্তব্যহীন পথে হাঁটা আর সন্ধ্যে হলেই ব্যস্ত রাস্তার অলিগলি দিয়ে ডানা ছাড়া পাখির মত ঘুরে বেড়ানো দৈনন্দিন অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দীপুর বাসায় তার প্রিয় দুটি পাখি ছিল। রিকু আর পিকু।হঠাৎ একদিন বাসায় ফিরে দেখে রিংকু মারা গেছে আর পিকু প্রিয়জন হারানোর কষ্টে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে।অবশ্য এই ঘটনার জন্য দীপু অনেকটাই দায়ী।কারণ অনুকে পেয়ে দীপু রিকু আর পিকুর প্রতি যত্ন নিতে একেবারেই ভুলে গিয়েছিল।এতে খানিকটা কষ্ট পায় দীপু,কিন্তু অনুর সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নেয়।এর পরদিনই পিকুকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে দেয় দীপু।

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারি।অনুর জন্মদিন ।প্রিয়জনের জন্মদিনটা প্রত্যাশায় পথশিশুদের নিয়ে উৎযাপন করবে দীপু।বাচ্চারা নতুন জামা কাপড় পড়ে রংবেরঙের বেলুন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর মাঝখানে একটা সাজানো টেবিলে কেক রাখা আছে।
অনু আসার সাথে সাথেই সবাই একসাথে অনুকে জন্মদিনের অভিনন্দন জানায়।আর এ সবকিছুই অনুর অজান্তেই করেছে দীপু।এই প্রথম আজ অনুকে এত হাসিখুশি দেখাচ্ছে।অনুকে খুশি করতে পেরে দীপুও আজ অনেক,অনেক বেশি খুশি।

এভাবে চলতে থাকে দীপু আর অনুর ভালোবাসা। তাদের ভালোবাসাটা এতটাই গভীর হয় যেন কেউ কারো সাথে একদিন কথা না বলে,দেখা না করে, থাকতে পারে না।দীপু কখনো রাগ করলে অনু কান ধরে ছবি দিয়ে মেসেজে sorry বলে আর অনু রাগ করলে তো দীপু অনুর বাসার নিচে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু হঠাৎ কেন জানি অনু দীপুকে একটু এড়িয়ে চলতে শুরু করে। দু'তিন দিন যাবত দেখা করছে না আর আগের মত কথাও বলছে না।বিষয়টা দীপুকে বেশ চিন্তায় ফেলে দেয়। দুদিন পর অনু দীপুকে ফোন দিয়ে বলে দীপু চলো শহর থেকে দূরে কোথাও ঘুরতে যাই।
এর পরদিন সকাল দশটায় দুজনে রওনা হয় শহর থেকে অনেকটা দূরে রূপনগরের উদ্দেশ্যে।ছোট থেকেই অনু শহরে বড় হয়েছে।রূপনগরের অপরূপ সৌন্দর্য আর মনমুগ্ধকর দৃশ্য অনুকে মুগ্ধ করে।গ্রামের ছেলে মেয়েদের সাথে খেলাধুলা আর আড্ডা দেয়ার মাধ্যমে পুরোটা দিন কাটে।বিকেল ঘনিয়ে এসেছে,এবার ফেরার পালা।বাসস্টপে যাওয়ার জন্য দুজনেই হাতে হাত রেখে হাঁটছে।
বাসে বসে দীপুর বুকে মাথা রেখে অনু বললো, "আমাকে মনে রাখবে তো সারাজীবন"?
দীপু বলল,হ্যাঁ রাখব ঠিক শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।
অনু:আর যদি কখনো হারিয়ে যাই তখন কি করবে তুমি?
দীপু:আমার জীবন থেকে তোমাকে কখনো হারাতেই দেবো না ।
অনু বলল, আমার মাথাটা অনেক ব্যথা করছে দীপু। মাথাটায় একটু হাত বুলিয়ে দাও প্লিজ।আর হে তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি বাসায় গিয়ে তারপর খুলবে।এর আগে কখনো খোলার চেষ্টা করবে না।
দু'ঘণ্টা পর বাস শহরে পৌঁছালো।বাস থেকে নেমেই অনুকে রিক্সা করে দিল দীপু।
রিক্সার পিছনে ফাঁক দিয়ে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর অনু বারবার পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে।আর দীপুও দাঁড়িয়ে অনুর পথের দিকেই তাকিয়ে আছে।রাস্তায় কতবার গিফট বক্সটা খুলতে ইচ্ছে হয়েছে কিন্তু অনুর কথা যে রাখতেই হবে।এতপর বাসায় ফিরেই দীপু সবার আগে গিফট বক্সটা খুলে দেখল এতে শুধুমাত্র একটা "চিঠি" রাখা আছে।

"দীপু"......
"হয়তো এটিই তোমার সাথে আমার শেষ দেখা।আর এটাই তোমার কাছে আমার লেখা শেষ চিঠি। জানি চিঠিটা পড়ার পর হয়তো আমাকে ঘৃণা করতে ইচ্ছে হবে।কোন একজনের ভালোবাসার অপমানের প্রতিশোধ নিতেই আমি তোমাকে ভালবেসেছি।আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে কেউ একজন ভালবাসার দাবি নিয়ে তোমার কাছে এসেছিল,ঠিক তখন তুমি তোমার সমস্ত ইগো আর অহংকার দিয়ে তার ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে।তাকে সেদিন অনেক অপমান করেছিলে।হা, আমি সেই নাতাশার বেস্ট ফ্রেন্ড। ভালোবাসার এই খেলায় তোমাকে হারাতে গিয়ে তোমার ভালোবাসার কাছেই আমি হেরে গেলাম।তোমাকে আর ঠকাতে পারব না বলেই আমি আর মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় টা করতে পারলাম না।অন্য কারো জীবনের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে আমার জীবন।যদি কখনো পারো তবে আমাকে ক্ষমা করে দিও"।

তারপর এই শহরে আর কখনো অনুর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
দীপুর বিশ্বাস অনু তার কাছে একদিন ফিরেবেই।প্রিয় মুখটা শেষ বারের মত ১ বার দেখার প্রতীক্ষা নিয়েই বেঁচে আছে সে। এর মধ্যেই দীপুর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ হয়ে যায়।তার কিছুদিন পরেই স্কলারশিপ নিয়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়াতে।কিন্তু প্রতিবছরই ২৮শে ফেব্রুয়ারী তে দেশে আসে দীপু।পথ শিশুদের নিয়ে অনুর জন্মদিন পালন করে থাকে।অনুর ভালোবাসার স্মৃতি বহন করেই কাটিয়ে দেয় দশটি বছর।

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারি।আজও দীপু দেশে ফিরেছে।পথ শিশুদের নিয়ে জন্মদিন পালিত হবে।বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা কাপড়,অনেক রকম খাবার আর চকলেট এনেছে।দীপু বাচ্চাদের মধ্যে চকলেট দিচ্ছিলো তখন হঠাৎ একটি ছেলের দিকে চোখ পরে,যাকে দেখে আসলে পথশিশু মনে হয় না। দীপু ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল,তুমি কে? কার সাথে এসেছ?
ছেলেটা বললো,আমার মায়ের সাথে।এই যে আমার মা। পিছনে ফিরে দীপু অনুকে দেখতে পায়। বেশ চমকে যায় দীপু। ১০ বছর পর দেখা,কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
অনু : কেমন আছে দীপু?
দীপু : ভালো।অনেক বেশি ভালো আছি।
অনু : আমি কেমন আছি জানতে চাইলে না ?
দীপু : জানি ভালই আছো,তাই জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করিনি।
এ তোমার ছেলে ?? বেশ সুন্দর হয়েছে। নাম কি তোমার বাবা ?
ছেলে : দীপু।
অনু : এখনও কি আমায় ভালোবাসো?
দীপু : সেদিন বলেছিলাম আমার জীবন থেকে তোমাকে কখনো হারাতে দেবো না আর এও বলেছিলাম ঠিক শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত মনে রাখবো।আমি মনে হয় আমার কথা রাখতে পেরেছি।ভেবেছিলাম এ জীবনে হয়তো তোমার সাথে আর কখনো দেখা হবে না।কিন্তু অপ্রত্যাশিত কোন কারনে আজ দেখা হয়ে গেছে।যাহোক তুমি তো সুখে আছো,এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ারও ছিল না।
ভালো থেকো।
আমাকে এখনই যেতে হবে ।সন্ধ্যায় ফ্লাইট।

সমাপ্ত.......

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অনুপম,মনোমুগ্ধকর I
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
Hasan ibn Nazrul বাহ্ মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়লাম পুরোটা। ভাল লেগেছে। ভোটসহ শুভকামনা।
Ramim morol সত্যিই অসাধারন একটি ভালবাসার গল্প। প্রতি ভালবাসার গল্পই যদি এমন নিঃস্বার্থ হতো...!!ভাল থাকুক দীপু আর বেঁচে থাকুক দীপুর ভালবাসা।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

প্রকৃতি বড়ই জটিলতায় পরিপূর্ণ। সময়ের স্রোতধারায় প্রকৃতি অনেক কিছু বয়ে আনে আর শেখায় কঠিন বাস্তবতা। ভালোবাসার রঙ হয়তো বদলায়,নয়তো না। কিন্তু কিছু ভালোবাসার রং কখনোই বদলায় না আর বদলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। প্রিয় মানুষটি কখনো ফিরবে না জেনেও দূর থেকেও ভালোবাসা যায়। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্র দীপু ,কখনোই প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাসী না।তার জীবনেও প্রেম আসতে পারে তা সে নিজেও কখনো ভাবতে পারিনি। নিজের অজান্তেই হঠাৎ করে জীবনটা জড়িয়ে যায় অনুর সাথে। ভিন্নধর্মী দুটি মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় গভীর ভালোবাসা। কিন্তু বাস্তবতার নিঠুর খেলায় দীপুর জীবন থেকে হঠাৎ অনু চিরতরে হারিয়ে যায়।অনেক খোঁজাখুঁজি করেও অনুকে আর পাওয়া যায় নি। এখানেই কি শেষ....!! না। দীপু শুধু অনুর ভালোবাসার স্মৃতি নিয়ে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করে। ভাঙ্গা মন,ক্ষত বিক্ষত হৃদয় নিয়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। অনুর ভালোবাসার স্মৃতিটা বহন করেই কেটে যায় পুরোটা জীবন।দীপুর শেষ ইচ্ছে,বাকি জীবনে ১ বার হলেও প্রিয় মুখটা দেখা। সে ভেবেছিল অনুর সাথে হয়তো এ জীবনে আর কখনই দেখা হবে না। কিন্তু কমলালেবুর এই পৃথিবীতে ঠিক ১০ বছর পর আবার দেখা হয়ে যায়।

১১ অক্টোবর - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪