বিবেকের দংশন

পার্থিব (আগষ্ট ২০১৮)

শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান
  • ৬২১
আরশাদ বি সি এস পাস ক‌রে প্রশাস‌নের প্রথম শ্রে‌ণির কর্মকর্তা হ‌য়ে‌ছে।আর সে কার‌ণে তার মনটা সবসময় প্রশা‌ন্তি‌তে প্রফুল্ল থাক‌তো। সব‌কিছু‌তেই সে একটা সুখ‌বোধ অনুভব কর‌তো।
এক‌দিন বি‌কেল‌বেলা আরশাদ পা‌র্কের ম‌ধ্যে দি‌য়ে ফুরফু‌রে মেজা‌জে হেঁ‌টে যা‌চ্ছিল।সহসা একটা বে‌ঞ্চির ওপ‌রে বসা এক বৃদ্ধ লোক আরশাদ‌কে তার কা‌ছে ডাক‌লো।আরশাদ ভাব‌লো বৃদ্ধ লোক হয়‌তো কো‌নো প্র‌য়োজ‌নে তা‌কে কা‌ছে ডে‌কে‌ছে তাই আরশাদ তার সাম‌নে গি‌য়ে বলল,‌কিছু বল‌বেন চাচা?
বৃদ্ধ লোকটা বলল,‌কিছু কথা ছিল য‌দি তোমার সময় হয় একটু বসবা বাবা।
আরশাদ লক্ষ্য কর‌লো বৃদ্ধ লোকটা কিছুট‌া হতাশাগ্রস্থ তাই সে তার পা‌শে ব‌সে বলল,‌জ্বি চাচা সময় হ‌বে আপ‌নি বলুন কি বল‌তে চান।
বৃদ্ধ লোকটা বলল,ধন্যবাদ,ধন্যবাদ বাবা।আমা‌কে সময় দেবার জন্য।
আরশাদ বলল,‌জ্বি চাচা বলুন।
এবার বৃদ্ধ লোকটা বলা শুরু কর‌লো,‌সে প্রায় চ‌ল্লিশ বছর আগের কথা এক তরুণ ছে‌লে সরকা‌রি প্রথম শ্রে‌ণির কর্মকর্তা হি‌সে‌বে সরকা‌রি চাকু‌রি‌তে জ‌য়েন করল। তার জীব‌নে তখন শুধু আনন্দ আর খু‌শি,‌কেননা প্রত্যাশাগু‌লোর প্রা‌প্তি‌তে সে ছিল ভরপুর। সেই ছে‌লেটার জীবন কা‌হিনী আমি তোমা‌কে শোনা‌তে চা‌চ্ছি,শুন‌বে তুমি?
বৃদ্ধ লোকটার কথা বলার ধরণ খুবই আবেগপ্রবণ তাই আরশা‌দের ম‌নে দাগ কে‌টে গেল।‌সে ম‌নে ম‌নে ভাবল শু‌নেই দে‌খি লোকটা কি গল্প ব‌লে।এবার সে বৃদ্ধ লোকটার কথার জবা‌বে বলল,জ্বী চাচা আপ‌নি বলুন আমি শুনব সেই তরু‌ণের জীবন কাহিনী।
আরশা‌দের আগ্রহ দে‌খে এবার বৃদ্ধ লোকটা বল‌তে শুরু করল।‌শোন ত‌বে বাব‌া,‌সেই ছে‌লে‌টি নতুন সরকা‌রি চাকু‌রি‌তে জ‌য়েন করার প‌রে বাবা মা‌কে নি‌য়ে ‌সে তার স্বপ্নগু‌লো পূরণ করার জন্য নতুন উদ্য‌মে কাজ শুরু করল।
দুই বছর তার জীবন খুবই সুন্দর ভা‌বে অতিবা‌হিত হয়ে গেল।চাকু‌রি জীব‌নের সা‌থে সে তার জীবন‌কেও খাপ খাই‌য়ে নিল।বাবা মা আর তার সংসা‌রে কি‌সের যেন ঘাট‌তি অনুভব কর‌তে লাগল ছে‌লে‌টি।চার‌দিক থে‌কে এত আয় উপার্জন এত টাকা কে খা‌বে তার। সে আকারে ই‌ঙ্গি‌তে বিষয়টা বাবা মা‌কে বু‌ঝি‌য়ে দিল।বাবা মা বিষয়টা উপল‌ব্ধি কর‌তে পারল। আর চা‌রি‌দি‌কে খোঁজ লা‌গি‌য়ে দি‌য়ে ছে‌লের জন্য বড় ঘ‌রের এক টুকটু‌কে লাল র‌ঙের বউ জোগাড় ক‌রে নি‌য়ে আসল তারা।এবার ছে‌লে‌টির ম‌নে প্রকৃত শা‌ন্তি ফি‌রে এল।‌কো‌নো দি‌কে কো‌নো অতৃ‌প্তি রইল না তার।সুন্দর সাজানো গোছা‌নো সংসার সৃ‌ষ্টির নি‌মি‌ত্তে সে উজাড় মনে টাকা উপার্জন কর‌তে লাগল দুই হা‌তে। এতে সে বৈধ অবৈধ কিছুই বিচার বি‌বেচনা রাখল না।বৈধ আ‌য়ের চে‌য়ে সে অবৈধ আ‌য়ের দি‌কে ই ঝুঁ‌কে পরল।আর টাকার পাহাড় গড়ার কা‌জে নি‌জে‌কে নি‌য়ো‌জিত করল সে।‌কো‌নো কিছু‌কেই প‌রোয়া না ক‌রে তার আপন প‌থে সে চল‌তে লাগল।এইভা‌বে চল‌তে চল‌তে পাচ বছর কে‌টে গেল। ছে‌লে‌টির ঘর আলো ক‌রে দু‌টি সন্তান এলো তার ঘ‌রে।সব দিক দি‌য়েই সোনায় সোহাগা হ‌লো তার প‌রিবার। ইতিম‌ধ্যে তার বউ‌য়ের সা‌থে বাবা মার ঝগড়া প্রায়ই লে‌গে থাকত। কারণ তার আর তার বউ‌য়ের স্ট্যাটাস তত‌দি‌নে অনেক বে‌ড়ে গে‌ছে।তারা সমা‌জের উঁচু স্ত‌রে অবস্থান নি‌য়ে নি‌য়ে‌ছে আর জীবন যাপ‌নেও তার ছোঁয়া লে‌গে‌ছে।তাই মধ্যবিত্ত ম‌নের বাব‌া মা‌য়ের স‌ঙ্গে তা‌দের ম‌তের প্রচুর অমিল দেখা দিল।আর তার অবৈধ আয় করা‌কে বাবা মা শুরু থে‌কেই তেমন পছন্দ করত না।ধী‌রে ধী‌রে তার কা‌ছে বিষয়টা প‌রিস্কার হ‌য়ে গেল।তাই যা হবার তাই হ‌লো বাবা মা‌কে সে তা‌দের থে‌কে আলাদা ক‌রে দিল।‌ছে‌লে‌টির অসহায় বাবা মা তা‌দের আঁ‌খিজল মু‌ছে ছে‌লের মঙ্গল কামনা ক‌রে তা‌দের গ্রা‌মের বা‌ড়ি‌তে চ‌লে গেল। অসহায় বাবা মা‌য়ের প্রতি তা‌দের অনুভূ‌তি একেবা‌রে ই ক‌মে গেল।
এতটুকু ব‌লে বৃদ্ধ লোকটা এবার চুপ করল।
আরশাদ তা‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে বলল,চাচ‌া থাম‌লেন কেন,ব‌লেন তারপ‌রে কি হ‌লো।
কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে বৃদ্ধ লোকটা আবার বল‌তে শুরু করল। জীবন খুবই নিঠুর নিয়‌তি নির্ভর বুঝ‌লে বাবা,তারপ‌রে সেই ছে‌লে‌টির জীব‌নে আনন্দ আর খু‌শি লে‌গেই রইল। আর অন্যদি‌কে তার বাবা মা নির্মম জীবন যাপন কর‌তে লাগল।
‌ছে‌লে‌টি ব্যস্ততায় ডু‌বে রইল,বাব‌া ম‌া‌য়ের খোঁজ আর তেমন একটা রাখল না।বাবা মা ও ছিল অভিমা‌নি তারাও আর ছে‌লের দুয়া‌রে এসে কখ‌নো দাঁড়ায়নি। এইভা‌‌বে বহু বছর চ‌লে গেল। ইতিম‌ধ্যে ছে‌লে‌টির ঘর আলো ক‌রে এক‌টি কন্যা সন্তান এলো। দুই ছে‌লে আর এক মে‌য়ে‌কে নি‌য়ে সারা‌দিন ব্যস্ত রইল ছে‌লে‌টি আর তার বউ।
সন্তান‌দের মানুষ করার কা‌জে তারা নি‌য়ো‌জিত হ‌লো এক‌নিষ্ঠ ভা‌বে। দি‌নে দি‌নে তার ছে‌লে মে‌য়ে বড় হ‌তে লাগল আর তা‌দের পিতার অঢেল টাকার সন্ধান পে‌য়ে গেল। তারা নান‌ান কার‌ণে পিতার কাছ ‌থে‌কে অতিরিক্ত টাকা দা‌বি ক‌রে নি‌তে লাগল। ছে‌লে‌টিও তার সন্তান‌দের ভা‌লোবাসায় প‌রে যখন ‌যে যা দাবি করত তা‌কে তাই দি‌য়ে দিত। এভা‌বেই চল‌তে লাগল।
এক‌দিন গ্রাম থে‌কে খবর এলো ছে‌লে‌টির বাবা পৃ‌থিবীর মায়া ত্যাগ ক‌রে চ‌লে গে‌ছে। সামা‌জিক চা‌পেই সে বহু বছর যে পিতা মাত‌ার খোঁজ রা‌খে‌নি তা‌দের জন্য সবাই‌কে নি‌য়ে গ্রা‌মের উদ্দেশ্যে রওনা হ‌লো।
বাবার চ‌লে যাওয়া‌তে ম‌নে ম‌নে সে খুব কষ্ট পেল।কিন্তু বাস্তবতার চরম চা‌হিদার কা‌ছে সে আত্নসমর্পণ ক‌রে‌ছে তাই তার অনুভূ‌তি ভোঁতা হ‌য়ে গে‌ছে। অব‌শে‌ষে সব‌কিছু শেষ ক‌রে গ্রা‌মের মানু‌ষের চা‌পেই সে বাধ্য হ‌য়ে তার একা‌কি মা ‌কে সা‌থে ক‌রে নি‌য়ে আবার শহ‌রে ফি‌রে এল। য‌দিও তার মা তা‌দের স‌ঙ্গে আস‌তে চায়‌নি। তবুও গ্রা‌মের সবার অনু‌রো‌ধে সে রা‌জি হ‌লো আর ছে‌লের স‌ঙ্গে আবার বহু বছর প‌রে শহ‌রে ফি‌রে এল।
এতটুকু ব‌লে বৃদ্ধ লোকটা আবার চুপ ক‌রে রইল।
আরশাদ তা‌কে থে‌মে থাক‌তে দে‌খে বলল,চাচা থে‌মে গে‌লেন কেন,তারপর কি হ‌লো ব‌লেন।
আরশা‌দের কথা শু‌নে বৃদ্ধ লোকটা বলল,বাবা সন্ধ্যা হ‌য়ে আস‌ছে আর আমার শরী‌রে কথা বলার শ‌ক্তি নাই। আজ আর বল‌তে পারব না। সবটুকু বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আঁধার হ‌য়ে যা‌চ্ছে আমা‌কে বাসায় ফি‌রে যে‌তে হ‌বে।
বৃদ্ধ লোকটার কথা শু‌নে আরশাদ ব‌লে উঠল,তাহ‌লে তারপ‌রে ঐ ছে‌লে‌টির জীব‌নে কি ঘটল তা আমি শুনব না ?
আরশা‌দের কথা শু‌নে বৃদ্ধ লোকটা বলল,হ্যাঁ শুন‌তে পার‌বে য‌দি আবার তোমার সা‌থে আমার দেখা হয়।
এতটুকু ব‌লে বৃদ্ধ লোকটা হাঁটা শুরু করল।
আরশাদ পিছ‌নে পিছ‌নে হাঁট‌তে হাঁট‌তে জি‌গ্যেস করল,ক‌বে কোথায় আবার আপনার দেখা পাব?
এখানেই দেখা পা‌বে য‌দি আমি সুস্থ থা‌কি।
বৃদ্ধ লোকটা আর অপেক্ষা করল না,আরশাদ কে পেছ‌নে ফে‌লে সে মানু‌ষের ভী‌রে হা‌রি‌য়ে গেল।
এরপর এক সপ্তাহ পার হ‌য়ে গেল। আরশাদ রোজ পা‌র্কে এসে বৃদ্ধ লোকটার জন্য অপেক্ষা কর‌তে লাগল।‌কিন্তু বৃদ্ধ লোকটা আর আ‌সে না।
আরশাদ কিছুটা হতাশ হ‌লো,হয়ত তার আর সেই ছে‌লে‌টির পু‌রো জীবন কা‌হিনী শোনা হ‌বে না।
আরশাদ ম‌নে অতৃ‌প্তি নি‌য়ে রোজ পা‌র্কে আশা বন্ধ ক‌রে দিল।‌কিন্তু তার ম‌নে সবসময় একটা আশা ছিল যে সে ঐ লোকটার দেখা আবার পা‌বে আর শু‌নে নে‌বে তার গ‌ল্পের সবটুকু।আর এই ভে‌বেই সে প্রায়ই সকা‌লে নয়ত বিকা‌লে একবার পা‌র্কে এসে ম‌নে ম‌নে বৃদ্ধ লোকটা‌কে খুঁ‌জে যেত।
আরশা‌দের চাওয়া পাওয়ায় প‌রিণত হ‌লো এক‌দিন সকা‌লে।তত‌দি‌নে দুইমাস পে‌রি‌য়ে গে‌ছে।
আরশাদ সকা‌লের স্নিগ্ধ আলোতে দেখল বৃদ্ধ লোকটা ব‌সে আছে আপনম‌নে। আরশাদ দ্রুতপ‌দে তার কা‌ছে হেঁ‌টে গি‌য়ে তার পা‌শে ব‌সে বৃদ্ধ‌কে জি‌গ্যেস করল,চাচা আপ‌নি কোথায় হা‌রি‌য়ে গি‌য়ে‌ছি‌লেন,আপ‌নি জা‌নেন আপনা‌কে আমি এই দুইমাস যাবৎ এখা‌নে এসে খুঁ‌জে যা‌চ্ছি?
আরশা‌দের কথার জবা‌বে বৃদ্ধ বলল,জা‌নি বাবা কিছুটা বুঝ‌তে পা‌রি,ত‌বে আমি কি করব বল,‌সেই যে বিছানায় শুইলাম আর উঠ‌তে পা‌রি‌নি। সপ্তাহ খা‌নেক হ‌লো একটু সুস্থ হ‌য়ে‌ছি আর আজ‌কেই এলাম এই পার্কের খোলা‌মেলা আবহাওয়া‌তে।
বৃ‌দ্ধের কথা শু‌নে আরশাদ বলল,তাহ‌লে এখন কিছুটা সুস্থ হ‌য়ে‌ছেন চাচা।
বৃদ্ধ বলল,বল‌তে পার বাবা,ত‌বে ম‌নে সুস্থ হ‌তে পার‌বো না হয়ত কো‌নোদিন।
‌কেন?আরশাদ জান‌তে চাইল।
জবা‌বে বৃদ্ধ বলল,বাবা ওসব কথা বাদ দাও,বল তোমা‌কে আমি কোন পর্যন্ত সেই ছে‌লে‌টির জীবন কা‌হিনী শু‌নি‌য়ে‌ছিলাম।
বৃ‌দ্ধের কথা শু‌নে আরশাদ বলল,ঐ যে ছে‌লে‌টি তার বাবার মৃত্যুর পর তার মা‌কে নি‌য়ে আবার শহ‌রে ফি‌রে এল। এব‌ার দয়া ক‌রে আপ‌নি বলুন ছে‌লে‌টির জীব‌নে পরর্বতি কি ঘটল।
বল‌ছি শোন,বৃদ্ধ বল‌তে শুরু করল,তত‌দি‌নে ছে‌লে‌টি মস্তবড় সরকা‌রি কর্মকর্তা হ‌য়ে গে‌ছে। শহ‌রে তিন‌টি বহুতল বা‌ড়ি ক‌রে ফে‌লে‌ছে সে। অবৈধভা‌বে আয় কর‌লে মানু‌ষের ধ‌নে সম্প‌দে বড় হ‌তে সময় লা‌গে না।‌ ছে‌লে‌টির অবস্থাও তাই হ‌লো,‌সে সবধর‌ণের কা‌জে ঘুষ নিত,আর নি‌জে‌রে সে চাকু‌রি জীব‌নেই সম্পদশা‌লী ক‌রে তুলল।
‌কিন্তু দুর্ভাগ্য এত সম্প‌দের অধিকা‌রি হ‌য়েও সে তার মা‌কে একটু ঠাঁই দি‌য়ে রাখ‌তে পার‌লো না। কেউ তার মা‌কে একটু সা‌পোর্ট দিল না। কাউ‌কে ক‌ঠোরভা‌বে কিছু বল‌তে পার‌লো না সে,শুধু মা‌য়ের উপর ক‌ঠোর হ‌য়ে তা‌কে বৃদ্ধাশ্রমে রে‌খে আসল।
‌ছে‌লে‌টির বাবা মা তা‌কে এত বড় করার জন্য জীবন দি‌য়ে দিল। আর ছে‌লে‌টি তার বাবা‌কে উপহার দিল ধুঁ‌কে ধুঁ‌কে মৃত্যু আর মা‌কে ক‌রে দিল বৃদ্ধাশ্রমের অধিবা‌সি।
বৃদ্ধ এতটুকু ব‌লে আপনম‌নে তার চোখদু‌টো মু‌ছে নিল। আরশা‌দের মনটাও নরম হ‌য়ে গেল। আরশাদ নি‌জে‌কে সাম‌লে নি‌য়ে বলল,চাচা এরপ‌রে কি হ‌লো।
বৃদ্ধ বলল,এরপ‌রে কি আর হ‌বে যে গোমরা‌হি তে ছে‌লে‌টি ডু‌বে ছিল তার প্রতিদান আস‌তে শুরু করল।
আরশাদ জান‌তে চাইল,‌সেটা কিভা‌বে?
বৃদ্ধ বলল,‌দেখ‌তে দেখ‌তে ছে‌লে‌টির চাকু‌রি জীব‌নের পয়‌ত্রিশ বছর কে‌টে গেল। তার অবসর হ‌য়ে গেল। অগাধ অর্থ সম্প‌দের কার‌ণে সে তার কো‌নো সন্তান‌কেই সু‌শিক্ষায় শি‌ক্ষিত কর‌তে পা‌রে নি। সবাই সা‌র্টি‌ফি‌কেট অর্জন ক‌রে‌ছে ঠিকই কিন্তু মানুষ হয় নি। তাই সে যখন সেটা বুঝ‌তে পারল তখন থে‌কেই সে তার ভুল বুঝ‌তে শুরু করল।‌কিন্তু তত‌দি‌নে সময় পার হ‌য়ে গে‌ছে। যা হবার তাই হ‌য়ে গে‌ছে ফি‌রে আসার সময় তার নেই। কারণ চাকুরি থে‌কে তার অবসর হ‌য়ে গে‌ছে ,যা‌দের কে সে জীব‌নে ঠ‌কি‌য়ে‌ছে আর তা‌দের মাধ্যমে ‌সে যা উপার্জন ক‌রে‌ছিল তার সব‌কিছুই সে উপ‌ভোগ ক‌রে ফে‌লে‌ছে। সুতরাং বু‌ঝেও সে আর কিছু কর‌তে পার‌বে না। তাই কি‌ঞ্চিত শা‌স্তি হয়‌তো তার জন্য বরাদ্দ হ‌লো।
‌মে‌য়ে‌কে সে বি‌য়ে দিল মে‌য়ের পছন্দম‌তো ছে‌লের কা‌ছে,‌কিন্তু বছর না যে‌তেই সেই বাটপার ছে‌লে মে‌য়ে‌কে মার‌ধোর করা শুরু করল।‌ শে‌ষে বাধ্য হয়েই একটা বা‌ড়ি জামাইকে লি‌খে দি‌তে বাধ্য হ‌লো সে। আর এর দেখা‌দে‌খি তার বড় ছে‌লে ব্যবসার নাম ক‌রে জোড় ক‌রে তার কাছ থে‌কে আর এক‌টি বা‌ড়ি নি‌জের না‌মে লি‌খে নিল।
তার বড় ছে‌লে হ‌য়ে‌ছিল বড় ধর‌নের নেশা‌খোর। তাই বাবা মা‌য়ের অনুভূ‌তির কো‌নো দাম তার কা‌ছে ছিল না।
‌নি‌জের বউ বাচ্চা নি‌য়ে সে বাবা মা‌কে ছে‌ড়ে দি‌য়ে নি‌জের না‌মে লি‌খে নেয়া বা‌ড়ি‌তে গি‌য়ে উঠল। তার বাবা মা‌য়ের কা‌ছে সবটুকু প্রয়োজন ফু‌রি‌য়ে গে‌ছে।
‌ছে‌লে‌টি নি‌জের সব‌কিছু একে একে হারা‌তে লাগল। অব‌শে‌ষে তার বসবাস করা বা‌ড়ি‌টিও ছোট ছে‌লে দা‌বি করল। অসহায় হ‌য়ে ছোট ছে‌লে‌কে সে তার নি‌জের বসবাস করা বা‌ড়ি‌টি লি‌খে দিল। এবার তার আর কো‌নো বা‌ড়ি থাকল না।
‌কিছু‌দিন যে‌তে এবার তার সব ছে‌লে মে‌য়েরা ব‌সে বাবার গা‌ড়ি আর ব্যাংকের টাকা পয়সা সব ভাগ বা‌টোয়ারা ক‌রে নিল। বয়স হওয়ার কার‌ণে সে আর তেমন বাধা দি‌তে পারল না। সব‌কিছু হা‌রি‌য়ে এবার সে নিদারুণ অসহায় হ‌য়ে পরল।
তবু ও কি আর করা বাধ্য হ‌য়ে সে আর তার বউ তার জুড়া‌য়ি ছোট ছে‌লের স‌ঙ্গে বসবাস কর‌তে লাগল।তার ছোট ছে‌লে আস্তে আস্তে নি‌জের বাসায় জুয়ার আড্ডা বসা‌তে লাগল। নিদারুণ অসহায় হ‌য়ে এবার সে ছে‌লে কে বাধা দেওয়ার চেষ্টা কর‌তে লাগল। কিন্তু শেষ সম‌য়ের এ শাসন কি আর কা‌জে লা‌গে। ছে‌লে তার বউ‌য়ের সঙ্গে বু‌দ্ধি ক‌রে বু‌ড়ো বু‌ড়ি‌কে বৃদ্ধাশ্রমে পা‌ঠি‌য়ে দিল।
জুড়া‌য়ি ছে‌লে তার বাবার শেষ অনু‌রোধটুকু রে‌খে‌ছিল। আর তা হল তার দা‌দি যে বৃদ্ধাশ্রমে ছিল সেখা‌নেই তার বাবা মা‌কে পা‌ঠি‌য়ে দিল।
এতটুকু ব‌লে দীর্ঘশ্বাস ফে‌লে বৃদ্ধ নিশ্চুপ হ‌লো।
আরশা‌দের মনটা অতিশয় নরম হ‌য়ে গেল। গ‌ল্পের বিষয়টা তার কা‌ছে নিদারুণ বেদনার লে‌গে‌ছে। তাই সে ব‌লে উঠল,চাচা আমা‌কে গল্পটা সুন্দর ব‌লে‌ছেন। আমার ভা‌লো লে‌গে‌ছে,এ থে‌কে শিক্ষার অনেক কিছু র‌য়ে‌ছে,মানুষ‌কে সৎ এবং নী‌তিবান হ‌তে হ‌বে তাহ‌লে ভ‌বিষ্যত জীব‌নে ভা‌লো ফল পাওয়া যা‌বে।
এবার আরশা‌দের কথা শু‌নে বৃদ্ধ লোকটা মুচ‌কি হে‌সে বলল,তু‌মি গ‌ল্পের বিষয়বস্তু বু‌ঝেছ ঠিকই কিন্তু আরও একটু যোগ কর‌তে হ‌বে।
‌কি সেটা?আরশাদ জান‌তে চাইল।
বৃদ্ধ বলল,জীব‌নে অবৈধ অর্থ উপার্জন করা ঠিক না,মানুষ‌কে ঠ‌কি‌য়ে শা‌ন্তি পাওয়া যায় না। সৎ পয়সায় সন্তান‌দের সু‌শিক্ষায় শি‌ক্ষিত করার চেষ্টা করা উচিত,‌যেন তারা মান আর হু‌সে মানুষ হ‌য়ে বৃদ্ধ বাব‌া মা‌কে সারাজীবন আগ‌লে রা‌খে। কখ‌নো বৃদ্ধাশ্রমের দারস্থ যেন না হয় কো‌নো সন্তান।
জ্বী বুঝলাম চাচা। আপ‌নি অনেক সুন্দর ব‌লে‌ছেন,সুন্দর গল্প। আমার জীব‌নে কা‌জে লাগ‌বে। আরশাদ ব‌লে উঠল।
এবার বৃদ্ধ বলল,‌তোমার জীব‌নে কা‌জে লাগ‌বে শু‌নে ভা‌লো লাগল বাবা,ত‌বে আ‌মি কি তোমা‌কে গল্প ব‌লে‌ছিলাম না‌কি জীবন কা‌হিনী ব‌লে‌ছিলাম,যা জীবন থে‌কে নেয়া। ‌তোমার কা‌ছে কি গল্প ম‌নে হ‌য়ে‌ছে?
বৃ‌দ্ধের প্রশ্ন শু‌নে আরশাদ একটু বিচ‌লিত হ‌য়ে বলল,দুইমাস আগে বলা শুরু ক‌রে‌ছি‌লেন তাই ঠিক ম‌নে নাই,হয়ত জীবন কা‌হিনী ই ব‌লে‌ছেন।
আরশা‌দের কথা শু‌নে বৃদ্ধ উঠে দাঁড়াল আর বলল,এবার চ‌লি বাবা। আমি তোমা‌কে গল্প না এক বাস্তব জীব‌নের ঘ‌টে যাওয়া নিদারুণ কা‌হিনী শুনালাম।
বৃদ্ধ হাঁট‌তে লাগল। আরশাদ তার পিছনে হাঁট‌তে হাঁট‌তে জি‌গ্যেস করল,চাচা আপ‌নি কোথায় থা‌কেন,এত দ্রুত কোথায় চল‌লেন?
এবার বৃদ্ধ আর ও দ্রুতপ‌দে হাঁট‌তে হাঁট‌তে বলল,আমি আমার মা‌য়ের কা‌ছে থা‌কি,এই পার্ক থে‌কে আধা ঘন্টা দূ‌রের পথ। ‌সেখা‌নে এখন আমার মা আমার জন্য খাবার নি‌য়ে অপেক্ষা কর‌ছে আর কথা বলার সময় নাই।
আরশাদ বলল,ঐখা‌নে ঐ দি‌কে তো একটা বৃদ্ধাশ্রম র‌য়ে‌ছে।
বৃ‌দ্ধের স‌ঙ্গে আরশা‌দের দূরত্ব ততক্ষ‌ণে বে‌ড়ে গে‌ছে। মানু‌ষের ভী‌ড়ে মি‌শে যে‌তে যে‌তে বৃদ্ধ শুধু বলল,হ্যাঁ ঐ বৃদ্ধাশ্রমেই এখন সেই ছে‌লে‌টি তার মা‌য়ের স‌ঙ্গে থা‌কে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ দারুন গল্প শরীফ ভাই।মায়ের সাথে সন্তান যা করল, সেই সন্তান তার সন্তান থেকে ঠিক তাই পেল।শিক্ষনীয় গল্প।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আসবেন আমার ছোট গল্প "ইব্রাহিম" পড়তে।
অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।
মোঃ মোখলেছুর রহমান পড়লাম,ভাল লাগল শরীফ ভাই।
অনেক ধন‌্যবাদ।শুভেচ্ছা রইল।
জলধারা মোহনা কি করুন কাহিনী.. অন্যায়ের প্রতিদান এভাবেই সবাই ফিরে পায়। সুন্দর লিখেছেন।
অনেক ধন‌্যবাদ।পাতায় আমন্ত্রণ রইল।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

পার্থিব জীবনের নির্মম এক বাস্তব কাহিনী বিবৃত হয়েছে এই গল্পে । সুতরাং এই গল্পটি সামঞ্জস‌্যপূর্ণ।

২২ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪