আই লাভ ইউ

ভ্যালেন্টাইন (ফেব্রুয়ারী ২০১৯)

ফারজানা রায়হান
  • 0
  • ১১৪
এইতো সেদিন ছেলেটা ভার্সিটির ক্যাম্পাসে শত জোড়া চোখের সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছিলো মেয়েটার সামনে,হাতে ছিল গ্লাডিওলাসের তোড়া।যেখানে ছিল মেয়েটার পছন্দের শিউলী ফুলও।

সেদিন বিকেলে মেয়েটাকে " আই লাভ ইউ " বলে ছেলেটা আত্মতৃপ্তির হাসি হেসেছিলো , " এটা তোমাকে বলা আমার ১০০০ তম আই লাভ ইউ..!!" মেয়েটাও ভ্রুটা নাচিয়ে বলেছিলো, " ওকে আমিও হাজারবারের মতই বললাম আই লাভ ইউ টু..!!! "
সেদিন মেয়েটা ভ্রু কুচকিয়ে এটাও বলেছিল,"আচ্ছা আজ তো ভালোবাসা দিবস না,তবুও এভাবে শিউলী দিয়ে বার বার আই লাভ ইউ বলো কেন?"
ছেলেটা অট্ট হেসে বলেছিল,"ওমা!ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বুঝি দিবস লাগে?আমিতো তোমাকে তিনশো পঁয়ষট্টি দিনই ভালোবাসি,সব দিবসেই বাসি!"

আজও একজন আই লাভ ইউ বলে, তবে একে অন্যকে নয়। কে জানে এবারেও সে এই নতুন করে বলা " আই লাভ ইউ " এর হিসাব রাখছে কিনা।
এসব ভাবতে গিয়ে হুট করে কখন যে পানি জমে গেল চোখে খেয়াল-ই হয়নি।
সেদিনের সেই হসপিটালের মুহূর্তটা আজও চোখে ভাসে...

"এক্সকিউজ মি আন্টি,আপনার সাথে কেউ কি আছে?" রিলিজ দেয়া হবে এখান থেকে।একটু পর ই,হসপিটালের কিছু আনুষাঙ্গিক কাজ আছে।ডেড বডি তো...
-"না মা,নেই! আমাকে বলো,আমি করছি সব!"
-কি বলেন,"আপনি করবেন কেন?আপনার ছেলে মেয়েরা করলে ভালো হতো না?"
কুচকে যাওয়া আকাশী রঙ্গের শাড়ির আঁচল দিয়ে পানি ভর্তি টলমলে চোখটা মুছলেন মহিলাটা।ঠোঁটের কোনে অভিমানের হাসি দিয়ে বললেন,"৩৬ বছরের সংসারে মানুষটা আজও বুঝতে দিল না যে,তাদের কোন সন্তান নেই "।একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে কিভাবে এতটা ভালোবাসে!বলতে পারো?
মহিলাটা জানে,নার্স মেয়েটা সেদিন তাঁর কথা শুনে নিজের চোখের পানিও আটকে রাখতে পারেনি।

ভার্সিটির ওই ক্যাম্পাস থেকে একটু দুরেই কবরস্থানটি। ঘিয়া রঙের কুচঁকে যাওয়া শাড়ি পরে বুড়ো মানুষটা ছোট ছোট পা ফেলে দুই তিন দিন পর পরেই আসেন, কবরগুলো পাহারা দেওয়া মানুষটাও আর জিজ্ঞেস করে না, " কোন কবর.??? " মানুষটা জানে বুড়ো মহিলাটা যাবে ওই কোণার কবরটার কাছেই, ঘন্টাখানেক চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে কুচকে যাওয়া অাঁচলটা দিয়ে,চোখের চশমা খুলে চোখদুটো চেপে রাখবেন কিছুক্ষন, তারপর আবার ছোট ছোট পায়ে ফিরে আসা।

সেদিন কবরস্থানের সামনে খালি পায়ে ছেঁড়া জামা পরা পিচ্চি মেয়েটা ফোকলা দাঁত বের করে একগাদা শিউলি ফুলের মালা এগিয়ে দিয়ে বলেছিলো, " ফুল নিবেন দাদুমনি..??? দশ টেকা কইরা। একখান ন্যান না, কব্রে রাইখেন। "
বুড়ো মানুষটা লজ্জা পেয়েছিলো,৩৬ বছরের সংসারে কোনদিন দেওয়া হয়নি এমন,ওর থেকেই নিয়েছি কেবল।খোপাঁয় বাঁধিয়ে দিত যত্ন করে।চুল গুলোও কালো থেকে সাদা হয়ে গেছে সেই কবে!মানুষটাও কাছে নেই। কখনো ফুল আবদার করা ছাড়া দেয়া হয়নি, আর এখন শেষ বয়সে এসে.....না না বাবা থাক..!!! সেদিন কবরটার বয়স ষোল ছাড়িয়েছিলো, বুড়ো মানুষটা ময়লা আঁচলে চোখ মুছে ফের ফাঁকা বাসায় যাওয়ার পথ ধরলেন, আগামিকাল উনি আবার আসবেন এখানে,ষোল বছর ধরে " আই লাভ ইউ " না বলা এই মানুষটার কাছে..!!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হুসাইন মানুষটা জানে বুড়ো মহিলাটা যাবে ওই কোণার কবরটার কাছেই, ঘন্টাখানেক চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে কুচকে যাওয়া অাঁচলটা দিয়ে,চোখের চশমা খুলে চোখদুটো চেপে রাখবেন কিছুক্ষন, তারপর আবার ছোট ছোট পায়ে ফিরে আসা।ভালো লাগা রইলো।আমার গল্প-কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম।আসবেন সময় পেলে।ধন্যবাদ।
রঙ পেন্সিল খুব ভাল লিখেছেন। শুভকামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
sagor ahmed সুন্দর লেখা।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
আপেল মাহমুদ অনেক আবেগ দিয়ে লেখা। হৃদয় ছুয়ে গেলো।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
রুহুল আমীন রাজু চমৎকার লেখার হাত।বেশ লাগ্ল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইল।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ছেলেটা মেয়েটাকে ভালোবেসেছিল অনেক। যার কারনে হুটহাটই ফুল এনে প্রপোজ করতো। কখনো কোন দিবসের জন্য ছেলেটা অপেক্ষা করেনি। এতই ভালোবাসতো যে,মেয়েটাকে সে সুখে রাখার জন্য মেয়েটার মাঝে একটুকুও অপূর্নতা ভর করতে দেয়নি কখনো।বিয়ের পর এত বছরের সংসারে মেয়েটাকে ছেলেটা বুঝতেই দেয়নি কখনো যে,মেয়েটা নিঃসন্তান।এতই ভালোবাসতো যে,মেয়েটার কখনো অনুভব ই হয়নি সে মা না হতে পেরে কতটা অভাগী।মাঝখানে এতগুলো বছর একসাথে থাকার পর যখন দুজনের মধ্যে কোন একজনের অনুপস্থিতি ঘটে!ঠিক তখনও ভালোবাসার এতটুকুন ফাঁকফোকর হয়নি।বরং ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা দিনকেদিন বেড়েই যাচ্ছে মানুষটার প্রতি। যার কারনে পুরনো সব স্মৃতি বার বার মনের দরজায় এসে টোকা দেয়,আর দিয়ে যায় এক অনন্য প্রশান্তি।তাই শেষ অবধি ছেলেটার মৃত্যুর পরও মেয়েটা ছেলেটাকে অনেক ভালোবাসে।তার-ই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে গল্পটিতে। যেহেতু গল্পের বিষয় ভালোবাসা সম্পর্কিত।সেহেতু এটা পুরোপুরিই গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

১৪ জানুয়ারী - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪