আমরা কজন

ভৌতিক (ডিসেম্বর ২০১৮)

আহমদ মুসা (স্নিগ্ধ মুগ্ধতা)
  • 0
  • 0
  • ৭৮
এক তান্ত্রিক আমাকে বলেছিল অমাবস্যার রাতে কেউ মারা গেলে তার কবরে যদি এই মন্ত্র পড়া হয়, সে ক্ষণিকের জন্য আবার বেঁচে উঠবে। প্রতি অমাবস্যাতেই তার এ পুনর্জাগরণ চলতে থাকবে। অনন্তকাল পর্যন্ত চলবে তার এই চক্র। প্রতি অমাবস্যাতেই সে কবর ছেড়ে উঠে বসে থাকবে শিকারের আশায়!
ছোঁ! পুরো বানোয়াট! গত অমাবস্যাতেই তাকে মেরে পুঁতে দিয়েছি। মন্ত্রপাঠ করতে-করতে তাকে সমাহিত করেছি। কিছুই ঘটেনি!

এই অমাবস্যাতে গিয়ে তাঁর কবর খুঁড়ে বের করেছি। জানতাম, সব ভুয়া। কিছুই ঘটবে না। কিন্তু, হায় আল্লাহ! এ কি সত্যি? আমি কি ভুল দেখছি? তাঁর লাশটা উঠে বসল কী করে? জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এ কী! আমার গলাটা চেপে ধরল সাঁড়াশির মতো তাঁর দুটো হাত। ছাড়াতে পারছি না।
কিন্তু মারা গেলেও আমার পরিণতি তান্ত্রিকের মতো অত যন্ত্রণাদায়ক হবে না নিশ্চয়। প্রতি অমাবস্যাতে তার মতো শিকারের ধান্দায় নিজের কবরের আশপাশে ঘুরঘুর করা লাগবে না আমার! কারণ, আমাকে মারার সময় ওই মন্ত্র পাঠ করা সন্ন্যাসির পক্ষে সম্ভব নয়। মৃতরা ওই মন্ত্র পাঠ করতে পারে না—সন্ন্যাসি বলেছিল।
মৃত্যুর আঘাতে আমার চেতনা যখন আচ্ছন্ন হয়ে আসছে, আমার পকেটের মোবাইলটা তখন বেজে উঠল! হায়! ওই মন্ত্রটাকে মোবাইলের রিংটোন দিয়ে রেখেছি!
এর পর থেকে তান্ত্রিক আর আমি প্রতি অমাবস্যাতেই বসে থাকি। কবর ছেড়ে এসে অপেক্ষা করি শিকারের আশায়।


২.
গল্প শেষ করে জ্বলন্ত চোখে আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার পাশে-বসা সন্ন্যাসি গম্ভীর গমগমে গলায় বলল—ভাই, আমাদের গল্প আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? এইতো, আজকে অমাবস্যা—আপনি হয়তো খেয়াল করেননি। আগামী অমাবস্যাতেই আপনি শিওর হয়ে যাবেন, যখন আমাদের সাথে আপনিও বসে থাকবেন শিকারের আশায়। সাথে এটাও বুঝতে পারবেন—এই অমাবস্যার রাতে দশমিনিট আগে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য শশ্মানের এই শটকার্ট পথটা বেছে নেওয়া আপনার মোটেই উচিত হয়নি।
আর, এই যে মন্ত্রটা শুনুন—মোবাইলটা টিপে দিলাম আমি—ও কি ভাই? আপনি হার্টফেল করলেন নাকি?
মরা লোকটার পকেট হাতড়াতে-হাতড়াতে আমি আর তান্ত্রিক দুজনই হেসে উঠলাম! ব্যাটা আমাদেরকে সত্যি-সত্যি ভূত ঠাউরেছে!


৩.
পরের অমাবস্যাতে আমরা দুজন নতুন আরেকটা গল্প ফেঁদে শ্মশানের কাছে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ! এ কী! গতদিনের সেই হার্টফেল করা লোকটা এখানে কী করছে? কিছু বোঝার আগেই তার সাড়াশির মতো দুটো হাত এসে আমাদের দুজনের গলা আঁকড়ে ধরল। বীভত্স মুখটা তুলে আমাদের হতবিহ্বল মুখের দিকে চেয়ে খোনা গলায় হাসতে-হাসতে সে বলল—তোরা ঠিকই বলেছিলি। মন্ত্রটা ঠিকই কাজ করে। না-বুঝেই নিজেরা নিষ্ঠুর আসল একটা মন্ত্র বানিয়ে ফেলেছিস! তবে একটা কথা ভুল বলেছিস—ওটা মরা মানুষও পড়তে পারে।
গলার উপর হাতদুটো আরো এঁটে বসল। ভয়ঙ্কর সুরে মন্ত্রপাঠ শুনতে শুনতে আমাদের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে এলো। চিরতরে ঘুমিয়ে পড়লাম আমরা দুজন।


এরপর থেকে প্রতি অমাবস্যাতেই আমরা তিনজন অপেক্ষা করে আছি। নতুন শিকারের আশায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এটা ভূতের গল্প। কাজেই "ভৌতিক" বিষয়ের সাথে যে "সমঞ্জস্যপূর্ণ" সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

১৮ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪