একাকী জীবন

একাকীত্ব (জুন ২০২১)

শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান
  • 0
  • ১১৮৩
সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে।চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেছে।প্রকৃতির এমন রুপ দেখে মনটা অস্থির হয়ে ওঠে তবুও ভালো লাগে বৃষ্টির নির্মল বরিষণ ধারা।আবির খান সবসময় বৃষ্টিকে উপভোগ করে থাকে।বৃষ্টি দেখলে তার পাগল মন জেগে ওঠে।দু চার কলম লিখেও ফেলে সে।
যদিও আবির খান পুরোপুরি লেখক নয় তবুও শিক্ষকতার জীবনে সে মাঝে মাঝে কলাম লিখে বেশ সুনাম অর্জন করেছিল আর তার ধারাবাহিকতায় অবসরে এসেও সে আগের মতোই কলাম লিখে চলেছে।তাই বৈরি আবহাওয়ায় তার কলম সচল হয়ে ওঠে। তার একাকী জীবনে এখন লেখালেখি খুব ভালো সঙ্গী হয়ে উঠেছে। সারাজীবন সে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাটিয়েছে আর এখন সে একাকী হয়ে উঠেছে।জীবনজুড়ে একাকীত্বের কষ্ট সে এখন অনুভব করতে পারছে।
একাকীত্ব যে কি জিনিস এখন আবির খান তা পুরোপুরি উপলব্ধি করছে।যদিও তার কোনোদিন এমন চাওয়া ছিল না।কিন্তু ভাগ্যে তাকে এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে।দুই বছর পর্যন্ত আবির খানের এমন জীবন।তাই তার আর কিছু ভালো লাগতে চায় না।সবকিছুতেই একটা তেঁতো ভাব চলে এসেছে তার জীবনে। কিন্তু তবুও তার এই জীবনকে সে সুন্দর ভেবে নেয় যখন কোনো মানুষের সঙ্গে সে সময় কাটাতে পারে তখন।আর তাই বৃষ্টির এতো সুন্দর মনোরম নির্মল বরিষণ তার কাছে ভালো লাগলেও সে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।কারণ গ্রাম থেকে তার কাছে আজকে বিকেলে তার এক ঘনিষ্ট বন্ধু আসার কথা রয়েছে।যার সঙ্গে সে অনেক সময় কথা বলে কাটাতে পারবে আর তার খুব ভালো লাগবে।তাই সে প্রতীক্ষায় রয়েছে কখন থেমে যাবে বৃষ্টি।
আবির খানের প্রতীক্ষার অবসান হলো দুপুরের পর।
বৃষ্টি থেমে গেল আর সে মনে মনে তার বন্ধুর আসার পথ চেয়ে বসে রইল।কিন্তু তার বন্ধুর আর দেখা নাই।হতাশ হয়ে সে অপেক্ষা করতে লাগল।সকাল থেকে সে বৃষ্টি থেমে যাবার জন্য অপেক্ষা করেছিল আর এখন সে অপেক্ষা করতে লাগল তার বন্ধু র জন্য ।
বিকেল পার হয়ে গেল।
আবির খান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না।সে পথ চেয়ে বসেছিল কিন্তু তার বন্ধু যে এলো না।এবার সে মোবাইল ফোনে কল করলো তার বন্ধুকে।
বৃষ্টির কারণে রওনা হতে পারিনি বন্ধু।ওপাশ থেকে তার বন্ধু বলে উঠল।
আমি সেই সকাল থেকে তোর পথ চেয়ে বসেছিলাম।আর তুই আসলি না।আমার মনটা খারাপ হয়ে গেছে বন্ধু।আবির খান তার বন্ধুকে আবেগের সুরে বলে উঠল।
মন খারাপ করার দরকার নাই আমি কালকে সকালে তোর কাছে আসব বন্ধু।আর আমার কাজ বেশি সময়ের না।খুব কম সময়েই কাজ শেষ হবে আর তারপরে বিকেল পর্যন্ত তোর সঙ্গে সময় কাটাবো।আমি জানি তুই তো একাকী জীবনে কোনো লোকের দেখা পাইলেই খুশি থাকিস।যাহোক কালকে আমি আসছি যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে।আবির খানকে তার বন্ধু বুঝিয়ে বলল।
আমি তোর পথ চেয়ে থাকব কিন্তু রনজু।বন্ধুর পথ চেয়ে থাকার কথা জানিয়ে দিয়ে লাইন কাটল সে।
একাকী থাকা আসলেই কষ্টের।এ বিষয়টা এতোদিনে আবির খান খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছেন।কিন্তু তার তো কিছু করার নেই। তার ভাগ্যাই তাকে একাকী করে দিয়েছে। এখনো সে একাকী চলাফেরা করতে পারে তাই কষ্ট একটু কম হচ্ছে।শারীরিক ভাবে সে এখনো সক্ষম।মানসিকভাবে একাকীত্ব বোধ তাকে বেশ অশান্তিতে ফেলে দিয়েছে।
বাইরে বের হলে তার বেশ ভালো লাগে।মানুষের সাথে মেলামেশা করলে তার সময় খুব ভালো কেটে যায় কিন্তু সব সময় কার ই বা বাইরে বাইরে ঘুরতে ইচ্ছা করে।আবার শরীরেও তো কুলাতে হবে।সব মিলিয়ে একাকী জীবনে আবির খান বেশ হয়রান হয়ে উঠেছে।
রাতে আবির খানের বন্ধু রনজু তাকে মোবাইলে কল করলো।সে মোবাইল রিসিভ করে কি খবর বলো বন্ধু বলে কথা শুরু করলো। ওপাশ থেকেরনজু বলল,দোস্ত কালকে তোমার ভাবিকেও সঙ্গে নিয়ে আসতেছি এ খবরটা দেবার জন্যক কল করেছি।
বন্ধুর কথা শুনে আবির খান বলল,বেশ ভালো হবে নিয়ে এসো তাকে, প্রায় পাচ বছর হবে আমাদের দেখা হয়েছিল যতদূর মনে পরে।
তাতো হবেই তবে সে কিন্তু তোমাকে একটা কথা বলার জন্যম আসতেছে বন্ধু।রনজু বলল।
কি কথা বন্ধু ? আবির খান এখনই জানতে চাইল।
না বন্ধু এখন বলা যাবে না।আর ঐ একটা কথা অনেকগুলো কথার সমষ্টি সুতরাং ফোনে তা বলে শেষ করা যাবে না।আচ্ছা তাহলে এখন রাখি কালকে কথা হবে ইনশআল্লাহ্।এতটুকু বলে রনজু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল।
আবির খান আরো কিছু বলতে চাইছিল।কিন্তু লাইন কেটে যাওয়ায় আর বলতে পারলো না।যাহোক কালকে ওরা আসলে সরাসরি সবকিছু শোনা যাবে। সে আর কথা বলার জন্যস কল করলো না।
রাতের আঁধার চারিদিক ঘিরে ধরেছে।আর মনের আঁধার ঘিরে ধরেছে আবির খানের মন।বউকে হারানোর পর তার জীবনে এই আঁধার নেমে এসেছে।দুই বছর পেরিয়ে গেছে তার বউ হারিয়ে গেছে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।বউ কে নিয়ে তার জীবন ভালোই কেটে যাচ্ছিল কিন্তু সহসা তার জীবন একাকী হয়ে গেল তার বউকে হারিয়ে।আর এভাবেই একাকীত্ব ঘিরে ধরেছে তার জীবনকে।এই একাকী জীবনে সে নিজের কাজে ডুবে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরত কিন্তু একাকীত্বের শূন্যেতা কিছুতেই সে মোচন করতে পারছে না।
রাতের অন্ধকার কেটে গেল। ভোরের আলোতে চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠল।কিন্তু আবির খানের মনের আঁধার সবটুকু মুছে গেল না।সে তার মনের আঁধার মুছে ফেলতে চায় কিন্তু কিছুতেই মুছে ফেলতে পারে না।একাকী জীবনের হতাশা তাকে ঘিরে রেখেছে।চারিদিকে কোনো কিছুর অভাব তার নেই শুধু সঙ্গী র অভাব তাকে বিষণ্ণ করে তুলেছে।
সকাল এগারোটার দিকে রনজু এসে হাজির হলো আবির খানের বাসায় সঙ্গে তার স্ত্রী।বহুবছর পরে তাদের মাঝে দেখা হলো। আবির খান বন্ধুকে দেখে জড়িয়ে ধরলো।সে খুব খুশি হয়েছে বন্ধুকে কাছে পেয়ে।কতদিন পরে দুই অন্তরঙ্গ বন্ধু একসঙ্গে হয়েছে তারই আবেশে তাদের মনে আনন্দ আর ধরে না।
আমাদের কাজ আমরা সেরে এসেছি বন্ধু এবার বিকেল পর্যন্ত তোর সাথে সময় কাটিয়ে আমরা বাসার দিকে রওনা হবো।রনজু এবার বন্ধুর সাথে কথা বলা শুরু করলো।
না না আজকে তোদের যেতে দিচ্ছি না।রাতে থেকে তবেই যাবি আমি আমার রান্নার লোককে দিয়ে বেশ কিছু রান্নার আয়োজন করে ফেলেছি।তোরা না থাকলে এতো খাবার কে খাবে।আবির খান তার বন্ধুকে বলল।
কি যে বলেন ভাই আমরা এই বৃদ্ধ বয়সে এতো কি বেশি আর খেতে পারবো।যাহোক আমাদের আজকে যেতে হবে।রনজুর বউ বলে উঠল।
না না আমি কিন্তু এ কথা মেনে নেব না।আবির খান বন্ধুর বউয়ের কথা মেনে নিতে চাইল না।
সে পরে দেখা যাবে আমরা আগে একটু ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট করে নিতে চাই।তার একটু ব্যাবস্থা করে দিলে ভালো হয় বন্ধু।এবার রনজু নিজেদের ক্লান্তির কথা তুলে ধরে বিশ্রাম নেওয়ার কথা বন্ধুকে বলল।
আহ্ আমার ই তো ভুল হয়ে গেল।যা তোরা আগে ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট করে নে।তারপরে নাস্তা করে আমরা কিছুক্ষণ পরে দুপুরের খাবার খেয়ে বাগানে বসে গল্প করবো ঠিক আছে।আবির খান নিজের প্লানের কথা জানিয়ে দিল।
আচ্ছা আচ্ছা তোর প্লান মতোই সবকিছু হবে এবার আমাকে বাথরুমটা একটু দেখিয়ে দে বন্ধু।রনজু বন্ধুকে তাগাদা দিয়ে বলল।
ওকে ওকে।তোরা ঐ রুমে যা,ওখানে রুমের মাঝেই বাথরুম রয়েছে।তোরা ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট করে নে।এবার বন্ধু রনজু আর তার বউকে রুম দেখিয়ে দিয়ে আবির খান বলল।
রনজু তার বউকে নিয়ে বন্ধুর দেখানো রুমে প্রবেশ করলো। আর আবির খান ড্রইংরুমে খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে বসলো।
প্রানের বন্ধুরে কাছে পেয়ে আবির খানের মনটা বেশ খুশি হয়ে উঠল।যাক অনেকদিন পরে প্রাণ খুলে একটু কথা বলা যাবে। মনটা হালকা হবে তাতে।মনের জমানো কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে তার।মন খুলে কথা বলা যাবে এটা ভেবেই তার খুব ভালো লাগছে।
আজকে দিনটা তার খুব ভালো কাটবে এমনটাই তার মনের কামনা।কারণ তার একাকী জীবনে একদিনের জন্য হলেও তার বন্ধু আর তার স্ত্রী এসেছে যা তার জন্য খুবই সুখদায়ক হয়ে উঠেছে।এই দুই বছরে তার বউ মারা যাবার পরে যতবার কোনো আত্নীয় স্বজন তার কাছে তাকে দেখতে এসেছে সে খুব যত্নের সাথে তাদের খেয়াল রেখেছে আর সবাইকে কোনো না কোনো উপহার সে দিয়েছে।বন্ধু রনজু আর তার বউয়ের জন্যকও সে একটা পাঞ্জাবি আর একখানা শাড়ি সে আলাদা করে রেখেছে।
দুপুরের খাবারের পর বাসার সামনে একটু বাগানের মতো রয়েছে সেখানে সবাই বসলো।নিজেদের মাঝে সুখ দুঃখের কথা বলা যাবে এই চিন্তা ভাবনা করেই তারা বসলো সেখানে।আসলে বয়েস হয়ে গেলে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করার জন্যন একটু সময়ের জন্যন হলে ও কোনো সঙ্গীর খোঁজ করে থাকে।কিন্তু বেশির ভাগ লোক বয়েসি মানুষের কথা বেশিক্ষণ শুনতে চায় না।তাই যেহেতু সবাই এখানে প্রায় সমবয়েসি তাই তারা তাদের কথাগুলো শুনতে আগ্রহী হবে।এটাই তাদের নিজেদের মাঝে ভাবনা আর এই ভাবনা থেকেই তারা আলোচনা করতে বসে গেল।
প্রথমে আবির খান শুরু করলো,বন্ধু তোর খবর বল এখন সবকিছু নিয়ে কেমন আছিস?বন্ধুর খবর জানতে চাইল আবির খান।
জবাবে রনজু বলল,এই বয়সে বলবো ভালো আছি বন্ধু।খুব ভালো আছি আমরা।আমাদের তোর মতো এতো টাকা পয়সা নেই কিন্তু আমরা খুব সুখে আছি।গ্রামে থাকলেও আমাদের কোনো অভাব নেই।দুই ছেলে আর দুই মেয়ে আমাদের তুই তো তা জানিস।
ছোট ছেলে আর তার বউ আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের দেখাশোনা করে।গ্রামের বাজারে আমার অবসরে যাওয়ার পরে একটা ব্যেবসা দিয়েছিলাম ওটাই দেখাশোনা করে আমার ছোট ছেলে।বর্তমানে খুব ভালো যাচ্ছে আমাদের ব্যয়বসা।আমিও মাঝে মাঝে বসি ওখানে গিয়ে।
খুব ভালো।তোর বড় ছেলে কি করে?আবির খান জানতে চাইল।
এবার জবাব দিল রনজুর বউ।সে বলল,ভাইজান আমার বড় ছেলে একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরি করে।মাসে একবার বাড়িতে এসে আমাদের দেখাশুনা করে যায় আর টাকা পয়সা নিয়মিত দেয় আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ি। বউ আর ছেলেকে নিয়ে ও চাকুরি স্থলেই থাকে।ওরা ভালোই রয়েছে ভাইজান।
আর মেয়েরা কেমন রয়েছে তোর রনজু?এবার বন্ধুর মেয়েদের খবর জানতে চাইল আবির খান।
জবাবে রনজু বলল,আল্লাহ্ র রহমতে মেয়েরাও বেশ ভালো রয়েছে। দুইজনেরই বিয়ে দিয়েছি আমাদের পাশের গ্রামে। মেয়েদের জামাই রা চাকুরি করে।ভালোই রয়েছে সবাই। আমাদের সংসারে আল্লাহ্ র রহমতে কোনো অশান্তি নেই।এই বুড়ো বয়সে আল্লাহ্ আমাদের ভালোই রেখেছেন।আমাদের মনে ও কোনো অশান্তি নেই। সুতরাং আমরাও চাই তোর মনেও এই বুড়ো বয়সে যেন কোনো অশান্তি না থাকে।বুঝলি বন্ধু তোর জন্য তোর ভাবি একটা বিষয় ভেবেছে তুই রাজি থাকলেই হবে। আর ঐ কথাটা বলার জন্যএই তোর ভাবিকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।
কি কথা বলেন ভাবি? আবির খান জানতে চাইল।
জবাবে রনজুর বউ বলল,সে কথা তো বলবো ভাইজান তার আগে বলুন আপনার দুই ছেলে আর আপনার মেয়ের কি খবর?তারা কেমন আছে ?তারা কি আপনার খোঁজ তেমন একটা রাখে না?
জবাবে আবির খান বলল,বলছি বলছি একটা একটা করে জানতে চাও ভাবি।শেষেরটা থেকে বলি,ওরা আমার খোঁজ রাখে।আর ওরা সবাই খুব ভালো আছে।
একটু থেমে আবার সে বলতে শুরু করলো,বড় ছেলে আমেরিকা আর ছোট ছেলে লন্ডন থাকে। মোবাইলে রোজ আমার খবর নেয় কিন্তু তাতে আমার প্রাণ ভরে না।আমি আগে বুঝতে পারি নি তাহলে দুইজনকেই বিদেশে পড়তে পাঠাতাম না।অন্ততঃ একজনকে দেশে রাখতাম।বিদেশে পড়ে ওরা ডাক্তার হয়েছে।আজ দূরে থেকে মানুষের সেবা করছে কিন্তু ওদের বাবা যে কতো একাকীত্বে ভুগছে সে খবর ওদের কাছে নেই।আমি এতো করে বললাম যে তোরা একজন দেশে চলে আয়, না কেউ আমার কথা শুনলো না।
আপনার ছেলেরা আপনার কথা শুনছে না ভাই।আপনি তাদেরকে ভালো করে বুঝিয়ে বলেছেন তো?রনজু র বউ বলে উঠল।
জবাবে আবির খান এবার বলল,তাতে কি আর বাকি রেখেছি ভাবি কিন্তু তারা তাদের ভবিষ্যেত ফেলে রেখে এই বুড়ো বাবাকে দেখভাল করার জন্য আসবে না।তাদের বউরা তো আমাকে এখন আর সহ্যজ করতেই পারে না।কারণ আমি তো আর তাদের কোনো কাজে লাগছি না।ছোট ছেলে একবার তার ওখানে আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমি রাজি হইনি আর ওর বউ ও চায় না আমি ঐখানে যাই।তাতে তার ঝামেলা বেড়ে যাবে তাই।আসলে আমিই যেতাম না,শুধু শুধু বউমা ভয় পেয়েছিল।যাক বাদ দাও ওসব কথা।আমি ওদের নিয়ে বেশ হতাশ।
আর তোর মেয়ে সে কি তোকে একটু সঙ্গ দিতে পারলো না? রনজু জানতে চাইল।
সে তো অস্ট্রেলিয়া গিয়ে স্থায়ী হয়েছে।দেশে আর ফিরতেই চাচ্ছে না।আবির খান বন্ধুর প্রশ্নের জবাবে বলল।
তাহলে তো দেখছি তোর জীবনে সবকিছু থেকেও কিছুই নাই।তুই বেশ একাকীত্বে ভুগছিস।আমার মনে হয় তোর বিকল্প কিছু ভাবা উচিত।রনজু বন্ধুকে বলল।
তুই কিসের কথা বলছিস।আবির খান বলল।
সেটা তোর ভাবি তোকে বলবে। রনজু বলল।
কথা বলতে বলতে বিকেল গড়িয়ে ধরার বুকে সন্ধ্যাি নেমে এলো।চারিদিক অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে দেখে আবির খান এবার বলল,তাহলে তোদের কিন্তু আর যাওয়া হচ্ছে না।চল এবার বাসার ভিতরে যাই কিছু খাওয়া দাওয়া করে আবার কথা বলা যাবে।তখন না হয় শুনব ভাবি কি বলতে চাচ্ছে।
তাই তো দেখছি আবির ,চল ভিতরে যাই। আমরা কালকে ভোরেই যাব সব কথাতো শেষ করতে পারিনি। রনজু বলল।
ততক্ষণে আঁধার নেমে এসেছে চারিদিকে।আবির খানের মনের আঁধার কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে।এই বয়সে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারলেই মানুষের মন হালকা হয়ে যায়।আজকে দিনটা আবির খানের খুব ভালো কাটলো।
নিজেদের মাঝে আরো নানাবিধ আলাপ আলোচনা করলো তারা।অনেক কথার শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে রনজু র বউ আবির খানকে বলল,ভাইজান আপনি কেমন ভাবে নেবেনআমি জানি না তবে দূর থেকে আপনার বন্ধুর কাছে শুনে আর এখন আপনার মুখে শুনে বুঝতে পারলাম আপনি খুবই একাকীত্বে ভুগছেন আর মনে হয় আপনার ছেলে মেয়ে এ নিয়ে খুব একটা চিন্তায় নেই।তাই আাপনার জন্য আমি একটা প্রস্তাব করতে চাই যদি আপনি রাজি থাকেন।
কি বলতে চাও ভাবি পরিস্কার করে বলো।আবির খান রনজুর বউকে পরিস্কার করে বলার জন্য বলল।
এবার সে বলল,না ভাইজান আমি আপনার একাকীত্ব ঘোচানোর কথা ভেবে কথাটা বলতে চাচ্ছি আপনি যদি চান তাহলে সেটা সম্ভব।আমার এক খালাতো বোন আছে আপনার চেয়ে পাচ সাত বছরের ছোট হতে পারে সে ও আপনার মতো একাকী।কোনো ছেলে মেয়ে হয় নাই ওর।তিন বছর হয় ওর স্বামী মারা গেছে।আপনি চাইলে আমি ওর সঙ্গে আপনার বিয়ের ব্যাবস্থা করতে পারি।আর এই কথাটা বলার জন্যআই আমি আপনার কাছে এসেছি ভাইজান।
বন্ধুর বউয়ের কথা শুনে একটা দীর্ঘনিশ্বাঃস ছাড়ল আবির খান।তারপরে সে বলল,কথাটা খুব বাস্তব।যা কখনো ভাবিনি আর এই বয়সে যা কল্পনাও করা যায় না সেই কথাটাই তুমি বললে ভাবি তবে আমি আর ঐ পথে যেতে চাই না।একাকীত্ব মোচনের জন্য আমি যদি এখন আবার বিয়ে করি সেটা আমার জন্যে ভালো হবে হয়তো তবে লোকে কি বলবে তোমরা বলো।
বন্ধুর কথা শুনে রনজু বলল,লোকে যাই বলুক তাতে কিছু যায় আসে না।তোর জীবনে একাকীত্ব মোচনই আসল কথা।তুই যদি এই বাসায় মরে ও পড়ে থাকিস কেউ তোকে দেখার নাই।ঐ বুয়া দিনে একবার এসে রান্না করে যায় এছাড়া আর কোনো লোকের আসা যাওয়া নাই তোর বাড়িতে তুই এভাবে কতদিন থাকবি তুই তো পাগল হয়ে যাবি বন্ধু।তাই আমি বলছি আমাদের কথাটা ভেবে দেখিস। তারপরে তোর চুড়ান্ত সিধান্ত বলিস।তুই তো ইচ্ছে করলে গ্রামে তোদের বাড়িতেও থাকতে পারিস তাহলে আমাদের দুই বন্ধু র মাঝে মাঝে দেখা হতো।যাই হোক বন্ধু অনেক কথা বললাম এবার ঘুমাবো।
আবির খান আর কোনো কথা বলল না।সে রুম পর্যন্ত ওদের এগিয়ে দিয়ে নিজের বিছানায় এসে শরীরটা এলিয়ে দিল।আর ভাবনার মাঝে ডুবে রইল।ওরা ঠিকই বলেছে আসলে বেঁচে থাকলে মানুষের জীবনে সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।মানুষ একাকী বেঁচে থাকতে পারে না।মানুষ হয়তো নানাবিধ সমালোচনা করতে পারে কিন্তু বাস্তবতা কতই না নির্মম।কেউ বুঝতে চাইবে না কারো কষ্ট কিন্তু আলোচনা সমালোচনা করবে নিজের কাজের সময় নষ্ট করে হলেও।এই হলো মানুষের প্রকৃতি।সে অপরের উপকার অপকার কোনোটা না করতে পারলেও সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠতে পারবে সুতরাং মানুষ কথা না ভেবে নিজের জীবনের জন্যপ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে সবসময়।
নানাবিধ ভাবনার মাঝে আবির খান নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পরলো।ঘুমের মাঝেই মানুষের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।দূর হয়ে যায় সারাদিনের সমস্ত গ্লানি।আবির খানের ক্ষেত্রেও তাই হলো।পরিস্কার ঘুমে তার মনের কালিমা আপাততঃ কিছুটা রোধ হলো।সকালে ঘুম থেকে উঠে সে দেখল তার বন্ধু আর তার বউ ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেছে।
সবাই একসাথে নাস্তা করে নিল।তারপরে রনজু তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হলো।বাসা থেকে বের হতে হতে সে তার বন্ধু আবির খানকে বলল, দোস্ত যাচ্ছি,গ্রামে বেড়াতে আসিস তোদের বাড়িটাও তো পরে আছে।একটু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে কাউকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে আসলে ভালো হতো।আর আমাদের কথাটাও ভেবে তারপরে আবার নতুন করে সিদ্ধান্ত নিস,তাতে তোরই ভালাই হবে আশা করি কারণ একাকী জীবন খুবই কষ্টের জীবন।আমরা চললাম।
আচ্ছা ঠিক আছে বন্ধু।ভালো থাকিস তোরা।আবার আসিস আমার ভালো লাগবে।আল্লাহ্ হাফেজ।বন্ধুকে বিদায় দিয়ে আবির খান কিছুক্ষণ বাগানে পায়চারি করে নিল।
বন্ধুর কথাকে কিছুতেই ভুলে যেতে পারে না আবির খানের মন।তোর ভালাই হবে একাকীত্ব মোচন হবে।কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ভাবলে ঐসব বিষয়ে আর ভাবতে মন চায় না তার। আর এসব বিষয় এখন ভাবাও পাপ।কিন্তু নিজের অসহায়ত্বের কথা ভাবলে সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।তার মন চায় কোনো একজন মানুষকে সঙ্গী করে সে নিজের জীবনের একাকীত্বের অবসান ঘটাবে।কিন্তু তার ভাবনা বাস্তবতায় রুপ দেয়া দুরুহ কাজ।সুতরাং আপাততঃ ঐ চিন্তা সে বাদ দিল।
এইভাবে আরো দুই মাস কেটে গেলো।
আবির খান মলিন ভাবে তার জীবন অতিবাহিত করতে লাগলো। কিন্তু সে বুঝি আর পারছে না। একাকী নিজের সাথে নিজে কথা বলে আর কতোদিন সে দিন কাটাবে।তার ছেলেরাও তার বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না।তারা আছে তাদের নিজেদের নিয়ে ব্যুস্ত। মাঝে মাঝে সে ভাবে ছেলেদের এতো বেশি উচ্চ শিক্ষিত না করে মোটামুটি শিক্ষিত করে নিজের কাছে রাখলে আজ তার এতো একাকীত্বে ভুগতে হতো না।ছেলেদের ডাক্তার করে তার কোনো কাজে লাগলো না।তারা আজ শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবে।হতাশা পুরোপুরি ঘিরে ধরলো তার ভুবন।
নিজের অজান্তেই একটি শক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে।একাকী জীবন তার আর ভালো লাগলো না।মনে মনে সে দুই মাস আগে তার বন্ধুর দেয়া প্রস্তাব মেনে নিল।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ি সে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো।নিজেকে ঘোচাতে তার আরো এক মাস লেগে গেল।সবকিছু ঠিকঠাক করে সে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের জামাকাপড় একটা থলেতে ভরে সোজা নিজের গ্রামে এসে উপস্থিত হলো।
আবির খানকে কাছে পেয়ে তার বন্ধু রনজু খুব খুশি হলো। গ্রামের বাজারে নিজের দোকানে বসে সে তাকে নিয়ে চা নাস্তা করে বাসায় নিয়ে এলো বন্ধুকে।
কাউকে কিছু না জানিয়ে এভাবে ব্যা গ প্যা ক করে চলে আসার কারণ জানতে চাইলো রনজু বন্ধুর কাছে।
জবাবে আবির খান বলল,বন্ধু একাকী জীবন আর কতোদিন। আমি শহরের বাড়ি ভাড়া দিয়ে গ্রামে চলে এসেছি।তোদের এখানে কয়দিন থেকে আমাদের বাড়িটা সব ঠিকঠাক করে নেব তারপরে গিয়ে আমাদের বাড়িতে উঠব।যেহেতু গ্রাম আমি প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারবো আর মানুষ জনের সঙ্গে দেখা হবে আমার একাকী জীবনের অবসান হবে।
একটু থেমে সে আবার বলল,আর তোদের সেই প্রস্তাব আমি মেনে নিচ্ছি তোরা শীঘ্রই আমার একাকীত্ব ঘোচানোর ব্যববস্থা করে দে।ভাবীর সেই খালাতো বোন কোথায় তাকে আমার একাকী জীবনে নিয়ে আয়।আমি আমার একাকী জীবনের অবসান ঘটাতে চাই।
বন্ধুর কথা শুনে একটু মুচকি হাসি দিল রনজু।সে মনে মনে খুশি হলো এই ভেবে যে দুটি মানুষের জীবনের একাকীত্ব মোচন হবে।সে তার বউকে ডেকে বলল,তাড়াতাড়ি রোজিনাকে মোবাইলে কল করে কালকেই এখানে তার ভাইকে নিয়ে আসতে বলো।সে কালকে আসলেই আমরা পরশু দুই বুড়ো বুড়ির শুভ কাজ সেরে ফেলব।
আচ্ছা আচ্ছা আমি এখনই ওদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি আর ওদের এখানে নিয়ে আসার ব্যইবস্থা করছি।তুমি চিন্তা করো না বাজার করে নিয়ে আসো।সবাইকে একটু ভালো মন্দ খাওয়াতে হবে না।রনজুর বউ তার খালাতো বোনের দায়িত্ব নিয়ে স্বামীকে বাজার করে আনার জন্যক বলল।
তার কথা শুনে আবির খান বলল,ঠিক বলেছে ভাবি চল রনজু আমরা বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে আসি।
আচ্ছা চল।এই বলে রনজু আবার তার বন্ধুকে নিয়ে বাজারের পানে ছুটে চলল।
অবশেষে আবির খানের সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে তার জীবনের একাকীত্ব মোচন হলো।কঠিন বাস্তবতা মানুষকে অনেক সময় অনেক নিয়মের বাইরে এসেও অনেক কিছু করার সাহস জোগায় আর তেমনটাই ঘটলো আবির খানের জীবনে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মাইদুল সরকার বয়সী মানুষের বিয়ের মাধ্যমে একাকীত্ব ঘুচানো খুবই কঠিন আমাদের সমাজে।
ফয়জুল মহী চমৎকার উপস্থাপন করেছেন বেশ ভাল লাগলো।

২২ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪