নেশা

অলিক (অক্টোবর ২০১৮)

তালহা জুবাইর তৌহিদ
  • 0
  • ৫৯৫

শুভ ঘুম থেকে উঠেই ফোনে টাইম দেখল, সন্ধ্যা ৬টা বেজে গেছে। এক লাফে বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে দৌড় দিল। দ্রুত রেডি হয়ে নিল, তার খুব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট চলছে। সন্ধ্যা হলেই এই শহরে বসে মাদকের রমরমা ব্যাবসা। এই মাদকের ডিলার আর গড ফাদারদের খুঁজে বের করাই শুভর কাজ। খোঁজ পেয়ে গেলে নাম, ঠিকানা, আর পারলে ছবি মেইল করে পাঠিয়ে দিলেই কাজ শেষ। এই পুরো কাজ করতে হয় নিজেকে লুকিয়ে রেখে, যাকে বলে আন্ডারকভার এজেন্ট। প্রায় এক মাস ধরে ২ জন ডিলারকে ট্রাক করে এক গড ফাদারের নাম জানা গেছে এখন শুধু তার আস্তানা খুঁজে পেলেই কাজ শেষ। যতদুর আন্দাজ করা যায় সে মিরপুর ১১ বা ১২ তে থাকে, ২দিন মিরপুর ১১তে খোঁজ করে কিছু পায়নি শুভ তাই আজ মিরপুর ১২তে যাবে।
কাজ সেরে রুমে ফিরতে সাড়ে ১১ টা বেজে গেল। রুমে ঢুকেই ল্যাপটপে মেইল লিখতে বসে গেল। শুভকে এত ব্যস্ত দেখে তার রুমমেট জিজ্ঞেস করলো,"কোথায় গেসিলা?"
বিরক্ত হয়ে শুভ বলল,"তা জেনে তোমার কি কাজ?" শুভর উত্তর শুনে আর কিছু বলল না অনিক।
বেশ কিছুদিন হল এই ছেলেটা খুব জালাচ্ছে। শুভ মনে মনে বলল,"সব কিছুতে সালার নাক গলাতে হবে। ইচ্ছা করে কশিয়ে দুঘা লাগিয়ে দেই, শান্তি মত একটা কাজ করতে দেবেনা আর মেসের সবাই কে উল্টা পাল্টা বলে বেরাবে।" শুভ আবার লেখায় মন দেয়।

একটা খুট খুট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল শুভর। হালকা করে চোখটা খুলে দেখে কে একটা ওর বাক্স থেকে ল্যাপটপ বের করছে। হঠাৎ কেমন ভয় পেয়ে গেল সে, কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। কিছুক্ষণ শুধু তাকিয়ে থাকল, কিন্তু একি এযে অনিক। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল শুভ। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ঝাপিয়ে পরল অনিকের উপর। অনিক এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল ওকে। অনিক উঠে দাড়াতে যাচ্ছিল শুভ আবার ওকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠল,"সালা চোর"। অনিক কিছু না বলে উঠে দরজার দিকে জেতে চাচ্ছিল; শুভ ওর টেবিলে পরে থাকা ফল কাটা ছুরিটা নিয়ে আবার পেছন থেকে ঝাপিয়ে পরে ছুরিটা বসিয়ে দিল অনিকের ডান পায়ে। অনিক 'ও মাগো মরে গেলাম গো' বলে চিৎকার করে উঠল। চিৎকার শুনে পাশের রুমের ছেলেরা ছুটে এসে দরজায় ধাক্কা দিল। শুভ দরজা খুলে দিল; রুম ততক্ষণে রক্তে ভেসে গেছে।

শুভর বাবা মা ডাক্তার এর সামনে বসে আছে। শুভ পাশের ঘরে ওর মামার সাথে আছে। ডাক্তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন,"আপনার ছেলেকি ড্রাগস নিত?"
বাবা বললেন,"নাহ"
ডাক্তার ভ্রূটা একটু কুচকে ওর বাবা মা দুজনের দিকে তাকালেন।
বাবা ডাক্তারের চেয়ারের পাশের জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন,"আমার দুটা ছেলে ছিল, বড় ছেলেটা যখন কলেজে পড়ত তখন কিছু বাজে বন্ধুদের পাল্লায় পরে নেশা করতে শুরু করে। একবার ওর ব্যাগ থেকে গাঁজা পেয়েছিল ওর মা, আর কি কি খেত ঠিক বলতে পারিনা। ২০১৬ সালের থার্টি ফাস্ট নাইটে নেশা করে এক বন্ধুর সাথে বাইকে করে বাড়ি ফিরছিল। রাস্তার মধ্যে এক বাসের সাথে ধাক্কা লেগে ওখানেই মারা যায় ছেলে দুটো।"
বাবা আর কিছু বলতে পারলেন না তার গলাটা ধরে আসছে।
ডাক্তার কয়েক সেকেন্ড কি যেন ভেবে বললেন, "আমার মনে হয় ভাইয়ের মৃত্যুতে ও একটা বড় রকমের শক পেয়েছে। আর এখন ও নিজেকে একজন আন্ডারকভার এজেন্ট ভাবছে। বড় বড় ড্রাগ মাফিয়াদের খুঁজে বের করছে। খুঁজে খুঁজে তাদের নাম ঠিকানা মেইল করে সি আই ডি কে পাঠাচ্ছে।আমার ধারণা ও যে আড্রেসে মেইল পাঠাচ্ছে সেটাও ওর নিজেরই তৈরি। ওর রুমমেট হয়তো ওর অস্বাভাবিক আচরণটা বুঝতে পারছিল তাই ও ল্যাপটপে কি করে দেখতে চেয়েছিল কিন্তু ও ভাবছে ছেলেটা ওর ল্যাপটপ চুরি করছিল। ওর কথা শুনে যা বুঝলাম, যখন থেকে পুলিশ মাদকবিরোধী অভিজান শুরু করেছে তখন থেকে ওর এই কল্পনা গুলো শুরু হয়েছে। ও এমন কিছু কল্পনা করছে যা আসলে বাস্তবে নেই কিন্তু ও সেটাকেই বাস্তব ভাবছে। ওর এই সমস্যাকে বলে সিজোফ্রেনিয়া। এখন ওর ঔষধ এর চেয়ে আপনাদের সাহায্য বেশি প্রয়োজন।"
মা কাঁপা গলায় বললেন,"ওকি কখনও ভাল হবে না?"
- "ভাল হওয়াটা নির্ভর করছে আপনারা ওকে কিভাবে ট্রিট করবেন তার উপর। তবে এটা ঠিক ভাল হতে অনেকটা সময় লাগবে। অনেক দিন ধরে কাউন্সিলিং করতে হবে ওকে। আপনাদের এখন ধৈর্য হারালে চলবে না।"
- "একটা ছেলে নেশা করে মারা গেল আরেকজন পাগল হয়ে গেল। একটা নিরীহ ছেলেকে ছুরি মেরেছে সেও পুরোপুরি ভাল হবে কিনা জানিনা।''
-"আমি আপনার কষ্টটা বুঝতে পাচ্ছি।"
-"আপনি আমার কষ্টটা হয়তো বুঝতে পারবেন কিন্তু কখনও অনুভব করতে পারবেন না স্যার।"
মায়ের ভেজা চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে এলো...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান সমসাময়িক রসদে ভাল লাগল।
সৈয়দ আহমেদ হাবিব সুন্দর। ভাল লেগেছে

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একজন তরুনের আবাস্তব/অলিক কল্পনার ফলে তৈরি সমস্যার কথা বলা হয়েছে এই গল্পে। কল্পনা আর বাস্তব এর মিশ্রণে দোলাচলে পরা এক মানুষের গল্প নেশা।

২৩ সেপ্টেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী