প্রতিমা ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ কেটে রাখে কাজলের কালিতে, ২৫শে মার্চ এর গায়ে। বিষ্ণুপদ শহর থেকে গাঁয়ে ফিরবে এই রাতে। ঢাকা শহরের রাজপথে, বিষ্ণুপদ ফেরি করে ফেরে আলতা চুরি আয়না ফিতে। লেইস ফিতে লেইস হাক ডাক মুখে এই পাড়া ঐ পাড়া ঘুরে ফিরে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি নামে। নতুন বধু প্রতিমার দেহ মনে যেন আগুন লাগে! বৃহস্পতিবার লক্ষীর পাচালিতে প্রতিমার মন বসে না। আনমনা হয়ে পাচালির লাইনে লাইনে ভাঙা উচ্চারনে ভুল করে। শ্বাশুরি রেনুবালা দেবী অসন্তোসে ধমকে উঠে, কি রে অলক্ষীর বেটি লক্ষী তাড়াতে আইলি নাকি মুর ঘরে? প্রতিমা ঘোমটার আড়ালে মুখ লুকিয়ে হাসে। অপেক্ষার প্রহর বাড়তেই থাকে, বিষ্ণুপদ বাড়ি ফেরে না সে রাতে।
কাক ডাকা ভোরে দলে দলে লোক শহর পেরিয়ে গাঁয়ে ছোটে, সকাল সাত টার আকাশ বানীর সংবাদ শুনতে, শ খানেক লোক ভীর জমায় রায় বাবুদের বৈঠক ঘরে। প্রতিমা আড়ে ঠারে ঠাওর করে, শহরে কারফিউ জারি হয়েছে। খানসেনারা নিরীহ বাঙালিদের উপর রাতের আঁধারে ঝাপিয়ে পরেছে!
রেনুবালা দেবী 'বিষ্ণুরে ও বিষ্ণু' বলে ছেলেরে ডেকে ডেকে প্রলাপ করে কাঁদে! দেখতে দেখতে এপ্রিল মে জুন গেলো, রায় বাবু,সৌমেন সাহা,নিখিল পন্ডিত, এক এক করে সকলেই কলিকাতায় পাড়ি জমালো। বিষ্ণুপদর খোঁজ মেলে না আজ বহুদিন! বুড়ো শ্বাশুরিকে নিয়ে অসহায় প্রতিমার বেলা কাটে অনাহারে অর্ধাহারে। গ্রামের লোকেরা কানে মুখে বলাবলি করে, বিষ্ণুপদ আর নেই! ও বেটা গুলি খেয়ে মরিছে খানসেনাগির হাতে! প্রতিমার কেন যেন মনে হয় বিষ্ণুপদ মরেনি, সে ঠিক ঘরে ফিরবে। এখনো প্রতিমা দুপুরের স্নান শেষে সিঁদুর পড়ে সিঁথি ভরে, প্রতিক্ষার প্রহর গুনে রাত্রি পেরিয়ে সকাল দুপুর বিকেল ধরে। পাশের গাঁয়ে রাজাকারদের ক্যাম্প হয়েছে। বিষ্ণুপদর যুবতি সুন্দরী বউ এর প্রতি নজর পরেছে পিচ কমেটির চেয়ারম্যান উবায়দুল্লা খানের। বাড়ীর পাশের হিজল গাছে নিমপক্ষী টা রাত ভরে ডাকে। রেনুবালা দেবী প্রতিমারে ডেকে বলে, অ বউ অলক্ষী পাখি টারে শিক পরা দে রে, প্রতিমার চোখ ভেঙে ঘুম নেমে আসে সে রাতে। ঘুমন্ত প্রতিমা হঠাৎ চমকে উঠে নর পশুদের উল্লাসে! প্রতিমার শরীরে ব্লাউজ সায়া বিহীন আটপৌরে শাড়ী দেখে হায়েনাদের উল্লাস বেড়ে চলে, পাঞ্জাবি সেনাদের ভেতর বাকবিতন্ডা শুরু হয়। কে আগে ভোগ করবে প্রতিমার শরীর টারে! প্রতিমার আত্মচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। রেনুবালা দেবীর রক্তাক্ত লাশের পাশে, প্রতিমার নগ্ন দেহ পরে আছে, একের পর এক নর পশু ভোগ করছে প্রতিমার নগ্নতাকে।
১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১, খালিশপুর পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয় প্রতিমা সহ আরও সাত জন বীরঙ্গনাকে! যারা সাত জনই ছিল নগ্ন দেহে। এমন হাজারো নগ্নতার গল্পের ভীরে, স্বাধীনতা এসেছিল বাঙালির ঘরে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রতীক
eto sundor kore sajiye guciye likhecen je barbar porte icce korce.
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।