ভালোবাসা আবহমান

নগ্নতা (মে ২০১৭)

সিদ্ধার্থ দত্ত
  • ১৭
অফিস ফাঁকা হয়ে গেলেও শমিতা যায় নি। হাতের কাজ পুরো না করে ওঠেই বা কি করে।বসের যা মেজাজ!কম্পিউটারের স্ক্রিনটার দিকে তাকিয়ে সময় ভুলে গেছে!
- কী গো শমিতাদি,বাড়ি যাবে না? অফিস তো ফাঁকা হয়ে গেল! চলো,বাড়ি চ,আমি তোমাকে লিফট দিয়ে দিচ্ছি।
সঞ্জয়ের কথায় হুঁশ ফেরে।অল্পবয়েস,পরিশ্রমী কিন্তু বেশ মরমী ছেলে।পছন্দই করে শমিতা।
- না রে সঞ্জু! তুই চলে যা। আমার আরো একটুক্ষণ লাগবে।আমার সঙ্গেও গাড়ি আছে তুই চিন্তা করিস না!
- তাহলে নীচে ক্যান্টিনে একটা কফি বলে যাচ্ছি, মাই অ্যাকাউন্ট।
শমিতা হাসে। হাত তুলে বলে,ওক্কে,বাই।
- ওকে, কাল দেখা হবে।ভালো থেকো!সঞ্জয় হেসে ডোর ঠেলে বেরিয়ে যায়!
সঞ্জয় বেরিয়ে গেলে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে শমিতার ভেতর থেকে! '" ধুসসস্, কী হবে আগে বাড়ি ফিরে! প্রত্যেকের বাড়িতে কেউ না কেউ অপেক্ষা করে।ওর জন্যে তো কেউই নেই! শূন্য ঘরে ফিরতে কারই বা ভালো লাগে! বয়েস বেড়ে যাচ্ছে।বায়োলজিক্যাল ক্লক টিকটিক করে চলতে মনে করিয়ে দেয়,আর মা হওয়া হলো না তোমার!বোঝে শমিতা! কিন্তু জীবন তো এরকমই! নাঃ,রাত হলো। এবার বাড়ি যাওয়া দরকার। হতাশা চেপে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে কম্পিউটার শাট ডাউন করে।
কুয়াশায় ঢেকে গেছে চারদিক।ড্রাইভ করতে করতেই ঘড়ির দিকে তাকায়।সবে ন'টা।এমন কিছু রাত্তির না! অথচ কী কুয়াশা পড়েছে এরমধ্যেই!রাস্তা দেখা যাচ্ছে না।এমনকি উল্টোদিক থেকে আসা গাড়িগুলোর হেডলাইটের আলোও ম্লান।আন্দাজে ড্রাইভ করতে করতে অন্যমনস্ক হয়ে কখন লেন চেঞ্জ করেছে বুঝতেই পারেনি। তীব্র শব্দ, ধাতব আর্তনাদ,প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে থেমে গেল গাড়িটা!তারপর আর কিছু মনে নেই!
- ইউ আর ওকে মিস মিত্র।কলিশনটা জোর হয়ে ছিল নিঃসন্দেহে।তবে সীট বেল্ট আর এয়ারব্যাগের কৃপায় এযাত্রা বেঁচে গেলেন।কাল ব্রেকফাস্টের আগেই ছুটি দিয়ে দেব। এখন রেস্ট নিন।
ডাক্তারের কথায় সম্বিত ফেরে।সারা শরীরে অসম্ভব যন্ত্রণা।চারদিকে হাসপাতালের আবহ।
- ভেতরে আসতে পারি? আমি রঞ্জন।
অপরিচিত এক ভদ্রলোকের মুখ কেবিনের দরজা ঠেলে উঁকি দিচ্ছে।অবাক হয় শমিতা।
- আসুন।কিন্তু আপনাকে তো ঠিক…..
বেডের পাশে রাখা টুলটা টেনে বসে পড়েন মানুষটি।
- না চেনারই কথা।আসলে,অ্যাকসিডেন্টটা আমার গাড়ির সঙ্গেই....
মূহুর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় শমিতা।
- আপনি কেমন আছেন,আঘাত কতটা এসব জানতেই আমার এখানে আসা। ভালো আছেন দেখে স্বস্তি পেলাম।যদি পারমিশন,পাই তাহলে কাল আপনাকে আমি বাড়ি পৌঁছে দিতে চাই।
- আপনার গাড়িও তো…
- আমার দুটো গাড়ি আছে। প্লিজ আপনি আপত্তি করবেন না!
শমিতা নীরবে মাথা নেড়েছিল।

সেই শুরু।তারপর কখন যে রঞ্জনের সঙ্গে ভালোবাসায়,প্রেমে আস্তে আস্তে জড়িয়ে গেছে টেরই পায়নি।পেরিয়ে এসেছে সংসারের সমস্ত কুঁজ।
- এবার আমরা ঘর বাঁধতে পারিনা রঞ্জন?স্পষ্টতই বিব্রত দেখায় রঞ্জনকে।
- বিয়ে? না শমি।আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়!
কান্নায় গলা বুজে আসে শমিতার। কেন,রঞ্জন?তুমি কি আর কাউকে?
- না,না শমি।কথাটা আমার আগেই বলা উচিৎ ছিল।কিন্তু বিশ্বাস করবে না জেনে বলিনি।
- কি কথা? যতো অবিশ্বাস্যই হোক, তুমি বলো আমি শুনবো
একটু উদাস দেখায় রঞ্জনকে। যেন কোনো দুরের মানুষ কথা বলে ওঠে,
- তোমার মনে আছে শমি,যেদিন তোমায় হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম সেই দিনটার কথা?
- আছে।
- তোমার গাড়ির সঙ্গে আমার সরাসরি ধাক্কা লাগার পরও আমার শরীরে কোনো চোট আঘাতের চিহ্ন ছিল না! মনে পড়ে?
শমিতা কনফিউজড হয়ে যায়।
- সত্যিই তো! কিন্তু কীভাবে?!
- সেটাই বলতে পারিনি এতদিন। আসলে,সেদিনের ওই অ্যাকসিডেন্টে আমি মারা গিয়েছিলাম!
একটা অস্ফুট চিৎকার গলা দিয়ে বেরিয়ে আসে শমিতার।ক্ কী বলছ তুমি পাগলের মতো!
- ঠিকই বলছি গো! মারা যাবার পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে সব দেখেছিলাম।পুলিশের গাড়ি এল।অ্যাম্বুলেন্স। তোমার অচৈতন্য শরীরটা তুলে নিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করলো।সুঅঅঅঅব।তখন আমার মাথার ভেতর একটা কন্ঠস্বর বলে চলেছে,তোর এখনও সময় হয়নি।তবে হতে পারে যে কোনোদিন।ততদিন তুই সাধারণ মানুষের মতোই বেঁচে থাকবি।যেদিন ডাক পড়বে সেদিনই তোর শেষদিন। তাই.....
শমিতা নিশ্বাস বন্ধ করে শুনছিল।রঞ্জন থামতেই বলে,এক্ষুণি তোমার মাথার ট্রিটমেন্ট করানো উচিৎ!
ম্লান হাসে রঞ্জন।,না শমি,আমার প্রত্যেকটা কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি!
দুজন মানুষ, দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে নীরবে বসে থাকে যেন অনন্তকাল।
- আমি যে মা হতে চাই রঞ্জন! তোমার সন্তানের মা! শমিতার কান্না ভেজা গলা যেন সময়ের ওপার থেকে ভেসে আসে!
রঞ্জনের মুখে হাসির আভাস। বেশ,তবে তাই হোক।তুমি মা হবে শমি!দশ মাস দশ দিন ধৈর্য ধরো তবে!
ছায়ার মতো কোন অন্ধকারে চিরদিনের জন্যে মিলিয়ে যায় রঞ্জন।

দশ মাস পর মা হয়েছে শমিতা।ফুটফুটে শিশুর মুখ দেখে শিউরে ওঠে,অবিকল রঞ্জন!


(Saul Greenblatt - এর My Love Taken Awawy From Me গল্পের ভাবানুবাদ।)


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু anek valo laglo...anubader jonno dhonnobad. ( amar patai ' makeup kora bristi ' golpoti porar amontron roilo )
মিলন বনিক পড়ে ধন্য হলাম....অনুবাদের জন্য কৃতজ্ঞতা....
সিদ্ধার্থ দত্ত ধন্যবাদ ও ভালোবাসা
এশরার লতিফ সুন্দর ভাবানুবাদ। অনেক শুভকামনা।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। চমৎকার হয়েছে। অনেক অনেক শুভকামনা, ভোট ও আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো....

০৫ ফেব্রুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪