আপনি কি সত্যিই ভয় পান না?

ভৌতিক (ডিসেম্বর ২০১৮)

আহসানুল হক শোভন
  • ৯৪
এক.
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে প্রচণ্ড শব্দে বেজে চলা মিউজিকের সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে একদল ছেলেমেয়ে।তাদের মাঝে ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরা ছেলেটাকে চুপচাপ এক কোণায় বসে থাকতে দেখে অবাক হলো মুন। যারা নাচানাচি করছে না, তারাও বেশ মুগ্ধ হয়ে নাচ উপভোগ করছে। বিটের তালে তালে মাথা এপাশ ওপাশ দোলাচ্ছে। একমাত্র সেই ছেলেটি ছাড়া। অনেকক্ষণ ধরেই ছেলেটিকে লক্ষ্য করছে মুন। এর মাঝে ছেলেটিকে কিছু খেতেও দেখেনি।

ট্রে থেকে একটা জুসের গ্লাস তুলে নিয়ে পরিচিত হবার উদ্দেশ্যে ছেলেটার দিকে এগিয়ে যায় সে।

“হাই।”
“হ্যালো।” নিরাসক্ত গলায় জবাব আসে।
“আমি মুন। আপনি?”
“তূর্য। তূর্য মাহমুদ।”
“আপনি কি জামিল ভাইদের সাথে এসেছেন?”
“না।”
“ও! তাহলে বোধহয় ফুয়াদ ভাইদের সাথে। রাইট?”
“রং।আমি কারও সাথে এসেছি নাকি বিনা দাওয়াতে এসেছি, এটা কি আপনার কাছে এক্সপ্লেইন করতে হবে?”
“সরি। আমি ওসব ভেবে বলিনি। জুস?”
“থ্যাংকস। আমি জুস খাব না।”
“প্লিজ, নিন না। আপনি বোধহয় এখানে আসার পর কিছু খাননি।”
“আমি কিছু খাই না।”
“কিছু খান না! মানে?”
“মানে কিছু খাই না। হাওয়া খেয়ে বাঁচি। হাহাহা!”

মুন দেখতে খুব সুন্দরী না হলেও তাকে গড়পড়তা মেয়ে বলা যাবে না। হলুদের শাড়িতে আজ তাকে বেশ মানিয়েছে। তূর্য ছেলেটা ওকে এভাবে উপেক্ষা করবে, এটা কল্পনাও করেনি মুন।

দুই.
বিচের খুব কাছাকাছি হলুদের স্টেজটা সাজানো হয়েছে। অনেকেই জোড়ায় জোড়ায় বিচে গিয়ে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। এমন রোম্যান্টিক পরিবেশে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান উদযাপনের অভিজ্ঞতা অনেকেরই নেই।

ডিনারের জন্য বুফের আয়োজন করা হয়েছে। সবাই যে যার ইচ্ছেমত নিচ্ছে, খাচ্ছে। তবে খাওয়ার চাইতে নষ্ট করছে বেশি। মুন ঘড়িতে সময় দেখে। রাত এগারটা। তূর্য ঠিক আগের জায়গাতেই এখনও একাবসে আছে। ছেলেটা বোধহয় অন্তর্মুখী স্বভাবের।অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষেরা এধরণের অনুষ্ঠানে গেলে জড়সড় হয়ে বসে থাকে। নিজে থেকে খাবার নিয়ে খেতেও অস্বস্তিবোধ করে।

মুন একটা খালি প্লেটে বেছে বেছে কয়েকটা ভাল আইটেম নিয়ে তূর্যের দিকে এগিয়ে যায়।

“ফর ইউ।” মুন তূর্যের দিকে প্লেটটা বাড়িয়ে ধরে।
“ফর মি? ডিড আই আস্ক ফর ইট?”
“না। আসলে এতক্ষণ ধরে বসে আছেন, ভাবলাম নিশ্চয়ই অনেক খিদে পেয়েছে। তাই..”
“আমি তো তখনই আপনাকে বললাম যে আমি কিছু খাই না।”
“কিছু খান না মানে কখনই কিছু খান না?”
“হুম।”
“তাহলে বেঁচে আছেন কীভাবে?” মুন ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করে।
“কে বলল বেঁচে আছি? সেই কবে মরে গেছি।”

মুন বুঝতে পারে কোন কারণে তূর্যের মন খুব খারাপ। হয়তপ্রচণ্ড হতাশা থেকে কথাগুলো বলছে। কিংবা বড় ধরণের কোন দুঃখ বুকে লুকিয়ে আছে। হঠাৎ কেন জানি তূর্যের জন্য খুব মায়া হয় তার।

“বিচে যাবেন?” প্লেটটা একপাশে সরিয়ে রেখেজানতে চায় মুন।
“এখন?”
“হ্যাঁ। অনেকেই তো যাচ্ছে। কেন, ভয় পাচ্ছেন?”
“ভয়? আর আমি? হাহাহা!”কেমন যেন অপার্থিব গলায় হেসে ওঠেতূর্য।
“আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তাই এভাবে বললেন। আমি আসলে আপনার জন্য বলেছিলাম।”
“আমি তো এই এলাকারই মেয়ে। আমার যেতে কোন সমস্যা নেই।”
“ঠিক আছে, তাহলে চলুন।”

তিন.
সমুদ্রের তীর ঘেঁষে চুপচাপ হেঁটে চলছে দুজন। যারা বিচে এসে হৈ হল্লা করছিল, তাদের সবাইকে ওরা পেছনে ফেলে এসেছে। এদিকটায় কেউ নেই। একেবারে নির্জন।

“চলুন, এবার ফেরা যাক।”তূর্য মুনকে বলে।
“কেন? মাত্রই তো এলাম।”
“প্রায় বারটা বাজে।”
“তো? আপনার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল আপনি অনেক সাহসী।”
“হাহাহা! আমার সাহসের আপনি কতটুকু দেখেছেন? হাউ এভার, আমি আসলে আপনার জন্য বলছি। এত রাতে একা একটা মেয়ে সমুদ্রতীরে এভাবে..”
“তাই, না? আপনার অনেক সাহস? শুধু আমার জন্যই ভয় পাচ্ছেন?”
“কেন? আপনি আমার সাহসের পরীক্ষা নিতে চান?”
“আমার হাতটা ধরে দেখান তো। দেখি আপনার কত সাহস!”

মুন তার হাতটা তূর্যের সামনে উঁচু করে ধরে। তূর্য ‘এটা কোন ব্যাপার হল’ বলে হাতটা ধরতে গিয়ে বাতাসে খামচি দিয়ে বালুতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বালুতে হুমড়ি খেয়ে পড়ায় তূর্য বেশ লজ্জা পেল। মুন মেয়েটা ভালই ট্রিক জানে। স্পর্শ করার ঠিক আগমুহূর্তে হাতটা সরিয়ে নিয়েছে। বালু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে মুনকে কোথাও চোখে পড়ে না তূর্যের। তবে একটু সামনে সাদামত কী যেন একটা পড়ে আছে। সমুদ্রের ঢেউ এসে বারবার ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।

তূর্য পায়ে পায়ে সমুদ্রের দিকে খানিকটা এগিয়ে যায়। একটা মানুষ। এত রাতে! তূর্য আরেকটু কাছে এগোয়। একটা মেয়ে। বেঁচে আছে তো?তূর্য হাঁটু গেঁড়ে মেয়েটার পাশে বসে। আরে, এটা তো মুন। কিন্তু মুনের পরনে তো হলুদের শাড়ি থাকার কথা, এখন সাদা সালোয়ার কামিজ পরে আছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে..কীভাবে? থাক, এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় এখন নয়।তূর্য মুনের শরীরটা ধরে বার বার ঝাঁকুনি দিয়ে মুনের নাম ধরে ডাকতে থাকে।

“মুন, উঠুন। এত রাতে আপনি সমুদ্রে নামতে গেলেন কেন?”

মুনের পুরো শরীর বরফের মত ঠান্ডা আর শক্ত হয়ে আছে। তূর্য প্রথমে মুনের একটা হাত ধরে পালস পরীক্ষা করে দেখে। নেই! এবার বুকে মাথা চেপে হার্টবিট শোনার চেষ্টা করে। নেই!তাহলে কী..তাহলে কী..!সমুদ্রের পাড়ে এই প্রচণ্ড বাতাসের মধ্যেও তূর্য দরদর করে ঘামতে শুরু করে।

“কী, আপনার নাকি অনেক সাহস? শেষ পর্যন্ত ভয় পেয়ে গেলেন তো! হিহিহি!”চোখ খুলে ময়লা কালশিটে পড়া দাঁতগুলো বের করে মুন অপার্থিব গলায় হেসে ওঠে।প্রচণ্ড ভয় নিয়ে তূর্য তাকিয়ে দেখে মুনের দুটো চোখই ধবধবে সাদা। সেখানে কালো মণির কোন অস্তিত্ব নেই।

এরপর তূর্যের আর কিছু মনে নেই। কারণ সে জ্ঞান হারিয়ে বালুর ওপর লুটিয়ে পড়েছে।

সেদিন অনুষ্ঠান শেষে তূর্যের বন্ধুরা তূর্যকে সমুদ্রতীরে অজ্ঞান অবস্থায় খুঁজে পায়। জ্ঞান ফিরে সুস্থ্য হবার পর মেয়ের বাড়ির দেয়ালে ঝোলানো পারিবারিক একটা ছবি দেখে সে জানতে পারে, মুন মৌয়ের (যার বিয়ে হচ্ছে) ছোটবোন ছিল। গত বছর সমুদ্রে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে গোসল করতে গিয়ে ভাটার টানে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মুনের লাশটা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

--সমাপ্ত--
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাহাবুব রহমান বেশ ভালো লাগলো
মোঃ মোশফিকুর রহমান বেশ ভাল লেগেছে, আপনার জন্য শুভ কামনা
আবু আরিছ ভূতের প্রধান যে বৈশিষ্ট্য তা হলো পাঠকের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে, এটাতো আপনি কালারস বাংলার নাগিনের কান্ড করে ফেললেন....
Fahmida Bari Bipu আপনার 'অলিক' সংখ্যার লেখাটি পড়েছিলাম। মন্তব্য করা হয়ে ওঠেনি। বেশ ভাল লেগেছিল গল্পটি। তবে এবারের গল্পটা ঠিক জমে উঠলো না যেন। একজনের ওপরে সন্দেহের তীরটাকে ধরে রেখে সম্পূর্ণ সন্দেহ না হওয়া আরেকজনকে ভূত বানিয়ে ফেলার কৌশলটা আসলে পুরনো। উপস্থাপন কিছুটা দুর্বল মনে হয়েছে। আর গল্পের নামকরণ নিয়ে আরেকটু ভাববেন আশা করি। শুভকামনা আগামীর জন্য।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

শিশুকাল থেকেই ভয় অনুভ‍ূতিটার সঙ্গে আমাদের পরিচয়। মানব মনে যা কিছু অজানা, তা থেকেই তার মাঝে ভীতি সঞ্চারিত হয়। যেসব জিনিসের ব্যাখ্যা আমাদের মস্তিষ্ক দিতে পারে না, সেসব জিনিসকে আমরা ভয় পাই। এমনি ব্যাখ্যাতীত একটি ঘটনা নিয়ে আমার গল্পটি লেখা হয়েছে। যার শেষাংশ মনে কিছুটা হলেও ভীতি বা ভয়ের সঞ্চার করবে।

৩১ আগষ্ট - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪