আদিম

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১৭)

Asif Rumi
  • 0
  • 0
হিমঘরে ঘুম ভাংলো ক্লারার ।ক্রয়োজনিয়াম ধাতুর তৈরী একটা ক্যাপসুলে শুয়ে ছিলো বছর খানেক ।নতুন একটা গ্রহে অবতরণ করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো ।মুল নভোযান থেকে ক্লারার স্কাউট শীপ নতুন গ্রহে অবতরণ করতে শুরু করলো ।নতুন গ্রহটা র পরিবেশ ক্লারার নিজের গ্রহ পৃথিবীর মতোই ।অদ্ভুত মিল পৃথিবীর সাথে ।খুশি হয়ে উঠলো ক্লারা ।পরিবেশের সাথে মিল থাকার অর্থ এ গ্রহে কোন জীবন্ত প্রাণী থাকলে তার সাথে পৃথিবীর মানুষের মিল থাকতে পারে ।মানুষের সাথে মিল থাকা অবশ্য বিপদ জনক ও বটে । মানুষ মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিপদ জনক প্রানী। কতদিন ঘুমিয়েছে ??
পাশের টাইম ফ্রেম টাতে দেখলো এক বছর। হাসি পেলো ক্লারার। কারণ পৃথিবী র হিসেবে ও প্রায় পঁচিশ বছর ঘুমিয়েছে। সময়ের আপেক্ষিকতা। শত শত বছর আগে, আইনস্টাইন নামের এক বিজ্ঞানী এই অদ্ভুতুড়ে জিনিষ টা আবিষ্কার করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। গতিশীল কাঠামো তে সময় ধীর হয়ে যায়। একটা প্রাচীন গান শুনেছিলো, মহাকাশ জানের কেন্দ্রী য় কম্পিউটার এ, যখন অবসর ছিলো। গানটা ছিলো "ধীরে ধীরে যাও না সময় " এই গানের অনেক আগেই এই আশ্চর্য সময় সূত্রটা আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো। গীতিকার কি জানতো কথা টা?? ভাবছিলো ক্লারা। স্কাউট শিপের যান্ত্রিক শব্দে বর্তমানে ফিরে এলো আবার ক্লারা। এই গ্রহটার সাথে পৃথিবী র আশ্চর্য মিল। জৈবিক ব্যাপার গ্রহের ক্ষেত্রে খাটলে, এটাকে পৃথিবী র জমজ বলে চালিয়ে দেয়া যেতো অনায়াসে। স্কাউট শিপটা নতুন পৃথিবীতে অবতরণ এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ‘’নতুন পৃথিবী " নামটা ক্লারাই দিয়েছে। কেন জানি এই গ্রহটাকে নতুন পৃথিবী ডাকতে ভালো লাগছে তার। স্কাউট শিপটা অবতরণ করতেই, নিরোধক জ্যাকেট পরে নিতে লাগলো ক্লারা। যদি ও পৃথিবীর সাথে মিল এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল এর, তবু সাবধানে র মার নেই। হোভার বোর্ডে গ্রহটা ঘুরে দেখবে সে। নতুন কোন কমিউনিকেশন চ্যানেল পাওয়া যায় কীনা, অথবা কোন জ্বালানি রসদ। দুটোই দরকার তার। না পেলে আবার ফিরে যেতে হবে। মুল মিশনে যাবার আগে একটা সিগনাল পাঠাতে চায় পৃথিবীতে। লিনিয়াস নক্ষত্র পুঞ্জে তার মূল মিশন। তা ছাড়া এই গ্রহে র মানব বসতি স্থাপনের উপযোগী কিনা পরীক্ষা করে যেতে হবে। প্রতিবার স্কাউট শিপের দরজা খুলে যেতেই মনে হয় ভয়াল দর্শন কোন ভিনগ্রহী তার উপর ঝাঁপিয়ে পরবে। কিছুই হয় না। পৃথিবীতে ভিনগ্রহী দের মুভি দেখতে দেখতে বোধহয় এই ভয়টা বদ্ধমূল হয়ে গেছে। গ্রহটার একটা মরুভূমি, ঊষর জায়গায় স্কাউট শিপটা নামিয়েছে ক্লারা। মহাকাশ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে এটা বলা আছে। অপরিচিত পরিবেশে এমন জায়গায় অবতরণ করো যেখানে, তোমার দৃষ্ট সীমা পরিষ্কার। সবসময় ম্যানুয়াল মানে না ক্লারা, তবে কিছু ক্ষেত্রে, কেতাবি পদ্ধতি ঈ কার্যকর। হোভার বোর্ডে উঠে হ্যাচ নামিয়ে ইঞ্জি ন চালু করে ক্লারা। ত্রিমাত্রিক প্যানেল টা তে গ্রহটার মরু প্রান্তর দেখা যায়। অনেকটা পৃথিবীর মরুভূমি র মতই। শুধু কিছু সবুজাভ পাথর ছড়ানো সর্বত্র। এই ভিনগ্রহের মরুপ্রান্তরে হোভার বোর্ড ছোটাতে ছোটাতে নিজ গ্রহ পৃথিবীর জন্য মনটা কেমন হু হু করে ওঠে ক্লারার। পৃথিবী আগের মতন নেই । শুধু রুপ কথাতেই আগের দিন গুলো পাওয়া যায় ।মানুষের প্রকৃতিই মনে হয় এমন । পৃথিবীতে থাকা কালে ক্লারা শুধু পৃথিবী ছাড়তে চাইতো । আর এখন কেমন যেন বিষাদ লাগছে সেই একঘেয়ে ক্লান্তিকর দূষনে ভরা পৃথিবী র জন্য । কাগজে কলমে পৃথিবী ছেড়েছে সে একবছর ।কিন্তু ফিরে দেখবে পেরিয়ে গেছে পঁচিশ বছর ।যদি আদৌ ফিরতে পারে ।ওর আগের বন্ধু বান্ধবেরা ততো দিনে বুড়িয়ে গেছে ।পঁচিশ বছরের ছোট কোন যুবকের সাথে প্রেম করতে হবে তাকে ।এমন একটা সম্ভাবনা মাথায় উঁকি দিতেই তার মুখে কৌতুক কর একটা হাসি ফুটে উঠলো ।হোভার বোর্ড টা একটা জলা মত জায়গার উপর ঘোরাতে ঘোরাতে ক্লারার মনে হলো ,তার জীবন টা যতোটা খারাপ হবে সে ভেবেছিলো ততোটা খারাপ হয় নি ।সে যখন পৃথিবী ছেঁড়েছিলো আর এক হাজার বসতি খুঁজতে বের হওয়া নভোচারীর মতন ,তখন পৃথিবী বিষিয়ে আসছিলো ।মানুষের লোভ আর অবিবেচক ভোগের শাস্তি দিচ্ছিলো প্রকৃতি । বেশির ভাগ পৃথিবী চলে গিয়েছিলো জলের তলায় ।ক্লাইমেট মাইগ্রেসনের কারণে কোটি কোটি রিফিউজির চাপে পৃথিবীর বড্ড নিরানন্দ চেহারা ।তাই সত্যি কথা বলতে ,পৃথিবী ছেড়ে আসতে খুব একটা খারাপ লাগে নি ।এখন অন্য গ্রহের গলি ঘুপচিতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে তার মনে একটা সম্ভাবনা উঁকি দেয় ।পৃথিবীর ভুল গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি নতুন পৃথিবী গড়ে নেয়া যেতো ।অবশ্য প্রাচীন পৃথিবীর বার্নাড শ নামে এক লেখক বলে গিয়েছিলেন ,মানুষ নাকি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না ,এটাই নাকি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ।মানুষের ইতিহাসের দিকে তাকালে কথাটা খুব একটা মিথ্যে মনে হয় না ক্লারার ।তবু যদি এই ইতিহাস টা পাল্টে দেয়া যেতো ,দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লারা ।হোভার বোর্ড এর কমিউনিকেশান প্যানেল থেকে একটা নিচু তরঙ্গের সিগন্যাল পাঠাতে থাকে ক্লারা ।আশে পাশে কোন মানব বসতি থাকলে তারা অবশ্য ই টের পাবে ।অথবা যদি অন্য কোন বুদ্ধিমান প্রাণী ।বুদ্ধিমান প্রাণী থাকাটা একই সাথে ভালো এবং বিপদজনক ।ভালো এ অর্থে যদি তারা সভ্য হয় তবে ক্লারাকে অভ্যর্থনা দেবে আর যদি বেশি বুদ্ধিমান হয় ,তবে কে বলতে পারে ,ক্লারাকে তাদের ল্যাবে গিনিপিগ বানাবে ।অথবা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ও পারে ।কথাটা মনে হতেই কেন জানি হাসি পেয়ে যায় ক্লারার ।ভয় ও লাগে ।অবশ্য ভয় পাবে বলে সে মহাকাশ চারী হয়নি ।তবু ভয় পাওয়াটা মানবিক ।ক্লারা কিছু মাটি র নমুনাও নেয় ,হোভার বোর্ডের পোর্টেবল হ্যান্ড ব্যাবহার করে ।বিস্ময়কর ভাবে দেখে নমুনার মাটির সাথে পৃথিবীর অবিশ্বাস্য মিল ।এমন কী গ্রহটার থ্রিডি ম্যাপিং থেকে মনে হচ্ছে কাছে পিঠে পানির সমুদ্র আছে একেবারে পৃথিবীর মতন ।ক্লারার অবিশ্বাস্য লাগে ।একটা উঁচু মত জায়গা দেখে হোভার বোর্ড থামায় ।স্পেস স্যুটের গ্র্যাভিটি সুইচ টা অফ করে দেয় ।যা ভেবেছিলো তাই ।লাফাতে হচ্ছেনা ।এমনিতেই হাঁটতে পারছে সে ।তারমানে গ্র্যাভিটিও পৃথিবীর মতন ।ক্লারার মন খুঁত খুঁত করতে থাকে ।কিছু একটা ভুল হয়েছে নিশ্চয় ।যা হোক ,ক্লারা কিছুক্ষণ হেটে বেড়ায় ।একটা টিলার মতন জায়গাটা ।শিশুর মতন টিলাতে উঠতে আর নামতে থাকে সে ।অনেক দিন পর মাটির স্পর্শ পেয়েছে সে ।একটু পরেই হাঁপিয়ে গেলো ।ভারী স্পেস স্যুট দিয়ে হাঁটতে কষ্ট আছে ।কিন্তু খোলা যাচ্ছেনা ।কেননা তেজস্ক্রিয়তার মিটারে দেখেছে ,তেজস্ক্রিয়তা এখনো বিপদজনক মাত্রার চেয়ে কিছুটা কমে আছে ।গ্রহটাতে আলো কমে আসছে ।সূর্য একটাই গ্রহটার ।অন্ধকার যে কোন গ্রহ ই সুবিধের নয় ।এবার স্কাউট শিপে ফিরে যাওয়া দরকার ।কাল আবার বেরুনো যাবে ।হোভার বোর্ডে উঠে ফিরতি কোর্স ঠিক করে দেয় সে । স্বয়ংক্রিয়ভাবে গন্তব্যে নিয়ে যাবে ।অবসাদ লাগছে ।নিজে চালিয়ে নিতে ইচ্ছে করছেনা ।গা টা এলিয়ে দেয় হোভার বোর্ডের সিটে ।
স্কাউট শিপে পৌছে বিশ্রাম নেয় ক্লারা। তারপর র ওয়ানা দেয় গ্রহ টার বাইরে রাখা মূল নভোযানে ।সেখানে পৌছে একটা বল বর্ধক ফুড ট্যাবলেট খেয়ে নেয় ।আর কতোদিন এই কৃত্রিম খাবার খেয়ে বাঁচতে হবে কে জানে ।হাল্কা একটা সংগীত ছেড়ে স্লিপিং ক্যাপসুলে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকে ক্লারা ।এক প্রাচীন কবির গান চলছে । গানটা ক্লারার খুব প্রিয় ।আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গানটার কয়েকটা লাইন ।শুনতে শুনতে শিহরিত হয় ক্লারা প্রতিবার ।নিজেকে আলো বয়ে চলা আঁধারের যাত্রী ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে সে ।

কতক্ষণ ঘুমিয়েছে বলতে পারে না ক্লারা । অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখছিল ঘুমের ভেতর । বিপ বিপ শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো । কমিউনিকেশন মডিউল টাতে ক্রমাগত শব্দ হচ্ছিলো । ক্লারার ভেতর টা উত্তেজনায় ভরে গেলো । তাহলে কি সত্যিই কেউ আছে আই গ্রহে । চোখটা কচলে সে আবার মনিটরে দেখতে লাগলো , ভুল দেখছে কীনা ।

ক্লারা মনিটরের লাল বিন্দুর দিকে তাকালো । অবিশ্বাস বিশ্বাসের দোলনায় দুলছে ।ও পাশ থেকে সাংকেতিক ভাষায় কিছু শব্দ স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ।আন্তঃ নাক্ষত্রিক যোগাযোগের প্রথম ধাপ ।এবার ক্লারা আর অবিশ্বাস করতে পারলোনা ।ওর দিকের সবুজ প্যানেলটা ওকে এবার ক্লিক করতেই হবে ।আন্তঃনাক্ষত্রিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটাই রীতি ।মহাকাশচারীদের পাঠ্যক্রমের অন্যতম চমকপ্রদ অধ্যায় ছিলো ।ক্লারা এখনো মনে করতে পারে ,আন্তঃনাক্ষত্রিক যোগাযোগের ক্লাসে কী মজাই না করতো ওরা ।দিউস নামক একজন প্রাণবন্ত যুবক ছিলো ওদের ক্লাসে ।খুব রসিকতা করতো বিষয়গুলো নিয়ে ।যদিও তার বেশিরভাগ রসিকতাই ছিলো তৃতীয় শ্রেণীর ।তবু তারা না হেসে পারতো না ।যোগাযোগকারী ভিনগ্রহী আদতেই রোবট নাকি মানবিক কোন প্রজাতি কীনা তা টেস্ট করার জন্য তাদের বিখ্যাত "টুরিং টেস্ট " পড়ানো হচ্ছিলো । দিউস ক্লাসটা শেষ হবার পর বললো ,আমি হলে ভিনগ্রহীটার জন্য টুরিং টেস্টের বদলে আরেকটা টেস্ট চালু করতাম ।সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো কীরকম টেস্ট ? দিউস একগাল হেসে বললো ,"শিট টেস্ট",মানে ভিনগ্রহীটাকে জিজ্ঞেস করতাম ,ইয়ে মানে ,তোমাদের ইয়ের রং কী হলুদ না সবুজ ।"
স্মৃতিটা মনে পরতেই এতো উত্তেজনার মধ্যেও হাসি পেয়ে গেলো ক্লারার ।এদিকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে উত্তরটা দিতে হবে ।বাস্তবে ফিরে এলো ক্লারা ।কাঁপা হাতে টাইপ করতে শুরু করলো ।শুরুর প্রোটকল গুলো কেতাবী ।এগুলোতে নভোচারীর নাম ,অভিযানের উদ্দেশ্য সাধারণ পরিচিতির বিষয়গুলো থাকে ।ক্লারা উত্তেজিত উত্তরের অপেক্ষায় ।ওর শরীর উত্তেজনা হ্রাসকারী হরমোন নিঃসরণ করতে থাকলো ।মানুষের এখনো বদলে না যাওয়া বিবর্তনীয় শারীরিক বৃত্তি ।
-“স্বাগতম ক্লারা ।মনিটরে ভেসে উঠলো ।একটু বিরতি । আমি মিমিক ১০ । “
উত্তরে নাম দেখে ক্লারার আবার টুরিং টেস্টের কথা মনে পরলো ।মিমিক দশ এ আবার কেমন নাম ।রোবট নাকি । ক্লারা টাইপ করলো,
- মিমিক দশ ,তুমি কী রোবট ?’
একটু পর উত্তর আসলো,
- “না ক্লারা ।তুমি এ কথা কেন বলছো ।আমরা একটু বিশেষ ধরণের মানুষ ।এই গ্রহে নিজেদের বিবর্তন এবং শারীরিক বৃত্তির খাতিরে আমরা নিজেদের কিছুটা বিশেষভাবে টিকিয়ে রেখেছি ।তবে রোবট নই ।বায়োবেসে নিজেদের চিহ্নিত করার সুবিদার্থে নাম এবং নম্বরের সমন্বয়ে পরিচয় দেই ।তুমি আমাকে রোবট ভাবলে কেন ক্লারা ? “
ক্লারা টাইপ করলো, তোমার নাম দেখে ।তোমার নামের সাথে সংখ্যা জুড়ে দেয়া দেখে ।এটা পৃথিবীতে রোবটদের ক্ষেত্রে করা হয় ।তাছাড়া তোমরা যেহেতু মানুষ ,তাহলে অডিও কমিউনিকেশন চালু করছো না কেন ? মানুষ যেহেতু, মানবিক ভাষাতেই কথা বলা যাক।
মনিটরের পাশে এবার শব্দযন্ত্রটা চালু হলো ।সেখানে একটা ভরাট সু কণ্ঠের হাসি শোনা গেলো ।
- হা হা হা ।আসলে ক্লারা তুমি যেমন আমাদের রোবট ভেবেছিলে ।আমরাও তোমাকে রোবট ভেবেছিলাম ।তাই ভাবছিলাম টুরিং টেস্টের মধ্যে দিয়ে যাবো কীনা ।যা হোক ,এখন মনে হচ্ছে ,তা করা লাগবে না ।ক্লারা তোমাকে আমাদের বসতিতে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ।তোমার আগমনে সবাই খুব উত্তেজিত ।এতোদিন পর এই গ্রহে কোন পৃথিবী বাসীর আগমন ।তাও আবার একজন নারী ।হা হা হা ।
- ‘’
- হাসিটা আবার শোনা গেলো ।প্রাণবন্ত ,হৃদয়বান হাসি ।এবার হাসি টা শুনে ক্লারার বিরক্ত লাগলে ও কিছুটা ভালো ও লাগলো ।যা হোক ,এই গ্রহে সে একা মানুষ নয় ।আরো অনেকে আছে । ক্লারা নিজের শব্দ প্রেরক যন্ত্রটা চালু করে ।সে বললো ,তা না হয় আসবো ।কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পারছিনা ।সেটা একটু পরিষ্কার হওয়া দরকার ।
শব্দে গ্রাহক যন্ত্রে আবার হাসি হাসি কণ্ঠ টা ফিরে এলো –“।বলো ক্লারা ।কী সেটা ? “

-“স্পেস লগবুক অনুযায়ী এখানে কোন মানব বসতি থাকার কথা না ।মাইক মাস্ক এবং মাসুদ রানার যৌথ অভিযানে আবিষ্কার এই নক্ষত্রপুন্জ ।
এরপর এদিকে কেউ পা রাখেনি বলে জানতাম ।তবে লগ বুকে গ্যালাক্সি ম্যাপে ,এই জায়গাটার ব্যাপারে বিশদ কিছু বলা নেই ।কেন জানি চেপে যাওয়া হয়েছে ব্যাপার টা ।কারণ টা কী । “
ও পার থাকে উত্তর এলো ,একটু পর ,একটু দেরীতে ।
- “আসলে ক্লারা বিষয়টা একটু জটিল বলতে পারো ।আন্তঃনাক্ষত্রিক অভিযানের শুরুতে মানুষের একটা দল ,পাশের একটা নক্ষত্রপুন্জে বসতি করেছিলো ।কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতীক এবং জৈবিক কারণে তারা ঐ নক্ষত্রপুন্জের বসতি ছেড়ে এখানে এসে বসতি গড়ে ।আমরা তাদের ই বংশধর ।আর তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো ,এই গ্রহের সাথে পৃথিবীর পরিবেশের মিল আছে ।তাই হয়তো আমাদের পূর্ব পুরুষরা বেছে নিয়েছিলেন ।কিন্তু লগবুগে সেই আগের বসতির রেকর্ড টাই রয়ে গেছে ।এর টা ওঠেনি ।আমরাও আর তুলিনি ।কিংবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করি নি ।আমরা আমাদের মতন ভালো আছি । তা পৃথিবীর কী অবস্থা ?আগের চেয়ে ও খারাপ নাকি ? “
মানুষটার কণ্ঠে শ্লেষের সুর ।বুঝতে পারে ক্লারা ।ওর ও খারাপ লাগে পৃথিবীর কথা ভাবতে ।মানুষের লোভ আর ভোগবৃত্তি নীল রং এর সেই অদ্ভুত সুন্দর গ্রহটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে ।আর মানব প্রজাতি যাযাবরের মতন ছড়িয়ে পরেছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ।প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাস খুব প্রিয় ক্লারার ।মহাকাশ যানে যখন অবসরের অবসাদ গ্রাস করতো ওকে ।তখন প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাস নিয়ে বসতো ।কেন জানি প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাসের সাথে বর্তমানের মিল পায় সে ।তখন যেমন প্রাচীন অভিযাত্রীরা অভিযানে বেরিয়ে পড়েছিলো ,নতুন উপনিবেশের খোঁজে ।ম্যাগেলান ,কলম্বাস ,ভাস্কো দা গামা ।কয়েকটা নাম মনে পরে তার ।তারাও যেন তেমন অভিযানে বেরিয়েছে ।নতুন উপনিবেশের খোঁজে ।এবার অবশ্য অস্তিত্বের তাগিদে ।ওর শংকা হয় প্রাচীন অভিযানগুলো পৃথিবীকে এক করার পাশাপাশি নিশ্চিত করেছিলো একসাথে পতন ।তেমন করে এবার তারা পুরো মহাবিশ্বের পতন ডেকে আনবে না তো ।কিছুই বলা যায় না ।মানুষের মতন বিধ্বংসী প্রজাতি ,মহাবিশ্বে আর আছে কীনা সন্দেহ আছে ।

‘’কী হলো ক্লারা ।কিছু বলছো না যে ?‘’
ক্লারার সতবিত ফিরে আসে শুনে । একটু গলাটা পরিষ্কার করার ভঙ্গিতে সে বলে উঠলো , “আসলে বলার তেমন কিছু নেই ।জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবীর আশি ভাগ পানির তলায় ।তার উপর নিউক্লিয়ার দূষণে তেজস্ক্রিয় বাতাস ।হাতে গোনা কোটি পাঁচেক মানুষ হয়তো রয়ে গেছে পৃথিবীতে ।তারাও অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে ।প্রাকৃতিক এক টুকরো মুরগীর রোস্ট পৃথিবীতে স্বর্গ পাবার মতন ।বিশুদ্ধ পানি ,বিশুদ্ধ বাতাসের দাম প্রাচীন
হীরে নামক কার্বন যৌগের মতন ।অল্প এই মানুষদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র ।আমার মতন আরো হাজার খানেক নভোচারী ও নভোযান ছড়িয়ে পরেছে মহাকাশে ।নতুন বসতির সন্ধানে ।আমাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলেই ,স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে পৃথিবীবাসীর ।এই দায়িত্ব নিয়েই গ্যালাক্সি চষে বেড়াচ্ছি আমরা ।
তাই বুঝতেই পারছো ,তোমাদের এখানে এই বসতিটা খুঁজে পাওয়া কত টা ইতিবাচক আমাদের জন্য ।“
-“হা হা হা ।“ আবার প্রাণবন্ত সে হাসির শব্দ শুনতে পেলো ক্লারা । “
“ঠিক আছে হে মহান অভিযাত্রী ।তুমি আগে আমাদের বসতিতে এসো ।তারপর না হয় কেন্দ্রে যোগাযোগ করো ।“
ক্লারা দ্বিধায় পরে যায় ।সে কৌতুহলি হয় ।সেই সাথে শংকা ।এটা ভিনগ্রহী দের ফাদ ও তো হতে পারে। সেই সহৃদয় হাসির পেছনের মানুষ টি কে দেখতে ইচ্ছে করছে তার ।হাসি মানব প্রজাতির এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ।তাছাড়া এখানে মানব বসতি থাকটা খুব ই তাতপর্য্য পূর্ণ ।এই গ্রহটার পরিবেশ পৃথিবীর মতন ।এই গ্রহটাকে যদি মানব প্রজাতির উপনিবেশ বানানো যায় ,তবে সেটা হবে ইতিহাস ।কেননা পৃথিবীর কাছাকাছি আকারের গ্রহটার মতন অভিনব উপনিবেশ আর পাওয়া যাবে না ।এখানেই হয়তো সূচিত হবে মানব প্রজাতির নতুন ইতিহাস । ঝুঁকি তো নিতেই হবে। ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে বলেই তো সে নভোচারী হয়েছে। তাছাড়া মানব প্রজাতি র ইতিহাস ই ঝুঁকি র ইতিহাস। বড় বড় বিপদে র ঝুঁকি নিয়েছে বলেই সভ্যতা এগিয়েছে আবার ধ্বংস ও হচ্ছে।

সেই সাথে প্রাচীন ইতিহাসে পড়া প্রিয় ম্যাগেলান ,ক্যাপ্টেন কুকের মতন অভিযাত্রীদের পাশে লেখা হয়ে যাবে ক্লারার নাম ।রোমাঞ্চিত হয় ক্লারা ।সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলে সে ।যাবে ঐ মানব বসতিতে । হোক যতো ঝুঁকি।
শব্দ প্রেরকে মিষ্টি করে হেসে বলে ওঠে ক্লারা ।
-“ঠিক আছে হে মানব সন্তান ,তোমাদের বসতিতে আসছি আমি ।“
পুরুষ কণ্ঠটা শিহরিত হবার ভান করে শুনে ।নাকি আসলেই শিহরিত হয় বুঝতে পারে না ক্লারা । এরপর আবার সে হৃদয়বান হাসি
-“,ঠিক আছে সুন্দরী মিস ক্লারা ।তাড়াতাড়ি চলে আসো আমাদের বসতিতে ।আমরা উষ্ণ এবং সত্যিকারের বন মোরগের রোস্ট এবং পানীয় নিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি সুন্দরী ।“
অনেক দিন পর সুন্দরী এবং প্রাচীন মিস সম্বোধন শুনে ক্লারার গাল লাল হয়ে যায় অজান্তে ।
-“ঠিক আছে হে অসভ্য যুবক ।অপেক্ষা করো এবং তোমাদের বসতির থ্রিডি ম্যাপ আমাকে প্রেরণ করো ।আমি যথাসময়ে হাজির হয়ে যাবো ।“
নীল চোখের রসিক দিউসের কথা মনে পরে যায় ওর ।এরকম ই সহৃদয় কণ্ঠ ছিলো ওর ।পৃথিবী স্বাভাবীক থাকলে হয়তো ওরা একসাথে থাকতো ।ওদের সুস্থ সবল কোন সন্তান জন্ম নিতো প্রাকৃতীক ভাবে ।কী যে ভাবছে ক্লারা ।নিজের মনেই লজ্জা পেয়ে যায় ।থ্রিডি ম্যাপটা পাঠানো হয়েছে তাকে ।মানব বসতিটা নতুন পৃথিবীর অন্য পাশে ।তাই হয়তো বসতির ওরা প্রথমে ওর আগমন টের পায় নি ।
স্কাউট শিপ এবং হোভার ক্র্যাফট টা প্রস্তুত করতে থাকে ক্লারা ।মহাকাশ অভিযানের ম্যানুয়ালের কিছু ইমারজেন্সি টুল নিলে ও , এবার আর কোন ইমারজেন্সির ভয় করছেনা ওর ।
হোভার ক্রাফট নতুন পৃথিবীতে চালানোর জন্য প্রস্তুত ।ক্লারা দিক ঠিক করে যাত্রা শুরু করে মানব বসতির দিকে । হিসেব অনুযায়ী উড়লে ছয়ঘন্টা লাগার কথা ক্লারার পৌছুতে ।লাগুক ।ক্লারার তাড়া নেই কোন ।ক্লারা উড়ে যেতে থাকে নতুন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উপর ।তারপর আরো নিচে নেমে আসে । স্কাউট শিপ এক পাশে ল্যান্ড করিয়ে হোভার বোর্ডে চড়ে বসে ।সবুজাভ একটা লেক ।নতুন পৃথিবীতে বসবাস কারী কবিরা হয়তো এক সময় কবিতা লিখবে এই সবুজ লেক নিয়ে ।নাকি ইতিমধ্যে লিখে ফেলেছে ।হাসি পায় ক্লারার হঠাত ।খুব ভালো লাগতে থাকে সবকিছু ।
কতক্ষণ চলার পর অটো মোডে দিয়ে ঘুমিয়ে পরে ক্লারা ।ল্যান্ডিং এর সময় হলে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেবে হোভারবোর্ডের কম্পিউটার ।

কতক্ষণ ঘুমিয়েছে ক্লারা বলতে পারে না ।নাকি স্বপ্ন দেখছে ।

সে পুরোপুরি নগ্ন ।নিরোধক পোষাক নেই গায়ে ।গায়ে কিলবিল করছে একটা লোমশ হাত ।জান্তব একটা চিতকার দিয়ে জেগে ওঠে ক্লারা ।নাকি ঘুমিয়ে পরলো ।নিশ্চয় স্বপ্ন দেখছে ।এতোক্ষণে ল্যান্ডিং এর সময় হয়ে গেছে ।হুরমুর করে উঠতে চায় ক্লারা ।পারেনা ।তবে কী স্বপ্ন দেখছেনা সে ।চোখ খুলে পিট পিট করে তাকায় ।কিন্তু উপরে তীব্র আলোতে চোখ ঝলসে যায় তার ।তবে কী সে ভিনগ্রহীদের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে ?ওদের গিনিপিগ হয়ে ,ওদের গবেষণার টেবিলে ?গা টা গুলিয়ে ওঠে ক্লারার ।খুব ভয় লাগছে ।তখন কোথা থেকে জানি একটা আওয়াজ শুনতে পায় ।মৃদু সুমধুর একটা কণ্ঠ ।
কে যেন বলছে ,জ্ঞান ফিরেছে ।চলো দেখি ।
সেই পরিচিত কণ্ঠটা শুনতে পায় ক্লারা ।
-“স্বাগতম মিস ক্লারা ।এই মানব বসতিতে ।“
-“তোমরা কারা আসলে ?দেখা দাও ।“ চিতকার করে ক্লারা ।
-“শান্ত হ ও মিস ক্লারা ।আমরা অবশ্য ই দেখা দেবো। তবে তার আগে শান্ত হ ও ।ধীরে ধীরে উঠে বস। “
ক্লারা দু হাতে বুক ঢেকে জড়সরো হয়ে উঠে বসে ।
চিতকার করে বলে,-“ ,আমার পোশাক কোথায় ?
কণ্ঠ টা আবার শোনা যায় ।
-“এতো সুন্দর শরীর ঢাকতে পোশাকের কোন আবশ্যকতা এখানে নেই মিস ক্লারা ।প্রকৃতপক্ষে তুমি এখানে এসে আমাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছো মিস ক্লারা ।এবং আশা করি তোমার পথ ধরে আরো সৌভাগ্যবতীরা এখানে আসবেন ।“
-“তোমাদের অর্থহীন কথা বুঝতে পারছিনা ।প্লিজ পরিষ্কার করে বলো সব ।“
-“বলবো মিস ক্লারা ।তবে তার আগে বলি ,তুমি এ বসতিতে পা রাখা প্রথম নারী ।“
কথাটা কণ্ঠটা এমনভাবে বলে উঠলো ।কেন জানি শিউরে উঠলো ক্লারা শুনে ।
-“তোমরা আমাকে নিয়ে কী করতে চাও ?”আকুতি ফুটে ওঠে তার কণ্ঠে ।
-“তেমন কিছু না ।আবার বলা যায় অনেক কিছু ।তুমি আমাদের জন্য অনেক কিছুই করতে পারো মিস ক্লারা ।“
-“কী করতে পারি ,প্লিজ বলো ।আর আমাকে মুক্তি দাও ।“
-“বলছি ।একটু দীর্ঘ ইতিহাস ।তবু সংক্ষেপে বলছি ।তুমি এখানে আসার আগে জানতে চেয়েছিলে আমাদের বসতির কথা লগবুকে নেই কেন ।সেই কেনো র উত্তরে লুকিয়ে আছে ইতিহাস ।প্রকৃতপক্ষে আমাদের পূর্ব পুরুষরা আসলে আগের নক্ষত্রপুন্জে উপনিবশকারী ছিলেন না ।তাদের সেখানে গোপনে নির্বাসন দেয়া হয়েছিলো ।তারা প্রত্যোকেই পৃথিবী র মানুষ এর কাছে ছিলো তথাকথিত ভয়ংকর অপরাধী। আসলে মানুষ যা বুঝতে পারেনা, তাকে ভয় পায়। যৌনতা পৃথিবী র সবচেয়ে আদিম ও অকৃত্তিম অনুভুতি। যাকে বলা যায় মহাজাগতিক। পুরুষরা জেনেটিক কারণেই আগ্রাসী। তাই তাদের ধর্ষকাম ও স্বাভাবিক। কিছু পুরুষের একটু বেশিই ঈ। স্বাভাবিক এটাতো প্রাকৃতিক ই । প্রকৃতি গত ভাবেই নারীরা উপগত এবং ভোগ্য হবার যোগ্য । প্রাচীন কালে ও বলা হয়েছে এসব । এটাই তো স্বাভাবিক। ।একটি বিশেষ ধরণের অপরাধ তারা করতেন ।পৃথিবীতে একটা শতাব্দীতে নারীদের প্রতি এই তথাকথিত সহিংসতা খুব বেড়ে গিয়েছিলো ।ধর্ষণ ,যৌন নির্যাতন ছিলো নৈমিত্তিক ঘটনা ।কিছুদিন পর পর একটা ঘটনা ঘটতো ,আবার অপরাধীরা আইন গলে বের হয়ে যেতো ।অবস্থা মারাত্বক আকার ধারণ করায় ,কেন্দ্র বাধ্য হয়ে ,আমাদের পূর্ব পুরুষদের যাদের তারা তথাকথিত যৌন অপরাধী বলতো তাদের ঐ নক্ষত্রপুন্জে একটা গ্রহে নারীবিহিন নির্বাসন দেয় ।কিন্তু কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে গেলে তারা ঐ নক্ষত্রপুন্জ থেকে পালিয়ে এসে এখানে, এই গ্রহে বসতি গড়েন ।কিন্তু ডি এন এ যায় না মলে ।তাদের জিন তো আর চেন্জ হয় নি ।তেমনি তাদের তীব্র যৌন প্রবৃত্তি ও নয় ।তারা প্রত্যোকেই ছিলেন পুরুষ ।তো কী আর করা ।তারা জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং করে নিজেদের শরীর নিজেরাই পরিবর্তন করে নিলেন। তাদের যৌন লিপ্সা আরো তীব্র করে নিলেন। যেহেতু কোন নারী নেই, তাই তারা বাধ্য ও হলেন ।যাতে নিজেদের চাহিদা নিজেরাই চরিতার্থ করতে পারেন । তারপর আমরা জন্ম নিলাম ।ক্লোনিং এর মাধ্যমে ।তাই আমাদের নামে সংখ্যার সমন্বয় ।আসলে আমরা ঘুরে ফিরে এক ।ডি এন এ ।জিন ।সবকিছু ।আমাদের যৌন প্রবৃত্তি খুব ই তীব্র ।সবখানে শুধু যৌনতা দেখতে পাই ।কিন্তু এখানে কোন সত্যিকারের প্রাকৃতিক নারী নেই। সত্যিকারের নারীদেহের স্বাদ আমাদের পূর্ব পুরুষ রা পেলে ও আমরা পাইনি। খুব এক ঘেয়ে হয়ে উঠলো সব। তাছাড়া আমাদের যৌন তাড়না ক্ষুধার চেয়েও বেশি। অনেকটা পৌরাণিক রাক্ষসের মতন। ।তুমিই এখানে আসা প্রথম প্রাকৃতিক নারী ।কিন্তু আমরা এতোজন ।হয়তো দশজন মিলে তোমার সুস্বাদু শরীর টা ভোগ করতে পারবো ।কিন্তু আমাদের তো আরো চাই ।তীব্র ধর্ষকাম আমাদের শরীরে ।তাই আমাদের হয়ে তোমার একটা কাজ করে দিতে হবে ।
ক্লারা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শিউরে উঠে বললো,-“ কী কাজ ?”

কণ্ঠ টা শীতল গলায় হাসতে হাসতে বললো ,
-“তুমি কেন্দ্রে একটা বার্তা পাঠাবে .। ,তোমাকে দেয়া ইউনিক চ্যানেলে যোগাযোগ করবে।তুমি বলবে ,এই বসতি নারীদের জন্য বিশেষ উপযোগী ।তাদের যেন এখানে বেশি করে পাঠানো হয় ।সংখ্যা গরিষ্ঠ নারী যেন এখানে পাঠানো হয় । হা হা হা ।
হাসি টা এবার ভয়ংকর ,দানবীয় মনে হতে থাকে ক্লারার ।
ক্লারা র মাথায় চিন্তার স্রোত বয়ে যাচ্ছে ।
সে বলে ওঠে ,
-“তোমাদের দেখতে চাই ।তোমরা জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং করে শরীরের কী পরিবর্তন করেছ ,দেখতে চাই ।“
কণ্ঠটা শীতল গলায় বললো , -“সত্যি দেখতে চাও ?
তবে দেখো ।“

ক্লারার কাঁচের কেবিনের বাইরে আলো জ্বলে ওঠে ।
সেই উজ্জল আলোতে ক্লারা যা দেখতে পায় বা যেটা ,সে বমি করে ফেলে ।মহাজগতের সবচেয়ে কদাকার ,গা ঘিনঘিনে এক প্রজাতি ।গোল হয়ে কেবিনের চারিদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে ।জান্তব বিভতস বাস্তব ।পুরো দেহটা কাঁধ পর্যন্ত মানুষের গা ঘিনঘিনে সেই প্রাণীর অথবা মানবজন্তুগুলোর ।
কিন্তু মাথার জায়গাতে মাথা নেই ।মগজ নেই ।সেখানে বসানো, মানবদেহের পশ্চাতদেশ সমেত মাছের মতন পিচ্ছিল একটা শিশ্ন ।
ক্লারা চোখ বন্ধ করে তীব্র চিতকার করে ওঠে ।তার চিতকারে ইমারজেন্সি ভয়েস ডেস্ট্রাকশন কোড অন হয়ে যায় ,হোভার বোর্ডের ।ঠিক দুই মিনিট পর একটি ছোটখাটো নিউক্লিয় বিস্ফোরণে নরক নেমে আসে নতুন পৃথিবীতে ।
ক্লারার জরুরী বিপদ বার্তা পৌছে যায় ,গ্রহটির বায়ুমন্ডলের বাইরে ভাসতে থাকা মূল মহাকাশ যানে । সেখান থেকে ছড়িয়ে পরে মহাকাশে ।
অনেকদিন পর কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা যখন বার্তাটি পাবেন ,তখন তারা কিছুই বুঝতে পারবেন না। অদ্ভুতুড়ে এক বার্তা। মাথামুণ্ডু নেই।
বার্তাজুড়ে অর্থহীন এক প্রাচীন প্রবাদ ।
"কোথাও নারীরা নিরাপদ নয় ।কোথাও নয় । কখনো নয় । "
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

২২ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪