একটি বিয়ে

একটি বিয়ে (আগষ্ট ২০১৯)

Abdullahil Kafi
  • ৩০
  • ১৭৬
চৌধুরী সাহেবের একমাত্র নাতনী নাবিলা। সবে মাত্র আঠারো তে পা দিয়েছে সে। দেখতে মাশাআল্লাহ পরীর মতন। তাকে দেখে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভিনজগতে হারিয়ে যায়নি এমন পুরুষের সংখা শান্তিপুর গ্রামে নেই বললেই চলে।
বাবা মার মৃত্যুর পর দাদা-দাদির আদরেই বেড়ে উঠে সে। যতোই দিন যাচ্ছে একমাত্র নাতনীকে নিয়ে দাদার চিন্তা ততোই বাড়ছে। এদিকে নাবিলার ছেলেমানুষিপনাও বেড়ে চলেছে। তার চলাফেরা দেখেতো মনেই হয়না যে সে একজন অষ্টাদশী।
চৌধুরী সাহেব গ্রামের নাজেহাল অবস্থা দেখে দ্রুততার সহিত স্বীয় অষ্টাদশী নাতনীর বিয়ে দেওয়ার জন্য সু-পাত্রের সন্ধান করতে লাগলেন। চৌধুরী সাহেবের নাতনী বলে কথা, যেমনতেমন পাত্র হলে তো হবেনা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিন গাঁ পরে এক সু-পাত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। মন্ডল বাড়ির সবুর মন্ডলের ছেলে সুরুজ মন্ডল। শহরের কোনো এক বেসরকারি কোম্পানিতে ভাল বেতনের চাকুরী করে।
বয়স আটাশ বছরের মতো হবে। চৌধুরী সাহেব সব ধরনের খোঁজ-খবর নিয়ে মন্ডল সাহেবের সাথে কথা এক ধরনের পাকা পোক্ত করেই আসেন। এদিকে নাবিলা এই কথা জানতে পেরে খুব কান্নাকাটি করে। চৌধুরী সাহেব অনেক কষ্টে নাতনীকে বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি করায়। বিয়ের কথা শোনার পর থেকে নাবিলার ছেলেমানুষি ভাবটা যেনো দূর হয়ে যায়। ঐদিকে সুরুজ নাবিলার সাথে ভালভাবে পরিচিত হওয়ার জন্য চৌধুরী সাহেবের নিকট থেকে অনুমতি নেয়। পরদিন সুরুজ ও নাবিলা দুজনে দেখা করে। নাবিলাকে দেখেই সুরুজ কল্পনার জগতে হারিয়ে যায়। এমন মায়াবী চেহারা সে এর আগে কখনো দেখেনি। সেইদিন দুজনে দুজনার সাথে ভাব বিনিময় করে, বেশ কিছু সময় গল্প করে পরস্পরকে বুঝতে পারে।
একে অপরকে তাদের পছন্দের কথা জানিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর থেকে প্রতিদিনই তারা দেখা করত। কখনো পুকুরপাড়ে, কখনো নদীর তীরে, আবার কখনো আম বাগানে। কিছুদিন পর তাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয় । আসছে শুক্রবার সুরুজ ও নাবিলার বিয়ে। তাদের মাঝে টেলিফোনে দিনে অন্তত চার বার করে কথা হয়। উভয়ের মাঝে এই অল্প দিনে এক অদ্ভুত ধরনের ভালবাসাও সৃষ্টি হয়ে গেছে।
এদিকে চৌধুরী সাহেব একমাত্র নাতনীর বিয়েতে কি কি আয়োজন করা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত। বিয়ের দু'দিন আগে অর্থাৎ বুধবার চৌধুরী সাহেব তার স্ত্রী ও নাতনী নাবিলাকে নিয়ে বিয়ের শাড়ী ও গহনা কিনতে শহরে যায়। বাড়ি ফেরার সময় পথিমধ্যে রাত হয়ে যায়। চাঁদের মৃদু আলোতে আর গাড়ির হেড লাইটের আলোতে গ্রামের মেঠো পথ ভালভাবেই দেখা যাচ্ছিল। ড্রাইভারও খুব দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল। সুরুজদের গ্রাম হয়েই শান্তিপুরে অর্থাৎ নাবিলাদের গ্রামে যেতে হয়। বাড়িতে অনেক কাজ পড়ে আছে তাই চৌধুরী সাহেব ড্রাইভারকে দ্রুত গতিতেই
চালাতে বললেন তবে একটু সাবধানে, কিছু দূর যাওয়ার পর সুরুজদের গ্রামের একটি সেতুর উপর আকস্মিকভাবে একটি লোক মোটরবাইক চালানো অবস্থায় গাড়ির সামনে এসে সজোরে ধাক্কা খেয়ে সেতু থেকে নিচে পড়ে যায় এবং মোটর বাইকটি তার উপর গিয়ে পড়ে। চৌধুরী সাহেব তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে নিয়ে সেতুর নিচে যায় লোকটিকে উঠিয়ে আনার জন্য। নাবিলা ও তার দাদী টর্চ নিয়ে তাদের পিছে পিছে যায়। চাঁদের হালকা আলোতে লোকটির থেতলে যাওয়া চেহারা ঠিকভাবে বুঝা যাচ্ছিলনা। নাবিলা টর্চের আলো জ্বালাতেই লোকটিকে তারা চিনতে পারল, লোকটি আর কেও নয়, সবুর মন্ডলের ছেলে সুরুজ! যার সাথে পরশু নাবিলার বিয়ে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য দেখে নাবিলার দু'নয়ন অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। চৌধুরী সাহেব অবিলম্বে সুরুজকে গাড়িতে তুলে শহরের হাসপাতালের দিকে রওনা করেন।
হাসপাতালে ভর্তি করেই চৌধুরী সাহেব সুরুজের বাবা সবুর মন্ডলকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
সঙ্গে সঙ্গে সবুর মন্ডল সুরুজের মাকে নিয়ে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হন। চৌধুরী সাহেব মন্ডল সাহেবকে সব কিছু খুলে বলেন। এদিকে নাবিলার কান্না থামানো যাচ্ছেনা। সুরুজের মা, বাবা সবাই কাঁদছে। অতঃপর ক্রন্দনমিশ্রিত একটি রাত অতিবাহিত হয়। চৌধুরী সাহেব ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন, আগামীকাল নাতনীর বিয়ে, নিজের গাড়িতে হবু নাতজামাইয়ের এক্সিডেন্ট- সব মিলিয়ে তিনি এক হতাশায় পড়ে গেলেন। এরই মাঝে ডাক্তার এসে বলে গেলেন সুরুজের পা দুটো নাকি ভয়ানকভাবে ভেঙ্গে গেছে, ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
আবারো কান্নার রোল পড়ে গেল। মন্ডল সাহেব এসে চৌধুরী সাহেবকে বলতে লাগলেন আপনার জন্যই আমার ছেলের আজ এই অবস্থা, এখন আমার ছেলের কাছে কে মেয়ে বিয়ে দিবে! আপনিতো আপনার নাতনীকে যেখানে খুশি বিয়ে দিতে পারবেন। এদিকে সুরুজের জন্য নাবিলার বুক ফেটে যাচ্ছে। ক্রন্দনরত অবস্থায় নাবিলা এসে তার দাদাকে বলল যে সে এই অবস্থাতেই সুরুজকে বিয়ে করতে চায় এবং সেটা বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা দিনেই। এই অল্প দিনেই নাবিলা সুরুজকে খুব গভীরভাবে ভালবেসে ফেলেছে। আজকে তাদের গাড়ি এক্সিডেন্টের জন্যই সুরুজের এই অবস্থা। এই সময় সুরুজের পাশে না থাকলে যে ভালবাসার অবজ্ঞা করা হবে। সব কিছু বিবেচনা করে সে এই অবস্থাতেও সুরুজকে বিয়ে করতে চায়। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে এসে নির্দিষ্ট সময়ে বিয়ের জন্য সবাই প্রস্তুতি নিতে থাকে। সুরুজ নাবিলাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে যে তার এই পঙ্গু জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে যেনো নিজের জীবনটা নষ্ট না করে। কিন্তু নাবিলা মনে মনে ভাবছিল জীবনে ভালবাসা একবারই হয়, যাকে ভালবেসেছি তাকে কিভাবে একলা ছেড়ে দিই। তাই সে সুরুজের কথায় কান দেয়নি। শুক্রবার সকাল থেকেই বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়, সবাই আনন্দ করছিল। আনন্দ ছিলনা শুধু চৌধুরী সাহেব আর মন্ডল সাহেবের মনে।
নাবিলা খুশিমনে সুরুজকে গ্রাহ্য করে নিল।
খুব জাঁকজমকপূর্ণ অথচ একটি নীরব বিয়ের কার্য সম্পন্ন হয়ে গেল।
গ্রামের মানুষ সেদিন দেখেছিল একটি বিয়ে, সে যেনো বিয়ে ছিলনা! ছিল ভালবাসার জন্য সর্গ থেকে নেমে আসা এক দেবীর আত্মবিসর্জন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Abdullahil Kafi ধন্যবাদ
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত ভাল লাগল । শুভকামনা রইল ।
Pipilika অনেক সুন্দর হইছে গল্পটি
কাজী প্রিয়াংকা সিলমী সুন্দর গল্প। আমার গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
নিশ্চয় পড়ব, ধন্যবাদ
Bornil Sopno ভালো লিখেছেন, চলিয়ে যান।
রঙ পেন্সিল সুন্দর থিম। লেখার হাত ভালো। চালিয়ে যান। শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ আপনাকে।
Abdullahil Kafi যারা আমায় ভোট করছেন, যারা আমার গল্পটি পড়ছেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Abdullahil Kafi সবাইকে ধন্যবাদ
Saddam hosen ভাল হয়েছে। আগামীতে আরো ভালো চাই। শুভ কামনা রইল

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এই গল্পে শান্তিপুর নামক একটি গ্রামের চৌধুরী সাহেবের একমাত্র নাতনীর বিয়ের কথা আলোচনা করা হয়েছে। কিভাবে একটি মেয়ে নিজের সুখ শান্তির কথা চিন্তা না করে ভালোবাসাকেই প্রাধান্য দেয়।

২৩ জুলাই - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪