অপূর্ণ ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার গল্প (ফেব্রুয়ারী ২০২০)

Neerob
  • ৯৪
বিঃদ্রঃ বোঝার সুবিধার্থে প্রমিত বাংলা ভাষায় কথোপকথন উপস্থাপন করা হল।
রক্তিম তার ২ বন্ধু জহির আর অমিতকে নিয়ে রাঙামাটি এসেছে তাদের রিসার্চের ব্যাপারে কিছু ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করতে। তারা ৩জন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এসেই জহির আর অমিত ঘুরতে বেরোলো আর রক্তিম তার দায়িত্বস্বরূপ আদিবাসী পল্লীতে চলে গেল। রক্তিম সবকিছু গভীরভাবে। দেখছিল, এমন ঘটনা ওর জীবনে সামনাসামনি এই প্রথমবার দেখা। নরম সোফায় বসে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছে, তাতে তেমন কিছুই মনে হয়নি। কিন্তু আজ এখানে এসে মনে হচ্ছিল ওর জীবনের সব পাওয়াগুলো ছিল বিলাসিতা।
সবার হুড়োহুড়ির পাশে একটা ১৮/১৯ বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রক্তিমের চোখ আটকে গেল। মোটেই গোরা নয়, উজ্জল শ্যামলা বলা যায়। তবুও কি যেন জাদু আছে ওর চোখে-মুখে। ঠোঁট জোড়া যেন মরা নদীর মত। রক্তিমের মনে হল, ও যদি একটিবার ছুঁয়ে দেয় ওই ঠোঁটে তবে সেখানে জোয়ার আসবে। একবার মনে হল গিয়ে কথা বলবে, কিন্তু গেল না। একটু ইতস্তত করে মেয়েটা মাথা নিচু করে চলে গেল। যাওয়ার আগে রক্তিম স্পষ্ট দেখতে পেল, দুচোখ থেকে মুক্তার মত দুফোটা শিশির বিন্দু ঝরে পড়ল।
কিছু ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করে রক্তিম হোটেলে ফিরে গেল। কিন্তু মেয়েটার মুখ ওর চোখে আঠার মতো লেগে আছে। জহির আর অমিত ফিরে রক্তিমকে অন্যমনষ্ক দেখে কি হয়েছে জানতে চাইলেও রক্তিম এড়িয়ে গেল। পরদিন তিনজন গেল থিসিসের কাজে, রক্তিম মনে মনে অনেক খুঁজল মেয়েটাকে, পেল না, অথচ পরদিনই ওদের ফিরতে হবে।
পরদিন দুপুরে রক্তিম পাশে একটা টিলা মতো জায়গায় ঘুরতে গেল একা। হঠাৎ দেখল মেয়েটা শাক তুলছে। রক্তিম পাশে গিয়ে দাড়াল, বলল, "আপনার নাম কি?" মেয়েটা চমকে গিয়ে ফিসফিস করে বলল, "আভা"। রক্তিম বলল, "আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই। আমি এই জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি, কথা বলেছি, চলাফেরা করেছি৷ কিন্তু আপনার সাথে দেখা হয়ে মনে হচ্ছে, আমার সমস্ত পৃথিবী যেন এখানেই। সময় যেন স্থির হয়ে গেছে, ঘড়ির কাঁটা বশ হয়ে গেছে এক মায়াবতীর মায়াজালে। আর সেই মায়াবতী আপনি।" “আমি?” আভার চোখ থই থই করে উঠল। যেন মুষলধারে বৃষ্টি নামবে। রক্তিম আভার চোখের দিকে চেয়ে বলল, "আমি তোমাকে ভালবাসি"। কিছুসময় পরস্পরের দিকে তাকিয়ে কেটে গেল। নীরবতা ভেঙে রক্তিম বলল, "আমি আগামী সপ্তাহে এসে তোমায় নিয়ে যাব"I"তোমার বাবা-মা, সমাজ কি আমায় মেনে নেবে? আমি তো আদিবাসী ", আভা অসহায়ের মতো বলল। "তোমার বড় পরিচয় তুমি একজন মানুষ। আমি আছি, তুমি ভরসা রাখো", রক্তিম আশ্বস্ত করল। তারপর দুজনে একসাথে বসল গাছের ছায়ায়। কথায় কথায় রক্তিম জানতে পারলো, আভার বাবা মা নেই, এখন সে মামার সংসারে কোনোরকমে এক-আধবেলা খেয়ে টিকে আছে। আভা যখন জানল রক্তিম। বড়লোকের সন্তান, তখন তার সংশয় আরও বেড়ে গেল। একসময় কথার ফাঁকে রক্তিম বলল, “আমি তোমার হাতটা একটু ধরি আভা?” কথা না বলে আভা তার হাতটা বাড়িয়ে দিল। কিছু মুহূর্ত এভাবেই কেটে গেল। একটা সময় আভা রক্তিমের ঘাড়ে মাথা রেখে বলল, “আমাকে নিয়ে যাবে তো? এই নরকে যে আর থাকতে পারিনা। মামাকেও কিছু বলতে পারিনা। মামি সবসময় মামাকে উস্কায় আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে। ভিড়ের মধ্যে যখন তুমি আমাকে দেখছিলে, আমি যেন তোমার চোখে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার পা যে বাঁধা, চাইলেও তো । তোমাকে বলতে পারিনা।” রক্তিম অভয় দিয়ে বলল, “তুমি একটুও চিন্তা কোরো না। আমি তোমাকে আর এখানে রাখবো না। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমি বাবা মাকে রাজি করিয়ে তোমাকে নিয়ে যাবো।”
২ দিন পর
সকালের খাবার টেবিলে বাবা, ছেলে। মা খাবার গুছিয়ে দিচ্ছেন। রক্তিম বলল, "একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম তোমাদের"। বাবা মা মনোযােগ দিলেন, ছেলে বলল, "আমি ওখানে একটা মেয়েকে পছন্দ মানে ভালবেসে ফেলেছি"। মা চেয়ার টেনে পাশে বসে ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বললেন, "তাই নাকি? এত দিনে আমার ছেলে বড়

হয়েছে। তা, মেয়েটা কেমন দেখতে? কি করে?" বাবা বিরক্ত হয়ে বললেন, "আগে শুনি তো সব। বল বাবা তুমি"। রক্তিম বলল, "ভালবাসি মানে বিয়ে করতে চাই। তোমাদের হয়তো খারাপ লাগবে না।" বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, "মেয়েটার বাড়ি কোথায়? বাবা কি করে?" রক্তিম বলল, "বাবা মা নেই, রাঙামাটিতে থাকে, আদিবাসী পল্লীতে" | "কি?? আদিবাসী মেয়ে"! বাবা মা যেন পাথর হয়ে গেলেন। বাবা রাগে উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে মাও চলে গেলেন। রক্তিম বসে রইল। সারাটা সকাল ছেলের সাথে বাবা মায়ের কথা হল না। দুপুরে মা শুধু খেতে ডাকলেন। যে ভাবে এসেছিল, তেমনি নিঃশব্দে খেয়ে যার যার ঘরে চলে গেল। এভাবেই সেদিন গেল। পরদিন রক্তিম বাবা মাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু তারা অনড়। কোনোভাবেই তারা একটা আদিবাসী মেয়েকে তাদের পুত্রবধূ করতে পারবেন না, তাহলে তারা সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না। রক্তিম ভাবেনি তার বাবা-মা এমন বলতে পারেন। অনেক বাকবিতন্ডা, মনোমালিন্য চলল কয়েকদিন তাদের মধ্যে। এরমধ্যে রিসার্চ পেপার জমা দিয়েছে, বন্ধুদের আভার কথা জানিয়েছে রক্তিম, কিন্তু তারাও মানা করেছে ওকে।
৬দিন পর
রক্তিম আবার গেল রাঙামাটি, ওর ভালবাসাকে জয় করতে। সেখানে গিয়ে জানলো আভার মামা একজন আদিবাসী মধ্যবয়স্ক লোকের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছেন। সেই লোকের আর্থিক অবস্থা আভার মামার চেয়ে কিঞ্চিৎ ভাল। আভা পেট ভরে দুইবেলা খেতে পারবে দেখে মামা বিয়েতে রাজি হয়েছেন। রক্তিম আভার মামাকে অনেক বোঝালো, অনেক অনুরোধ করল, অনেক অনুনয় বিনয় করল। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। কারণ হিসেবে বললেন, তিনি রক্তিমকে চেনেন না, এসব বড়লোকের ছেলেদের আবার স্বভাব-চরিত্র ভালো হয়না। কোনো দুষ্ট উদ্দেশ্য থাকতে পারে ভেবে তিনি নাকচ করে দিলেন আর রক্তিমকে জানালেন, এ সম্ভব নয়, সমাজ তাদের কখনোই মেনে নেবে না।
ব্যর্থ রক্তিম ফিরে আসতে আসতে একবার শুধু পেছনে তাকিয়েছিলো, দেখেছিল একজোড়া করুণ আকুল চোখ শূন্য দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে, সেই চাহনিতে জীবনের কোনো স্পন্দন রক্তিম দেখতে পায়নি।
সপ্তাহখানেক পর...
সকালে চা খেতে খেতে পেপার পড়ছিল রক্তিম বিষন্নমনে। রাঙামাটি থেকে ফেরার পর বাবা মা, বন্ধুরা চেষ্টা করেছে ওর মন ভালো করতে, কিন্তু বিষন্নতা কাটেনি। মা মেয়ে দেখতে শুরু করেছেন রক্তিমকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। তার ধারণা বিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। রক্তিম সব দেখে চুপচাপ করে, কিছুই বলে না। জহির অমিত প্রায়ই আসে, বাইরে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু রক্তিম যেন কেমন নিজের মধ্যে গুটিয়ে গিয়েছে। পড়তে পড়তে হঠাৎ কোণার দিকে ছোট্ট একটা খবরে ওর চোখ আটকে গেল। খবরটা হল, 'রাঙামাটিতে আদিবাসী পল্লীতে আভা নামে ১৯ বছরের একটা মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, কারণ যতদূর জানা গিয়েছে, তার অমতে বিয়ে দেওয়ার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।' খবরটা পড়ে রক্তিম স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। হঠাৎ করে সব রাগ ক্ষোভ কোথায় যেন চলে গেল। মনে হল, সেদিন যদি আরেকটু সাহস করে আভাকে নিয়ে চলে আসত তবে হয়তো। দুজনের একটা ছোট্ট নীড় থাকতে পারত। কিন্তু আর তেমন হল না। তার ছোট্ট ভালবাসা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটল, কিন্তু সে কথা কেউ কোনোদিন জানবে না, সেই না পাওয়ার বেদনা কেউ কোনোদিন বুঝবে না। তার ভালবাসাটা সত্যি ছিল, কিন্তু তা হয়তো ভুল সময়ে কাছে এসেছে বলেই এই পরিণতি। মানুষ দুইটা সঠিক ছিল, ভালবাসাটাও সত্যি ছিল, শুধুমাত্র ভুল সময়ে দেখা হওয়ার কারণে হয়তো আজ রক্তিমকে আভার থেকে। আলাদা হতে হল। রক্তিম মনে মনে বলল, "আভা, অন্য কোনো জন্মে সঠিক সময়ে আমি তোমাকে খুঁজে নেব।"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত গল্পটি পড়ে ভাল লাগল । অনেক শুভকামনা রইল ।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
ফয়জুল মহী অনন্য লিখনী । শুভেচ্ছা সতত ।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
শাওন ইসলাম আমার লেখা দেখার আমন্ত্রণ সবাইকে
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
শাওন ইসলাম ভালো অভিজ্ঞতা
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
Hasan ibn Nazrul খুবই ভাল লাগল আপনার লেখা পড়ে। মানুষের ভীড়ে আসল মানুষ পাওয়া কঠিন। আবার পেলেও তা হাসিল করা কঠিন। বাস্তবতা সত্যিই কঠিন। তবে আপনি ঘটনাটিতে এত দ্রুত শেষ করলেন, মনে হল শুরু করলেন শেষ করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্যে
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
Supti Biswas হাহাকার জাগল বুকে। অসাধারণ সাবলীল লেখা। ভোট রইল।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
গোলাপ মিয়া অসাধারণ লাগল প্রিয়। ভোট রইল। আমার গল্প কবিতায় আপনাকে আমন্ত্রণ।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ব্যতিক্রমী গল্প, ভালো লাগবে আশা করি।

২৩ সেপ্টেম্বর - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪