ভুগিচুগি

কৃপণ (নভেম্বর ২০১৮)

A R Shipon
  • ১০৩
(গল্প নয়, নেহাত ফাইজলামী)
সালাউদ্দিন আজ মহাখুশি। অল্প খরচে বেশ ভালো একটা বাসা পেয়েছে সে। ৪ রুম, ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম, কিচেন, ৩টা টয়লেট আর ২ পাশে দুইটা বিশাল বারান্দা। ভাড়া মাত্র ৩০০০০ হাজার। ধানমন্ডি এলাকায় ৩০০০০ টাকায় এই রকম বাসা পাওয়া কল্পনাও করা যায় না।
পৃথিবীতে নানান ধরনের মানুষ আছে, আছে হরেক চরিত্রের মানুষ। কিন্তু সালাউদ্দিন আসলে কোন ধরন বা কোন চরিত্রের সেটা বুঝে উঠা মুশকিল।
সালাউদ্দিনের সাথে আমার পরিচয় কলেজ জীবনে। একসাথে করে বাসে যাওয়া আসা। বাসের ভাড়া আমরা স্টুডেন্টসরা দুইটাকা করে দিতাম। দেখা যেত একসাথে বাসে আমরা ১০/১৫ জন করে যাতায়াত করতাম। যে যেদিন ভাড়া দিতো বাসের সব স্টুডেন্টস দের ভাড়া সে একা দিতো। ঘুরে ফিরে আমরা সবাই একেকদিন ভাড়া দিতাম সুধু দিতো না সালাউদ্দিন। ধরুন ক্লাস শেষে আমরা সবাই টিউশনিতে গেলাম, সালাউদ্দিনের টিউশনি নেই। সে চাইলেই একা চলে যেতে পারে বাসায় কিন্তু দুই টাকা বাচানোর জন্য সে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতো। একদিন সালাউদ্দিনকে দিয়ে ভাড়া দেওয়ানোর জন্য আমরা সবাই একটা নাটক করি। হেলপারকে আগেই বলে রাখি আজ আমাদের কারো কাছে ভাড়া চাইবে না, ওর কাছে চাইবে।
হেলপারঃ (সালাউদ্দিনকে উদ্যেশ্য করে) ভাইয়া ভাড়া দেন।
সালাউদ্দিনঃ পরে।
কিছুখন পরে........................
হেলপারঃ ভাইয়া ভাড়া দেন।
সালাউদ্দিনঃ পরে,
হেলপারঃ আর কত পরে? চলে আসলেন তো প্রায়
সালাউদ্দিনঃ অন্য সবার কাছ থেকে নিয়ে আসো তারপর।
হেলপারঃ অন্যসবাই পরে দিবে। আপনারটা দিন।
সালাউদ্দিন কিছুখন আমাদের দিকে ঘুরে ফিরে তাকায়। তারপর পকেটে হাত দিয়ে কিছুখন চোখবুজে নাড়াচাড়া করে। অতঃপর পকেট থেকে দুটো একটাকার কয়েন বের করে হেলপারের হাতে গুজে দিয়ে বলে।
সালাউদ্দিনঃ এই নেন আপনার ভাড়া।
হেলপারঃ এইটা কি দিলেন?
সালাউদ্দিনঃ কি দিলাম মানে?
হেলপারঃ আর সবারটা দেন।
সালাউদ্দিনঃ সবারটা আমি দিতে যাবো কেনো? আমারটা আমি দিছি।
হেলপারঃ প্রতিদিন তো সবাই আপনারটা দেয়।
সালাউদ্দিনঃ আমি কি কাউকে বলছি আমারটা দিতে। যান এখান থেকে।
এরপর থেকে আমরা সব সময় সালাউদ্দিনকে ছাড়া ভাড়া দিতাম।
কলেজ লাইফ শেষে ঢাকা এসে ভর্তি হই। পাশাপাশি ছোট একটা চাকরি। কলেজ লাইফের বন্ধুদের মধ্যে শাকিল আর সজল ছাড়া তেমন কারো সাথে যোগাযোগ নেই।৩/৪ বছর পর একদিন রানা আর সালাউদ্দিনের সাথে পান্থপথ দেখা হয়। অনেকদিন পর যেহেতু দেখা তাই ভালোবাসা একটু বেশিই ছিলো। অনেকখন বসুন্ধরার সামনে বসে গল্প শেষে চা খেলাম। বিল দিতে গিয়ে শুনি আগেই বিল দেওয়া হয়ে গেছে। রানার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম
আমিঃ কিরে বিল দিয়েছিস কেন?
রানাঃ আমি তো বিল দেই নাই।
সালাউদ্দিনঃ আমি দিয়েছি।
আমিঃ তুই বিল দিয়েছিস? বিশ্বাস হচ্ছে না।
রানাঃ সালাউদ্দিন এখন আগের মত নাই।
আমিঃ বাহ। আচ্ছা চল যাই।
সালাউদ্দিনঃ দাড়া দোকানদারের কাছে এক টাকা পাই, নিয়ে নেই।
দোকানদারের কাছে গিয়ে
সালাউদ্দিনঃ একটাকা দিন।
দোকানদার একটা মিঃ ম্যাংগো চকলেট ধরিয়ে দেয়। এরপর সালাউদ্দিন তার পকেট থেকে আরেকটি চকলেট বের করে দিয়ে বলে দুইটাকা দেন। হাহাহাহাহাহহাহাহাহাহাহাহাহা হাসতে হাসতে আমি আর রানা গড়াগড়ি। সালাউদ্দিনের মধ্যে চেঞ্জ এসেছে, তবে কিপ্টামির স্বভাবটা কিছুটা এখনো রয়েই গেছে।
এর বেশ কিছুদিন পরের কথা। যে বাসায় আমি ছিলাম সেখান থেকে হটাত নোটিস আসে বাসা ছেড়ে দেওয়ার। কুল কিনারা খুজে পাচ্ছিলাম না তখন রানার মাধ্যমে খোজ পাই যে সালাউদ্দিন নতুন বাসা নিচ্ছে। ফোন দিয়ে সালাউদ্দিনের সাথে কথা বলে বাসা দেখতে যাই।
বড় ৪ রুম, ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম, কিচেন, ৩টা টয়লেট আর ২ পাশে দুইটা বিশাল বারান্দা। খুব পছন্দ হয়ে যায় আমার। বিশেষ করে বারান্দাটার প্রেমে পরে যাই। জোসনা রাতে রোদেলাকে নিয়ে গল্প লিখা যাবে।
আমিঃ দোস্ত ফ্ল্যাট ভাড়া কত?
সালাউদ্দিনঃ তুই কি একা এক রুম নিবি নাকি সাথে রুমমেট উঠাবি?
আমিঃ ধুর ব্যাটা, একা একরুম নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে নাকি।
সালাউদ্দিনঃ ফ্ল্যাট ভাড়া ৪০০০০ টাকা। একেক রুম ১০০০০ টাকা। সাথে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল আর সার্ভিস চার্জ আছে।
আমিঃ ভাড়া একটু বেশি হয়ে গেলো না? আর আমি এখন রুমমেট পাবো কোথায়?
সালাউদ্দিনঃ ধানমন্ডি এলাকায় ৪০০০০ টাকায় এতো সুন্দর ব্যাচেলর বাসা পাবি তুই ?
আমিঃ সেটাও ঠিক। আচ্ছা রুমমেট
সালাউদ্দিনঃ ঐগুলান আমি দেখতেছি।
আমিঃ আচ্ছা দেখ।
সালাউদ্দিনঃ চল বাইরে যাই, আবু সাইদ আর বিল্লাল এসেছে।
বাইরে গিয়ে সালাউদ্দিনের দুইভাই আবু সাইদ আর বিল্লালের সাথে কথা বলতে বলতে একসময় দোকানে গিয়ে বিস্কিট কিনি খেতে। চকলেট বিস্কিট। চকলেট আমার খুব পছন্দের তাই সব কিছুতেই চকলেট ফ্লেভার খুজি।
বিল্লালঃ ভাই একটা কোল্ডড্রিংকস নেই?
আমিঃ হ্যা নাও।
সালাউদ্দিনঃ নাহ। নরমাল পানি নে। এই সব স্বাস্থের জন্য ভালো না।
আবুসাইদঃ নাহ। কোক নে। কোকের উপর কিছু হয় না।
বিল্লালঃ মিরিন্ডা নিলাম।
সালাউদ্দিনঃ নরমাল পানি খাবি। পেটের ভিতরে ভালো থাকবো, আর কোক খাইলে পেটের ভিতরে ক্ষয় হয়। ইউটিউবে দেখস নাই। সুধু সুধু টাকা খরচ করে বিষ খাবিনি।
আবুসাঈদঃ ইহ আইছে স্যার। তর ডাক্তারি আর কিপটামি অন্য জায়গায় দেখাবি আমার কাছে না।
পেছন থেকে একমহিলা এতোখন আমাদের কথা শুনছিলো। আমাদের জন্য সে দোকানের সামনে আসতে পারছিলো না। সে সালাউদ্দিনকে ঝাড়ি দিয়ে বলে
মহিলাঃ কোকও না, মিরিণ্ডাও না, পানিও না। এই ভাই এদের সেভেন আপ দেন। আর টাকা আমি দিব। আর একটা কথাও বলবেন না আপনারা। যাস্ট এখান থেকে চলে যাবেন। মাইক একেকটা।(রাগের ইমোজি হবে)
আমি মুচকি হাসছি। মহিলাকে পেরিয়ে মানিব্যাগ বের করে বিস্কিট আর সেভেন আপের দাম দিয়ে চলে আসি। আর ওদের কাছ থেকেও বিদায় নেই।
সালাউদ্দিন এর মুখে মুচকি হাসি। তখন ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। বুঝতে পেরেছি দুই বছর পর।
নিচে নতুন দারোয়ান এসেছে। তার সাথে কথায় কথায় বেরিয়ে আসে আসল কাহিনি। বাসা ভাড়া ৩০০০০টাকা। তারমানে সালাউদ্দিন তার নিজের রুমের বাসাভাড়া দেয় না। আমাদের টাকা দিয়েই সে এই রাজ্বত্ব চালাচ্ছে। কথাটি আমি একা শুনলে হয়তো চেপে রাখতে পারতাম নিজের মধ্যে কিন্তু আমার সাথে ছিলো বা আমি তাদের সাথে ছিলাম।
রাতে আসিফ আর সাইদ ভাই সবাইকে ডাকে। বিষটি তুলে ধরে সবার সামনে। সালাউদ্দিন চুপ করে বসে আছে।
আসিফঃ সালাউদ্দিন মামা কিছু বলেন।
সালাউদ্দিনঃ কি বলবো?
হাবিবঃ আপনি এতোদিন আমাদের সাথে এই দুই নাম্বারি করলেন কেন?
সালাউদ্দিনঃ এটা দুই নাম্বারী না।
সাইদঃ এটা দুই নাম্বারী না তো এটা কি?
সালাউদ্দিনঃ মানুষ মেসের ব্যাবসা করে না। এটাও মনে করো সবাই আমার একটা ব্যাবসা। আমি কষ্ট করে বাসা খুজছি, কথা বলে ঠিক করছি, এডভ্যান্স দিছি। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি মালিকের কাছ থেকে বাসা নিয়ে তোমাদের কাছে রুম অনুযায়ী ভাড়া দিছি। এখানে কোন দুই নাম্বারি এর কিছু নাই।
আমিঃ ঠিক আছে। কিন্তু এই বিষয়টা আমাদের জানালেই পারতি। সুধু সুধু ৪০০০০ টাকা বলে মিথ্যে না বললেও পারতি।
সালাউদ্দিনঃ এতো কথা কিসের, এইভাবে যার থাকতে ইচ্ছে সে থাকো আর যার ভালো না লাগে সে চলে যাও।
হাবীবঃ সালাউদ্দিন মামা আপনি বিষয়টা বহুত ভুগিচুগি করে ফেললেন।
সালাউদ্দিনঃ তোমাদের যা মনে হয় বলো। ভুগিচুগি, বিনোদন যা খুসি তা।
সুজনঃ সালাউদ্দিন তুই কি গাঞ্জা খেয়ে আসছিস যে এইভাবে কথা বলছিস?
সালাউদ্দিনঃ গাঞ্জাও বল। সমস্যা নাই।
বলে সালাউদ্দিন উঠে যায়। এরপর থেকে কিছুদিন সবাই সালাউদ্দিনের সাথে কম কথা বলতো। ঐ দিনের পর থেকে মেসে সহ আসে পাশের বন্ধুদের কাছে সালাউদ্দিনের নতুন একটা নাম হয়। সেটা হলো ভুগিচুগি। ভুগিচুগি বলে ডাকলে প্রথম দিকে খেপে গেলেও পরে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এমনকি ভুগিচুগি নিজেও সব জায়গায় তার এই নাম ইউজ করা শুরু করে। যেমন মিলের খাতায় বাজারের লিষ্টে এবং ডেইলি মিল লিষ্টে এ নামের জায়গায় নিজেই ভুগিচুগি লিখে। যাক।
ভুগিচুগি সহ তার সাথের লোকেরা একেক জন মাইক। যে কোন জনসভায় একে মাইক হিসেবে ইউজ করা যেতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত ফাও পয়সায় জ্ঞ্যান দান করা তার সখ। খুব কষ্টে সহ্য করতে হয়। এখন অবশ্য আমরা সকলেই কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে চিন্তা তাকে নিয়ে যে এই ভুগিচুগিকে বিয়ে করবে। বেচারি হয়তো পরের রাতেই সুইসাইড করবে। ইশ ভাবতেই কষ্ট লাগছে।
তার ভবিষ্যৎ ভাবতে ভাওবতে হটাত একদিন শুনি ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। সেকেন্ড টাইম পাত্রি দেখতে যাওয়া। সাথে আমাকেও যেতে হবে। মেয়ের নাম ঝুম। দেখা করবো একটা রেস্টুরেন্টে। আমরা আগেই গিয়ে উপস্থিত কিন্তু ঝুম মহারানীর এখনো আসার সময় হয়নি।
আমিঃ দোস্ত অনেকখন হয় বসে আছি। কিছু খাবার অর্ডার কর খাই। অনেক খুদা লাগছে। ( আমি খেতে খুব পছন্দ করি, আর খুদাও লাগে বেশি। আমাকে দেখে নিশ্চয় সেটা আপনারা বুঝতে পারেন)
সালাউদ্দিনঃ এখানে ফিল্টারের গ্লাসে পানি পাওয়া যায় না। আর এক বোতল পানির দাম কত জানিস?
আমিঃ কত আর হবে, ২০টা হতে পারে।
সালাউদ্দিনঃ হুম। যেটা দোকানে ১৫টাকা।
আমিঃ তাই বলে খাওয়াবি না?
সালাউদ্দিনঃ হুম। মেয়েটি আসুক তারপর স্যুপ খাবো।
আমিঃ সুধু স্যুপ? ধুর বাল। আচ্ছা আমিই খাওয়াবো তোকে।
সালাউদ্দিনঃ খাওয়া।
আমি পাস্তা অর্ডার করি। খাওয়ার মাঝখানে ঝুম এসে হাজির। মানে যাকে সেকেন্ড টাইম দেখতে আসা। সেকেন্ড টাইম দেখতে আসার কারন হচ্ছে। সালাউদ্দিন মেয়েকে আগে দূর থেকে দেখলেও মেয়েটি সালাউদ্দিনকে দেখে নাই। আর সালাউদ্দিন ও সামনাসামনি দেখা করে কথা হয় নাই। যাস্ট দুই ফ্যামিলির মধ্যে কথা বার্তা হয়ে বিয়ে প্রায় ঠিক।
ঝুম কাছে এসে খুজছিলো। সালাউদ্দিন যেহেতু চিনে তাই সালাউদ্দিন ডাক দেয় তাকে।
সালাউদ্দিনঃ আপনি ঝুম?
ঝুমঃ জ্বি।
সালাউদ্দিনঃ আসেন। বসেন প্লিজ।
ঝুমঃ ভালো আছেন আপনারা?
আমিঃ জ্বি ভালো আছি। আপনি?
ঝুমঃ আমিও ভালোই আছি। ভালো না থাকলে তো আর এখানে আসতে পারতাম না।
সালাউদ্দিন ঃ সেটা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা কি খাবেন আপনি?
ঝুমঃ যে কোন কিছু।
সালাউদ্দিনঃ নাহ প্লিজ আপনি অর্ডার করুন।
ঝুমঃ প্লিজ আপনারাই অর্ডার করুন।
সালাউদ্দিনঃ আচ্ছা। পাস্তা, চওমিন, বিফ উইথ রাইস, স্যুপ, কোল্ড ড্রিংকস, ফিস ফ্রাই অর্ডার করলাম।
ঝুমঃ আরে এতো কিছু কিভাবে খায় মানুষ। যে কোন একটা ।
সালাউদ্দিনঃ নাহ। প্রথম আপনাকে খাওয়াচ্ছি।
সালাউদ্দিন ওয়েটারকে ডেকে সব অর্ডার করে আর আমি হা হয়ে তাকিয়ে । এক মেয়ে দেখে সালাউদ্দিনের সব কিপটামি শেষ। হাইরে পুরুষ।
খাবার দাবার খাওয়া শেষে।
ঝুমঃ (আমাকে উদ্যেশ্য করে) আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?
আমিঃ জ্বি।
ঝুমঃ আমাকেও আপনার পছন্দ হয়েছে।
আমিঃ আমার বন্ধুর চেয়েও কি আমাকে বেশি পছন্দ হয়েছে।
ঝুমঃ বুঝলাম না।
আমিঃ মানে যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার বন্ধু তার থেকেও কি আমাকে বেশি পছন্দ হয়েছে?
ঝুমঃ ছেলে কি আপনি না?
আমিঃ আমি হবো কেনো। এই যে ছেলে, যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
ঝুমঃ সরি। আমি এই বিয়ে করবো না। আমার ছেলে পছন্দ হয় নি।
সালাউদ্দিনঃ বিয়ের সব ঠিক আর এখন এই কথা বলছেন। হবে না, বিয়ে করতেই হবে আপনাকে।
ঝুমঃ করবো না আমি বিয়ে। আমি গেলাম। ( বলেই উঠে দাঁড়ালো)
সালাউদ্দিনঃ আচ্ছা ঠিক আছে বিয়ে করতে হবে না। কিন্তু এই যে খাওয়া দাওয়া করলেন টাকা দিয়ে যান।
ঝুমঃ আমি কি খাইতে চাইছিলাম যে আমি টাকা দিবো।
সালাউদ্দিনঃ বিয়ে করবেন না তো আমি আপনাকে খাওয়াবো কেন।
আমিঃ সালাউদ্দিন চুপ।
সালাউদ্দিনঃ কিশের চুপ। খাইছে বিল দিবে। বিলের তিন ভাগ করে একভাগ দিয়ে যাবে।
ঝুমঃ শালার ছোটলোক। এই নে পুরো বিলই রাখ।
সালাউদ্দিনঃ থ্যাংকস।
ঝুম চলে যাবার পর।
আমিঃ সালাউদ্দিন তুই এতো ছোটলোক কেন? একটা মেয়েকে খায়িয়েছিস আবার তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিলি?
সালাউদ্দিনঃ বিয়ে করবে না আবার খাওয়া কি? আর তুই একদম চুপ। তোর জন্য আমার বিয়ে ভেংগে গেলো।
আমিঃ আমি কি করলাম?
সালাউদ্দিনঃ তোকে নিয়ে আসাটাই আমার ভূল হয়েছে।
সেদিনের মত সেখান থেকে চলে আসলাম। বাসায় আসার পর থেকে আমার সাথে ভুগিচুগি কথা বলে না। খারাপ লাগছিলো আমার, আপনারাই বলেন আমার কি দোষ? যাক তারপরও নিজের কাধে দোষ নিয়ে ভুগিচুগির জন্য মেয়ে খোজা শুরু করলাম। পেয়েও গেলাম। মেয়ে নাম শিলা। দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরী, ওয়েল এডুকেটেড, ভালো বংশ, ভুগিচুগির ছবি দেখে পছন্দও করলো। আর মেয়েটাকে আমার পছন্দ হওয়ার কারন হচ্ছে মেয়েটিও ঘাড় ত্যারা আর কিপ্টুস। সো ভুগিচুগি আর শিলার সংসার আশাকরি জমবে ভালোই। ভুগুচুগির ছোট সাইদকে দিয়ে বিয়ের কথা বার্তা শুরু করি। বিয়েও হয়ে যায়। এরপর তাদের সংসার কেমন চলছে জানিনা। বিয়েতে দাওয়াত পাইনি। শিলাও দাওয়াত দেয়নি।
অনেকদিন পর ঈদের আগের দিন রাতে জয়পাড়া দেখা সালাউদ্দিনের সাথে। কথা হলো। ডেকে নিয়ে কাবাব আর লুচি খাওয়ালাম। এরপর বউ এর জন্য থ্রিপিস কিনতে যাবে আমাকে নিয়ে গেলো।
একটা দোকানে গিয়ে বসলাম। ত্রিপিস পছন্দ করছে ও।
সালাউদ্দিনঃ দোস্ত একটা পছন্দ করে দে না।
আমিঃ আমি কিভাবে পছন্দ করে দিবো। আমি কি তোর বউকে দেখছি?(সালাউদ্দিন জানেনা আমি তার বউকে আগে থেকে চিনি, এমনকি লাইন মারতে গিয়ে ধরাও খাইছি। আসলে মেয়েরা টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না)
সালাউদ্দিনঃ ওহ তোরে তো দেখাই নাই। মোবাইলে আছে। এই নে দেখ।
আমিঃ বাহ! মারাত্বক সুন্দরী তো। এক কাজ কর। ইয়ালো আর ব্ল্যাক এই দুইটা নে।
সালাউদ্দিনঃ দুইটা? পাগলে পাইছে? একটা এক ঈদের জন্য যথেষ্ট।
আমিঃ আচ্ছা তুই ইয়ালো টা নে আমি ব্ল্যাক টা ভাবিকে গিফট করলাম।
সালাউদ্দিনঃ দোস্ত আমাকে কিছু দিবি না গিফট?
আমিঃ হুম। একটা আন্ডারওয়্যার নিয়ে যাইস।
পেছন থেকে একটা পিচ্চি ছেলে এসে দাঁড়ায়। দোকানদারকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে যে তার বাবা মা নেই। দোকান থেকে তার বোনের জন্য একটা জামা দিতে। কাল ঈদ বোনকে সে দিবে। কিন্তু দোকানদার ছেলেটাকে দূর দূর করে তারিয়ে দেয়। বিষয়টি খুব খারাপ লাগে আমার। কিছু করতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু করা হলো না।
সালাউদ্দিন ঃ ভাই এগুলা পছন্দ হয় নাই। শিপন চল অন্যদোকানে দেখি।
আমার ও কেন জানি দোকানদারের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছিলো। আমিও কিছু না বলে চলে এলাম।
পাশের দোকানে গিয়ে বসলাম। সালাউদ্দিন বললো ও একটু মাইনাস করতে যাবে আমাকে দোকানে থ্রিপিস পছন্দ করতে বলে বের হয়ে গেলো। ও চলে যাবার পর আমিও বের হয়ে গেলাম পিচ্চি ছেলেটাকে খুজতে। খারাপ লাগছিলো তাই ওকে খুজে ওর বোনের জন্য একটা জামা কিনে দিবো সিদ্ধান্ত নিলাম।
বাইরে খুজছি। হটাত চোখ পরলো একটা দোকানে সালাউদ্দিন ছেলেটিকে নিয়ে বসে আছে, ওর বোনের জন্য আর ঐ ছেলের জন্য জামা কাপর কিনে দিলো। শেষে ১০০০টাকার একটা নোট। কাছে গেলাম। সালাউদ্দিন ছেলেটাকে বললো।
সালাউদ্দিনঃ এই টাকা দিয়ে মিষ্টি, পায়েস, সেমাই কিনবে। কাল খাবে। আর আমার সাথে পরে যোগাযোগ করবে। দেখি কোন কাজের ব্যাবস্থা করা যায় কিনা।
আমি অবাক হলাম না, হতভম্ব নির্বাক হয়ে গেলাম। সেদিন সালাউদ্দিনের সাথে অনেকরাত কথা হলো। সে ভার্সিটিতে উঠার পর পরই পথ শিশুদের জন্য একটা আবাসন এবং শিক্ষার জন্য স্কুল করে। একাই চালাত ও । বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ড ম্যানেজ করে ছেলেমেয়ে দের খাবার জোগাড় করতো। বাসা ভাড়ার ১০০০০ টাকা এই স্কুলেই খরচ করতো। সেদিন বুঝলাম ভুগিচুগি দুঃক্ষিত সালাউদ্দিন আসলে কৃপন নয়। সালাউদ্দিন মিতব্যায়ী। এই দিনের পর থেকে সালাউদ্দিনকে আর ভুগিচুগি বলা হয়নি। ওর জন্য এখন মনের গভির থেকে আলাদা একটা সম্মান কাজ করে। আজ আমরা সবাই ওর স্কুলে যাবো। বাচ্চাদের জন্য অনেক বিস্কিট, জামাকাপর আর আমি স্পেশালি চকলেট নিয়েছি।
স্কুল। স্কুলের সামনে গিয়ে অবাক হয়ে যাই। সালাউদ্দিন তার স্কুলের নাম দিয়েছে ভুগিচুগি স্কুল। হাস্যকর হলেও সেদিন ওকে দেওয়া এই নামটি এই স্কুলটিকে বড় করার জন্য অন্যরক্ম অনুপ্রেরুনা দিয়েছে। আর আজ আমাদের দিয়েছে লজ্জা। ক্ষমা করিস বন্ধু।


সম্পূর্ন গল্পটাই আমার বিকৃত মস্তিস্কের কল্পনা বা দুষ্টামি অথবা ফাইজলামী। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা হল। ধন্যবাদ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব প্রিয় কবি/লেখক. অাপনাদের জন্য নতুন ওয়েব সাইট www.kobitagolpo.com তৈরি করা হয়েছে নতুন অাঙিকে। এখানে বর্তমান প্রতিযোগীতার জন্য নির্ধারিত “বাবা-মা” শিরোনামে লেখা জমা দেয়ার জন্য অামন্ত্রণ করা হচ্ছে। অাগ্রহীগণ ২৫ নভেম্বরের মধ্যে www.kobitagolpo.com এ লিখা জমা দিন। প্রতিযোগীতায় সেরা নির্বাচিত ৬ জনকে সম্মাননা দেয়া হবে।।।
শামীম আহমেদ শুভ কামনা আর ভোট রইল।আসবেন আমার পাতায়,আমন্ত্রণ রইল।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত ভাই , গল্পটি পড়লাম । প্রথমেই বলি আমার ভাল লেগেছে । গল্পটি যখন নাটকের মত করে লিখেছেন , আমার মনে হয় আর একটু নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে গেলে আর ভাল লাগত । ভাল থাকবেন । ভোট সহ শুভকামনা রইল ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে। আপনাদের মতামত ইনশাল্লাহ আমার পরবর্তি গল্পগুলোকে সমৃদ্ধ করবে।
জসিম উদ্দিন আহমেদ ভালো লিখেছেন। তবে সংলাপ নাটকের ঢং এ না দিয়ে গল্পের ঢং এ হলে আরো ভাল লাগত।
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভুলগুলো ঠিক করার চেষ্টা করবো।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

লেখার বিষয় কৃপন। আর আমার গল্পটি আমার এক কৃপন বন্ধুকে নিয়ে লেখা এবং পুরো গল্পে তার বিভিন্ন কৃপনতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

১৬ সেপ্টেম্বর - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪