অপ্রাসঙ্গিক

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

তমসা অরণ্য
  • ২২
  • 0
  • ৯৪
আজও দু’তিনটার বেশি খ্যাপ না পেয়ে দুপুরের প্রবল বৃষ্টিটা মাথায় করেই ভাত খেতে বাড়ি চলে আসে কদম আলী। রিক্সার টুং টাং শব্দ পেয়ে ঘরের বাহির হয় জয়নব। ত্রস্ত পায়ে উৎসুকভঙ্গিতে দাওয়ায় এসে দাঁড়ায়। ক্লান্ত স্বামীকে দেখেই দ্রুত হাতে দাওয়ায় বসার জন্য পিঁড়ি এগিয়ে দিল।

কদম গামছায় গা মুছে দাওয়ায় বসে। হাত দিয়ে ভেজা চুল-দাঁড়ি ঝারতে ঝারতে পেটে দৌড়নো খিদা নামক ছুঁচোর বিশাল তাড়া খেয়ে,

“তড়তড়ি ভাত দে..”

-- বলেই বেড়ার ফাঁকে রাখা পাখা হাতে বাতাস খেতে থাকে। জয়নব ভাত বাড়তে বাড়তে স্বামীর সাথে দু’চারটা ঘর-গৃহস্থির কথা কয়। কদম এই ফাঁকে চালা থেকে ঝরে পরা বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটাগুলো দু’হাতে জমিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলকুচাটা সেরে নিতে নিতে নিরবে শুধু হুঁ-হাঁ করে। কিন্তু গলির ভেতর টেম্পোর ভটভট শব্দ শুনতেই ঐ হুঁ-হাঁ’টুকুও থেমে যায়। জয়নবের সব কথা ধীরে ধীরে শ্রবণ সীমার বাইরে চলে যেতে থাকে। শুধু কানে বাজতে থাকে টেম্পোর একটানা ভটভট ভটভট শব্দ। উদাসভঙ্গিতে বাঁশের খুঁটিতে ঠেস দিয়ে কদমের ভাবনা জাগে, ক’মাস আগেও তাঁর কত্ত পসার ছিল! হাতেও জমে ছিল বেশ কিছু কাঁচা পয়সা। গলির মোড়ে রোজ বিকেলে আরাম করে রিক্সায় বসে বসে ঝিমুত। আর দুপুর হলে প্রায়ই কলিমুদ্দি ব্যাপারীর ফার্স্টক্লাস হোটেলের টলটলে ডাল, ইলিশের দোঁপেয়াজা; নয় অন্য কোন শাক-মাছ দিয়ে আয়েশ করে ভরপেট খেয়ে উঠত। খ্যাপের জ্বালায় দু’দন্ড বসে থাকার জো ছিল না। তবু মাঝে-সাঝে কতই না ফৈদ্দারি করে বেড়াত। চাহিদা মত ভাড়া না পেলে কিসের কি! প্যাসেঞ্জার তুলতই না। আর এখন ঝাঁক বেঁধে টেম্পো আসতেই রুটি-রুজিতে টান পরেছে। প্যাসেঞ্জার সব জনপ্রতি ৫ টাকার টেম্পোতেই চড়ে, পারতে-সাধতে ১৫ টাকার রিক্সায় চড়ে কেউ আর টাকার শ্রাদ্ধ করতে চায়-ই না। হাজার ডাকেও প্যাসেঞ্জাররা ফিরে তাকায় না। যদিও বা ২/১ জনের কৃপাদৃষ্টি মেলে, তবে ভাড়ায় বনিবনা না হলে মুখ ঝামটা দিয়ে চলে যায়। কদমের তাই চিন্তায় চিন্তায় কপালে স্পষ্ট ভাঁজ, চোখটাও দেবে গেছে কোটরে। কাশেম, ওলী, বিনোদ, নজিম ঐসব টেম্পো-ড্রাইভারদের আয়েশী ভঙ্গিতে পান চিবিয়ে চিবিয়ে ঝিমুনোর কথা, আর টাকার মোটা তোড়া গোণার সময়কার সুখ সুখ মুখগুলো ভাবতেই মেজাজ খিঁচড়ে ওঠে।

জয়নব ভাতের থালা হাতে সামনে এসে দাঁড়ায়। স্বামীর উদাস করা অন্যমনস্কতা দেখে থালাটা শব্দ করে পাশে রেখে গলা খাঁকারি দিয়ে একটু জোরেই বলে ওঠে,

“আমনের ভাত..”

কদমের সম্বিৎ ফেরে ঠিকই, তবে রাগত ভঙ্গিতে থালার দিকে চেয়ে থাকে। ক’দিন বাদে এই এক থালা গরম ভাত আর আলুভর্তাও পাওয়া না পাওয়ার সন্দেহের দোলাচালে দুলতে দুলতে কোন রকমে খুঁটি ধরে উঠে দাঁড়ায় সম্মোহিতের মতন। জয়নব স্বামীর রাগত মুখটার দিয়ে চেয়ে অবাক হয়। ভয়ে ভয়ে কদমের গায়ে আলতো হাত রেখে বলে,

“হইল কি! ভাত খাইবেন না, বাবুর আব্বা?”

এক ঝটকায় গা ঝাড়া দিয়ে হাতটা সরিয়ে দেয় কদম। পেটা শরীরের মানুষটার হঠাৎ ধাক্কায় স্যাঁতস্যাঁতে দাওয়ায় পরতে পরতেও কোন রকমে টাল সামলায় জয়নব।

“দূরু মাগি, তোর ভাত তোর ভাতার গো খাওয়া।”

-- বলে গটগট করে গামছাটা কাঁধে ঝুলিয়ে বড় বড় পদক্ষেপে বেরিয়ে গেল। তখনও বৃষ্টি ছিল, এখনও ঝরছে তো ঝরছেই অবিরাম.. বড় বড় ফোঁটায়.. একটানা। মাঝে কেবল হল্কা হাওয়ার একটা প্রকান্ড, অথচ অকারণ তরঙ্গ বয়ে গেল মিনিট কয়েকের এই মধ্যাহ্নিক সময়টায়। ঘটনার আকস্মিকতায় জয়নব শুধু স্তব্ধ চোখে কদমের চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে শব্দগুলোর প্রাসঙ্গিকতা খোঁজে। বাইরে তখনও জল.. আছড়ে পড়ছে বৃষ্টি...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sakil চমৎকার অনুভুতির প্রকাশ ঘটেছে আপনার লেখায় । শুভকামনা রইল ।
Fatema Tuz Johra বেচে থাকার তাগিদে মানুষকে কত কষ্টই না করতে হয়...ভালো লিখেছেন.
সুন্দর সকাল ভালো , সুন্দর একটা ভাবনা আছে ....
তমসা অরণ্য বন্ধু শামীম আরা ও মানিক, ধন্যবাদ!
তমসা অরণ্য বন্ধু ইসরাত, ধন্যবাদ! হুম, আমিও ভুক্তভোগী... আজকাল এটাই হচ্ছে দেখছি..............
শামীম আরা চৌধুরী ছোট্ট পরিসরে লেখা । ভাল লাগলো।
Israt শিরোনাম তা সুন্দর লাগলো. কিছু মনে করবেন না "হাজার ডাকেও প্যাসেঞ্জাররা ফিরে তাকায় না।" রিক্সা খুজতে গিয়ে তো আমার মাঝে মাঝে চোখে পানি চলে আসে!
তমসা অরণ্য বন্ধু হালিম, ধন্যবাদ!
তমসা অরণ্য বন্ধু আকাশ ও অবিবেচক, ভাল বলেছেন!

০৯ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪