বৃদ্ধাশ্রম

ভাঙ্গা মন (নভেম্বর ২০১৯)

বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত
  • ৩৯
পাঁচটা বছর কাটিয়ে দিলাম আশ্রমের এই ঘরে -
সবার কাছে পরিচিতি এটা - " অভয়া বৃদ্ধাশ্রম " বলে ।
আশ্রমের একটা ছোট্ট ঘরে আমরা থাকি ভিনদেশি তিনজন ,
জরাজীর্ণ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত , কোনক্রমে করি দিনযাপন ।
তাকিয়ে থাকি আকাশ পানে কবে আসবে ডাক --
মৃত্যু আমাদের দোর গোড়ায় যেকোনো সময় আসবে তাদের হাঁক ।

মনে পড়ে অনেক আগের মধুর সেই স্মৃতি --
কলকাতার এক বনেদি পরিবারে ছিলাম রাজরানী ।
টাকা - পয়সা , গাড়ি - বাড়ি , দাস-দাসী সবই আমার ছিল ,
অভাব কি জিনিস , জীবনে সেটা বুঝিনি কখোনো ।

ছিল আমাদের ছোট্ট খোকা , থাকত আমার কোলে
তাকে নিয়ে কত স্বপ্ন আকতাম মনে-মনে ।
একদিন খোকা বড় হোল , তবুও সে আমাদের ছোট্ট সেই খোকা
সে কাছে না থাকলে আমাদের জীবনটাই যেন বৃথা ।
হটাৎ একদিন ... , অজানা এক জ্বরে ----
খোকার বাবা চলে গেলেন আমাদের একলা রেখে ।

খোকা আমার বড় হয়েছে , হয়েছে তার সংসার ,
আমার এখন বয়স হয়েছে , পারি না করতে সংসার ।
সারাটা দিন কাটাই আমি খোকার ছেলেকে নিয়ে ,
নাতিটি আমার খুব ভাল , সারাটা দিন আমার কাছেই থাকে ।

সময় পেলেই শোনাই তাকে মহাপুরুষদের গল্প ,
দেশমাতৃকার প্রতি তাঁদের আত্মত্যাগ আর আত্ম বলিদানের গল্প ।
দেবতাদের ভক্তি কোর এটা বোঝাই তাকে
বাবা-মাই তোমার আসল ভগবান , তাঁদেরকে রেখ সেই স্থানে ।
এখন আমার বয়স বেড়েছে , আর পারিনা হাঁটতে ,
রাজপ্রাসাদে জীবন কাটাই ছোট্ট একটি ঘরে ।

....... অবশেষে একদিন , ভয়ংকর এক ঝড়-জলের রাতে ,
আমার প্রাণঅন্ত সেই খোকা - প্রায় জোর করে পাঠিয়ে দিল
চারদেওয়ালের বন্ধি এই " অভয়া বৃদ্ধাশ্রমে " ।
সময়ের বড় অভাব তাদের , আসেনা দেখতে আমায় ,
আমি যে আজ তাদের ভীষণ বোঝা , এটা বুঝি সবসময় ।

সকাল থেকে বসে থাকি , তাদের অপেক্ষা করে ,
দেখতে তাদের ইচ্ছে করে , আমার মৃত্যুর আগে ।
নয়ন ভিজিয়ে বসে থাকি , সময় গড়িয়ে যায় --
তবুও তারা আসে না এখানে , তাদের কাছে সময় বড় দায় ।
সকাল থেকে সন্ধে গড়ায় তবুও আসে না তারা
পরের সকালে আবার ভাবি , আজ নিশ্চয় আসবে তারা ।

তন্দ্রাচ্ছন্ন আজ আমি , মৃত্যুপথ যাত্রী , চারিদিকে অন্ধকার ,
তারই মধ্যে খুঁজতে থাকি -- আমার ছেলেটিকে একবার ।
একটিবার দেখব তাদের এটাই ছিল মোর বাসনা -
মৃত্যু আমার শিয়রে এখন , অপূর্ণ রইল আমার বাসনা ।

চিৎকার করার চেষ্টা করি , ছেলের নামটি ধরে ,
আবছা ভাবে শুনতে পেলাম , কারা যেন কানের কাছে -
ভগবান , মহান আল্লা , প্রভু যীশুর বাণী জপছে --
আস্থে আস্থে বিলীন হলাম তাঁদের চরণ তলে ।
খোকা .., তোরা ভাল থাকিস , আর হলো না দেখা ,
আমার আশীর্বাদ সবসময় , আর অশেষ ভালবাসা ..... ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হুসাইন খোকা .., তোরা ভাল থাকিস , আর হলো না দেখা , আমার আশীর্বাদ সবসময় , আর অশেষ ভালবাসা .........ভালো লাগা রইলো।
মোঃ মোখলেছুর রহমান অনেক কষ্টের কবিতা, প্রিয় দাদা।
Hasan ibn Nazrul সকরুণ চিত্র। মানুষ এক সময় (এখনও অনেক জায়গাতেই আছে) এগুলোকে খারাপ চোখে দেখত। এখন জানি ধীরে ধীরে এটি একটা কালচারে পরিণত হচ্ছে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এবারের বিষয়কে মনে রেখে এই কবিতাটি লিখবার চেষ্টা করছি । কবিতাটির বিষয়বস্তু কোন কাল্পনিক নয় । আমার নিজের চোখে দেখা আমাদের এক প্রতিবেশীর জীবনের এক সত্য কাহিনী । যদি এই কবিতাটি পড়ে আপনাদের ভাল লাগে তবে আমার এই লেখার প্রয়াসটি সার্থক হবে ।

১২ আগষ্ট - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৪৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী