বৃষ্ট‌িভ‌েজা রাত

বৃষ্টি ভেজা (জুলাই ২০১৯)

Tasnia Lasker
  • 0
  • ২২২
আমার স্ত্রী নগ্ন হ‌য়ে বৃ‌ষ্টি‌তে ভে‌জে । আমার তা‌তে কোন আপ‌ত্তি নেই । এই জন্য আমরা দুজন সারাক্ষণ একটা বৃ‌ষ্টি‌ভেজা রা‌তের অপেক্ষায় থা‌কি । ক‌বে রা‌তে বৃ‌ষ্টি হ‌বে ! দি‌নে হ‌লে আমা‌দের মন খারাপ হয় । আমার স্ত্রীর নাম প‌পি সাহা । আর আমার নাম সিরাজুল ইসলাম । মে‌ডি‌কে‌লে পড়ার সময় নি‌জে নি‌জের নাম রে‌খে‌ছি বর্ণ । প‌পি আমার প্রথম ক্রাশ ছিল । প‌পি আর আমি একই গ্রা‌মের । এমন এক গ্রাম যে গ্রা‌মে কেউ ক্লাস সিক্স,‌সে‌ভে‌নের বে‌শি প‌ড়ে না । স‌র্বোচ্চ এস.এস.‌সি । সেই গ্রা‌মের বেড়া দেয়া প্রাথ‌মিক বিদ্যাল‌য়ে যখন ছেড়া স্যা‌ন্ডেল প‌ড়ে যাই,প‌পি তখন জুতা প‌ড়ে দুই বেণী ক‌রে বেণী‌তে সুন্দর ব্যান্ড দি‌য়ে স্কু‌লে আসে । হিন্দু মে‌য়ে‌দের যেমন গা‌য়ের রং হয়,দু‌ধে আলতা বা দু‌ধে হলুদ রং , প‌পি তার থে‌কে বে‌শি । চুলও‌ তেমন , মাথা ভ‌র্তি চুল । সা‌থে উকুনও ছিল বোধহয় । আমার মা বা‌ড়ি বা‌ড়ি কাজ ক‌রে,বাবা তখন আরেকটা বি‌য়ে ক‌রে উধাও । প‌পি‌দের বা‌ড়ি‌তেও আমার মা ধা‌নের সময় কাজ কর‌তো । প‌পির বাবা খুব বড়‌লোক না,ত‌বে সাহ প‌রিবা‌রের সবার মু‌দির দোকান আছে,ভা‌লো চ‌লে । এক‌দিন কাঠ ফাঁটা রো‌দে মা‌কে ডাক‌তে প‌পির বাড়ির আঙ্গিনায় বাঁশ ধ‌রে দাঁড়ায় আছি । প‌পি দে‌খে কিছু একটা বুঝ‌তে পার‌লো । সে একটা কাসার গ্লা‌সে ক‌রে পা‌নি নি‌য়ে এল ।
- নাও ।
- ‌কি?
- জল ।
- না । খাব না ।
- আরে বোকা ,‌কেউ আসার আগেই নাও । মা দেখ‌লে বা দি‌দিরা দেখ‌লে বকা দি‌বে । মুসলমা‌নের কিছু‌তে খে‌তে নেই , ছোঁয়া বারণ । খে‌য়ে নাও তাড়াতা‌ড়ি, আমি ভা‌গি ।
গ্লাসটা হা‌তে নি‌য়ে খেলাম । খে‌য়ে অবাক হলাম,পা‌নি না । ছিল শরবত । বাহ! মে‌য়েটার রূ‌পের সা‌থে মনও আছে । শুধু মাথার ঘিলুটা নেই । পড়াশুনায় যা‌চ্ছেতাই । ফেল কর‌তে সে পারদর্শী । প্রতিবার ফেল ক‌রে,তারপর মাস্টার‌কে কিছু টাকা দি‌য়ে আবার উপ‌রের ক্লা‌সে ওঠে । কিন্তু মে‌য়েটা‌কে আমার ভা‌লোলা‌গে । ক্লাস এইটে যখন প‌ড়ি,তখন দে‌খি সে কিছু‌দিন ক্লা‌সে নেই । মা কাজ ক‌রে যে‌হেতু,‌সে খবর আন‌লো বি‌য়ের কথা চল‌ছে প‌পির । মনটা খুব খারাপ হল তখন,প‌পি‌কে আর দেখা হ‌বে না । দুই,‌তিন গ্রাম প‌ড়ে বি‌য়ে প‌পির । প‌পির বি‌য়েও খে‌য়ে‌ছি আমি । স্বষ্ট ম‌নে আছে ।
‌সে‌দিনও গু‌ড়িগু‌ড়ি বৃ‌ষ্টি । বি‌য়ে বা‌ড়ি হালকা র‌ঙ্গিন কাগ‌জে সাজা‌নো । প‌পিরও হালকা সাজ । অল্প দা‌মের একটা লাল শা‌ড়ি,দুই হা‌তে দুইটা বালা,গলায় একটা মালা আর একটা টিকলী । বা‌কি মাথায় টোপর,কপা‌লে সাদা সাদা ফোঁটা দি‌য়ে সাজা‌নো । তাও প‌পি‌কে সুন্দর লাগ‌ছে । যে‌তে মন চা‌চ্ছিল না,ত‌বে একটা দিন ভা‌লো খাওয়ার লো‌ভে প‌পির বা‌ড়ি‌তে গি‌য়ে‌ছিলাম । বরযাত্রী আস‌লো,বরটা আমার একটুও পছন্দ হয়‌নি,বয়স্ক বর । উলু ধ্বনি‌তে বি‌য়ে বা‌ড়ি মু‌খো‌রিত হল । বি‌য়ের লগ্ন মধ্যরা‌তে হওয়ায় সারাটা দিন রাতই সেখা‌নে থাকলাম , মা‌য়ের কাজ চাপ ছিল মা‌কেও সাহায্য করলাম । প‌পির বিদায় হল । হা‌তে শাখা,‌সিঁদুর মাথায় নি‌য়ে প‌পি চ‌লে গেল ।
এবার আমার জীবনের ক‌ঠিন সময় এল । এস.এস.‌সি পরীক্ষায় বেশ ভা‌লো করলাম । মা খু‌শি হ‌য়ে বল‌লো,এবার কেরানীর চাকরী কর । কেরানীর চাকরী কর‌তে গেলাম,পা‌শের আরেক উন্নত গ্রা‌মের ক‌লে‌জে । চেয়ার,‌টে‌বিল মোছার চাকরী । যে‌য়ে ক‌লে‌জের রহমান স্যা‌রের সা‌থে খুব মিল হল । স্যা‌রের বাসায়ও বাজার খর‌চের কাজ ক‌রি । স্যার এক‌দিন আমার রেজাল্ট শু‌নে তো অবাক । সে বল‌লো,তু‌মি ক‌লে‌জে কেন ভ‌র্তি হ‌চ্ছো না ,আরেকটু পড়‌লে আরও ভা‌লো চাকরী পা‌বে । আরও ভা‌লো চাকরীর লো‌ভে টাকা জমায় ভ‌র্তি হলাম সেই ক‌লে‌জেই । চেয়ার,‌টে‌বিল ম‌ুছি আর পড়াশুনা ক‌রি । তারপর এইস,এস,‌সির রেজাল্ট আরও ভা‌লো হল । জীব‌বিজ্ঞা‌নে হা‌য়েস্ট মার্ক দে‌খে জীব‌বিজ্ঞা‌নের স্যার ডে‌কে বল‌লো তোমার আরও পড়া উচিত । ডাক্তার হ‌তে পা‌রো । লো‌ভে পে‌য়ে বস‌লো,য‌দি ডাক্তার হওয়া যায় । কিন্তু এবার তো আর কুলা‌তে পার‌বো না,এবার বহু টাকার দরকার । স্যার‌দের বললাম,রহমান স্যার আর জীব‌বিজ্ঞা‌নের স্যার মি‌লে ভ‌র্তি পরীক্ষার জন্য বই আর ভ‌র্তি ফর্ম তোলার টাকা দিল । খুব পড়লাম,প‌ড়ে পরীক্ষা দিলাম । চাঙ্স ও পেলাম । তত‌দি‌নে আমার সাহা‌য্যের জন্য হাত পাতা অভ্যাস হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছে । আবার বি‌ভিন্নজ‌নের কা‌ছে হাত পে‌তে ভ‌র্তি হলাম । তারপর আবার বই কেনা,এটা ওটা কেনা । এবার গ্রা‌মের লোকজ‌নের কা‌ছে হাত পাত‌লো আমার মা । গ্রা‌মের লোকজন যারা একটু বড়‌লোক,তারার সবাই মি‌লে কিছু টাকা দিল । এদের ম‌ধ্যে প‌পির বাবাও ছিল । প্রকাশ সাহা,‌বেশ টাকা দি‌য়ে‌ছিল তখন । ভ‌র্তি হওয়ার পর সব অভাব কে‌টে গেল টিউশ‌নি,‌কো‌চিং ক‌রি‌য়ে । মা‌কে এনে আমার সা‌থে রাখলাম । ডাক্তারী শে‌ষে যখন ইন্টার‌নি কর‌ছি তখন মা আমার জন্য পাত্রী খোঁজা শুরু কর‌লো । তখন একটা বিপদ এসে জুটলো । ক‌লে‌জের সেই সাহায্য করা রহমান স্যার,তার মে‌য়ের সা‌থে আমার বি‌য়ে দি‌তে চায় । তার মে‌য়ে কেবল ক‌লেজ শেষ ক‌রে‌ছে তখন ।মে‌য়েটা‌কে আমার পছন্দ না,‌কিন্তু না ও কর‌তে পার‌ছি না । সে না থাক‌লে তো এতদূর আস‌তেও পারতাম না । শেষ‌মেষ সিদ্ধান্ত নিলাম,যা আছে কপা‌লে । প‌রে য‌দি ভা‌লোলা‌গে মে‌য়েটা‌কে এই আশায়,বহু সান্তনা দি‌য়ে নি‌জেই নি‌জে‌কে রা‌জি করালাম । ভাগ্য ভা‌লো মে‌য়েটার আগে প্রেম ছিল,এলাকার এক পা‌তি মাস্তা‌নের সা‌থে । মে‌য়েটা বি‌য়ের আগে পালায় গেল । আমার চে‌য়ে আমার মা বে‌শি খু‌শি হল । তার পাত্রী দেখা আবার পু‌রোদ‌মে শুরু হ‌লো । আর আমি টাকার চিন্তা ক‌রি ।
এক‌দিন তাড়াহু‌ড়ো ক‌রে হাসপাতা‌লের লিফট দি‌য়ে উঠ‌তে যাব এমন সময় একটা প‌রি‌চিত মুখ দেখলাম । বহু বছর পর,প‌পির বাবা । দে‌খে কা‌ছে গেলাম,‌যে‌য়ে জি‌ঙ্গেস করলাম
- কাকা? আপ‌নি এখা‌নে?
- হুম বাবা । ( কেঁদে অস্থির )। আমার সব শেষ হ‌য়ে গে‌ছে নিঃস্ব আমি ।
- ‌কি হ‌য়ে‌ছে? কোন ওয়ার্ডে ,‌কোন ব্ল‌কে,‌কোন বে‌ডে?
কাকা হাউমাউ ক‌রে কিছু বল‌লো, আমি শুনলাম । ত‌বে তাড়া থাকায় অন্যদি‌কে গেলাম । কাকা‌কে কথা দিলাম প‌রে যাব । প‌রে খুঁজে খুঁজে বের করলাম । বে‌ডের কা‌ছে যে‌য়ে তো আমি অবাক । এটা কিভা‌বে সম্ভব । অর্ধ পোড়া এক রোগী । কিছুই বোঝা যা‌চ্ছে না তার শরী‌রের,প্রায় অংশই ঝল‌সে গি‌য়ে‌ছে । পা‌শে দেখলাম প‌পির বাবা । জি‌ঙ্গেস করলাম
- কে?
- প‌পি,বাবা । প‌পি ।
- ‌কিভা‌বে?
- জা‌নি না বাবা । ওরা ব‌লে রান্না কর‌তে যে‌য়ে আগুন লে‌গে‌ছে গা‌য়ে । এ কেমন কথা,‌মে‌য়েটা আগুন লাগার পর এতো চিল্লাইলো,ওর শ্বশুড় বা‌ড়িরে কেউ শুন‌লো না! সব ষড়যন্ত্র । ওর স্বামীর একটা পরকীয়া ছিল,আমার মে‌য়েটা কথা বল‌ছিল ব‌লেই ওরা এমন কর‌ছে ।
আমি প‌পির জ্ঞানহারা মা‌য়ের মত আমিও হতবাগ হ‌য়ে গেলাম । বহু চি‌কিৎসা হ‌লো । প্রায় তিন মা‌সের মত প‌পি মে‌ডি‌কে‌লে ছিল । সা‌থে ছিলাম আমি । কি যে যন্ত্রণায় থে‌কে থে‌কে প‌পি চিৎকার দি‌য়ে উঠ‌তো । এর মা‌ঝেও খবর এল প‌পির স্বামী আর প‌পি‌কে নি‌বে না । মুখ পোড়া বউ সংসা‌রে এনে সংসা‌রের অমঙ্গল কর‌বে না । সেসব প‌ড়ের কথা,প‌পি যে যন্ত্রণা নি‌য়ে ঘুড়‌বে সারাজীবন সেটা কে ব‌য়ে বেড়া‌বে ! আমি ব‌য়ে বেড়া‌চ্ছি । মন ধর্ম মা‌নে‌নি । আজও প্রায় রা‌তে তার চি‌ৎকার আমা‌কে পাগল ক‌রে । ত‌বে বৃ‌ষ্টি‌তে ভিজ‌লে ওর ভা‌লো লা‌গে । গা‌য়ের পোড়া চামড়াগু‌লো নতুন একটু আরাম পায় আবার নতুন ক‌রে উজ্জী‌বিত হওয়ার আশায় । তাই আমা‌দের ছা‌দে একটা অংশ চাদ‌রে ঘেরা আর আমরা অপেক্ষায় থা‌কি একটা বৃ‌ষ্টি‌ভেজা রা‌তের ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী প্রিয়াংকা সিলমী কাহিনী ও লেখনী ভাল লেগেছে অনেক। একটা জিনিস খটকা লেগেছে - কেরানীর চাকরীতে মনে হয় আরেকটু লেখালেখি জাতীয় কাজ করতে হয়। চেয়ার-টেবিল মোছার চাকরী হলে পদটা 'পিওন' হলে বেশি মিলত।
শ্রাবনী রাজু ভাল লেগেছে, ধন্যবাদ।
মোঃ মোখলেছুর রহমান এ গল্পের ১ম পাতাটি আমি উন্মোচন করেছিলাম কিন্তু সময় অভাবে কমেন্টে অাসতে পারিনি। যা হোক " সে আসে লাশ হয়ে " এর পর লেখা অনেকরখুঁজেছি। যা হোক এ লেখাটিও মন কারল,যথারীতি ভোট রইল।
রুহুল আমীন রাজু বৃষ্টি ভেজা রাতের সুন্দর স্মৃতি বিজড়িত গল্প। বেশ লাগল । একরাশ শুভেচ্ছা।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

দুজন ভাল‌োবাসার মানুষ,একটা বৃষ্ট‌ির রাত‌ের অপ‌েক্ষায় থাক‌ে তাই ।

২৩ জুলাই - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অভিমান”
কবিতার বিষয় "অভিমান”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মার্চ,২০২৪