জার্নি বাই বাস

ভয় (সেপ্টেম্বর ২০২২)

Jamal Uddin Ahmed
মোট ভোট ২০ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৮৭
  • ১৯৯
হাশেমের তাড়াহুড়োর জন্য ভুলটা হয়ে যায়। ওই খাটাশটা দেরি করে এসেই গোল পাকিয়ে দিয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে হুড়মুড় করে বাসে উঠে ‘বস বস’ বলে ডানপাশের দুটি সিটে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে বসে পড়ে। আমাদের বাঁপাশের সিট দেখিয়ে বসতে ইশারা করে। আমি গালাগালি বিরতি দিয়ে লিলিকে নিয়ে বসে পড়ি। হাশেমের স্ত্রী মিরানা বসতে বসতে বলেছিল, ‘আমরা মেয়েমানুষ একসাথে বসলে ভাল হয় না?’ হাশেম বলেছে, ‘হবে হবে, পরে চেঞ্জ করা যাবে, এখন বসে পড়।’

ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলেও সুপারভাইজার বলল, ‘এক মিনিট উস্তাদ, আমি অফিস থেকে চেক করে আসি। দুই সিট খালি।’

ড্রাইভারকে একটু বিরক্ত মনে হল, সে বলল, ‘তাড়াতাড়ি করেন।’

সুপারভাইজারকে অফিস কাউন্টারে যেতে হয়নি। ইতিমধ্যে একজন পুরুষ ও একজন মহিলাকে একটি কার থেকে নেমে ঝড়ের বেগে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। মহিলা প্রায় দৌড়ে দৌড়ে ছুটে আসলেও স্থূলাকার ভদ্রলোক একটি ট্রলি ব্যাগ টেনে আনতে আনতে পেছনে পড়ে যান। মহিলা প্রায় চিৎকার করে বলেন, তাড়াতাড়ি আসতে পার না? তোমাকে নিয়ে যত ঝামেলা।’ মহিলার শাসানিতে বোঝা যায় পুরুষ লোকটি হয়তো তার একান্তবাধ্য স্বামী।

গ্রীনলাইন বাসের পোর্টার ছেলের হাতে ট্রলি ব্যাগ ছেড়ে দিয়ে বাসের শেষ দুই যাত্রী হন্তদন্ত হয়ে বাসে ওঠেন। হাশেম এই ফাঁকে চোখের ভুরু উঁচিয়ে আমাকে বোঝাতে চায় তার চেয়ে লেটের যাত্রীও আছে। আমি মনে মনে বলি ‘রাখ, তোর ধোলাই এখনও বাকি আছে।’

আমাদের পেছনের সিট দুটিই খালি ছিল। ভদ্রমহিলা বাসে উঠেই গটগট করে খালি আসনে বসে পড়েন। ভদ্রলোক বসতে গিয়ে একটু ইতস্তত করছেন দেখে ভদ্রমহিলা চড়া গলায় বলেন, ‘বসছ না কেন?’ সাথে সাথে বাসের সুপারভাইজারও বলে, ‘স্যার, বসে পড়ুন, গাড়ি ছেড়ে দিবে।’

ভদ্রলোক পকেট থেকে বাসের টিকেট বের করতে করতে বলেন, ‘একটু দাঁড়ান, আমাদের সিট তো মনে হয় এটা না।’

সুপারভাইজার টিকেটটি হাতে নিয়ে বলে, ‘হ্যাঁ, তাই, আপনাদের বি-১-২, সামনেরটা।’

দেরি করে আসার জন্য হাশেমের ওপর এমনিতেই ক্ষেপে আছি। এখন সিট বিভ্রাটে তার ওপর আমার রাগ দ্বিগুণ হল। কারণ সে-ই টিকেট কিনেছে; আবার ভুল সিটে সে-ই বসিয়েছে। সুপারভাইজার যখন বলল ‘স্যার, আপনাদের পেছনের সিটে আসতে হবে’, তখন আমি হাশেমকে একটা ঝাড়ি দিলাম, ‘কিরে, তুই টিকেট নম্বর জানিস না?’

হাশেম সিট থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলে, ‘কেন? ঠিকই তো আছে।’বলে, সে পকেট থেকে টিকেট বের করে বৃথা মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে বলে, ‘স্যরি দোস্ত, খেয়াল করিনি, তোদের সি।’ তারপর ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওনাদের অসুবিধা না হলে…।’

হাশেমের কথা শেষ হবার আগেই ভদ্রমহিলা লাফ দিয়ে সিট থেকে উঠে বলেন, ‘না না, আপনারা আপনাদের সিটেই বসুন।’

আমার হাশেমকে চিবিয়ে খাওয়ার ইচ্ছে হলেও গবেটের মতো লিলিকে বললাম, ‘ওঠ, সিট পাল্টাই।’

আমি সিট থেকে ওঠার সময়ই প্রথম ভদ্রমহিলার মুখোমুখি হই। তিনি সুরম্য চশমার কাচের ভেতর থেকে আমার মুখের দিকে শান্তভাবে তাকান। কিন্তু আমি তাকাতে গিয়েই চমকে উঠি।

লিলিও এই অযাচিত খ্যাঁচম্যাচরে বিরক্ত হয়ে পড়েছে। সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘দাঁড়িয়ে আছ কেন, বসতে দাও।’

আমি তখন তৎপর হয়ে বলি, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আস, বসে পড়।’ বলে, ভদ্রমহিলাকে পাশ কাটিয়ে সামনে গেলে লিলি বিরক্ত মুখে সি-১ আসনে বসে পড়ে। আমি কটমট করে একবার হাশেমের ক্যাবলাকান্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে বসে পড়ি।

আমাদের আগ্রহেরও কমতি ছিল না। তবে হাশেমেরই লাফালাফি বেশি ছিল। সে লিলিকে ফুসলিয়ে তড়িঘড়ি করে আজকের এই যাত্রার ব্যবস্থা করেছে। আমি বলেছিলাম, যাবই যখন তখন একটু প্ল্যান করেই যাই। কিন্তু হাশেম গাড়লটা কিছুটা হুজুগপ্রিয়। সে বলল, ‘প্ল্যান-ট্যান বাদ দেয়, ওসব আমি দেখব।’তার তেমন পিছুটান নেই; তার একমাত্র ছেলে কলেজপড়ুয়া। বাসায় একা থাকার অভ্যেস আছে। তাছাড়া ফ্রিজে দুতিন দিনের খাবার রান্না করে রাখা আছে, ছেলের কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু আমাদের দুটোই মেয়ে; একটি কলেজছাত্রী, অন্যটি এবার ক্লাস টেনে। আমার মা যদিও ভাল সামাল দিতে পারবেন তবুও দুশ্চিন্তা থেকেই যায়।

গাড়ি ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই শান্ত হয়। তবে আমার স্ত্রী স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশি শান্ত। আমার সাথে কোনো কথা বলছে না। মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বলেছে একবার; সাবধানে থাকার জন্য উপদেশ দিয়েছে, এই যা। আমিও কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছি না। তাছাড়া সঙ্গত কারণে একটু ভয় ভয়ও করছে। আসলে মহিলাদের একপাশে ছেড়ে আমি আর হাশেম একসাথে বসতে পারলে ভাল হত, ওকে একটু বকাঝকাও করতে পারতাম।

কিছুক্ষণ পর অনেকে ঝিমুতে আরম্ভ করলেও আমাদের সামনের সিটের যাত্রীযুগল বিভিন্ন বিষয়ে থেমে থেমে কথা বলেই চলেছেন। পুরুষকণ্ঠ ততটা উঁচু না হলেও মহিলাকণ্ঠে মাঝেমাঝে উষ্মার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তাদের আলাপচারিতায় আমার কান দেয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই। আমার সমস্যা অন্যখানে।

রাজারবাগে বসে যখন হাশেম দম্পতির জন্য উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম তখন লিলি বলেছিল, ‘ওই পাগল লোকটার পাল্লায় পড়ে ভুলই করলাম কিনা কে জানে।’আমি তখন তার কথা লুফে নিয়ে বলেছিলাম, ‘এবার বোঝো, কোনো পরিকল্পনা নেই, জুৎযোগাড় কিছু নেই, তুমি তার কথার তুবড়িতে একেবারে গলে গেলে। কোথায় যাব, কোথায় থাকব এসব কিছুই সে বলল না। শুধু সিলেটে যাব আর ঘুরে ঘুরে রাতারগুল, বিছানাকান্দি, জাফলং, লালাখাল, মাধবকুণ্ড আরোও কীসব জায়গার নাম বলল – ওসব দেখব বলেই মাথা গুলিয়ে দিল।’ওসব নিয়ে কথা বলতে বলতেই শেষ মুহূর্তে যদিও তারা এল, বাসের সিট নিয়ে ঘটাল বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড। আমরা আমাদের সঠিক আসনে বসে পড়লে তো লেটের দম্পতির সাথে ঝামেলা করতে হতো না। আর আমাকেও থমকে দাঁড়াতে হতো না।

পথে যাত্রাবিরতি আছে। বাস থামবে উজানভাটি হোটেলে। ওখানে যাত্রীরা বাস থেকে নেমে চড়া দামে স্ন্যাকস কফি এমনকি মাছ-মাংস দিয়ে পেট পুরে ভাতও খাবে। বাস না থামলে যাত্রীদের খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু না, বাসের স্টাফরা ফ্রি খাবার খাবে বলেই তারা বিরতি দেবে। অবশ্য এটা হাইওয়ে রেস্তোরাঁর সাথে বাস মালিকদের চুক্তিরই ফল। বাস থামলে যাত্রীরা নামবেই এবং অকারণেই ওয়ালেট হালকা করবেই। তবে এই বিরতির ভাল একটা দিক হল, কিছু যাত্রী তাদের অতি জরুরি শৌচকর্ম সারতে পারে। আমি নিজেও একটু চাপ অনুভব করছি। কিন্তু আমরা এখনও উজানভাটি থেকে খানিকটা দূরে আছি। নরসিংদীতে। ভৈরব ব্রিজ পাড়ি দিয়ে ওপারে গেলেই তবে উজানভাটি। পণ করেছি উজানভাটিতে নেমেই উল্লুক হাশেমকে রামধোলাই দেব। একথা ভাবতেই মেঘের মতো এক কাল ছায়া আমার মাথার ওপর ঘুরতে থাকে। আমার উত্তেজনা নিমেষে মিইয়ে যায়। উজানভাটিতে নামার পর যদি ওই প্রজাপতির ডানার ডিজাইনের চশমা-পরা ভদ্রমহিলা আমার দিকে এগিয়ে এসে বলেন, ‘ইনি কি তোমার বউ?’ তখন আমার কী হবে? লিলি তখন কি সাথে সাথেই সিন ক্রিয়েট করবে। আর ভদ্রমহিলা যে এত ভদ্রভাবে এমন প্রশ্ন করবেন সে ভরসাই বা কোথায়। তিনি তো প্রজাপতিমার্কা চশমাটি হাতে নিয়ে চোখ থেকে আগুনের ফুলকি ছুটিয়ে বলতে পারেন, ‘ইউ চিট; লম্পট। ভদ্র সেজে বউকে বগলে নিয়ে ঘুরছ।’তখন?

বাসের পেছন দিকে বসা এক বয়স্ক যাত্রী ফ্যাসফ্যাসে গলায় যখন বলল, ‘ভাই, বাস কি থামাইবেন এইখানে…?’ তখন আমার ঝিমুনিটা কেটে গেল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ইতিমধ্যে আমরা ভৈরবে পৌঁছে গিয়েছি। সুপারভাইজারের জানা আছে কখন যাত্রীরা বাস থামানোর তাড়া দেয়। সে বলে, ‘আর পাঁচ মিনিট স্যার; এই তো ব্রিজটা পার হয়ে গেলেই…।’ ওই যাত্রী হয়তো আরোও কিছুক্ষণ চেপেচুপে বসতে পারবে, কিন্তু আমার হঠাৎ করে হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। আমি একবার উঁকি দিয়ে হাশেমের সিটের দিকে তাকাই; না, ওরা চুপচাপ আছে। হয়তো ঘুমাচ্ছে। তারপর সাবধানে লিলির মুখের দিকে তাকাই। বাসের হালকা নীল আলোতে যতটুকু দেখা যায়, তার চোখ বন্ধই দেখলাম। তবে জেগে আছে কিনা বোঝা গেল না।

মিনিট পাঁচেক পরে বাস মোচড় দিয়ে যখন উজানভাটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল তখন আমি শিউরে উঠি। ড্রাইভার বাসের বাতি জ্বালিয়ে দিলে সুপারভাইজার ঘোষণা দিল, ‘যাত্রা বিরতি বিশ মিনিটের জন্য। গাড়ির নম্বর ……।’ ওদিক থেকে হাশেম লাফ দিয়ে উঠে বলে, ‘নাম, ভাবিকে নিয়ে নাম।’ আমি রাঙ্গা চোখ দেখিয়ে বলি, ‘বস, এত তাড়াহুড়ার কী আছে, পরে নামি।’

অন্য যাত্রীরা গাড়ি থেকে নামতে থাকলে আমাদের সামনের সিটের যাত্রীযুগলও গাত্রোত্থান করলেন। আমি মুখ লুকানোর বাহানায় লিলির দিকে ফিরে বলি, ‘চল, একটু হেঁটে আসি। আর চা-টা খেতে চাইলে খেতে পার।’কিছু একটা খাওয়া খুবই স্বাভাবিক এটা তো আমি জানি। আমার কথা বলা প্রয়োজন বলেই কথা বললাম। মাথা ঘুরাতেই দেখি, ভদ্রলোক কয়েক কদম আগে চলে গেলেও ভদ্রমহিলা সেই প্রথমবারের মতো আমাদের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছেন। আমি তাকে না দেখার ভাণ করে হাশেমকে চেঁচিয়ে বলি, ‘এবার ওঠ, নামবি না?’

ভদ্রমহিলা এবার দ্রুতপায়ে নেমে গেলে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। গাড়ি থেকে নামতে নামতে মিরানা ভাবী লিলিকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ভাবী, বাকি পথ কিন্তু আমরা একসাথে বসে যাব। এতক্ষণ কেমন দম বন্ধ বন্ধ লাগছিল।’ লিলি বলে ‘আমারও। চলেন, বাইরে একটু ঘুরে আসি।’

হাশেমের ওপর আমার যে রাগ ছিল তা এখন আর নেই। আর কী এমন আহামরি ঘটনা ঘটেছে যে আমি রাগে ফুঁসব। তাছাড়া সে শুধু আমার কলিগই নয়, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিদেশি এনজিওতে প্রায় একই সময়েই আমরা যোগ দিয়েছি। শুধু কি তাই, ব্যাচেলর সময়ে আমরা এক রুমে থেকেছি, এক সাথে ঘুরে বেড়িয়েছি – কী না করেছি। তবে একটা জিনিস করা হয়নি; একসাথে প্রেম করিনি। মিরানা ভাবীর সাথে হাশেমের পুরনো বোঝাপড়া ছিল। কারমাইকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালীন হাশেম দু’বছর মিরানার গৃহশিক্ষক ছিল। মিরানা দশম শ্রেণিতে থাকতেই হাশেমকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যেতে হয়। তবে সময়ের আবর্তনে তাদের প্রেম পরিপক্ব হতেই থাকে। মা-বাবার আপত্তি থাকলেও হাশেম মিরানার ব্যাপারে অনড় ছিল। একটু দেরিতে হলেও শেষপর্যন্ত নির্ঝঞ্ঝাটে শুভ পরিণয়ের মাধ্যমে তাদের ওই অঙ্কের যবনিকাপাত ঘটে।

গাড়ি থেকে নেমেই হাশেম ঘোষণা দেয় – ‘ওয়াশরুমের কাজ সেরে এসে যার যা পছন্দ ফটাফট খেয়ে নেবে। সময় কিন্তু বিশ মিনিট।’হাশেমের প্রগলভতায় আমার হাসি পায়। ও এমনই। আসর মাতিয়ে রাখতে পারে। তুলনায় আমি অন্তর্মুখী। এ মুহূর্তে অন্তর্মুখীতার সাথে যোগ হয়েছে আতঙ্ক।

আমি বলি, ‘কী খাওয়াবি? রাস্তায় ভারি কিছু খাওয়া যাবে না।’

‘ভারি না খাস, হালকা খাবি।’ হাশেম বলে, ‘ভ্রমণে বেরিয়ে কিছু একটা না খেলে কি হয়?’

আমি সাবধানী চোখে ডান-বা পরখ করে বলি, ‘চল, চল, দেরি হয়ে যাবে।’আবার একটু থেমে বলি, ‘এক কাজ কর, ওদের দোতলার ভিআইপিতে নিয়ে যা। ওদিকে টয়লেট ভাল। আমি এদিকে সেরে নিই।’

হাশেম বলে, ‘তুই যাবি না?’

আমি বলি, ‘আমার এদিকে হয়ে যাবে। তুই তাদের নিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে চলে আসিস, টেবিলে বসে পড়িস না আবার।’

দোতলার দিকে কেন যাব না সেকথা এ মুহূর্তে আমি হাশেমকে বলতে চাই না। আমার ধারণা ওই দম্পতি – দম্পতিই তো হওয়ার কথা, দোতলার দিকে গিয়েছেন। তারপরও চোখ খোলা রেখে আমি চুপিচুপি রেস্টুরেন্টের গণ-টয়লেট ব্যবহার করে দ্রুত বেরিয়ে আসি। মহিলাদের চলাফেরায় সময় একটু বেশি লাগবে জানি। তাই ধুকপুকে বুকে সামনের পার্কিং লটে আমি পায়চারি করতে থাকি। আমার ইচ্ছা, একান্তই যদি কিছু খেতে হয় তবে মূল রেস্টুরেন্টের বাইরের ফুডকোর্ট থেকে ড্রিংকস অথবা আইসক্রিম খেয়ে নেব। অন্যরা অন্যকিছুও খেতে পারে। সেই ভাবনাতেই আমি ফুডকোর্টের দিকে এগোই। তখনই ঘটল ঘটনা; পড়বি তো পড় মালীর ঘাড়ে।

ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ারও সময় না দিয়ে ভদ্রমহিলা সাবলীলভাবে বললেন, ‘ও, আপনি! আপনারা সিলেটে বেড়াতে যাচ্ছেন বুঝি?’ ওই দম্পতি যে কোন ফাঁকে ফুডকোর্টে ঢুকেছিলেন তা বোঝা যায়নি। আমি ফুডকোর্টের বারান্দায় পা রাখতেই দেখতে পাই কোন আইসক্রিম চাটতে চাটতে তারা বেরিয়ে আসছেন।

আমি ভদ্রমহিলার কথার জবাব দেব কি, ঢোক গিলতেও ভুলে গিয়েছি। ঘটনার আকস্মিকতায় কী উত্তর দেব তা-ও গোছাতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি গভীর জলে ডুবতে বসেছি। তাই খড়কুটো আঁকড়ে ধরার আশায় মহিলার সঙ্গী ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে সালাম ঠুকে দম ফিরে পেতে চাই। সাথে সাথে ভদ্রমহিলা ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ওই যে আমাদের বাসের সি-ওয়ান-টু…।’ভদ্রলোকও ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, না না, আমি বুঝতে পেরেছি’ বলে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেন।

আমি পুরোপুরি স্থিত হতে না পারলেও কিছুটা আত্মস্থ হতে পেরেছি। হয়তো এখন এধরণের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব বলে আমার বিশ্বাস জন্মায়। তবে ভদ্রমহিলা যে এত সুন্দর ও স্বাভাবিক গলায় কথা বলছেন তাতে তাকে জবা বলে মেনে নিতে সন্দেহ হচ্ছে। কিন্তু তার নাকের পাশের লালচে ছোট্ট আঁচিলটা তো আগের মতনই আছে। না, সে জবা না হয়ে পারে না। নাকি সে আমাকে চিনতে পারেনি? সেটাই বা বলি কী করে? সিট বদলের সময়কার এবং গাড়ি থেকে নামার সময়ের তার শান্ত-শীতল চাহনিই সহজে জানান দিয়েছে যে আমি ধরা পড়ে গিয়েছি। এই ধন্দের ভেতরে থেকেই ভাবলাম আমাকে কিছু একটা বলে পালাবার পথ খুঁজতে হবে। তাই সহজ করে বললাম, ‘আমরা আসলে…আমরা দুই বন্ধু মিলে একটু ঘুরতে বেরিয়েছি। …সিলেটে। …মাত্র দুদিনের জন্য।’

ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি অবশ্য একটা অফিসিয়াল প্রোগ্রামে ডানকান টি এস্টেটে যাচ্ছি…।’

‘তার আগে সিলেটে আমরা এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাব।’ভদ্রমহিলা অর্থাৎ জবা (আমি নিশ্চিত জবা) তার স্বামীর বক্তব্যকে পূর্নাঙ্গ করল।

আমি শুনেছিলাম জবার স্বামী ফ্রান্স কিংবা ইটালীতে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের বিভিন্ন জিনিসও তিনি ইউরোপে আমদানি ও বাজারজাত করেন। এখন আমার মনে হচ্ছে ইনিই আলবৎ জবার স্বামী।

ভদ্রলোক সামনের দিকে পা বাড়িয়ে বললেন, ‘নাইস টকিং; আমরা একটু হাঁটি। আবার কথা হবে।’

ভদ্রলোকের কথায় আমার বুকের পাথরটা নেমে গেল। কিন্তু জবা দু’পা হেঁটে আবার পেছন দিকে ফিরে তাকাতেই আমার বুকটা কেঁপে উঠল। আমি বিদ্যুৎগতিতে পেছন ফিরে হাশেমের খোঁজে ছুটলাম।

হঠাৎ আবিষ্কার করি হাশেম, মিরানা, লিলি রেস্টুরেন্টের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হাশেম আমাকে দেখে গর্জে ওঠে, ‘অ্যাই তুই কই গেছিলি? আমরা খুঁজতে খুঁজতে হয়রান।’

আমি বললাম, ‘হয়েছে, চাপাবাজি বাদ দেয়। ম্যাডামদের ওই ফাস্টফুডের দোকানে নিয়ে আয়।’

ড্রাইভার ফিরে এলে আমরা দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়ি। মিরানা ভাবী আমাকে কিছু না বলেই লিলির পাশে গিয়ে বসে। এতে আমি বরং খুশিই হই। হাশেমের পাশে বসলে জবাদের কাছ থেকে আমার দূরত্ব সামান্য বেড়ে যায়। সিটে বসার পর হাশেম কয়েকবার উঁকি মেরে মিরানা ও লিলির দিকে তাকিয়েছে, মানে সব ঠিক আছে কি না তা দেখেছে। কিন্তু আমি ভুলেও ওদিকে মাথা ঘুরাইনি।

হাশেমের পাশে বসে স্বস্তি পেলেও আমি পুরোপুরি দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছি না। আমার ভয় হয়, যদি জবা পেছনের দিকে মাথা ঘুরিয়ে লিলিদের সাথে আলাপ জমিয়ে ফেলে। পরে আবার ভাবি, চলন্ত গাড়িতে এভাবে আলাপ-পরিচয় হয় না; পাশাপাশি বসলে একটা কথা ছিল। হাশেমের সাথে আমার অনেক কথা থাকলেও, যেমন – সিলেটে গিয়ে আমরা কোন হোটেলে উঠব, তারপর সারাদিনের প্রোগ্রাম কি, ইত্যাদি, আমি ঘুমের ভাণ করে চোখ বন্ধ করে উপস্থিত ফাঁড়া নিয়ে ভাবতে থাকলাম। হাশেম দুয়েক কথা বললেও আমি উঁ আঁ বলে এড়িয়ে গেলাম।

আজকের ভ্রমণে আমরা সস্ত্রীক না হলে হাশেমের কাছে আমি মুখ খুলতে পারতাম। কারণ জবা সম্বন্ধে সে অনেক শুনেছে আমার কাছ থেকে। কিন্তু এ অবস্থায় আমি হাশেমকে জবার হদিস দিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে পারি না। হাশেমের আবেগ-উত্তেজনা কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেললে আমার সংসারে আগুন লেগে যাবে। যদি ভালোয় ভালোয় ঢাকায় ফিরে যাই তখন বলব।

জবা আমার সাথে রূঢ় ব্যবহার না করে কেন অপরিচিত সজ্জনের মতো আচরণ করল, সেটাও এক বিটকেলে ফাঁপর। সে কি ঝোপ বুঝে কোপ দেবে? হাটে হাঁড়ি ভাঙবে? সিলেটে পৌঁছার পর তো আবার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে। আবার এই কথা ভেবে একটু সাহস পাই যে জবা নিশ্চয়ই তার স্বামীর সামনে কোনো কাল অতীত উন্মোচিত করে তার নিজের ঘরে ইঁদুর ঢুকাতে যাবে না।

আমার একটু তন্দ্রাভাব চলে এসেছিল। হঠাৎ ড্রাইভার কী কারণে হার্ড ব্রেক কষলে ঝাঁকুনিতে অনেক যাত্রী হৈ হৈ করে ওঠে। আমিও আঁতকে উঠে আসন থেকে দাঁড়িয়ে লিলিদের দিকে তাকাই। বোঝা যাচ্ছে সবাই ভয় পেয়েছে। তখন সুপারভাইজার বাতি জ্বালিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করে বলল, ‘ভয়ের কিছু নাই, একটা শিয়াল পড়েছিল সামনে।’ আমি আবার বসতে যাব তখনই খেয়াল করি জবা তার নিজস্ব স্টাইলে চশমার আড়াল থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আবার আমার বুকটা ধক করে ওঠে।

আমি কীভাবে জবার সাথে জড়িয়েছিলাম সে ইতিহাস স্মরণ করতে চাই না। তবে অস্বীকার করি না, এতে আমি কিছুটা অপরাধবোধেও ভুগি। আমি মামার বাসায় থেকে যখন চাকরির চেষ্টা করছিলাম তখন শাকিল নামের এক বন্ধুর মাধ্যমে তখনকার গ্ল্যামারাস জবার সাথে আমার পরিচয় হয় ঢাকার বাণিজ্যমেলায়। ওরা দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাইবোন। শাকিল বলেছিল, ‘আমার কাজিন, এক্সট্রাঅর্ডিনারিলি ব্রিলিয়্যান্ট, ব্যাঙ্গালোরে পড়াশোনা করেছে।’কিন্তু আমি সেদিনই জবার ব্রিলিয়্যান্সের চেয়ে তার চোখ ঝলসানো চটকের মোহে পড়ে যাই। কেন জানি না সে-ও আমাকে প্রশ্রয় দেয়। তারপর সাধারণত যা হয়, নানান ছুতোয় আমরা দেখা করি, কথা বলি এবং আমাদের মাঝখানের দূরত্ব কমিয়ে আনতে থাকি।

জবা ও আমার দূরত্ব শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যাবার পর আমরা মোটামুটি একটি শুভ সিদ্ধান্তের কাছাকাছি এসে গিয়েছিলাম। কিন্তু একই সময়ে কিছু বিব্রতকর তথ্য আমার কপাল কুঁচকে দেয়। অভিজাত পরিবারের মেধাবী মেয়ে জবা ঠিকই বৃত্তি নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে পড়তে গিয়েছিল। কিন্তু দুবছর যেতে না যেতেই সে এক তামিল সহপাঠীর গভীর প্রেমে মজে যায়। কেউ কেউ বলে, ওরা একসাথে থাকতেও আরম্ভ করে। এ খবর পরিবারের কানে পৌঁছালে জবার পিতা নিজেই ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে বিভিন্ন কৌশলে মেয়েকে দেশে নিয়ে আসেন। জবার পড়াশোনা তাই আর এগোয়নি।

জবা এবং আমি যেখানে গিয়ে পৌঁছেছিলাম সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন ছিল। আমাদের মন ও শরীর একবিন্দুতে মিলে গিয়েছিল। কিন্তু জবার অজানা অতীত অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমার সামনে এসে দাঁড়ালে আমার মধ্যবিত্ত মানসপট ধূসরিত হয়ে যায়। নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে একসময় হেরে যাই এবং একরকম আত্মগোপনে চলে যাই। এর পর দ্রুত অনেক কিছুই ঘটে যায়। আমার চাকরি হয়ে গেলে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। বেশ কিছুদিন পরে শুনেছি তাদের সমমর্যাদার এক সুপাত্রের সাথে জবার বিয়ে হয়েছে এবং সে স্বামীর সাথে বিদেশে চলে গিয়েছে।

আধোঘুম আধোভাবনার ভেতর দিয়ে পথ চলতে চলতে হঠাৎ দেখি আমাদের বাস সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীরা হুড়মুড় করে নামতে থাকলে হাশেমও ছটফট করতে আরম্ভ করে, ‘অ্যাই মানিক, ওঠ ওঠ, এখানে নামব।’

আমি বলি, ‘এত হাঁকডাকের কী আছে? গাড়ি তো ছেড়ে দিচ্ছে না।’আমার ইচ্ছা জবা আর তার স্বামী নেমে গেলেই আমরা আস্তে-ধীরে নামব।

কয়েক মুহূর্ত পর জবা তার স্বামীকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে আড়চোখে আমার দিকে তাকায়। আমি তা না দেখার ভাণ করে লিলি আর মিরানা ভাবীকে তাড়া দিই, ‘সব কিছু দেখেশুনে নিয়ে নাও, নামতে হবে।’

নিচে নেমেই দেখি জবা আর তার স্বামী একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। একটি লোক পোর্টারের কাছ থেকে তাদের লাগেজ সংগ্রহ করছে। আমি বেকুবের মতো সামনে যেতেই হঠাৎ জবার স্বামী ভদ্রলোক হাত তুলে আমার উদ্দেশে ‘হাই ব্রো, শেষপর্যন্ত এসে গেলাম! সব ঠিক আছে তো?’বলে একটু হাসলেন।

আমি থতমত হয়ে বলি, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমাদের কোনো অসুবিধা হয়নি। আপনাদের…?’

‘না, আমাদের খুব ভাল জার্নি হয়েছে। ফ্রেন্ড গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে, আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।’আমার কথা শেষ হওয়ার আগে এবারও জবা আগ বাড়িয়ে তাদের অবস্থা জানিয়ে দিল।

বন্ধুর ড্রাইভার জবাদের লাগেজ গাড়িতে তুলছে দেখে আমি পেছন দিকে তাকাই। না, হাশেম যেখানে আছে আমার কোনো টেনশন নেই। সে টেনেটুনে আমাদের ব্যাগগুলো জড়ো করছে।

ভদ্রলোক ‘আবার দেখা হবে’বলে গাড়িতে উঠে গেলে আমি একটু এগিয়ে গিয়ে বোকার মতো বললাম, ‘অবশ্যই, অবশ্যই। হ্যাভ অ্যা নাইস টাইম।’

আমি দাঁড়িয়ে থাকতেই আমার প্রায় গা ঘেঁষে গাড়িতে উঠতে উঠতে মুখে মেকি হাসি মেখে জবা আস্তে করে বলল, ‘ইউ কাওয়ার্ড, অ্যা লুজার!’

আমি কিছুই শুনতে পাইনি এমন ভাব করে তাদের হাত নেড়ে বিদায় জানালাম। আমার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়তে না ছাড়তে হাশেম চিৎকার করে উঠল, ‘আমরা খেটেখুটে মরছি, আর তুই ওখানে সাহেবগিরি দেখাচ্ছিস।’লিলি দুই কদম এগিয়ে এসে ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল, ‘এত ভাব কীসের? ওরা তোমার কী হয়?’

আমি বললাম, ‘আরে ধুর! উজানভাটিতে ভদ্রলোক যেচে কথা বলেছিল। এখনও কথা বলল তাই আমিও ভদ্রতা দেখালাম।

হাশেম আমাদের গ্রীনলাইন অফিসে বসিয়ে দ্রুতগতিতে হাওয়া হয়ে গেল; হয়তো গাড়ি কিংবা হোটেলের খোঁজে। আর একটা সম্ভাব্য দুর্যোগ থেকে বেঁচে গিয়ে আমি মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানালাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা দাদাভাই
অনেক ধন্যবাদ।
মোঃ মাইদুল সরকার অভিনন্দন।
অনেক ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী খুব সুন্দর শব্দ চয়নে মুগ্ধময় একটি লেখা।
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

১৯ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৪৯ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৮৭

বিচারক স্কোরঃ ১.৮৭ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪