আজিজ (বি.এসসি)

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১৭)

ম নি র মো হা ম্ম দ
এক
রাঁধা নগর হাই স্কুলের অংকের শিক্ষক আজিজ মাষ্টার, পুরো নাম আব্দুল আজিজ( বি.এসসি)। এলাকার সবাই থাকে আজিজ স্যার নামেই চিনে। আজিজ মাষ্টারের বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে গত শীতে। বিয়ে শাঁদী করেননি, নিজে নিজেই রান্ন করে খান,আর বসে বসে গণিতের জটিল জটিল অংক কষেন। আজিজ মাষ্টার তার সারা জীবন অংকের পিছনে দিয়ে গেছেন। স্কুলের ছাত্ররা অংক পছন্দ করতোনা, তাই তিনি অংক নিয়ে মজার মজার খেলা আবিষ্কার করেছেন। খেলার ছলে ছাত্রদের অংক বুঝান। আজকে ক্লাস টেনের উচ্চতর গণিত পড়াচ্ছেন।সবাই অমনোযোগী,তিনি বললেন বাবারা শোন আইজ একটা মজার খেলা খেলব, কেউ কোন শব্দ করবানা, শব্দ করলে খেলার আসল মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। ছাত্ররা চুপ করে তার কথা শুনছে।
তিনি বললেন সবাই একটি সংখ্যা কল্পনা কর।তার সাথে ৩ যোগ করে ২ দ্বারা গুণ কর।এবার নতুন সংখ্যাটিকে ৪ থেকে বিয়োগ করে ২ দ্বারা ভাগ কর। প্রাপ্ত সংখ্যাটি থেকে কল্পনা করা প্রথম সংখ্যাটিকে বিয়োগ কর……”
উওরটি কত ? নিশ্চয়ই ১! অনেকেই হাত তুলে বলল জ্বী স্যার,জ্বী স্যার! সবাই সেই খেলা বুঝেনা, যারা বুঝে তারা অবাক হয়ে মুখ হাঁ করে থাকে।
সবচেয়ে বেশি বুঝতো তার প্রিয় এক ছাত্র, নাম ছিলো এবাদুল।কয়দিন আগে গাছ থেকে ডাব পারতে গিয়ে নিছে পড়ে মারা যায়। ছেলেটার ব্রেণ জলের মতো পরিষ্কার ছিলো। যা বুঝাতো তাই বুঝতো। আহারে বেচারা! একটা বিরাট প্রতিভা অল্প বয়সেই ঝড়ে গেলো।ভাবতে ভাবতে আজিজ মাষ্টারের চোখে পানি চলে আসলো। ছাত্ররা তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো।
তিনি ক্লাস শেষে বিমর্ষ হয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, হঠাৎ তার চোখে নীল একটা আলোর ঝটা লাগলো, কয়েক সেকেন্ডের জন্য তিনি কিছু বুঝতে পারলেন না। শরীরটা কেমন জানি করছে, মাথাটা মনে হচ্ছে ঝিম ঝিম করছে। তিনি কমন রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ বসলেন। কিন্তু না, তার খুব ক্লান্ত লাগছে, মনে হচ্ছে একটা ঘুম দিলে ভালো লাগতো। আজিজ সেদিন তাড়াতাড়ি বাড়ীতে চলে এলেন। তার মাথায় সেই নীল আলো ঘুরপাক খাচ্ছে। এই নীল আলো কোথা থেকা আসলো। মনে হচ্ছে চোখের ভুল। বেশী অংক নিয়ে গবেষণা করার ফল। বাসায় ঢুকতেই দরজার সামনে ছোট্র একটা গুল চাকতির মত বস্তু দেখলেন। খেলনা চরকীর মত বস্তু। পাশের বাসার বাচ্চাদের খেলনা মনে হয়। ভুল করে ফেলে গেছে। তিনি চাকতীটা হাতে নিয়ে নিজের ঘরে টেবিলের উপর রেখে কাপড় বদলিয়ে বছানায় শুয়ে পড়লেন। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন চাকতীর ভীতর থেকে একটা নীল আলো বের হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। নীল আলোর সাথে সাথে চাকতীটা কেমন যেন ফুলের পাপড়ির মতন ছড়িয়ে পড়লো। তিনি বিছানায় বসে বসে সব দেখছেন। কিছুক্ষণ পর আলো কমে গিয়ে ভীতর থেকে পিংপং বল মাটিতে পড়লে যে রকম আঁওয়াজ হয় সে রকম পিং পং আঁওয়াজ বের হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে আঁওয়াজ বন্ধ হয়ে ভীতর থেকে অনামিকা আঙুলের সাইজের দুজন নীল রং এর পুতুলের মত ব্যক্তি বের হলো। আজিজ ভাবছে, মনে হয় স্বপন দেখছে সে,তিনি নিজের হাতে জোড়ে একটা চিমটি কাটলেন।কিন্তু না, তিনি বাস্তব জগৎএ আছেন। স্বপ্নে রং বুঝা যায়না, কিন্তু তিনি স্পষ্ট নীল রং দেখছেন। তিনি বিছানা থেকে নেমে পুতুল দু'টার কাছে গেলেন, লিলিপুটের মত এরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে,কিছুক্ষণের জন্য আজিজের নিজেকে গ্যালিবার গ্যালিবার মনে হচ্ছে। কি বলছে এরা বুঝা যাচ্ছেনা, শুধু পিং পং আঁওয়াজ কানে আসছে। আজিজ মনে মনে ভাবছে সে মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছে, না হলে চোখে কি ভাসছে এসব! তিনি পুতুল দুটো হাত দিয়ে ধরতে গেলেন, পুতুলটাকে ধরা মাত্রই তার মনে হলো বিদুৎ এর একটা বিরাট শক তার উপর দিয়ে গেলো।তিনি শক খেয়ে মাটিতে অচেতন হয়ে পড়ে গেলেন।
দুই
স্যার স্যার উঠো, আর কত ঘুমাবে?
তুমি করে কে তাকে ডাকছে? একটা যন্তের মত দেখতে রোবটের ডাকাডাকিতে আজিজ মাষ্টার চোখ খুলে উঠে বসলেন। আজিজ নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা বিরাট হলরুমের মত ঘরে। চারপাশের দেয়াল আছে কিনা বুঝা যাচ্ছেনা। কেমন জানি ধোঁয়াটে ধোঁয়াটে একটা আবেশ! আর তিনি বসে আছেন ইনবিজিবল খাটে, খুবই নরম কিন্তু দেখা যায়না। খটের পাশে জগের মত একটা বস্তু, তার পাশে মনে হচ্ছে গ্লাস এইগুলোও মনে হচ্ছে শূন্যে ভাসছে!। তার খুব পানি খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু তিনি সাহস পাচ্ছেননা! যে রোবটটা তাকে ডেকে তুললো, কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে একটা ইঞ্জেকশানের মত কি জানি পুশ করলো।আজিজ ভয় ভয় চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো! তিনি ভাবছেন তার মনে হয় হেলুসিলেশন হচ্ছে। হয়ত চোখ বন্ধ করে আবার যখন চোখ খুললে তখন কিছুই থাকবেনা! আজিজ চোখ বন্ধ করে নিজের গায়ে আবার চিমটি কাটলেন।
রোবটটা বলল কি পিপাসা মিটেছে।
আজিজ চোখ খুলল কি আশ্চর্য আমি তো কাউকে পানির কথা বলিনি।
তুমি কে? আমি কোন জায়গায় আছি? আর তোমার গলার স্বরটা আমার খুব পরিচিত। কিন্তু কার মত গলার স্বরটা সেটা মনে করতে পারছিনা।
সব তোমাকে আস্তে আস্তে জানানো হবে। তুমি আছো বুধ গ্রহে। আমরা বুধ গ্রহের বাসিন্দা, তোমরা যাকে এলিয়ন ডাকো। আজিজ বলল বুধ গ্রহে কি করে আসলাম? আমি আমার ঘরে শক খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলাম।
এলিয়নটি বলল তোমাকে এখানে আনা হয়েছে, কিছু কঠিন এলগরিদম সমাধান করার জন্য।
তারপর ট্যাকান বলল তোমার চুলের সাথে একটা ছোট্র ট্রাসলেটর লাগানো আছে,তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখন আমরা লাগিয়েছি, যাতে তুমি আমাদের কথা বুঝতে পারো। আর তুমি এটা দেখতে পাবেনা কারন এখানে ইনবিজিবল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে ।
আর আমি হচ্ছি ট্যাকান, নাম বলতে বলতে এলিয়নটা হ্যন্ডশেকের ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে দিলো। আজিজ হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল আবার শক দিবেনাতো?
এলিয়নটির কপালে একটা সবুজ আলো জ্বলে উঠলো। এটা হচ্ছে রিয়্যাক্ট বাটন। ভালো লাগলে সবুজ আলো, আর খারাপ লাগলে লাল আলো জ্বলে উঠে।
ট্যাকান বললো তোমাকে সব বুঝিয়ে দেওয়া আমার কাজ। আর তোমার ব্রেণ আমরা রিড করেছি। তাই যখন তোমার কিছু লাগবে আমরা বুঝতে পারবো। তোমার আঙুলে একটা রাইটিং ন্যানো প্রসেসর লাগানো আছে, তোমার কিছু লিখতে ইচ্ছা করলে আঙুল ঘুরালেই লেখা চোখের সামনে ভেসে উঠবে। কথাটা শেষ করার আগেই তার সামনে একটা হলোগ্রাফি পর্দা ভেষে উঠলো।পর্দায় একজনের ছবি ভেসে উঠলো, মনে হচ্ছে উনিই এদের প্রধান। ছবিটা ভেসে উঠতেই ট্যাকান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আমার ডিউটি আপাদত শেষ।কাল আবার দেখা হবে। কথাটা শেষ করেই ট্যাকান চলে গেলো।
পর্দায় ভেসে উঠা লোকটি বলল আমাদের এই গ্রহে আপনাকে স্বাগতম। আমি হচ্ছি এই গ্রহের বিজ্ঞানী ক্যালাস। আপনাকে এখানে আনা হয়েছে সামান্য উপকার করার জন্য। কিছু গাণিতিক সমস্যা আছে, এগুলো সমাধান করে দিবেন।
আজিজ বলল আমি বাড়ি যেতে চাই। অংক আমি ক্লাসে পড়াই, আপনাদের গণিত আমি বুঝবনা।
ক্যালাস বলল এখানে তোমাকে আনা হয়েছে কিছু জটিল সমস্যা সমাধান করার জন্য। আজ তুমি রেস্ট নেন। বুধ গ্রহটা ঘুরে ঘুরে দেখো,বলতে বলতে পর্দাটা অদৃশ্য হয়ে গেলো।আজিজের মেজাজ খুব খারাপ লাগছে, তিনি একজন শিক্ষক মানুষ, কিন্তু এরা সবাই তাকে তুমি তুমি করছে কেন?
তিন
ট্যাকান আর আজিজ একটা যান এ করে বুধ গ্রহ ঘুরে বোড়াচ্ছে! যানটা একা একাই উড়ছে।আজিজ বলল একটা কথা জানার খুব ইচ্ছে!
তুমি কি জানতে চাও আমি জানি? কথা শেষ করার আগেই ট্যাকান বলে ফেলল।
বুধ গ্রহের পৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ৪৫২ কেলভিন (৩৫৩.৯°ফারেনহাইট, ১৭৮.৯° সেলসিয়াস)। এবং এটা সূর্যের খুব কাছে তবুও আমরা কি করে এখানে টিকে আছি তাইতো?
আজিজ কোন উত্তর দিলোনা। সে ট্যাকান এর কথা শুনে যাচ্ছে আর নিজেকে মনে মনে গালি দিচ্ছে।
ট্যাকান বলল তোমরা মানুষের কৌতূহল বেশী, কিন্তু ধৈর্য্য অনেক কম।কি ঠিক বলেছি? আর একটা কথা আমরা ব্যাকারণ বুজিনা, আমরা সবার ফিকুয়েন্সি রিড করে তার মত করে কথা বলতে পারি,তাই তুমি করে বলায় তোমার ব্রেইনের সেল কেমন জানি করে, এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিও!
আজিজ বলল এত কিছু বুঝিনা।
ট্যাকান বলল তোমার ব্রেইণ রিড করে বুঝলাম তোমার খুব রাগ লাগছে। কিন্তু এতে তোমাদেরও অনেক উপকার হবে।
আজিজ বলল কি রকম উপকার?
ট্যকান উত্তরে বললো এই যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আমরা এর সমাধান জানি। আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই এর সমস্যা সমাধান করে ফেলেছে। আমরা তোমাকে এর ফর্মুলা দিয়ে দিবো। সেই সাথে ব্রেইন ট্রান্সফারের সূত্র ও শিখিয়ে দিবো।যদিও তোমার মনে থাকবে কিনা জানিনা!
আজিজ বলল তোমরা কি অনেক বুদ্ধিমান?
আজিজের কথা শুনে ট্যাকানের কপালের সবুজ আলো জ্বলে উঠলো।
আজিজ বলল তোমাদের গ্রহ গাছহীন, গাছ ছাড়া গ্রহ দেখতে কি ভালো লাগে?
ট্যাকান বলল আমাদের গাছ লাগেনা আর গাছ তো অক্সিজেন দেয়। আমাদের অক্সিজেন লাগেনা। শুধু তোমার জন্যই যানে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছি।
যানটা উপাত্যকার মতো একটা জায়গায় তাদের নামিয়ে চলে এলো।
ট্যাকান বলল আমাদের বিজ্ঞানীরা আমাদের গ্রহের চতুর্দিকে অদৃশ্য শক্তিশালী সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছে যাতে সূর্যের তেজ আমাদের গ্রহের কোন ক্ষতি করতে না পারে।
আজিজ বলল এই জায়গায় এত যন্ত্রপাতি কেন?
ট্যাকান বলল এই জায়গা থেকে আমরা অন্য গ্রহে যাওয়ার যান পাঠাই। ট্যাকান সামনে হাত বাড়িয়ে একটা কাচের ঝাড়ের মত বস্তু নিয়ে আজিজের মাতায় হ্যালমেটের মতো পড়িয়ে দিলো।
ট্যাকান বললো তোমরা মানুষ মঙ্গলে কিউরিসিটি রোবট পাঠিয়েছ, মঙ্গল এর তথ্য নেওয়ার জন্য।
আমরা অনেক আগেই মঙ্গলের সব তথ্য কালেক্ট করেছি। তোমাকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আজিজ বললো আমার কাজ কখন শুরু হবে?
সময় হলেই তোমার সামনে প্রধান বিজ্ঞানী সব খুলে বলবে।
কিছুক্ষণ পর আবার যানটি তাদের সামনে আসলো, তারা দু'জন যানে উঠে সেই আগের হলরুমে ফিরে গেলো।
চার
নীল রং এর সেই লিলিপুট গুলো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, তবে এদের সাইজ আগের চাইতে অনেক বড়, মনে হয় এরা হরলিক্স কিংবা কমপ্লেইন খেয়ে লম্বা হয়ে এসেছে। এরা নিজেদের মধ্যে কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছিলো। আজিজ কে দেখা মাত্রই আজিজের হাতে একটা ন্যানো চিপ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। হলোগ্রাফি পর্দার ব্যাক্তিটি এবার তার সামনে এসে বসলো। তাকেও হাতের ইশারায় বসতে বলল। তারা শূণ্যে বসে কথা বলছে,কিন্তু মনে হচ্ছে নরম গদির উপর বসে আছে, গদিটা দেখা যাচ্ছেনা! ক্যালাস হাত ইশারা করতেই সামনে একটা মনিটর ভেষে উঠলো। এতে অসংখ্য ডিস্ক্রিট ম্যাথ, বাইনারি সংখ্যার মত এলোমেলো।
ক্যালাস বলল তুমি তোমার হাতের চিপটা মনিটরের সামনে ধর,আর তোমার কাজ শুরু কর।
আজিজ কোন কথা বলছেনা সে একমনে সবগুলো গণিতের সমাধান করলো। ট্যাকান বলেছিলো ক্যালাস তার ব্রেইণ রিড করতে পারবে কিন্তু সমাধান না দেইয়া পর্যন্ত তারা কোন উত্তর পাবেনা।
ক্যালাস বলল তোমার সমাধানগুলো আঙুল এর ইশারায় লিখে ফেলো।
আজিজ বলল এটা দিয়ে তোমাদের কি লাভ?
লাভ লোকশান দিয়ে তুমি কি করবে? কথা গুলো বলার সময় ক্যালাসের কপালে লাল আলো জ্বলে উঠলো।
আজিজ বলল তুমি না বলা পর্যন্ত আমি কোন সমাধান দিবোনা।
ক্যালাস বিকট এক শব্দ করে বললো, তুমি সমাধান না দিলে আমরা তোমাকে ব্রেইণ শূণ্য করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিব।তখন তুমি হবে বুদ্ধিহীন এক প্রাণী।
আজিজ বলল তোমরা নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে কর?
বিজ্ঞানী ক্যালাসের কপালে নীল আলো জ্বলে উঠলো,
নীল আলো কেন জ্বললো আজিজ বুঝতে পারলোনা।
ক্যালাস বললো আমরা বুদ্ধিমান, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় তোমাদের চাইতে আমাদের বুদ্ধি কম। তোমার সমাধান গুলো পাওয়ার পর আমরাই হবো সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। আমারা গ্যালাক্সির সব গ্রহের নেতৃত্ব দেব। কথাগুলো বলতে বলতে তার কপালের সবুজ বাতি মিটমিট করে উঠলো।
আজিজ মাষ্টারের গালবেয়ে ঘামের ফোঁটা এসে থুতনিতে জমা হলো, সে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। মানবজাতির সাথে এত বড় বেঈমানি সে করতে পারবেনা! আবার তাকে পৃথিবীতে ও ফিরে যেতে হবে।
আজিজ ক্যালাসের কথায় রাজী হলো, তবে একটা শর্ত দিলো, সে সব গণিতের সমাধান তাকে দিবে বিনিময়ে তাদের টেকনোলজির ফর্মুলা তাকে দিতে হবে, এবং সেই সাথে ব্রেইণ ট্রান্সফার করার যে সূত্র তারা আবিষ্কার করেছে তা'ও তাকে বলে দিতে হবে!
আজিজের কথা শুনে ক্যালাসের কপালের লাল আলো জ্বলে উঠলো। সে হাতের ইশারায় মনিটরটা টুকরো টুকরো করে ফেললো, আর আজিজের হাতের চিপটা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পিংপং আঁওয়াজ করতে করতে শূণ্যে মিলিয়ে গেলো।
ক্যালাসের চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরই সেই ছোট্র লিলিপুটের মত এলিয়ন গুলো আর তাদের সাথে ট্যাকান তার সামনে হাজির হলো।কিন্তু এরা কি ভাষায় কথা বলছে। আজিজ কিছুই বুঝতে পারলোনা, তাহলে কি এরা তার ট্রান্সলেটর যন্ত্র খুলে নিয়েছে। না, এই তো সে আবার সব বুঝতে পারছে। ট্যাকান বলল স্যার তোমার বাড়ি যাওয়ার সময় হয়েছে। তোমরা মানুষের একটা অতি শক্তিশালি জিনীস আছে যা আমাদের নেই।
আজিজ বলল কি সেটা?
ট্যাকানের কপালে সবুজ বাতি জ্বলে উঠলো, সে বলল তোমরা এটাকে 'মন' বলো। যা আমাদের মধ্যে নেই। আমাদের প্রধান বিজ্ঞানী ভুল মানুষ নিয়ে এসেছিলো। সে তার ভুল বুঝতে পেরে তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। সকল ফর্মুলা তোমায় শিখিয়ে দিচ্ছি। এত বড় জার্নিতে মনে রাখতে পারবে কিনা কে জানে।
ট্যাকান একে একে সব তাকে বুঝিয়ে দিলো। কিভাবে ব্রেইণ ট্রান্সফার করতে হয়। ব্রেইণের খারাপ সেলগুলো কিভাবে মুছে দিতে হয় সব!
হঠাৎ আজিজ তার শরীরে একটা বিদুৎ এর শক এর মত অনুভব টের পেলো। আজিজ অচেতন হয়ে পড়ে গেলেন।ছোট্র লিলিপুটের মত এলিয়ন দুটো তাকে পৃথিবীতে রেখে আসলো।
আজিজ নিজের বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। দরজা ভীতর থেকে বন্ধ।
দরজায় খট খট শব্দ করে কে যেন ডাকছে?
আজিজ দরজা খুলে বাইরে বের হলেন, দপ্তরী লিয়াকত দাঁড়িয়ে আছে।
লিয়াকত বলল স্যার আপনে নাকি অসুস্থ?
হেড স্যার আপনের খোঁজ নিতে পাঠালেন।
তিনদিন ধরে আপনে স্কুলে যাচ্ছেননা।
আজিজ এবার বুঝলো সে এক বিরাট স্বপনের মধ্যে ছিলো। হঠাৎ তার বাম হাতের আঙুলে কেমন জানি চিনচিন ব্যাথা করছে।
আজিজ আঙুল ঘুরিয়ে নিজের নাম লিখলো আ জি জ। তিনি তার চোখকে বিশ্বাস করে পারছেন না, শূণ্যে আঙুল ঘুরিয়ে যা লিখছেন তাই চোখের সামনে ভাসছে। আবার কয়েক মিনিটের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে, আবার লিখছেন, আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। লিয়াকত বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।
আজিজ এবার নিশ্চিত হলো তাহলে তার সাথে এলিয়নদের দেখা হয়েছে। তারা তাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে, কিন্তু তার কিছুই মনে নেই। তার এই কথা কে বিশ্বাস করবে? সবাই তাকে পাগল বলবে। ট্যাকানের গলার স্বরটা তার প্রিয় ছাত্র এবাদুলের গলার স্বর এত মতো। এখন তার সব মনে পড়ছে, কিন্তু ফর্মুলাগুলো তিনি কিছুতেই মনে করতে পারছেনা। তিনি বিড় বিড় করে ফর্মুলাগুলো মনে করার চেষ্টা করছেন। লিয়াকত দরজার ফাঁক দিয়ে সব দেখে চলে গেলো।
আজিজ মাষ্টার নিজের মনে আঙুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শূণ্যে লিখে চলেছেন,একে একে সব লিখে চলেছেন, লেখা মিলিয়ে যাচ্ছে, আবার লিখে যাচ্ছেন, কিন্তু তার আসল ফর্মুলাগুলো মনে পড়ছেনা। সে প্রাণপনে মনে করার চেষ্টা করছে, কিন্তু মনে করতে পারছেনা!পৃথিবীর জন্য সে কিছুই করতে পারছেনা, তার দু'চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ম নি র মো হা ম্ম দ অনেক ধন্যবাদ,ভাই!
মোঃ আক্তারুজ্জামান ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী আপনার গল্প পড়তে খুব ভালো লেগেছে। সবচেয়ে মজা লেগেছে এই যে- এলগরিদমের সমাধানের জন্য এলিয়েনেরা তাকে বুধ গ্রহে নিয়ে যায়। সেখানে সেখানকার বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের সাথে পরিচয় করে দেওয়া, জটিল ম্যাথের সমাধান, চিপস দেওয়া সহ নানাবিধ বৈশিষ্ট্য খুব মন কেড়ে নিছে। তবে এই গল্পের ম্যাথটাও দারুণ মজার এক খেলা খেলে..... শেষে বলবো- চমৎকার এক গল্প। শুভকামনা রইল ভাই....
প্রজ্ঞা মৌসুমী আপনার গল্পের পাতা সেই কবেই ঘুরে এসেছিলাম। এখন দেখছি মন্তব্য করা হয় নি কোন কারণে। গল্পটা ভালো ছিল। শেষটাও ছিল চমতকার। আজিজ স্যার খুব জটিল সব অঙ্ক বুঝেন/ করেন, গল্প পড়ে খুব একটা মনে হয়নি আমার। ধরুন, গল্পে কোথাও যদি থাকত ভালো কিছু ম্যাথ বইয়ের নাম (হয়তো উনার ঘরেই পড়ে আছে) তাহলে মনে হতো বেশ। উচ্চতর গণিত ক্লাসে যে উদাহরণ দিলেন সেটা হতে পারতো উচ্চতর গণিত বইয়ের কোন এক চাপ্টারের একটা সমস্যা। অবশ্য এরকম থাকতেই হবে- বলছি না। একটা যায়গায় লিখেছেন সবাই তুমি তুমি করছে কেন? কিন্তু এর দু লাইন আগেই ক্যালাস আপনি করে বলেছিল। এতসব গবেষণা করে কিডন্যাপ করার পরে বলছে ভুল মানুষ এনেছে- পড়ার স্বাদটাই যেন আচানক শেষ হয়ে গেল ঃ)। এমনিতে গল্পটা উপভোগ্য ছিল। শুভকামনা
দীপঙ্কর ভাল লাগল লেখা
ম নি র মো হা ম্ম দ অনেক ধন্যবাদ...।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত আজিজ মাস্টারের মধ্যে দিয়ে অন্য গ্রহের উপর কল্পনা করে লেখা গল্পটা ভাল লাগল । শুভকামনা ।

১২ জুলাই - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪