প্রেম, নাকি গেইম ?

ঐশ্বরিক (মার্চ ২০১৭)

অসমাপ্ত একজন
রায়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া টগবগে এক যুবক। দেখতে সুদর্শন, লম্বা, ফর্সা,স্মার্ট। তবে সমস্যা একটাই। এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে অথচ প্রেম ভালবাসায় একদমই বিশ্বাস নেই তার।
যেখানে ওর বন্ধুরা দিব্যি চুটিয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে, সেখানে রায়ানের কাছে প্রেম মানে শুধুই সময়ের অপচয়।
রায়ান বাবা-মায়ের বড় ছেলে। ছোট ভাই আয়ান, ইন্টারে পা দিয়েছে কেবল। বাবা বড় একটা কোম্পানীর CEO. হাসি খুশি একটা সুখি পরিবার।
হঠাৎ একদিন সকালে যেন বদলে যায় রায়ানের পুরো পৃথিবীটা। তাড়াহুড়া করে ক্লাসে যাবার পথে তার ধাক্কা লাগে অধরার সাথে। অধরার হাতের বই পত্রগুলো পড়ে যায় হাত থেকে। একবার অধরার দিকে ফিরে তাকিয়ে সরি না বলেই ক্লাসে চলে যায় রায়ান। অধরা রাগে টগবগ করতে করতে বইপত্রগুলো তুলতে থাকে আর মনে মনে হাজারটা গালমন্দ করে রায়ানকে। ক্লাস শেষে রায়ান অধরাকে দেখতে পায় বাসস্টপেজে। সকালের ঘটনাটা মনে পড়তেই নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় রায়ানের। অধরাকে সরি বলতে এগিয়ে যায় রায়ান। কিন্তু অধরার নাগাল পাবার আগেই বাসে চড়ে চলে যায় অধরা।
পরদিন ক্যাম্পাসে অধরাকে দেখেই তার সামনে যায় রায়ান। নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি সে অধরাকে জানায় যে, ধাক্কা লাগার পরেও সে অধরার বইপত্র গুলো তুলে না দিয়ে, সরি না বলে ক্লাসে চলে যাওয়ার কারন- খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাস ছিল গতকাল, আর তারমধ্যে রায়ান এমনিতেই ১৫ মিনিট লেট ছিল। প্রথমে রেগে কথা বললেও, কারন জানার পর স্বাভাবিক হয় অধরা। অধরা দেখতে দারুন মিষ্টি একটা মেয়ে। গায়ের রং দুধে-আলতা। খুব মিষ্টি করে কথা বলে। মা-বাবার একমাত্র মেয়ে সে।
দুজনের মধ্যে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়েছে। একসাথে সময় কাটানো, ঘুড়ে বেড়ানো, খাওয়া-দাওয়া, আবেগ, খুনশুটি, সব মিলিয়ে বন্ধুত্বটা যে মাস খানেকের মধ্যে কখন ভালবাসায় পরিনত হয়েছে, তা দুজনের কেউই টের পায়নি।
রায়ান এখন ফাইনাল ইয়ারে আছে। পরীক্ষার পরই রায়ানকে নিজের চাকরীটা বুঝিয়ে দিয়ে অবসরে যেতে চান রায়ানের বাবা। তাই গোপনে ছেলের বিয়েও ঠিক করে রেখেছে তারই বন্ধুর মেয়ে অপর্নার সাথে। রায়ান এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা। রায়ানদের বাসায় অপর্নার অবাধ যাতায়াত। দূড়ন্ত একটা মেয়ে অপর্না। রূপে-গুনে অপর্নাকে অধরার চেয়ে কম বলা যাবে না। রায়ান অপর্নাকে বন্ধু ভাবলেও অপর্না রায়ানকে ভালবাসে পাগলের মতো। তবে রায়ানের প্রেমে বিশ্বাস ছিলোনা বলে অপর্না কখনই রায়ানের দিক থেকে কোনো গ্রীন সিগনাল পায়নি।
এদিকে অধরা আর রায়ানের তখন নীশানায় তীর, প্রেম জমে খীর। একদিন বিকেলে অধরা পাল্টে দেয় রায়ানের বদলে যাওয়া পৃথিবীটা। অধরা বলে - (শোনো রায়ান, তোমাকে একটা কথা বলি। তোমার সাথে আমার Relation Continue করা সম্ভব না। কারন, আমি তোমাকে কোনোদিন মন থেকে ভালই বাসিনি। তুমি যেহেতু মেয়েদের পাত্তা দিতে না, তাই বন্ধুদের সাথে বাজী ধরে তোমার সাথে প্রেমের নাটক করে, তোমাকে আমার দিওয়ানা বানিয়ে ছেড়েছি। Now I'm winner. I'm sorry. but বাজী ধরলে তা জেতার আগ পর্যন্ত আমার এলার্জি হয়ে সাড়া দেহ চুলকাতে থাকে। জানি কষ্ট পেয়েছো, তবে আমি সরি তো বলেছি। সবশেষ রায়ান। আজ থেকে আমার সাথে আর কোনো রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা। It's over. Break up.)
অধরা চলে যাবার পর হঠাৎ পাওয়া এই shock টা সহ্য করতে পারে না রায়ান। সম্পূর্ণ বদলে যায় আর অন্ধকারে ডুবে থেকে সে স্মৃতিগুলো হাতরে বেড়ায় আর, বিভিন্নভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে থাকে। রায়ানের এমন হঠাৎ পরিবর্তনে পরিবর্তীত রায়ানের পুরো পরিবার। মায়ের চোখে অশ্রু। বাবা যেন পাথর প্রায়। আর আয়ানও কেমন যেন অন্যমনষ্ক হয়ে গেছে।
তখনই অন্ধকারাচ্ছন্ন রায়ানের পাশে আলোর পৃথিবীটা নিয়ে আসে অপর্না। ৬ মাসের ব্যবধানে সব যেন ঠিক আগের মতো। রায়ান বুঝতে পারে তার প্রতি অপর্নার অনুভুতি কি ! আর তাই এখন রায়ানের পৃথিবীটা জুড়ে শুধুই অপর্না। রায়ানের পরিবারেও প্রশান্তির ছোঁয়া। রায়ান আর অপর্না সুন্দর কিছু মুহুর্তের পথ ধরে চলতে থাকে ভালবাসার আঙিনায়।
একদিন রায়ানকে নিতে ক্যাম্পাসে আসে অপর্না। দুজন ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যাবে, তখনই রায়ানের অতীত ওর সামনে এসে দাড়ায়। অধরাকে হঠাৎ দেখে চমকে ওঠে রায়ানের ভেতরটা। অধরা রায়ানকে বলে - সে ভুল করেছে। রায়ানকে ছেড়ে যাবার দিন থেকে সে বুঝতে পেরেছে রায়ান তার জন্য কি ! সে অনুতপ্ত এবং এখনও রায়ানকে ভালবাসে। সব শুনে রায়ান অধরাকে বিকেলে দেখা করতে বলে। অধরা চলে যাবার পর চোখের জলে বুক ভাসিয়ে রায়ানের ডাকে সাড়া না দিয়ে স্থান ত্যাগ করে অপর্না।
বিকেলে অধরা আসে রায়ানের সাথে দেখা করতে। রায়ান অধরাকে নিয়ে একটা লোকশূন্য নির্জন স্থানে যায়। অধরাকে চেয়ারে বসিয়ে বেঁধে ফেলে রায়ান। রায়ানের ডাকে সাড়া দিয়ে আড়াল ছেড়ে বেড়িয়ে আসে অপর্না। রায়ান অধরাকে বলে - কেন সে তার জীবনটাকে নিয়ে বারবার গেম খেলছে ?
এবারও অধরা বন্ধুদের সাথে বাজী ধরেছিল যে, অধরা যদি রায়ানকে ডাকে তাহলে সে অপর্নাকে ছেড়ে আবার ওর প্রেমের গেইমে সাড়া দেবে। কিন্তু এবার অধরা যাদের সাথে বাজী ধরেছিলো, তারাই রায়ানকে আগেই সব জানিয়ে দিয়েছিলো। তাই এবার এই ছোট্ট গেইমটা রায়ান খেলেছে অধরার সাথে। রায়ান অধরাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ভয় দেখায় যেন সে এই ধরনের প্রেম নিয়ে গেইম আর কারও সাথে না খেলতে পারে। অধরা অনুতপ্ত হয়। প্রানভয়ে সে চিৎকার করে কেঁদে ক্ষমা চায় রায়ানের কাছে। অপর্নার কথায় রায়ান অধরার বাঁধন খুলে দেয় আর বলে - বাইরে ড্রাইভার সহ গাড়ী রাখা আছে যা অধরাকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দেবে। অধরা কিছুদূর গিয়ে ফিরে তাকায় রায়ান আর অপর্নার দিকে। অধরা বলে
-> অপর্না আমার আর রায়ানের মধ্যে প্রেম বলে কোনোকিছুই ছিলোনা। যা ছিলো তা শুধুই গেইম। আজ নিজের প্রতি সত্যিই খুব ঘৃণা হচ্ছে। সুখে থেকো তোমরা।
অধরা চলে যায়। রায়ান আর অপর্না হাতে হাত রেখে ভালবাসার স্পর্শ অনুভব করে। জয়লাভ করে সত্যিকারের এক ভালবাসা। রায়ানের বুকে মাথা রাখে অপর্না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী জাহাঙ্গীর নির্ধারিত বিষয়টা আসলো না গল্পে, গল্প হিসেবে বেশ জমেছে। পদচারনা বাড়াবেন আশা করি। অনেক শুভকামনা আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী দারুন লিখেছেন কবি। পুরোটাই পড়লাম বেশ ভাল লেগেছে। ভোট রেখে গেলাম। আমার পাতাই আমন্ত্রন ।
মোঃ নিজাম গাজী অনেক সুন্দর লিখেছেন । ভোট রেখে গেলাম হে কবি । আমার পাতায় আমন্ত্রন ।

০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অভিমান”
কবিতার বিষয় "অভিমান”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মার্চ,২০২৪