অনুরাগ

ভাঙ্গা মন (নভেম্বর ২০১৯)

শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান
  • ৬৯
মুনা রাগে জ্বলতে জ্বলতে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না।পরাগ এর ওপরে তার বেজায় রাগ হয়েছে।পরাগ শুধু কথায় কথায় ঝগড়া করে তার কথায় বিরক্ত হয়। মাঝে মাঝে মুনার কাছে মনে হয়, না এ সংসার আর করবে না সে।তার এ সংসার জীবন আর ভালো লাগে না। অথচ তাদের এ সংসারের বয়স সবে মাত্র দুই বছর।যদিও সে তার স্বামী পরাগকে অনেক ভালোবাসে তবু ও সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। তাই রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে এলো মুনা।
মুনা একটা রিক্সা নিয়ে নিল। সে তাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।পরাগ তাকে কয়েকবার পিছন থেকে ডেকেছিল কিন্তু তাতে তার মন এতটুকু গলেনি।মোবাইল ফোনটা বন্ধ করে সে তার ব্যাগে নিয়ে নিল।রিক্সা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে আর মুনা মনে মনে পরাগের ওপর প্রচন্ড ক্ষোভ জমা করে নিজের বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মুনা কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে তাই তাকে দেখে তার মা একটু চিন্তিত হয়ে উঠল।মুনাদের যৌথ পরিবার তাই পরিবারে অনেক লোকের সমাগম।মুনার আগমনে সবাই খুশি হলো।আবার একেকজন একেক রকম কথা বলতে লাগল।মুনার মা তার কাছে জানতে চাইল, পরাগকে রেখে তুই একাই কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে এসেছিস তোদের মাঝে আবার কিছু হয় নি তো!
না মা তেমন কিছু হয় নি,তবে আমার মেজাজ ও গরম করে দিয়েছে তাই রাগ করে চলে এসেছি।আমার ওর সাথে থাকতে ইচ্ছে করে না আর।আমার মনে হয় ও আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসে না।মুনা বলল।
সেটা তোর কাছে মনে হয়,কিন্তু পরাগ কি বলে? মুনার মা তার কাছে আবার জানতে চাইল।
ওর কাছে আবার কি মনে হবে,ওতো আমাকে আর ভালোবাসে না সারাদিন নিজের কাজ নিয়েই থাকতে পছন্দ করে।আমার কোনো বিষয়ে ওর তেমন গুরুত্ব দেখি না।আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করো না তো একটু একা থাকতে দাও।মুনা তার মাকে রাগান্বিত হয়ে বলল উঠল।
মুনার রাগ দেখে তার মা আর তাকে তেমন কিছু বলল না।শুধু বলল,আচ্ছা মা তুই এখন বিশ্রাম কর।পরে সবকিছু বিস্তারিত জেনে নেব না হয়।
মুনা বাড়িতে এসে সে যে রুমে থাকত সেখানেই উঠল।তার মা চলে যেতে সে ফ্রেশ হয়ে বিছানার সাথে শরীরটা এলিয়ে দিল । নিজের অজান্তেই সে ঘুমিয়ে পরলো।


বিকেল হতে ছাদে উঠে এলো মুনা।তার মনটা আজ ভীষণ খারাপ,এখন তার ভাঙ্গা মন।এ মনে সে আর শক্তি খুঁজে পাচ্ছে না।পরাগকে সে এতো ভালোবাসে কিন্তু পরাগ তার ভালোবাসা বুঝতে পারে না।
দুই বছর হয়ে গেল সে পরাগের আর কোনো দোষ খুঁজে পায় নি কিন্তু তার কাছে মনে হয় পরাগ তাকে তার মনের মতো করে ভালোবাসে না।সে তার কাজ নিয়েই পরে থাকে আর তাতেই তার কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে যে পরাগ তাকে তেমন করে ভালোবাসে না। আর এতেই মুনার মন ভেঙ্গে গেছে।সে খুব দুঃখ পেয়েছে আর ভেবে নিয়েছে পরাগের সাথে সে আর থাকবে না।কিন্তু এটা তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিনা সেটা সে নিজেই জানে না।মানে একটা অস্থির অবস্থার মাঝে ছটফট করে চলেছে সে।
ভাবনার মাঝে ডুবে গেল মুনা।গগনের বুক চিঁড়ে হাজারো পাখি উড়ে যায় মুনার মনটাও তাদের সাথে উড়ে যেতে চায় । তার এই আহত মনে আর কিছু ভালো লাগতে চায় না।প্রানের মানুষ যদি এভাবে কাছে থেকে ও ভালো না বাসে তবে কি আর ভালো লাগে।
সহসা মুনার ভাবনার জগতে ছেদ টানল তার বাবা এসে। সে এসে মুনাকে বলল, মা তুই এখানে আর আমি তোকে সব জায়গায় খুঁজে খুঁজে হয়রান।
কেন বাবা কি হয়েছে।আমিতো একটু নিরিবিলি থাকার কারণে সবার অগোচরে ছাদে উঠে এসেছিলাম।কিছু বলবে বাবা।মুনা বলল।
মুনা তার বাবার সব কথা সবসময় মেনে নেয়।সে বাবাকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসে।সেটা তাদের বাড়িতে সবাই জানে।তাই তার বাবার গুরুত্ব আর সবার চেয়ে তার কাছে বেশি।মুনা তাই বাবার সাথে কখনো রাগ করে কোনো কথা বলে না।বাবার উপরে তার অগাধ বিশ্বাস।সে জানে বাবা তাকে কখনো ভুল পথে চলতে উপদেশ দেবে না।বাবা তাকে সবসময় সঠিক উপদেশ দিয়ে থাকে।তাই মুনার কাছে বাবা সবসময় উপকারি বন্ধু।বাবাই তার সব কষ্টে দুঃখে কাছে এসে সঠিক পথ বাতলে দেয়।
মুনার বাবা তাকে বলল,মা তোর কি হয়েছে,সহসা কাউকে কিছু না বলে চলে এলি ,তোর মা বলল তোর মেজাজ এখন খুব গরম রয়েছে তাই আর আমি তোকে কিছু বলিনি সারাদিন।এখন বলতো মা কি হয়েছে?
আমার কিছুই হয়নি বাবা।তোমার জামাইয়ের সাথে রাগারাগি করে চলে এসেছি। আর ভাবছি কি করা যায় তার সাথে থাকব নাকি থাকব না সেটাই আমার ভাবনায় ডুবে আছে বাবা। মুনা তার বাবার কথার জবাবে বলল।
সে কি কথা মা পরাগ তো খুব ভালো ছেলে আর তুই তো ওকে পছন্দ করে তবেই বিয়ে করেছিলি আর আমি তো তোদের সংসারে কোনো অশান্তি নাই সেটাই জানতাম। তাহলে সহসা আবার কি নিয়ে এতো ঝামেলা হলো।সবকিছু খুলে বল আমাকে।মুনার বাবা তার কাছে সবকিছু জানতে চাইল।
এবার মুনা বলল,সবকিছু বলার মতো কিছুই নাই বাবা আমি ভাবছি তোমার ঐ ভালো ছেলে পরাগের সাথে আমি আর সংসার করবো না।
এসব কথা বলতে হয় না মা।আমি দেখছি কি ভাবে কি করা যায়।ঠিক আছে তুই এখন একা একা নিরিবিলি ছাদে পায়চারি করে তোর মাথা ঠান্ডা কর।আমি আসছি।এতটুকু বলে মুনার বাবা নিচের দিকে চলে গেল।
বাবা চলে যেতে মুনা আবার একা একা ভাবনার মাঝে ডুবে গেল।
তার ভাবনার সমস্তটুকু জুড়ে রয়েছে পরাগ। সে ভাবলো সেই সকালে সে চলে এসেছে আর এখন রাত হতে চলেছে কিন্তু পরাগ একবারও তার কাছে মোবাইলে কল করলো না।সে মোবাইল বন্ধ রেখেছে কিন্তু তাতে কি পরাগ তো তার মায়ের মোবাইলে কল করে মুনাকে চাইতে পারত। এতেই বোঝা যায় যে পরাগ তাকে আর আগের মতো তেমন করে ভালোবাসে না। নাকি আর কোনো মেয়ের দিকে মন চলে গেছে পরাগের।না মুনা আর ভাবতে পারছে না।তার জীবনে বোধহয় শান্তি আর রইল না। চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে।মুনার ভাঙ্গা মনটাও সেইসাথে অন্ধকার হয়ে গেল।তার কাছে মনে হলো আর বুঝি আলো আসবে না।নিজের অজান্তেই দুচোখ মুছে নিলো সে।


রাতে সবার সাথে বসল মুনা।আর যথারীতি সবার নজর তার দিকে রইল।মুনাও জানে তাকে সবার অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।কেননা সে সহসা একাই চলে এসেছে পরাগ তার সাথে নেই এটা এই এবার প্রথমবার হলো।সুতরাং সবাই সেটা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।মুনাও মনে মনে প্রস্তুত হয়ে এসেছে।সে রাগারাগি করে এসেছে সেটা তো তার বাবা মাকে বলেছে ই । এখন যা সত্যি সে কথাটাই সে সবাইকে জানিয়ে দেবে।আর যেহেতু তার মাকে সে বলেছে সে রাগ করে এসেছে সুতরাং বাড়ির আর বাকিরা ও এতোক্ষণে হয়তো জেনে গেছে তার আসার কারণ।
প্রথমেই তার চাচাতো বোন দোলা তার কাছে জানতে চাইল,আচ্ছা আপু সেই সকালে এসেছ আর এখন পর্যন্ত আমাদের কারো সাথে তেমন করে কোনো কথা বললা না ।কি হয়েছে তোমার আপু।আর দুলাভাইকেও তো সাথে নিয়ে আসলে না।
মুনা আস্তে করে বলল,তেমন কিছু না মনটা ভালো ছিল না তাই কারো সাথে তেমন আলাপ করিনি।এখন এখানে সবাই রয়েছে তাই সবার সাথে আলাপ করার জন্য এসেছি।আর তোর দুলাভাই আর আসবে না তার সাথে আমার ভীষণ ঝগড়া হয়েছে।ওর সাথে আমি থাকবো কিনা তাই এখন বলতে পারছি না। সুতরাং ওর কথা আমার কাছে জানতে চাস না।
মুনার কথা শুনে তার মেজো চাচি বলল,সে কি মুনা তুই পরাগের সাথে আর থাকবি না।তোদের মাঝে তাহলে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।এই কাজ কবে করলি আমাদের কাউকে তো কিছুই জানালি না।
মুনা কিছু বলার আগেই তার ছোট চাচি বলে উঠল,ওরে বাবা সে কি তুই একাকি এতো বড় একটা কাজ করে আসলি।তোর সাহস আছে বলতে হবে।আর আমি আগেই বলেছিলাম যে পরাগ ছেলে হিসেবে অতো ভালো না।তুই ভালোই করেছিস।
চাচিদের কথা শুনে মুনা বলল,না চাচি আমি এখনো ওকে ছেড়ে দেই নি। আমাদের মাঝে বেজায় ঝগড়া হয়েছে ।তাই আমি ভাবছি আর ওর সাথে এডজাস্ট করতে পারবো কিনা।ওর সাথে আর থাকতে পারবো কিনা।আর দেখ আমি সেই কখন রাগ করে চলে এসেছি এখন পর্যন্ত ও আমার একটা খোঁজ পর্যন্ত নিল না।
এবার মুনার ছোট চাচি আবার বলল,তাই তো বলি ওর সাথে থাকার আর দরকার নাই তোর। তুই ওকে ছেড়ে ই দে।
তুমি ঠিই ই বলেছ মা আমারও ওই দুলাভাই টাকে তেমন পছন্দ না।আপু তুমি তাকে ছেড়ে দাও।আমরা তোমাকে আবার সুন্দর একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেব। মুনার চাচাতো বোন দোলা তার মার কথায় সায় দিয়ে বলে উঠল।
মুনা নিশ্চুপ রইল।
তাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে এবার তার আরেক চাচাতো বোন লুবনা বলল,দোলা তুই ঠিকই বলেছিস আপুকে আবার নতুন করে যেকোনো সময় বিয়ে দেয়া যায় তাই আমারও মতামত হচ্ছে পরাগ দুলাভাইকে আপু ছেড়ে দিক তবেই আপুর জীবনে শান্তি আসবে।
আমারও তাই মনে হয়।মেয়ের কথায় সায় দিয়ে লুবনার মা ,মুনার মেজো চাচি বলে উঠল।
মুনা কি বলবে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।সে কিছু বলতে যাবে ঠিক এমন সময় তার মা বলল, আচ্ছা তোমরা সবাই এ কি শুরু করেছ ও কেবল রাগ করে এসেছে আর তাতেই কি সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।ও কেবল ভাবনার মাঝে রয়েছে যে কি করা যায় আর তোমরা সবাই ওকে নানা রকম বুদ্ধি দিয়ে যাচ্ছ।এখন এসব কিছু আমার ভালো লাগছে না।
আরে ভাবি তুমি বুঝছ না। আমরা তো আমাদের মেয়ের জীবনে অশান্তি দেখতে চাই না।আর সে কারণে আমরা চাই না মুনা আর পরাগের সাথে সংসার করুক।সে কথাই তো আমরা সবাই বলছি।এবার মুনার ছোই চাচি বলে উঠল।
এতো সহজেই কি সবকিছু শেষ করে দেয়া যায়।জীবনের সব সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিতে হয়।মুনার মা বলল।
মায়ের কথা শুনে এবার মুনার ছোট ভাই রানা বলল, কিন্তু মা দুলাভাইয়ের সাথে থেকে যদি আপু শান্তিই না পেল জীবনে তাহলে তাদের একসাথে থেকে কি লাভ হবে তার চেয়ে সবকিছু আলাদা করে ফেলাই ভালো।আমি মনে করি আপু আর ঐ লোকটার সাথে থেকে শান্তি পাবে না।সুতরাং আপুকে আর কষ্ট না দিয়ে ছাড়াছাড়ি করে ফেলাই ভালো।
ঠিক বলেছে ভাইয়া। আমারও সেটাই মনে হয়।দোলা বলে উঠল।
এবার সবার কথা শুনে মুনার মেজো চাচা বলল,তা মুনা তোমার নিজের কি ইচ্ছা,কিছুই তো বলছ না।ওরা তো সবাই তোমার চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে।তুমি যদি পরাগের সাথে না থাকতে চাও তাহলে আমাদেরকে বল আমরা তোমার ছাড়াছাড়ির ব্যবস্থা করে দেব।ভাইয়াকে আমরা বুঝিয়ে বলব সেও তোমার মনের মতো ব্যবস্থা করতে নিশ্চয়ই রাজি হবে।এবার তুমি বলো তুমি কি চাও?
মুনা সবার কথা শুনে বলল, না আমি এখন কিছুই বলতে পারছি না।আমার মন সংশয়ে ভরে আছে । আমি আসলেই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। সবার কথা শুনে আমি আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠছি।
মুনার কথা শুনে তার মা বলল,তুই যা মা তোর রুমে গিয়ে বিশ্রাম কর।আর তোমরা সবাই যে যার কাজে যাও।মুনাকে কেউ বিরক্ত করবে না।ওকে একলা থাকতে দাও।
মায়ের কথা শুনে মুনা উঠে গেল।সে তার নিজের রুমে চলে গেল।




রাতের নিকষ কালো আঁধার চারিদিক ঘিরে ধরেছে । আর মুনার মনটাও সেইভাবে অন্ধকার হয়ে আছে ভাবনার অস্থিরতায়। পরাগের ওপরেও তার ভীষণ রাগ হয়েছে।সে মন থেকে কতো ভালোবাসে তাকে কিন্তু সে একবারও খোঁজ নিলো না মুনার।সে হয়তো রাগ করে এসেছে তাই বলে এভাবে সারাটি দিন নিশ্চুপ রইল পরাগ।না মুনার কিছুই ভালো লাগছে না। রাতে আর খেতে পারলো না মুনা।সে নানাবিধ চিন্তায় অস্থির হয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে লাগল।পরাগের ভাবনা তাকে ঠিকভাবে ঘুমাতে দিচ্ছে না।আসলে রাগ করে আসার কারণে মুনার মনটাও আর স্থির হচ্ছে না।তার বহুবার ইচ্ছে করছিল মোবাইল ফোনটা অন করে পরাগকে সে কল করে জানতে চাইবে সে তাকে ভালোবাসে কিনা। সে কিভাবে পারলো একবারও মুনার খোঁজ না নিয়ে। মুনা ঠিকভাবে বাড়িতে পৌঁছাল কিনা তাও জানতে চাইল না পরাগ। তাই আর রাগ করে মুনাও মোবাইলটা ওপেন করলো না। সে আপনার মাঝে আপনি ডুবে থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল।
এদিকে মুনার বাবা মা বেশ চিন্তায় পরে গেল।তারা বিছানায় গিয়ে মুনার বিষয়ে নানাবিধ আলোচনায় মুখর হয়ে উঠল।মুনার বাবা বলল,মেয়েটাকে তোমার আগেই মানা করা উচিত ছিল এ বিষয়ে সবার সাথে এতো খোলাখুলি ভাবে যেন না বলে।এখন বাড়িশুদ্ধ কি একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলোতো।সবাই শুধু একই আলোচনা করছে।
আমি কি বুঝেছিলাম নাকি ও একেবারে সবার কাছে নিজের বিষয়টা বোকার মতো বলে দেবে।জামাই কিছুতো বেশি দোষ করে নি । ঝগড়া হতেই পারে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। সে কারণে কেউ এভাবে বলে বেড়ায়। বোকা মেয়ে কোথাকার ,তুই রাগ করে এসেছিস ভালো কয়েকদিন চুপচাপ থাক তারপরে আমরা দেখছি কি করা যায়।না সে ড্রইং রুমে বসে সবার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা বসিয়ে দিলো।আমি আগে বুঝতে পারলে ওকে নিষেধ করতাম বুঝলা। মুনার মা তার স্বামীর কথার জবাবে বলল।
মুনার বাবা বলল, তারপরেও সবাইকে যেন না বলে সেটা নিষেধ করতে পারতে। একটু থেমে সে আবার বলল,যাক বাদ দাও ওসব কথা । এখন আমি ভাবছি পরাগ তো খোঁজ নিল না,কিন্তু আমাদের তো একটু খোঁজ নেওয়া দরকার।ছেলেটা একা একা কি করছে কে জানে । খাওয়া দাওয়া কি করলো কে জানে।তুমি একটু মোবাইলে কল করে দেখবে নাকি।
আচ্ছা আমি কল করছি এক্ষুণি।মুনার মা মোবাইলটা হাতে নিয়ে পরাগের নাম্বারে কল করলো। কিন্তু পরাগের মোবাইল বন্ধ পেল সে।
ওর মোবাইল তো বন্ধ। মুনার মা বলল।
বোধহয় রাগারাগি করে দুজনেই মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছে। তাহলে বাদ দাও ওসব,রাগ পরলে দুজনেই ঠিক হয়ে যাবে আবার।মুনার বাবা তার মাকে আশ্বাস দিয়ে বলল।
কিন্তু আমার চিন্তা দূর হচ্ছে না কিছুতেই। আবার কোনো ঝামেলা হবে না তো। মুনার মা বলল।
এত ভাবতে হবে না এবার ঘুমিয়ে পরো।সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। মুনার রাগ একটু বেশি তো তাই হয়তো এমন হয়েছে ওর রাগ কেটে গেলে আবার পরাগের কাছে ফিরে যাবে দেখ। মুনার বাবা বলল।
তাই যেন হয়।এতটুকু বলে মুনার মা বিছানার একপাশে ঘুরে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল।
রাত ভোর হতে সবাই আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠল।মুনার বিষয়টা নিয়ে তেমন মাথা ঘামানোর লোক আর কেউ রইল না তার মা বাবা ছাড়া।যে যার কাজে চলে গেল।মুনাকে তার মা ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলল। বেশ বেলা করে ঘুমালো সে।কারণ রাতে তো আর সে তেমন একটা ঘুমাতে পারেনি পরাগের ভাবনায় তার ভাঙ্গা মনটা আহত হয়েছিল সারা রাত।
মুনার ঘুম ভাঙ্গতেই সে তার মায়ের কাছে জানতে চাইল,মা পরাগ তোমার মোবাইলে কল করছিল নাকি।
জবাবে তার মা বলল, না তো মা । কোনো কল করেনি পরাগ ,তবে আমি দিয়েছিলাম কিন্তু ওর মোবাইল বন্ধ পেয়েছি।
ও আচ্ছা।তুমি নিচে যাও মা আমি আসছি ।বেশ ক্ষুধা পেয়েছে,কিছু খাবার দাও।মুনা তার মার কাছে নিজের ক্ষুধা লাগার কথা বলল।
ঠিক আছে তুই ফ্রেশ হয়ে চলে আয় খাবার তৈরি আছে।মুনার মা এতটুকু বলে চলে এলো।আর নিচে নামতে নামতে ভাবলো ,মেয়েটা তার জামাইয়ের প্রতি এখনো খুবই অনুরক্ত আর ওপরে ওপরে বলছে পরাগের সাথে সে থাকবে না।ঘুম থেকে উঠেই সে বলছে পরাগের কথা সুতরাং তার মনকোনে জুড়ে রয়েছে পরাগের প্রতি অগাধ ভালোবাসা।মুনার মা বিষয়টা পরিস্কার বুঝতে পরে অনেকটা নিশ্চিন্ত হলো।
এইভাবে এক সপ্তাহ চলে গেল।মুনার মন জুড়ে নিকষ কালো আঁধার জমে রইল। তার মুখে হাসি আর রইল না। সে মুখ মলিন করে আহত মনে বাড়িতে চলাফেরা করতে লাগল আর পরাগও তার কোনো খোঁজ খবর নিল না।সে মনে মনে খুব অস্থির হয়ে উঠল আর পরাগের সাথে মনে মনে আরো বেশি রাগ করে তার সাথে আর থাকবে না বলে মনে মনে স্থির করলো।যদিও এটা তার মনের কথা কিনা তা রসে নিজেও জানে না।
মুনা র এভাবে নিশ্চুপ হয়ে থাকা তার বাবা মার চোখ এড়াতে পারলো না।মেয়েটা দিন দিন একবারে নিশ্চুপ মলিন হয়ে যেতে থাকলো।তার ঘুম খাওয়া যেন দিনে দিনে কমে যেতে থাকলো।
এ অবস্থা দেখে মুনার মা তার বাবাকে বলল, কিছু একটা করো।
কি করবো? মুনার বাবা জানতে চাইল।
জামাইয়ের খোঁজে যাও।মুনার মা বলল।
মেয়েকে না জানিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে? মুনার বাবা জানতে চাইল।
ওকে কি জানাবা, ওর মনের অবস্থা আমি জানি।ও পরাগের সাথে রাগ করে চলে এসেছে তাই অস্থির হয়ে আছে।আর এ কারণে উল্টাপাল্টা বকছে।আমি বলি কি তুমি কাল অফিস থেকে একটু আগে বের হয়ে জামাইয়ের খোঁজে তার বাসায় অথবা অফিসে যাও।মুনার মা তার বাবাকে জামাইয়ের খবর নেওয়ার জন্য বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে।আমারও মনে হয় পরাগের খোঁজটা নেয়া উচিত আর ওদের মাঝে কি হয়েছে তা আমাদের জানতে চাওয়া উচিত।ওদের মাঝে একটা সমাধান করা দরকার মেয়েটার মলিন মুখের দিকে আর তাকাতে পারি না আমি।মুনার বাবা ও তার মনের কথা বলল।



পরদিন মুনার বাবা দুপুরের পর অফিস থেকে বের হয়ে পরলো।
সে রিক্সা নিয়ে সোজা পরাগের অফিসে চলে গেল।কেননা এ সময়ে তার অফিসে থাকার কথা।পরাগের অফিসে গিয়ে সে পিয়নের কাছে বলল সে যেন পরাগকে গিয়ে বলে তার আসার কথা।
পিয়ন তার কথা শুনে বলল, কেন আপনি জানেন না কিছু চাচা?
মানে বুঝলাম না।মুনার বাবা কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলে উঠল।
তাহলে আপনি কিছু জানেন না মনে হয়।পিয়ন বলল।
এবার মুনার বাবা বলল, কি হয়েছে বাবা আমাকে একটু খুলে বল তো।
পিয়ন ছেলেটা এবার বলল, পরাগ স্যার তো একটা ক্লিনিকে ভর্তি আছে।একটা এক্সিডেন্টে তার পা ভেঙ্গে গেছে সাতদিন আগে।সে তো সেই থেকেই ছুটিতে আছে।
কি বলছ।কথাটা শুনে মুনার বাবা অনেকটা ভেঙ্গে পরলো।
সে পিয়ন ছেলেটার কাছ থেকে ক্লিনিকের ঠিকানাটা নিয়ে নিল।একটা রিক্সা নিয়ে সে এবার ক্লিনিকের পানে ছুটে চলল।
ঘন্টাখানেক পরে সে ক্লিনিকে এসে পৌঁছাল।পরাগের বেড খুঁজে বের করলো সে।তাকে দেখে পরাগের মুখে একটু হাসি ফুটল।সে হয়তো একাকি এতোদিন হতাশায় ভুগছিল। তাই এতোদিন পরে কাছের কাউকে দেখে তার মলিন মুখে হাসি ফুটেছে।
সে তার শ্বশুরের কাছে জানতে চাইল, বাবা আপনি কেমন আছেন?
জবাবে মুনার বাবা বলল, আমি তো ভালো আছি বাবা কিন্তু তোমার এ কি অবস্থা হয়েছে।কি করে ঘটলো তোমার এ এক্সিডেন্ট।
আগে বসুন তারপরে খুলে বলছি।পরাগ বলল।
মুনার বাবা বসতে বসতে বলল, তা আমাদেরকে খবর দিলে না কেন।
এবারে পরাগ বলল, সেদিন সকালে মুনা রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল আর তার একটু পরই আমি ও রিক্সা নিয়ে তার পিছুপিছু আপনাদের বাসার পানে রওনা হই।কিন্তু বেশিদূর যেতে পারিনি।দশ মিনিট যেতেই পিছন থেকে একটা বাস আমার রিক্সাটাকে ধাক্কা দেয়।আমি তখন অজ্ঞান হয়ে যাই।আর রাতে আমি আমাকে এই ক্লিনিকে খুঁজে পাই।কারা যেন দয়া করে এই ক্লিনিকে আমাকে রেখে যান।আমি দেখি আমার পা ভেঙ্গে গেছে। আর সেই থেকে আমি এখানেই আছি। আমার মোবাইল ফোনটা কারা যেন নিয়ে গেছে তাই কারো মোবাইল নাম্বার আমার মনে না থাকার কারণে কাউকে খবর দিতে পারি নি।
তাই বলে এভাবে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবে বাবা আমাদের বাসায়ও তো কাউকে খবর দিয়ে পাঠাতে পারতে।যাই হোক আমি দেখছি কিভাবে কি করা যায়।তোমার তো আর এখানে না থাকলেও হয় বোধহয়।তুমি কি বলো।মুনার বাবা তার জামাইয়ের কাছে জানতে চাইল।
পরাগ তার শ্বশুড়ের কথার জবাবে বলল, কাল ডাক্তার তাই বলছিল এখন বাসায় গিয়ে বিশ্রাম করলেই ভালো হয়।
আচ্ছা আমি সব ব্যবস্থা করছি।এতটুকু বলে মুনার বাবা তার জামাইয়ের কাছ থেকে উঠে গেল।সে ক্লিনিকের সবটুকু পাওনা মিটিয়ে দিয়ে পরাগকে নিয়ে বাসায় চলে এলো । কাউকেই সে আগে কোনো কিছু জানালো না।
পরাগকে অসুস্থ দেখে মুনা কেঁদে ফেলল।যদিও পরাগকে দেখেই তার আহত মনটা ভালো হয়ে গেল।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে সে জানতে চাইল পরাগ কিভাবে তার পা ভেঙ্গে ফেলল।
পরাগ সবকিছু খুলে বলল।সবকিছু শুনে সবার অনুরাগ মুছে গেল আর পরাগের প্রতি আবার সবার ভালোবাসা জেগে উঠল।
রাতে পরাগকে একাকি পেয়ে মুনা বলল,আমাকে তুমি মাফ করে দিও।আসলে আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তাই সবসময় তোমার কাছ থেকে বেশি বেশি ভালোবাসা পেতে চাই আর সে কারণেই এভাবে রাগারাগি করি। আমার খুব ভুল হয়ে গেছে।যার কারণে তোমার এতো বড় এক্সিডেন্ট হয়ে গেল।আমি খুবই লজ্জিত,আমাকে ক্ষমা করে দাও।আর কখনো এভাবে হবে না।
পরাগ হেসে শুধু বলল, ধুর বোকা আমি কিছু মনে রাখিনি।আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।
------------------







আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Hasan ibn Nazrul বাহ চমৎকার। সবার ভাঙ্গা ভাঙ্গা শুনতে বোর হচ্ছিলাম। একটু ভিন্নতা পেলাম। শুভকামনা কবির জন্য
শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা রইল।
নাস‌রিন নাহার চৌধুরী মিলনের গল্প। শুভেচ্ছা সহ ভোট রইলো।
শুভেচ্ছা আর ধন‌্যবাদ রইল।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ভালোবাসা গভীরতর হওয়ার কারণে ভালোবাসার মানুষের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি হয়ে মন ভেঙ্গে যাওয়ার কাহিনী বিবৃত হয়েছে এই গল্পে।

২২ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী