চোরাডাক্তার

কাঠখোট্টা (মে ২০১৮)

ARJUN SARMA
  • ১৭৬
সুখীবিলাসের সুখের সজ্ঞা সতন্ত্র ।এমন বিচিত্র নাম ও স্বভাবের বেহায়া লোক এ গ্রামের কেউ আগে দেখে নি ।লজ্জা ,ঘৃণা ,ভয় –এই তিনটের কোনটাই তার নেই । নামটাও নকল করা কিনা তাতেও সকলের সন্দেহ । মুখ-ব্যাদান-করা হাসির পেছনে যে কী মতলব আছে তা ঝানু পন্ডিতও টের পাবে না ।গ্রামের সবচেয়ে ধূর্ত লোক হারু সামন্তকেও নাকানি চোবানি খাইয়ে দিয়েছে এই বিলাস ডাক্তার । এই নামেই সে পরিচিত হয়েছিল প্রথমে । মুক্তিযুদ্ধের রিফিউজির ঢলের সঙ্গে এসে এ গ্রামে থিতু হয়েছিল । কিছুদিনের মধ্যেই রিফিউজি ক্যাম্পে তার নাম ছড়িয়ে পড়ল ডাক্তার হিসেবে । হাতযশ ভাল । এতদিন ছিল সবেধন নীলমণি হারান ডাক্তার । তার হামবড়া ভাব,তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলা আর মুখ ঝামটায় সবাই অতিষ্ঠ । আগে পয়সা না রাখলে ঔষধ তো দেবেই না , আবার কথায় কথায় খ্যাঁকানি মারে । এর চেয়ে এই বিলাস ডাক্তার অনেক ভাল ।

কিছুদিন যেতেই বিলাস ডাক্তারের হাতযশের সাথে অন্য যশের খবরও চাউর হয়ে গেল । বিলাস ডাক্তার ধূর্ত , বিলাস ডাক্তার চিটিংবাজ এবং আরো পরে প্রকাশ পেল বিলাস ডাক্তার চোর । এসব একসঙ্গে একদিনে প্রকাশিত হয় নি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন লোক তাদের অভিজ্ঞতার কথা হাটবারে চা-দোকানের গরম আড্ডায় ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে পরিবেশন করে একেবারে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে । কিন্ত তাই বলে জ্বরজারি, সর্দিকাশি ,ব্যাথা বেদনা বা আরো বাড়াবাড়ি হলে ওষুধ নিতে বিলাস ডাক্তারের কাছে যেতে পিছপা হয় না । কারণ বিলাস ডাক্তার স্যালাইন দিতে জানে , সেরা মিক্সার বানিয়ে দিতে পারে ,নাড়ি দেখতে পারে নিঃখুত এবং ইঞ্জেকশন দিতে পারে ব্যাথা না দিয়ে । সুবল বৈরাগীর ধেড়ে মেয়ে হারাণ ডাক্তারের কাছে ইঞ্জেকশন নিতে গিয়ে মূর্ছা গিয়েছিল । সে কিছুতেই আর ইঞ্জেকশন নেবে না ।বিলাস ডাক্তার বলল ,মা তোকে কখনো পিঁপড়ে কামড় দিয়েছে ? মেয়েটি মাথা নাড়ে । তুই শুধু বাইরের ঐ ফুলগাছটির দিকে চেয়ে থাক । দেখ কেমন সুন্দর ফুল ফুটেছে ওই গাছে । দেখবি তোকে একটা পিঁপড়ে একটু কুট্টুস করে হয়তো বা কামড়ে চলে গেছে । এসব বলতে বলতেই কখন ইঞ্জেকশনটা পুশ করে দিয়েছে মেয়েটি টেরও পেল না । সুবল এই ঘটনা রাষ্ট্র করে দিল ।
যুদ্ধশেষে নূতন বাংলাদেশ হল । বিলাস আর সেদেশে যাবে না । ছেলে রনি এবং পনিকে রামু মাস্টারের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে । রামু মাস্টার খুব কড়া , বেশ নাম । মাটির খোলার ছোট টুকরো কপালে রেখে সুর্যের দিকে তাকিয়ে থাকা সহ অন্য অনেক শাস্তির চেয়েও নাকে খত দেওয়ানো রামু মাস্টারের বিশেষ পছন্দ । রামু মাস্টার যা একবার বলে তা করে ছাড়ে ।
ডাক্তারের পসার বাড়লে হাটে ঢোকার মুখে একটা টিনের ছোট্ট ঘর তুলে সাইনবোর্ডে লিখে দিল – ডাক্তার সুখীবিলাস । হাটবারে বিলাসের ‘চেম্বার’ গমগম করে । কেউ এসে বলে, ডাক্তার গা ম্যাজ ম্যাজ করছে , দুটো বড়ি দাও । কেউ বলে , জ্বর জ্বর লাগছে ,তোমার ঐ মিক্সারটা দাও। বিলাস রোগীর শিশিতে মিক্সার ঢুকিয়ে দাগ কেটে বলে, একদাগ করে তিন বেলা খাবে । কেউ বলে , খুব গ্যাস হয়েছে , তোমার হলুদ রঙের ট্যাবলেট দাও দুটো । সবাই যে নগদ পয়সা দেয় তা নয় । কেউ একহাটে ওষুধ নিয়ে পরের হাটে পয়সা দেয় , কেউ পরের পরের হাটে । তবে বাকী পড়ে গেলে রোগীর বাড়ি ছুটে গিয়ে পয়সা আদায় করতে বিলাস সুদক্ষ।
একদিন সুরেশ রেশন তুলে চালের বস্তাটা ডাক্তারের চেম্বারে রেখে বলল , ডাক্তার দেখো তো , আমি যাবার সময় নিয়ে যাবো । পরদিন সুরেশের বৌ বলল , তোমার বস্তায় দশ কেজি চাল কিছুতেই হবে না । রেশনের লোকটা তোমাকে প্রতিদিন ঠকায় । সুরেশ রেশন ডিলার কানুকে বলতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল , কী , আমি মানুষ ঠকাই ! কোন বাপের ব্যাটা বলতে পারবে না কানু লোক ঠকায় । শেষে মাতব্বর গোছের নেপাল বলল ,যা হয়েছে হয়েছে , কানু ভবিষ্যতে সাবধান থেকো । কানুও ঢোক গিলে নিল । কারণ তার অনেক ব্যাপারে দুর্বলতা আছে । ল্যাংড়া নিশি সুরেশকে ডেকে বলল যে তারও একদিন এমন হয়েছে । দুজনে রেশনের কর্মচারী তমালকে ধরল । তমাল বলল, আমি আমার ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলতে পারি আমি মাপে কম দিই না । এটা আমার ধর্মে সইবে না । তখন দুইজনের সন্দেহ পড়ল বিলাস ডাক্তারের উপর । পরীক্ষা করার জন্য আর একদিন দুইজনে একসাথে চালের ব্যাগ বিলাসের ঘরে রেখে দূর থেকে নজর রাখল । দেখল বিলাস সুযোগ বুঝে দরজা ভেজিয়ে চালের ব্যাগ খুলে চাল বের করছে । হাতে নাতে ধরে ফেলে মুখে যা আসে তাই বলল নিশি । সুরেশ তো প্রায় গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিল । বিলাস দুইজনের পায়ে ধরল, কান ধরল । ওরাও ছেড়ে দিল । কিন্তু কথাটা পাঁচকান হল ।
ধীরে ধীরে ডাক্তারের চুরিবিদ্যার অনেক নিদর্শন মিলল । অন্যের ক্ষেতের সিম , মুলো ,কলা ,পেঁপে ,খেজুর গাছের রস , এমন কি নারকোল ডাবও চুরি্র নায়ক বিলাস ডাক্তার এটা সাব্যস্ত হতে বেশীদিন লাগে নি । রোগীর বাড়ি গেলে সবার অলক্ষ্যে কখন যে ঘড়িটা , কলমটা হাতসাফাই করে দেয় কেউ টের পায় না । বিলাসের নাম হয়ে গেল ‘চোরাডাক্তার’ । কেউ তাকে বিশ্বাস করে না । কখনো ধরা পড়লে কান ধরা , পায়ে পড়া এসব তার কাছে জলভাত । উত্তম মধ্যমও পড়ে মাঝে মাঝে , কেউ গালমন্দ করে , গলাধাক্কা দেয় । বিলাস এসব ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয় । থানায় জানিয়েও বিশেষ কিছু হয় না ।বিলাস উল্টো প্যাঁচে দ্বারোগাকে বুঝিয়ে দেয় তার বিরুদ্ধে চুরির কোন প্রমাণ নেই ।
কারো বাড়ি রোগী দেখতে গেলে সকলে চোখে চোখে রাখে । চেম্বারে গেলে পকেটে হাত দিয়ে রাখে , কারণ সবার ভয় কোন যাদুমন্ত্রবলে চোরাডাক্তার হয়তো পকেটের টাকাটা বের করে নেবে ।
দুটো মারাত্মক ঘটনা চোরাডাক্তারের নামের মর্যাদাকে আরো পোক্ত করেছে । রামু মাস্টার শহর থেকে বাসে করে ফিরছিল । সিটে বসতে গিয়ে দেখে চোরাডাক্তার তার পাশের সিটে বসেছে । তার সাথে কথা বলার রুচি মাস্টারের নেই । কিন্তু বিলাস তার মুখ-ব্যাদান করে দেঁতো হাসি দিয়ে বলে ,মাস্টারদা বুঝি শহরে এসেছিলেন ? রামুমাস্টার তার মুখ-খোলা বিশাল ব্যাগটা দুপায়ের মাঝে রেখে হুঁ গোছের কিছু একটা শব্দ করে চোখ বুঝে রাখে । সারা পথে একটাও কথা বলে নি । সন্ধ্যা হয়ে গেছে । বাড়ি এসে ব্যাগের জিনিসপত্র গোছাতে গিয়ে মাস্টারের চক্ষুস্থির । চকোলেটের একটি বয়াম নেই । মনে করে দেখল দোকানী গুণে গুণে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছিল সব । বিদ্যুৎ খেলে গেল মাথায় , এ নির্ঘাত চোরাডাক্তারের কাজ । ভোরে উঠেই হাঁটা দিলেন । ডাক্তারের বাড়ির সামনে যেতেই দেখে রনি পনি চকোলেট খেতে খেতে উঠোনে খেলছে । মাস্টারকে দেখেই পালাচ্ছিল । রামু মাস্টার ডাকে ,
-এই রনি পনি , কী খাচ্ছিস ?
-চকোলেট ।
-কে দিয়েছে ?
-বাবা ।
-তোর বাবাকে ডাক ।
বেরিয়ে এল ডাক্তার , সেই দেঁতো হাসি । মাস্টারের মাথায় খুন চেপে গেল । বলল,
-কি ডাক্তার , চকোলেট কোথায় পেলে ?
-আমি কিনেছি ।
-মিথ্যে কথা । তুমি আমার ব্যাগ থেকে চুরি করেছ গাড়িতে । স্বাধীনতা দিবসের জন্য আমি দুই বয়াম চকোলেট কিনেছি ।
-কি যে বলেন ?
-এই রনি , আর আছে চকোলেট ?
-হ্যাঁ , অনেক ।
-নিয়ে আয় । দুই ভাই অবাধ্য ছাত্রের মতো চকোলেটের বয়ামটা আনে । দেখেই মাস্টার হুঙ্কার ছাড়ে,
-এই তো আমার কেনা বয়ামের একটা । তুমি এক বয়াম চকোলেট জীবনে কিনেছ ? বিলাস চুপ করে থাকে । মাস্টার তার বিদ্যেবুদ্ধি ভুলে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগাল করে বলে, তোমাকে পুলিশে দেব । পুলিশের কথা শুনে ডাক্তারের বৌ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হাউ মাউ করে মাস্টারের পায়ে ধরে বলে, না মাস্টারদা পুলিশে দেবেন না , আপনার বয়াম আপনি নিয়ে যান আর যা খুশি শাস্তি দেন , শুধু পুলিশে দেবেন না ।
ততক্ষণে রামু মাস্টারের ব্রহ্মতালু ফেটে আগুণ বের হয়ে গেছে । বলে, এই ডাক্তার এদিকে এসো । একটা শাস্তি তোমায় পেতেই হবে । এই উঠোনে নাকে খত দিয়ে তোমাকে বলতে হবে জীবনে আর কোনদিন এসব করবে না । একটু গাঁইগুঁই করে বিলাস ডাক্তার অবলীলায় ছেলে বৌয়ের সামনে নাকে খত দিয়ে দিল । রামু মাস্টার বয়াম নিয়ে চলে গেল ।
দ্বিতীয় ঘটনাটা গোঁয়ার-রাখালের সঙ্গে । তার ছেলের জ্বর সারছে না । চোরাডাক্তারের ওষুধ খাওয়াচ্ছে । রাখালের ভায়রার ছেলে ওষুধ দেখে বলল , মেসো , সর্বনাশ , এই ওষুধের তো এক্সপায়ারী ডেট চলে গেছে , নষ্ট হয়ে গেছে ,শরীরের ক্ষতি করে দিচ্ছে ।গোঁয়ার রাখাল ক্ষেপে লাল হয়ে বলল , দাঁড়া, চোরা ডাক্তারের ডাক্তারি আজকে ঘুচিয়ে দেবো । ছুটল ডাক্তারের চেম্বারে । গিয়েই হুঙ্কার , শালা ডাক্তার , তোর ডাক্তারি আজকেই শেষ । ডেট-পার-হওয়া ওষুধ দিয়েছিলি? তোর বাবার নাম ভুলিয়ে দেব । বলেই কিল ,ঘুষি , চড় , থাপ্পড় , লাথি চালাতে লাগল ফটাফট । হাটবার হওয়ায় আরো দু-একজন হাতের সুখ করে নিল । অনেকদিন ডাক্তার গায়ের ব্যথায় শয্যাশায়ী হয়ে থাকল । সকলে ডাক্তারের ওষুধ সম্পর্কে সাবধান হয়ে গেল ।
বিশু ঘোষালরা গাঁয়ের বড়লোক ,শিক্ষিত । সকলে শ্রদ্ধা করে । বিশুর অশীতিপর মা’র খুব অসুখ । বিশু বিলাস ডাক্তারকে বাড়ি এনে বলল , ডাক্তার আমার মাকে ভাল করে দাও । বাড়িতে আমি আর তোমার বৌদি ছাড়া কেউ নেই এখন । ডাক্তার দেখল ,ওষুধ দিল । বিশু ট্যাবলেটের পাতা হাতে নিতেই বিলাস বলল , বিশুদা বিশ্বাস করো এই ওষুধের ডেট ঠিক আছে , ভাল ওষুধ । বিশুর বৌ ডাক্তারের জন্য এলাহি জলখাবার নিয়ে এল । রাত হয়ে গেল । বিলাস বাড়ি থেকে দুটো স্যালাইন নিয়ে এল , একটা লাগিয়ে দিল । বিশু বলল ,ডাক্তার তুমি রাতে এখানেই থেকে যাও। স্যালাইন শেষ হতে অনেক রাত হয়ে যাবে । পাশের খাটে ঘুমোতে পারবে । বিলাস চোখ ঘুরিয়ে দেখল ঘরে অনেক দামি দামি জিনিস । ঘড়িই আছে তিনটে ,দুটো দেয়ালে , একটা টেবিলে । কাচের আলমারিটা ভর্তি সব দামি দামি শাড়ি , আরো কত কি ! তার বুক কেঁপে উঠল । রাতের খাবার খেল বিশুদের সাথে । অনেকক্ষণ বিশুও বসে রইল মা’র কাছে । শেষে বলল, ডাক্তার আমি উঠি । তুমি মাকে দেখো । আমরা পাশের ঘরেই আছি । এটা শেষ হলে পরের স্যালাইন লাগিয়ে দিও । ডাক্তার, আমাদের বিশ্বাস আছে তোমার প্রতি । মা ভাল হয়ে যাবেই । ধরো এই টাকাটা এখন রাখো । হঠাৎ বিলাস ডাক্তার বিশুর হাত ধরে ভ্যাল ভ্যাল করে কেঁদে ফেলল , বিশুদা , আমি এই ঘরে একা থাকতে পারব না। তুমিও থাকো । তোমরা আমাকে এতটা বিশ্বাস করো ! আমার মতো একজন চোরকে এত সম্পদের মাঝে ছেড়ে দিয়ে যাছো ? আমি পারবো না একা থাকতে । বিশু বলল, দূর পাগল, ওখানে বসো তো। স্যালাইনটা শেষ হলে খেয়াল রেখো কিন্তু । বলে বিশু চলে গেল ।
বিলাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘরের প্রতিটি জিনিস খেয়াল করে দেখল । এই প্রথম সে অনুভব করল এই ঘরের একটা জিনিসও তার দরকার নেই । সে চোখ মুছে টেবিলে বসে স্যালাইনের ওষুধের ফোঁটা ফোঁটা পতন লক্ষ্য করে সেদিকে তাকিয়ে রইল ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাহমুদুল হাসান গল্প খুব সুন্দর হয়েছে
ARJUN SARMA ধন্যবাদ, ভালো থাকুন।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পের ভিতরে মজার বেশ জমাট বেঁধেছে। আর গল্পের চারিত্রিক বর্ণনা ও ধারাবাহিকতা খুব মনোমুগ্ধকর। অনেক ভালো লেগেছে কবি। শুভেচ্ছা নিবেন কবি। শুভকামনা....
অমিত কুমার দত্ত খুব ভাল লাগল গল্পটি পাঠ করে। ভাল থাকবেন কবি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, অনুপ্রাণিত হলাম, ভালো থাকুন।
প্রজ্ঞা মৌসুমী হারু সামন্ত চরিত্রটাই যখন নেই, তখন ’গ্রামের সবচেয়ে ধূর্ত লোক হারু সামন্তকেও নাকানি চোবানি খাইয়ে দিয়েছে’ বলাটা অপ্রয়োজনীয় নয় কি? গল্পে তো মনে হচ্ছিল উল্টো ডাক্তারই নাকানি চুবানি খেল। চকলেটের জন্য পুলিশে দেবে পড়ে বেশ হেসেছি। সুখীবিলাসি চরিত্রটা বেশ। চাইলে ও শ্রদ্ধাই পেতে পারতো। গল্পের শেষটা বেশ। তবে গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলোর চাল মুলো কলম ঘড়ি সাফাই করে এক্সপায়ারড ওষুধ গিলিয়ে বড়োলোকের বাড়িতে সততার পরাকাষ্ঠা দেখানো বিরক্তিকর। বিশুর ডাক্তারের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল না, ছিল নিজের উপর বিশ্বাস। ও জানতো এই শূন্য ঘরে ছ্যাচড়া চোর চুরি করে পার পাবে না, সাহসও হবে না।
আপনার বিশ্লেষন মাথা পেতে নিলাম।দারুণ পাঠিকা।উপকৃত হলাম।আসলে বড়লোকের বাড়ি একটা সুত্র মাত্র।যেকোন বাড়িতেই ঘটনাটা ঘটতে পারতো।তবে এটা ঠিক যে সুখিবিলাসের পরিবর্তনটা দ্রুত হয়ে গেছে।কিন্তু সেটা অবশ্যম্ভাবী ছিল।আপনার মতো মনোযোগী পাঠিকা আমার জন্য উপকারী।ভালো থাকুন।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত আপনাকে স্বাগতম গক তে । ধন্যবাদ সুন্দর একটি লেখা উপহার দেবার জন্য । ভবিষ্যতে আরও সুন্দর লেখা পড়বার অপেক্ষায় রইলাম । ভালো থাকবেন । ভোট সহ শুভকামনা রইল ।
ধন্যবাদ।ভালো থাকুন।সুন্দর মন্তব্য আর আমাকে ভোট দেবার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।ভবিষ্যতে আরো অনুপ্রেরণা পাবো আশা রাখি।
Fahmida Bari Bipu আপনার গল্পটা ভাল লাগলো। আগে লেখা পড়েছি বলে মনে করতে পারলাম না। লেখাটাতে যতিচিহ্নের একটা সমস্যা দেখলাম। আপনি যতিচিহ্নের আগে ও পরে স্পেস দিয়েছেন। সম্ভবত যতিচিহ্নের পরে স্পেস দিলে ভালো হতো। এই সংখ্যার গল্পগুলোর মধ্যে আপনার লেখাটি অন্যতম ভাল লাগলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।আমি আগে এখানে লিখিনি।এই প্রথম লিখলাম।আপনার 'অন্যতম ভালো লাগলো' মন্তব্য আমাকে আরো লিখতে সাহায্য করবে।ভালো থাকুন।ভবিষ্যতে এভাবে অনুপ্রাণিত করবেন।
মৌরি হক দোলা ‘বিলাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘরের প্রতিটি জিনিস খেয়াল করে দেখল। এই প্রথম সে অনুভব করল এই ঘরের একটা জিনিসও তার দরকার নেই।’.................গল্পটি খুব ভালো লাগল। তার চেয়ে বেশি ভালো লাগল বিলাস ডাক্তারের শুভ বুদ্ধির উদয়। অনেক অনেক শুভকামনা রইল......

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

প্রত্যেক মানুষের দুটো সত্ত্বা আছে ।একটা বাহ্যিক-এটাই সবাই দেখে,বিচার করে।দ্বিতীয়টা হল–আভ্যান্তরীণ,বাইরে থেকে বুঝা যায় না।এটা ভিতরে ফল্গুধারার মতো বয়ে চলে।উপযুক্ত পরিবেশ পরিস্থিতির সম্মুক্ষীণ হলে এটা প্রকাশিত হয়ে যায়।যে মানুষকে আপাত দৃষ্টিতে ‘কাঠখোট্টা’ বলে মনে হয় তার ভেতরেও কোমলতা থাকে,আবেগ থাকে।সেও বাইরের ‘কাঠখোট্টা’র আবরণ খসিয়ে কাঁদতে পারে,অন্যরকমভাবে ভাবতে পারে।সমাজে তথাকথিত কাঠখোট্টারা যদি কারো কাছ থেকে আদর পায়,বিশেষ মর্যাদা পায় তাহলে তারা আর কাঠখোট্টা থাকে না।এই গল্পে সুখীবিলাস একেবারেই ‘কাঠখোট্টা’।তার লজ্জা নাই,ভয় নাই,ঘৃণাও নাই।সে তার দুষ্ট বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে কাজ হাসিল করে নেয়।গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার হিসেবে তার হাতযশ ভাল।এটাকে কাজে লাগিয়ে সে লোকের সাথে প্রতারণা করতে দ্বিধা করে না।তার হাত কাঁপে না চুরি করতে।‘কাঠখোট্টা’বলেই সে কারো অপমান গায়ে মাখে না।একহাট লোকের মাঝখানে সে উত্তম মধ্যম খেয়েও শোধরায় নি।বেরসিক,বন্ধুহীন,প্রায় আসামাজিক সুখীবিলাসকে সবাই একঘরে করে রেখেছে।শুধু তার ওষুধের জন্য লোকে তাকে মেনে নিত,কিন্তু সদা ভয়ে ভয়ে থাকতো,কখন কোন ফাঁকে সে ফতুর করে দেয়।সে যে কেমন ‘কাঠখোট্টা’ আর বেহায়া তার প্রমাণ হল রামু মাষ্টারের চকোলেটের বয়াম চুরি করা।ধরা পড়ে গেলে সন্তান আর স্ত্রীর সামনে নাকে খত দিতেও তার বাঁধে নি।এহেন সুখীবিলাস কেঁদে ফেলে গ্রামের বড়লোক বিশু ঘোষালের মাকে রাত জেগে স্যালাইন দিতে গিয়ে।বিশু ও তার বৌয়ের ব্যবহার তার ভিতরের,‘কাঠখোট্টা’-আবরনের অভ্যন্তরের সুখীবিলাসকে জাগিয়ে দেয়।ঘরের দামী জিনিষপত্রের মাঝখানে একা থাকতে সে রাজী হয় না।বিশু ও তার বৌ সুখীবিলাসকে পরম বিশ্বাসে ঘরে একা ছেড়ে দেয়।সে ঐ বিশ্বাসের ভার বইতে গিয়েই কেঁদে ফেলে।তার ভিতরের কোমলতা জেগে উঠে।‘কাঠখোট্টা’র খোলস খসে পড়ে। তাই গল্পটি বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ।

০৮ এপ্রিল - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী