উপলব্ধি

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০২২)

Ahad Adnan
  • 0
  • ৭৯
দেখতে দেখতে একটা বছর চলে গেল।
এই রকম একটা রাতে, ঠিক এক বছর আগে, এক ছাদের নিচে বদ্ধ কামরায় দুজন। ধ্রুব’র জন্য সেটাই ছিল প্রথম কোনো মেয়ের সাথে এত ঘনিষ্ঠ হওয়া। অবশ্য এ অভিজ্ঞতা তিশার কাছে নতুন কিছু ছিল না। আজ একলা ঘরে ধ্রুব আগের অনেক স্মৃতির তিক্ত জাবর কাটছে।
বিয়ের কয়েকদিন পরের কথা। ধ্রুবদের ব্যাঙ্কের নতুন একটা ছেলে, রাসেল নাম। বেশ মিশুক।অল্প দিনেই বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। একদিন লাঞ্চে ফেসবুকে ছবির এ্যালবাম দেখাচ্ছিল। বছর দেড়েক আগের সেন্ট মার্টিনে গ্রুপ ট্যুরের ছবি। ওর এক ফ্রেন্ড, অনিক। বিচে একটা মেয়েকে গায়ের শালের মত জড়িয়ে আছে। দুইজনই হাসছে। মেয়েটা ওর খুব পরিচিত, খুব কাছের। ভালোবাসে দুজন দুজনকে।
রাসেল নিজে থেকেই বলছিল ছেলেটার কথা। মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি, ড্রাগস, জুয়া, অ্যালকোহল। আর বলেছিল মেয়েটার উচ্ছৃঙ্খলতার কথা। মেয়েটা ছেলেটার এসব কীর্তির কিছু কিছু জানত। তবু নাকি পাগলের মত ভালোবাসত। ইন্টার্নের সেই সময়টাতেই ওরা একসাথে রাত কাটিয়েছে।
কিন্তু এসব কি এখন অতীত? তাই হলে এ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হত এই ধ্রুব। এটা একটা তীব্র যন্ত্রণাদায়ক পারফেক্ট কন্টিনুয়াস টেন্স। কবে যে শুরু হয়েছিল, আর শেষ হয়নি। চলছে এখনো। সমাজ বলে পরকিয়া, ওরা বলে প্রেম।
রাতের পর রাত নিজেকে প্রশ্ন করেছে ধ্রুব, আমাকে বিয়ে করল কেন তিশা? ওই ছেলেটাকে করলেই পারত।
রাসেলের কাছেই জানা গেলো জবাব।টাকার লোভে তিশাকে ছেড়ে একটা ‘শোকেস গার্ল’কে ধরে ছেলেটা। হয়ত সেই শোধ নিতেই গলায় মালা পরায় এই গর্ধবটাকে। মোহ কাটতে সময় লাগেনি। তবুও দিনের পর দিন চেষ্টা করেছে ধ্রুব দাম্পত্ত্য বাঁচিয়ে রাখতে। আর তিশা করে গেছে অভিনয়। এই যেমন বিয়ে বার্ষিকীর রাতে তিশার নাকি নাইট ডিউটি আছে।
তিশা এখন কোথায়?
‘তুমি আমার সাথে ছেলেখেলা করেছ। ইউ জাস্ট ইউস্ড মি। স্বীকার করছি, আমিও অনেকটাই দায়ি। রসি’কে ছুড়ে ফেলেছ। আই নো ইউর ইন্সটিংট। আবার আমার কাছে এসেছ। কিন্তু আজ একটা বোঝাপড়া করতেই হবে’।
‘কি বোঝাপড়া করবে তুমি, তিশা জান’।
‘আমি ধ্রুবর সাথে কথা বলেছি। ওকে বলেছি তুমি কি চাও। মানে তোমার সেই কোটি টাকার ব্যাংক লোন। আমি আকাশ থেকে পড়লাম, জানো! ও সব জানে। আমাদের যত কুকীর্তি, সব, সব জানে। শুধু কিছুই বলেনি। কেন জানো? পাগলের মত ভালোবাসে আমাকে। আমি নাকি ওর প্রথম প্রেম। একমাত্র প্রেম। আমি তোমার জন্য ঘর, সংসার, সমাজ সব অবলীলায় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছি। আর তুমি! ধ্রুব আমার জন্য জীবনও দিতে পারে’।
‘দিতে বলনা তাহলে জীবন। ঝামেলা চুকে যাক’।
‘পারফেক্ট। পারফেক্ট কমেন্ট। ইট স্যুটস ইউ। তুমি বোঝ ভালোবাসা কি? বলবে, আমাকে আর কত ছোট হতে হবে তোমার জন্য। আজ আমাদের প্রথম আ্যনিভার্সারি, আর আমি তোমার সাথে। ওকে মিথ্যা বলেছি, আজ আমার নাইট ডিউটি’।
‘মিসেস তিশা, সতী দ্যা গ্রেট, প্লিজ কাম টু দ্যা পয়েন্ট। টাকাটার কি হল’?
‘টাকা! কিসের টাকা! জানো অনিক, আমি হয়ত আর কখনোই ভালোবাসতে পারব না কাউকে। এক জীবনে কয়জনকে ভালবাসা যায়! কিন্তু যে মানুষটা নিঃস্বার্থভাবে শুধু ভালবেসেই গেল, সে কি শুধু ঠকেই যাবে? অসম্ভব। পারব না আর আমি প্রতারণা করতে, বিশ্বাসঘাতকতা করতে। আমি আনব না কোন টাকা। বেটার, গিভ মি ইওর পিস্তল। আই উইল কিল মাইসেল্ফ’।
‘গুড আইডিয়া। তবে মরতে হয় নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে মরনা। এখানে ঝামেলা করার কি দরকার’?

ঠিক তখনই তিশার ফোনটা বেজে উঠল।
‘তিশা, কেমন আছো? তিন মিনিট বাকি আর, বারোটা বাজতে। শোন, আমি কিছু কথা বলব। প্লিজ, তুমি লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে জাস্ট শুনে যাবে। কিচ্ছুটি বলবে না। আমি তোমার হসপিটাল রিসিপশনে। আজ তো তুমি নাইট করছ না। তুমি এখন কোথায়, কি করছ, ডোন্ট ম্যাটার। তোমার না মোটা অঙ্কের কিছু টাকা দরকার? টাকাটা পেলে কি করবে? নতুন একটা স্বপ্ন গড়বে তোমরা? নতুন একটা ঠিকানা? ঠিক আছে, টাকাটা পেয়ে যাবে তুমি। তুমি সুখে থেকো। আমি তাতেই খুশি। কেন জানো? ভালোবাসি তোমাকে। এত কিছুর পরেও, অনেক ভালোবাসি। ইউ আর মাই অনলি লাভ। এই, বারোটা বাজে। হ্যাপি আ্যনিভার্সারি’।
লাইনটা কেটে গেল। অনেক চেষ্টা করেও তিশা আর ধ্রুবর নাগাল পেল না। ফোন যে বন্ধ।

‘এত রাতে বাইরে কোন গাড়ি পাবনা। বাসায় যাব। তোমার গাড়িতে প্লিজ পৌছে দাও’।
‘বাসায় মানে! স্টেডিয়ামে আলো জ্বাললাম, পিচে স্ট্যাম্প বসালাম, এখন উনি খেলবেন না। ছিঃ এমন করেনা। কাম অন সুইটু’।
‘ডোন্ট টাচ মি। সব ভুলের একটা লিমিট থাকে। সব অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত’।
তিশা বিছানা থেকে উঠে এগোয় দরজার দিকে। দৌড়ে জাপটে ধরে অনিক। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি। অনিক গালে চড় মেরে বিছানায় ফেলে দেয় তিশাকে। বালিশের তলা থেকে পিস্তলটা হাতে তুলে নেয় তিশা। চাপ পড়ে ট্রিগারে।

অনিকের গাড়ির স্টিয়ারিং এখন তিশার হাতে। গুলিটা লেগেছিল কপালের মাঝখানটায়। ওসব এখন পচা অতীত। এতক্ষণে নিশ্চয়ই ফ্ল্যাটে ফিরে এসেছে ধ্রুব। দরজাটা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকেই জড়িয়ে, না হয় পায়ে পড়বে ধ্রুব’র। এতটা যে ভালোবাসতে পারে, ক্ষমা সে করবেই। করবেই সে ক্ষমা।
না, এখনও ধ্রুব আসেনি। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজাটা খুলেই ভেতরে ঢুকে তিশা। টেবিলে একটা চিরকুট পড়ে আছে।
‘তিশা, তোমাকে বলিনি কখনো। ব্যাংকে আমার লাইফ ইনস্যুরেন্স করা আছে। বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পাবে। তোমার হয়ে যাবে। শুধু ছোট একটা কাজ করতে হবে। কাল যখন নদীতে গাড়ির ভেতর আমার ডেড বডি তোলা হবে, তুমি এমনভাবে সাজাবে, যেন ইট ওআজ অ্যান এক্সিডেন্ট। নট সুইসাইড। সাজাতেতো তুমি ভালই পার। কি পারনা? ভাল থেকো। লাভ ইউ’।
মিথ্যে মিথ্যে খেলায় অন্ধ তিশা যখন অন্ধকার একটা জগত পিছনে ফেলে প্রত্যাবর্তন করতে চায় একটা সুস্থ, উজ্জ্বল আর সুন্দর পৃথিবীতে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আলো আর অন্ধকারের মাঝে অদৃশ্য এক বাস্তবতার পেষণে তিশা গুড়ো গুড়ো হতে থাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান ভাল লাগল গল্প, শুভকামনা রইল।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একটি মেয়ে জড়িয়ে পড়ে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে। যখন তার উপলব্ধি হয় এই পথ ভুল, এই মানুষ ভুল, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। প্রিয় মানুষ চলে যায় অনেক দূরে। উপলব্ধি সময়মত হওয়াটাও খুব জরুরি।

২৩ সেপ্টেম্বর - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৪১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী