পার্থিব

পার্থিব (জুন ২০১৭)

কথা ঘোষ
  • ১০
ছেলেটির নাম ধ্রুব আহসান।বাবা মার একমাত্র সন্তান।পুরনো ঢাকার ছয় তলা একটা বাড়িতে খুব গোছানো একটা ফ্ল্যাট এ মা বাবা আর ধ্রুব তিন জন মাত্র মানুষ।তবু সবসময় বাড়িটা একাই মাতিয়ে রাখে ধ্রুব।ক্লাস থ্রি তে পড়ুয়া ধ্রুবর বন্ধুর অভাব নেই ক্লাসে।তবে ক্লাস ফ্রেন্ড অবন্তী নাম এর দুষ্টু মেয়েটা সবসময় ক্লাসে মারামারি করত ধ্রুবর সাথে।ধ্রুব একদম সহ্য করতে পারতো না অবন্তী কে।কিন্তু এক সময় কেমন করে যেন অবন্তী আর ধ্রুবর মাঝে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।কিন্তু ঝগড়া বন্ধ হলোনা!এক ই এলাকায় ওদের দুই জনেরি বাসা তাই দুজনি থাকতো সবসময় পাশাপাশি।
অবন্তী মেয়ে টা ছিলো ভীষণ দুষ্টু।স্কুল জীবন এ কোনো কিছুতেই সে হারাতে পারতো না ধ্রুব কে।তাই সবসময় মাথার ভেতর দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরতো কেমন করে ধ্রুব কে শায়েস্তা করা যায়।ধ্রুব ও কম ছিলো না সময় আর সুযোগ বুঝে অবন্তীর সাথে মারামারি করাটা তার স্বভাব ই ছিলো বলা চলে।এ দিকে অবন্তী তো কখনোই ছেড়ে দেবার পাত্রী টি নয়।কারনে অকারনে একটু কিছু হলেই স্কুল থেকে ফেরার পথে হাজির হতো যেয়ে ধ্রুবর বাসায়।ধ্রুবর মা তো ভীষণ ভালোবাসতো এই ছোট্ট মেয়ে টা কে।আর অবন্তী সেই সুযোগে ইনিয়ে বিনিয়ে হাজার টা মিথ্যে ধ্রুবর মায়ের এর কাছে বানিয়ে বলে নালিশ করে আসতো প্রায় প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে।
আর মা তো এই সব বিশ্বাস করে ধ্রুব কে খুব বকা দিতো।এভাবেই পার হলো ক্লাস সেভেন।অদ্ভূত একটা অনুভূতি ছিলো দু জন এর মনে।কেমন যেনো একটা অদৃশ্য মায়া।এটাই হয়তো বন্ধুত্ব!ক্লাস এইট এর শেষের দিকে এক বিকেলের ঘটনা।ধ্রুব এলো অবন্তীর বাসায়। সেদিন ধ্রুব কে একটু অন্য রকম লাগছিলো!হঠাৎ একটা চিরকুট অবন্তীর হাতে দিয়ে বলল, "পরে খুলে দেখবি!"
কৌতূহল নিয়ে সাথে সাথে কাগজ টা খুলে অবন্তীর মাথা খারাপ হয়ে গেলো। তারপর "মামনি!" বলে চিৎকার করতেই ধ্রুব চলে গেলো। এর পরদিন ঐ কাগজ টা নিয়ে দু জন এর বাড়িতে মহা কান্ড।ধ্রুবর মা খুব বকা দিলো ও কে।আর এ দিকে অবন্তীর মামনি বলল, "বাজে ছেলে এই বয়সে প্রেম!আজ থেকে ধ্রুবর সাথে মেলামেশা বন্ধ!"
এর পর মাঝে অনেক দিন দু জন এর কথা বন্ধ।কিন্তু একটা অদ্ভুত চাপা কষ্ট আর শূন্যতা সব সময় অবন্তীর মনে।তারপর একদিন কেমন করে যেন দু জন এর ভাব হয়ে গেলো।ধ্রুব সরি বলল।তখন ক্লাস নাইন এর শেষ সময় পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত।তারপর শেষ হল এস.এস.সি.।পরীক্ষা শেষে ধ্রুব চলে গেলো ঢাকার বাইরে।ধ্রুব ঢাকার বাইরে যাওয়ার পরের সময় টায় একটা বিষয় হয়তো স্পষ্ট হলো অবন্তীর কাছে।ধ্রুব হীন শূন্যতাটা অদ্ভুত এক কষ্টের।সে সময় টাতে অবন্তী কারনে অকারনে ধ্রুবর বাসায় যেতো শুধু জানার জন্য ধ্রুব ফিরেছে কিনা।তারপর এক বিকেলে অবন্তী বাড়ির ছাদে উঠে হঠাৎ দেখতে পেলো ধ্রুব ছাদের উপর ক্রিকেট খেলছে।ওর সাথে ওর মামাতো বোন জেনি।পর দিন সকাল থেকে অবন্তীর অপেক্ষা.....
এই বুঝি ধ্রুব আসবে!কিন্তু ধ্রুব এলোনা।এ ভাবে কদিন কাটলো।প্রতিদিন বিকেলে জেনি আর ধ্রুব একসাথে খেলছে আর জেনি মেয়েটা কারনে অকারনে সবসময় ধ্রুবর পাশাপাশি!এ দিকে এ সময় টাতে ধ্রুব খুব এড়িয়ে চলছিল অবন্তীকে।সময়টা অদ্ভুত কষ্টের ছিলো।শৈশবের অজানা অনুভূতির ভালবাসা।
তারপর এক বিকেলে অবন্তী ধ্রুবর বাসায় গেলো।যেয়ে দেখলো ধ্রুব বাইরে যাবে।ওকে দেখে ধ্রুব আর জেনি কেমন একটা ভাব ধরল!
বাইরে তখন খুব বৃষ্টি।ধ্রুবর মা অবন্তী কে বলল, "বৃষ্টি থামলে বাসায় ফিরবি।"
কিন্তু অবন্তী তখনই বাইরে বেরিয়ে এল তারপর ধ্রুব দের ছাদের চিলেকোঠায় দাড়িয়ে রইল।তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।বাইরে বৃষ্টি আর অবন্তী এর দৃষ্টিতে বৃষ্টি মিলেমিশে একাকার!অবন্তীর মন এর ঘন আঁধার আজ যেন ছুঁয়ে গেলো ক্লান্ত সন্ধ্যা কে!একটু পরেই পেছন থেকে আলতো করে হাত এর স্পর্শ অবন্তী এর ঘাড় এর কাছে।ঘুরে তাকাতেই আচমকা হঠাৎ অবন্তী কে বুকে জড়িয়ে ধরল ধ্রুব।মুহূর্তেই অবন্তী ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে!কিন্তু অবন্তী এর ডান হাত টা আকড়ে ধরল ধ্রুব।আর বলল "এ বাঁধন কোনো দিন ছেড়ে যাসনা"।
সেদিন ধ্রুবর কথার কোনো উত্তর দিতে পারেনি অবন্তী।বাইরে সন্ধ্যার আবছা আঁধার আর মেঘের কান্না বৃষ্টি কে উপেক্ষা হয়ত ধ্রুবর কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতেই ছুটে বেড়িয়ে এলো অবন্তী ধ্রুবর বাসা থেকে।এর পর ঐ দিন এর সেই রাতটা ছিলো অবন্তী এর জীবন এ অন্য রকম একটা রাত।
ঘরের আলো নিভিয়ে আঁধারের মাঝে সে দিন নিজেকে আড়াল করতে চাইলো অবন্তী!সারা টা রাত আবেগী চোখের জলের সাথে অদ্ভুত এক ভালোলাগার নিরব দ্বন্দ্ব!এর পরের কয়েক দিন আর ওদের মাঝে কোন যোগাযোগ ছিল না!কেন যেন দুই জন ই হয়ত একে অপরের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতো!!
এস.এস.সি. রেজাল্ট ভালোই হল...রেজাল্ট এর দিন দু জন এর সম্পর্ক টা পুনরায় ঠিক আগের মতো হয়ে গেলো।এর পরের সময় টাতে ধ্রুব যেন পাল্টে গেলো! সবসময় একটা অভিভাবক এর মতো আচরণ করতো অবন্তীর সাথে।অবন্তীর ও কেন যেন ব্যাপারটা দারুণ লাগতো!এই বিষয় টা তে অবচেতন মন এই একটা ভালোলাগা কাজ করতো ওর!এবার দুজন এর কিছু সময় স্বর্গীয় এক প্রেম!যেখানে শরীর ছোঁয়ার কোনো স্পৃহা নেই।শুধু অনুভূতির গভীরতায় সে সময় টা তে হয়ত মৃত্যু কে ও হাসি মুখে আলিঙ্গন করা যেতো। দুজন এর মন শুধু ভালোবাসার মুগ্ধতায় নির্বাক হয়ে ছুঁয়ে যেতে চাইতো স্বপ্ন গুলোকে।
এর পরের সময়টা কেটে গেলো শুধু আগামী দিন এর স্বপ্নের জাল বুনে।কেমন যেনো স্বপ্নময় ছিলো সে ক্ষণ গুলো।প্রতি টা সেকেন্ড যেন বছর হয়ে ছুঁয়ে যেতে চাইতো ভালোলাগায় জড়ানো সে ক্ষণ গুলোকে।ক্লাস এর শেষে মাঝে মাঝে আড্ডা।ফ্রেন্ড সার্কেল এর সাথে এখানে ওখানে ঘুরাঘুরি...
মাঝেমাঝে ক্লান্ত দিনের শেষে শেষ বিকেল এর গোধূলিতে ধ্রুবর গিটার এর মিষ্টি সুরে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া!হঠাৎ হঠাৎ বর্তমান থেকে ভবিষ্যৎ এর আনাচে কানাচে স্বপ্নের দ্বীপ জ্বেলে দেয়া সেই সব সোনালী দিন...শত জন্মের প্রতীক্ষায় হয়ত এমন একটা ধ্রুবর দেখা মেলে।অবন্তী আর ধ্রুবর সম্পর্কের ব্যাপার টা প্রথমে দু জন এর বাসার কেউ না জানলেও এক সময় ধ্রুবর মা এর চোখে ধরা পরে গেলো।মা সে সময় টা তে বন্ধুর মতো ওদের পাশে এসে দাড়ালো।মাঝে মাঝেই ধ্রুবর মা অবন্তী কে বলত "মা" বলে ডাকার জন্য।সেই তখন থেকে অবন্তী ধ্রুবর মা কে "মা" বলে ডাকতো!অল্প কদিন এর মাঝেই অবন্তী হয়ে গেলো ধ্রুবর পরিবার এর একজন।ধ্রুবর মা অবন্তীর সাথে পরিবার এর সব কিছু শেয়ার করতো আর অবন্তী কে বলত, "মা এটাই তোর নিজের ঘর!যেভাবে খুশি তুই সাজিয়ে নে।"
সে সময় গুলো ছিলো বৃষ্টির পর ঝলমলে আকাশের বুকের বর্ণালী রংধনুর মতো...স্বপ্ন,হাসি আর উচ্ছাসে ভরা স্বপ্নীল এক জগৎ।যেখানে কষ্ট,হতাশা আর দুঃখ রা ছিলো চির নির্বাসিত!
এভাবে চলে এলো এইচ.এস.সি পরীক্ষা।পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততা টা অনেক বেশী ছিলো ধ্রুব আর অবন্তী দু জন এর মাঝেই।কারন যে ভাবেই হোক যে করেই হোক খুব ভালো রেজাল্ট করতে হবে দুজন কেই...তবে রাতদিন পড়াশোনার মাঝেও চলে শৈশব এর সেই পুরনো অভ্যাস!কথায় কথায় খুনসুটি,রাগ,অভিমান!ব্যস্ত সারা টা দিন শেষে ক্লান্ত প্রতীক্ষা রোজ রাতে...বিছানায় যাওয়ার আগে মোবাইল সেট টা হাতে নিতে যেন ধ্রুব,অবন্তী কারোর ই কখনোই ভুল হতো না!
প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরিচিত নাম্বার থেকে প্রত্যাশিত সেই ক্ষুদেবার্তা!খুব সাধারণ কিছু ছোট ছোট কথা।তবু সে সব ই অনুভূতির বিশালতা কে ছুঁয়ে যেতো অদ্ভূত ভালোলাগা হয়ে!
মাঝে মাঝে অবন্তী ভাবতো আল্লাহ তার জীবন টাকে এতটা সুখে ভরিয়ে দিলো!হয়ত শত জন্মের পুন্য ফলে সে ধ্রুব কে পেয়েছে।এতো টা অদ্ভূত ভাবে কেউ ভালোবাসতে পারে!ধ্রুবকে না পেলে হয়ত জানাই হতো না।কেমন যেন অদ্ভূত একটা ছেলে প্রতিটা মুহুর্তে শুধু ভালোবাসার মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখতো অবন্তী কে।ভালোবাসা ভালোবাসা আর ভালোবাসায় রঙিন হয়ে থাকতো সেই সব দিন এর স্মৃতির পাতা গুলি।তেমনই এক রাতে ধ্রুবর এক এস.এম.এস...
"কোন এক ভরা পূর্নিমায় মেঘের আড়ালে অপূর্ব রূপবতী চাঁদ শেষ রাতে মিতালী করবে ধ্রুবতারার সাথে...ততো টা রাত আমি প্রতীক্ষায় রবো।"
এভাবেই স্বপ্ন আর সুখের শিহরনে কেটে যাচ্ছিল সময়....
এর ই মাঝে এইচ.এস.সি. পরীক্ষা শেষ হলো।শুরু হলো ভর্তি প্রস্তুতি...ধ্রুব বুয়েট এ এডমিশন টেস্ট এর প্রস্তুতি নেয়া শুরু করল।অবন্তীর ও একই স্বপ্ন বুয়েটে সিভিলে পড়া।ঠিক সেই সময় টা তে অবন্তীর মামনি ধ্রুবকে নিয়ে অবন্তীকে সন্দেহ করতে শুরু করল।হঠাৎই মামনির সন্দেহের দৃষ্টিটা ক্রমশই প্রখর হতে শুরু করল।জীবন এর নতুন বিপর্যয়...সৌমিত্র সৌম নামের অবন্তীর বাবার বন্ধুর ছেলে ডি.এম.সিএইচ. এর (ইন্টার্ন. ড.) কে নিয়ে অবন্তীর মা বাবার আলোচনা দিন দিন যেন বেড়েই চলছিল!বাপির অবন্তীকে মেডিকেলে পড়ানোর ইচ্ছেটা এবার স্পষ্ট হলো অবন্তীর কাছে!স্বপ্ন রঙিন দিন গুলো হঠাৎ যেন ফিকে হতে শুরু করল.....
সেই সময় মাঝে মাঝেই রাতে অবন্তীর মোবাইল এ কল দিতো সৌম...অযুহাত সেই একটাই মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি কেমন চলছে সেই সব জানা আর নতুন নতুন উপদেশ দেয়া.....!তাছাড়াও আবার কখনো বা ডি.এম.সিএইচ. নিয়ে নানা গল্প...অনিচ্ছেয় হলেও প্রতিদিনই ফোন এ দুই একবার সৌম এর সাথে কথা বলতে হতো অবন্তীকে!আর এ দিকে ফোন বিজি থাকা নিয়ে অহেতুক ভুল বুঝাবুঝি শুরু হলো,প্রায় প্রতিদিন ই দিন রাগারাগি হওয়া শুরু হল ধ্রুবর সাথে।সেই সময় টা যেন ছিল অবন্তীর জীবন এর সবুজ অরণ্যে বিরামহীন এক ভয়াবহ কালবৈশাখী!ঝড়ের উপলদ্ধি টাকে সেই প্রথম নিবিড় ভাবে ছুঁয়ে দেখছিলো অবন্তী!তবু প্রতিদিন ভোর হতো নতুন রঙে দিন সাজাবার স্বপ্ন নিয়ে।
দিন যতোই যাচ্ছিল ধ্রুব আর অবন্তীর দুরত্ব ততোই বাড়তে থাকলো।তবে সেই দিন গুলোতে প্রতিদিন ধ্রুব অনেক ই-মেইল করতো অবন্তী কে।অনেক অভিমান আর হারানোর ভয় জড়ানো সেই প্রতিটা ই-মেইল একশো বার করে পড়তো অবন্তী।
এর কয়েক দিন পর ই হঠাত ধ্রুবর মা অসুস্থ হয়ে পরলো!আর সেই সূত্র ধরে অবন্তীর ঘন ঘন ধ্রুবর বাসায় যাওয়া আসা...কারনে অকারনে ধ্রুবকে একটু কাছে পাওয়া টা তখন অবন্তীর জন্য খুব প্রত্যাশিত কিছু পাওয়া।এক বিকেলে ধ্রুব অবন্তীকে বলল কাল রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি,দারুণ সুন্দর একটা স্বপ্ন!যদি চাইলেই স্বপ্ন টা ছুঁয়ে দেখা যেতো!এবারে অবন্তীর প্রশ্ন,
-কি স্বপ্ন আমায় বলবি??
-হুম বলব যদি আমার স্বপ্ন টাকে তুই সত্যি করিস!
-আমি স্বপ্ন সত্যি করব!?
অবন্তী চমকে ওঠে ধ্রুবর কথা শুনে!তারপর বলে,
-হুম সত্যি করব।বল কি স্বপ্ন??
-আমি তোর কপালে একটা কিস করব,দিবি ওই কপালে একটু আদরের টিপ এঁকে দিতে।?
কি উত্তর দেবে অবন্তী!বুঝে উঠতে পারলো না।তারপর বলে উঠলো, "দেবো,আজ নয় আর এক দিন!"
এর কিছু দিন পরের ঘটনা।সৌম তার জন্মদিনে অবন্তী কে অনুরোধ করল ডি.এম.সিএইচ. ঘুরে যেতে।অবন্তী প্রথমে যেতে চায়নি!কিন্তু সৌমিত্রর খুব করে বারবার বলাতে শেষে রাজি হতে হলো অবন্তী কে।কিন্তু এই কথা টা ও বলতে চেয়েও বলতে পারলো না ধ্রুব কে!ডি.এম.সিএইচ. থেকে এসে সেদিন অবন্তী বিকেলে ধ্রুবর বাসায় গেলো।ঐ দিন সারাটা দিন ধ্রুবর সাথে তেমন কথা হয়নি বললেই চলে।এ দিকে ধ্রুব তো ভীষণ রেগে আছে অবন্তীর ওপর!অবন্তী ধ্রুবর বাসায় যেয়েই আগে মা এর রুম এ ঢুকলো।এর মাঝে ফোনটা মা এর বিছানায় রেখে ওয়াশ রুম এ গেলো হাত মুখ ধুতে।আর ঠিক সে সময় টাতে অবন্তীর ফোন এ একটা এস.এম.এস. করল সৌম!
"অবন্তী জানো আমার বন্ধুরা তোমায় দেখে কি কমেন্ট করেছে?
তুমি খুব দারুণ একটা মিষ্টি মেয়ে।"
ঠিক ওই এস.এম.এস. টাই ধরা পড়ে গেল ধ্রুবর চোখে!ওই দিন ওই এস.এম.এস. টা নিয়ে আবার নতুন করে ভুল বুঝলো ধ্রুব!এর পর অনেক বার ধ্রুবকে বুঝাতে চেয়েও পারেনি অবন্তী।মাঝে এভাবেই কেটে গেল কিছু দিন!পার হলো এক্সাম।কিন্তু সে দিন এর পর ধ্রুব আর অবন্তীর মাঝে দুরত্ব টা খুব একটু বেশি ই হয়ে গেল।ধ্রুব কে অবন্তী কত ভাবে সেই বিকেল টায় বুঝাতে চেয়েছিল ইচ্ছে তে না একরকম অনিচ্ছেতেই সে গিয়েছিল ডমছ এর ক্যাম্পাস এ।ঐ একটা এস.এম.এস. ই অবন্তীর প্রতি ধ্রুবর মনে অনাস্থা আর অবিশ্বাস টা কে স্থায়ী ভাবে জায়গা করে দিলো।ধ্রুবর আঁকা বাকা কথা গুলো সে দিন সে বিকেলে খুব বেশী আহত করেছিলো অবন্তী কে।সেই বিকেলের পর মাঝে বেশ কিছু দিন অবন্তী আর ধ্রুবর মাঝে যোগাযোগ টা একদম ই বন্ধ হয়ে গেলো।কত শত বার অবন্তী মাফ চাইলো কিন্তু ধ্রুবর সেই এক কথা, "বিশ্বাস করিনা আমি তোকে।সত্যি বিশ্বাস করিনা।". যদিও ধ্রুবর মন এর ভেতরের সত্যি টা বুঝার ক্ষমতা টা অবন্তীর একটু বেশীই ছিলো!
এর কিছু দিন পর হঠাৎ এক দুপুর এর কথা।সেদিন ছিলো শুক্রবার। "বাফা" থেকে নাচ এর ক্লাস শেষ করে ফিরছিলো অবন্তী।হঠাৎ পেছন থেকে "এই অন্তী!" বলে কেউ ডাকতেই চমকে উঠলো অবন্তী!
এই নাম এ তো শুধু ওকে একজন ই ডাকে!আর সে হলো ধ্রুব!আজ কতো শত দিন পর অবন্তী আবার এই ডাকটা শুনল!কত শত যুগ প্রতীক্ষার পর যেন হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটলো!এই এক মুহুর্তের একটি ডাকে অবন্তীর হৃদয়ের তপ্ত শুষ্ক মরুভূমি যেন জলের স্পর্শ পেলো! চোখ ছলছল করে উঠলো অবন্তীর।খুব বেশী ই চমকে উঠলো ও।ঐ দিন এই ডাক টা যেন অনেক প্রত্যাশার পরে চাতক পাখির বৃষ্টির স্পর্শ পাওয়ার মতো মনে হল ওর কাছে!অল্প কয়েক মিনিট কথা হওয়ার এক পর্যায়ে ধ্রুব বলল, "আর থাকতে পারছি না রে!কেন যে বুঝিসনা আমায়!বড্ড বেখেয়ালী তুই...।"
খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথা গুলো বলল ধ্রুব!তারপর অবন্তী ওকে বিদায় দিয়ে আসার সময় ধ্রুব পিছু ডেকে বলল, "আজ বাই বললি না যে!"
অবন্তী একটু হেসে "বাই" বলল ধ্রুব কে।ওই দিন সারা টা দিন খুব ভালো কাটলো অবন্তীর...
তারপর ঘড়ি তে যখন রাত এগার টা ধ্রুবর কল এল অবন্তীর ফোনে।অবন্তীর মন টা খুশিতে ভরে উঠলো,কতদিন পর ধ্রুবর ফোন!!ফোন টা রিসিভ করতেই ধ্রুব বলল, "কাল সকালে মুন্সীগন্জ যাচ্ছি।তিন দিন থাকবো।তিন দিনে ১৫০ বার ফোন দেবো একবার ও যেন ফোন বিজি না পাই!"
ধ্রুবর এক মুহুর্তের এই অভিমান জড়ানো আবেগ নিমিষেই মন ছুঁয়ে গেলো অবন্তীর! এর পর কি অদ্ভুত ব্যাপার!ধ্রুব মুন্সীগন্জ যাওয়ার ঠিক পরদিন দুপুরের পর থেকে হঠাত ধ্রুবর ফোন বন্ধ!অবন্তী বারবার ফোন দিতো ধ্রুব কে কিন্তু রাত পর্যন্ত ওর ফোন আর ওপেন হলোনা!তার পরদিন বিকেলে বন্ধু রাতুল ফোন দিয়ে অবন্তীকে বলল, "তুই দশ মিনিটের মাঝে ধ্রুবদের বাসায় আয়।"
অবন্তী কিছু বলতে চাইলো রাতুল কে।তার আগেই রাতুল ফোন কেটে দিলো!রাতুলের এ আচরণে অবাক হলো অবন্তী।অজানা এক ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো ওর।ফোন টা কেটে যাওয়ার সাথে সাথেই অবন্তী ছুটে গেলো মামনির কাছে।মামনির রুম এ যেয়ে একরকম ভয়ে ভয়ে বলল,
"মামনি,ধ্রুবর বাসায় যাবো।"
মামনির এক কথায় উত্তর,
"এতো সাহস পাও কোথায় তুমি!"
অসহায় অবন্তী ফিরে যায় নিজের ঘরে।আর তারপর আবারো ফোন দেয় ধ্রুব কে!নাম্বার তখনো বন্ধ!ঠিক তার পর পরই কাজের মেয়েটা নিচ তলা থেকে ফিরে এসে কি যেন বলল অবন্তীর মামনি কে।আর সাথে সাথেই মামনি ছুটে এলো অবন্তীর ঘরে।এসে বলল,
"যাও তো একটু ধ্রুব দের বাসায়!
মামনির মুখে এ কথা শুনে একটু অবাক হয় অবন্তী।তারপর কোনো প্রশ্ন না করেই দ্রুত বেরিয়ে পরে।ধ্রুবর বাড়ির নিচ তলায় প্রবেশ করেই চমকে যায় অবন্তী!!অনেক মানুষের ভীর!আর মাটিতে বসে আছে ধ্রুবর মা।তার আর্তনাদে কম্পিত হচ্ছে আকাশ পাতাল.......!!
মা এর পাশে সাদা কাফনে জড়ানো একটা লাশ দেখে পুরো নিস্তেজ হয়ে যায় অবন্তী!অবচেতন মনেই বলে ওঠে,
"ধ্রুব এখানে কেন?"
ধ্রুব টা এমনিতেই দেখতে ভীষণ সুন্দর ছিলো।কিন্তু ঐ দিন ধ্রুব কে কেন যেন আরো বেশী সুন্দর দেখাচ্ছিল!সদা হাস্য উজ্জল দুষ্টু এই প্রানবন্ত ছেলেটার এভাবে শান্ত হয়ে শুয়ে থাকাটা কেউ যেন মেনে নিতে পারছিলনা.....।
ধ্রুবর মা বারবার অবন্তীকে ডেকে বলছিলো,
"এই মেয়ে তুই চুপ কেন!ডাক না আমার ধ্রুব কে!তুই ডাকলে ঠিক উঠবে।বল না তোর সাথে ঝগড়া বাঁধাতে!"
অবন্তীর সব কথা আজ যেন বোবা কান্নায় পথ হারালো!ধ্রুবর লাশ এর এক পাশে ধ্রুবর একটা হাত ছুঁয়ে বসে আছে অবন্তী।ওর অঝড় নিরব কান্না সবার দৃষ্টি ছুঁয়ে যায়!রাত যখন প্রায় নয়টা অবন্তীর মামনি এক রকম জোর করেই লাশ এর পাশ থেকে তুলে নিয়ে এলো অবন্তী কে।ধ্রুবর মুখটা শেষ বার এর মতো দেখবে বলে পিছু ফিরে তাকাতেই অবন্তীর ইচ্ছে হলো ধ্রুবর অনেক দিন এর দেখা সেই স্বপ্ন টা আজ সত্যি করে দিতে,ধ্রুবর কপালে আজ একটু শেষ বার এর মতো চুমু খেতে।অবন্তী হাজারো ভীর এর মাঝে আবার ও ফিরে এলো লাশের পাশে।আর হঠাৎ ধ্রুবর লাশের উপর লুটিয়ে পড়লো অবন্তী!অবন্তীর কান্নার চিৎকারে হতবাক হয়ে গেল উপস্থিত সবাই।অসংখ্য বার চুমু খেলো ধ্রুবর কপালে।এর পর অবন্তীর মামনি এক রকম জোর করে টেনে লাশের বুক থেকে তুলে বাসায় নিয়ে এলো অবন্তীকে।চার দেয়ালের ঘরে সেদিন হয়ত অবন্তীকে ওর মামনি বন্দী রাখতে পেরেছিলো ঠিকই তবে অবন্তীর মন টা বারবার ছুটে যেতে চেয়েছিলো সেই জগতে,যেখানে গেলেই হয়ত অবন্তী তার ধ্রুবকে আর একটা বার ফিরে পাবে......!
রাত প্রায় শেষের দিকে।ধীরে ধীরে আলোকিত হচ্ছিল পৃথিবী।সুদূর মিনার থেকে ভেসে আসে আযান এর ধ্বনি!তবে সেই রাত এর পর অবন্তীর জীবন এ ভোর হয়ত আর কখনোই আসেনি।আজো প্রতিটি রাতে নির্ঘুম থাকে অবন্তী কি এক নিদারুণ শূন্যতা নিয়ে...।অবন্তীর কেন যেন বিশ্বাসই হয়না পার্থিব জগতের এই চির সত্য টিকে তার মেনে নিতে হবে!যে মানুষ পৃথিবী থেকে একবার হারিয়ে যায়,সে আর কখনো ফিরে আসেনা। অবন্তী আজ বিশ্বাস করে ভালবাসা শুধুু পার্থিব নয়। পৃথিবীর বাইরে এক জগত আছে সেই জগতে তার ধ্রুব হয়ত খুব ভাল আছে।ধ্রুব হয়ত তার মত করেই তাকে আজো ভালবাসে।আনমনে শুধু তারেই ভাবে।দিন শেষে শেষ বিকেলের সূর্য টা যখন দূর আকাশের বুকে টিপ পরায়,অবন্তী কে দেখা যায় সেই পাঁচ তলা বাড়িটার ছাদে এর একপাশে এলো চুলে দাড়িয়ে থাকতে একা একা!বিষন্ন দৃষ্টিতে মেয়েটি চেয়ে থাকে দুর আকাশের দিকে!যতো দুর চোখ যায় শুধুই শুন্যতা ছুঁয়ে যায় সে দৃষ্টিকে!সেই শুন্যতা হয়তো অবন্তীর হৃদয়ের শুন্যতার কাছে খুব সহজেই হার মেনে যায়...........!!!!!!!!!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু ভাল লাগলো । হ্যাঁ , বানানের দিকে আশা করি সামনে খেয়াল রাখবেন । শুভ কামনা নিরন্তর । ( আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো )
Fahmida Bari Bipu বানান খেয়াল করুন। যতিচিহ্নের পরে একটা স্পেস থাকে। আগে নয়। গল্প লিখে কাউকে দিয়ে পড়ান, নিজে পড়ুন একাধিকবার। ধীরে ধীরেই পরিপক্বতা আসবে আশা করা যায়। প্লট নিয়ে বেশি বেশি ভাবুন। শুভকামনা রইলো।

১৮ মার্চ - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী