দিগন্তে বিলীন

আমার স্বপ্ন (ডিসেম্বর ২০১৬)

সারোয়ার কামাল
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.২২
  • ১৪
  • ১৭
(এক)
জানালার ছেড়া পর্দা দি‌য়ে বৃ‌ষ্টির ছাট ঢু‌কে টে‌বি‌লে রাখা বই খাতা ভি‌জি‌য়ে দি‌চ্ছে । আকা‌শে মুহুর্মুহ বজ্রপা‌তের তীব্র নিনাদে প্রক‌ম্পিত চারপাশ । সেই সা‌থে ঝ‌ড়ো হাওয়ার মাতম । প্রকৃ‌তির রুদ্রমূ‌র্তি বু‌ঝি একেই ব‌লে । প্রকৃ‌তির এমন রুদ্রলীলা সম্পূর্ণ উপেক্ষা ক‌রে একটা খটখ‌টে শক্ত‌ আটো খা‌টে পরম নি‌শ্চি‌ন্তে ঘুম‌চ্ছে শ‌ফিক ।খা‌টের শেষ দিকটা তার শরী‌রের চে‌য়ে ছোট তাই পা দু‌টো কুক‌ড়ে শু‌য়ে‌ছে কুকুর কুন্ডলী পাকি‌য়ে । তেল চিট‌চি‌টে ময়লা বা‌লিশটায় তু‌লোর অস্তিত্ব পাওয়া যা‌বে কি না স‌ন্দেহ ।তু‌লোর অভাব মেটা‌তে শ‌ফিক বাঁ হাতটায় মাথা পে‌তে দি‌য়ে‌ছে । পুর‌নো ছেড়া কাথার ওপর ওর ফিন‌ফি‌নে ভাঙা শরীর ।‌খা‌লি গা‌য়ের সবকটা পাজ‌রের হাড় হা‌তে গুনা যা‌বে ।অনড় শরীরটার দি‌কে তাকা‌লে ম‌নে হয় মো‌মের মূ‌র্তি।প্র‌াগৈ‌তিহা‌সিক যুগ থে‌কে এভা‌বেই প‌ড়ে আছে ।শুধু থে‌কে থে‌কে হাপ‌রের মত ওঠানামা করা ওর বুকটা জানান দি‌চ্ছে ও মূ‌র্তি নয় জীবন্ত রক্তমাং‌সে গড়া মানুষ ।মাথার পা‌শে খোলা লি‌ভিং‌স্টো‌নের বই । অনেক রাত অব‌ধি পড়‌তে পড়‌তে কখন জা‌নি বই খোলা রে‌খে ঘু‌মি‌য়ে প‌ড়ে‌ছিল । প্র‌তিরা‌তেই সে লি‌ভিং‌স্টোন প‌ড়ে । তারপর আল‌গো‌ছে চো‌খের পাতায় ভর ক‌রে ঘুম । ঘুমের মা‌ঝে সে দে‌খে আফ্রীকার গহীন অরণ্য ।আদিগন্ত মরূভূ‌মি । উপত্যকা পাহাড় ।।অন্তহীন সমুদ্রের স্ফীত ঢেউ‌য়ে খেলা ক‌রছে ফসফরাস।উচু উচু ঢেউ‌ ভা‌সি‌য়ে নি‌চ্ছে বা‌লি‌র ব‌ু‌কে হে‌টে চলা কাঁকড়া ,কচ্ছপ আর শামুক ।‌লি‌ভিং‌ স্টো‌নের মত সেও একসময় পথ হা‌রি‌য়ে ফে‌লে । হারা‌নো পথ খুঁজ‌তে গি‌য়ে তার ঘুম ভে‌ঙে যায় । বাই‌রে তখনও অবিশ্রান্ত ধারায় বৃ‌ষ্টি পড়‌ছে । দমকা বাতা‌সে জানালার পাল্লাটা সশ‌ব্দে বা‌ড়ি খায় । সেই সা‌থে এক পশলা বাতাস এসে টে‌বি‌লে রাখা আধ‌ভেজা খোলা লেখার পাতাগু‌লো‌কে ফরফর ক‌রে উড়ি‌য়ে দি‌য়ে যায় । শ‌ফিক ধড়মড় ক‌রে উঠে ব‌সে ।ত‌ড়িঘ‌ড়ি ক‌রে খাট থে‌কে নে‌মে ঘ‌রের বি‌ভিন্ন প্রা‌ন্তে ছ‌ড়ি‌য়ে পড়া পাতাগু‌লো কু‌ড়ো‌তে থা‌কে । বৃ‌ষ্টির পা‌নি‌তে প্রায় নে‌তি‌য়ে গে‌ছে পাতাগু‌লো ।পা‌নি‌তে ভেজার কার‌নে কল‌মের কা‌লিও জায়গায় জায়গায় ছ্যাব‌ড়ে গে‌ছে । ভারাক্রান্ত হ‌য়ে ও‌ঠে ওর মন । কত কষ্ট ক‌রে রাত জে‌গে লেখা ওগু‌লো ।"ইশ,,,,"আপনা থে‌কেই অস্ফু‌টে বে‌রি‌য়ে আসে শব্দটা । শ‌ফিকের ভ্রমণকা‌হিনী লেখার সুপ্ত বাসনা সেই ছোট‌বেলা থে‌কে যেবার ক্লা‌স সেভে‌নে ফার্স্ট হ‌য়ে স্কুল থে‌কে পেল বিভূ‌তিভূষ‌ণের "চাঁ‌দের পাহাড় "বইটা । তার অভী‌স্পিত মন শংক‌রের মত জীবন চায় , লি‌ভিং‌স্টোনের মত জীবন চায় , কলম্বা‌সের মত জীবন চায় ।স্বপ্নীল চো‌খে সেও জন ক্যাব‌টের মত পা‌ড়ি দি‌তে চায় অথৈ সমু‌দ্র । দুঃসাহ‌সিক অভিযা‌নের কথা লিখ‌তে চায় পাতায় পাতায় ।শহ‌রের চোরা গ‌লির সংকীর্ণ কামরায় আবদ্ধ তার মন ছো‌টে নিরু‌দ্দে‌শের পা‌নে । কত দেশ ,মহা‌দেশ ,অরণ্য পাহাড় দেখ‌তে হ‌বে । প‌দে প‌দে বিপদসংকুল বৈরীতা আস‌বে ।মৃত্যুকূ‌পে প‌তিত হ‌তে হ‌বে বারংবার । লি‌ভিং স্টো‌নের মত সেও লি‌খে রাখ‌বে সেই সব শ্বাসরুদ্ধকর অবিশ্বাস্য ভ্রম‌ণের বর্ণনা পাতার পর‌তে পর‌তে ।এমন নিস্তরঙ্গ এক‌ঘে‌য়ে নৈ‌মি‌ত্তিক জীবন সে চায় না । জীবন কে বুঝ‌তে গে‌লে জীব‌ন‌কে ক্ষুদ্রতার গ‌ন্ডি ছে‌ড়ে বৃহৎ প‌রিস‌রে এনে দেখ‌তে হয় ।জীবনের তাৎপর্য মহৎ এবং অপ‌রি‌মেয় । সংকীর্ণভা‌বে বাচলে সে মহ‌ত্ত্বের সন্ধান কখ‌নো পাওয়া যায় না । শ‌ফিক সেই মহ‌ত্ত্বের সন্ধান পে‌তে চায় । তার জন্মের কিছু‌দি‌নের মাথায় বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় । মা কায়ক্লে‌শে তা‌কে বড় ক‌রে‌ছে । সে শহরের একটা ক‌লে‌জে পড়‌ছে ।বেশ কিছু টিউশ‌নি জু‌টি‌য়ে নি‌জের খরচ চালা‌চ্ছে ।গ্রা‌মে মা‌কে টাকা পাঠা‌চ্ছে ।শ‌ফি‌কের আর কোন ভাই‌বোন নেই ।সেই দুঃখী‌নি মা‌য়ের অ‌ন্ধের য‌ষ্ঠি ।প্রচন্ড অর্থক‌ষ্টের মা‌ঝেও সে স্বপ্ন‌দেখা ছা‌ড়ে না ।‌নি‌জের হাত খরচ ক‌মি‌য়ে বই কে‌নে ,লাইব্রেরী‌তে নিয়‌মিত যায় । ন্যাপথা‌লি‌নের গ‌ন্ধে ভরা বইগু‌লো তার বড় প্রিয় । রাত জে‌গে জে‌গে প‌ড়ে তার স্বপ্নের বই ।যুব‌কের বুক জু‌ড়ে তোলপাড় ক‌রে উত্তাল রক্ত‌স্র‌োত ।কা‌নের কা‌ছে কেউ ফিস‌ফিস ক‌রে ব‌লে"‌বে‌রি‌য়ে প‌রো ,‌বে‌রি‌য়ে প‌রো "।
(দুই)
ক‌লে‌জের সহপাঠীরা যখন নি‌কো‌টি‌নে আঙুল পোড়ায় ।গার্লফ্রেন্ডের উত্তপ্ত শরীর ,বুক,‌ঠো‌টের স্পর্শ পাবার জন্য উদগ্রীব হ‌য়ে ও‌ঠে ।শ‌ফিক তখন বন্ধু‌দের সিগা‌রে‌টের ধোয়ায় মে‌য়েলী ‌বিষয়ক আড্ডা এড়ি‌য়ে লাইব্রেরী‌তে বুদ হ‌য়ে থা‌কে ।স্বভাব সুলভ লাজুকতার কার‌নে কোন মে‌য়ের সা‌থেই তার সখ্যতা নেই । রীতা না‌মের মে‌য়েটা শ‌ফিক‌কে প্রায় দে‌খে লাইব্রেরী কিংবা শহীদ মিনা‌রের সি‌ড়ি‌তে ব‌সে নি‌বিষ্ট ম‌নে কিছু একটা পড়‌ছে । ছে‌লেটা সবার থে‌কে আলাদা । এত‌দিন হল তবু কা‌রো সা‌থেই তেমন একটা মে‌শে না ।রীতার প্রথম দি‌কে ম‌নে হ‌য়ে‌ছিল ছে‌লেটা ভীষণ অহংকারী ।ত‌বে ওর ম‌লিন পোশাক আর চেহারার সারল্য দেখে পরক্ষ‌ণেই রীতার ম‌নে হ‌য়ে‌ছিল ছে‌লেটা অহংকারী হ‌তেই পা‌রে না ।রীতা কৌতুহলী চো‌খে শ‌ফিক‌কে প্রায় দেখে।নি‌জে থে‌কেই এক‌দিন শ‌ফি‌কের সা‌থে কথা ব‌লার জন্য এগি‌য়ে যায় শহীদ মিনা‌রের সি‌ড়ি‌তে।"‌কি পড়‌ছো?" ।শ‌ফিক ‌সি‌ড়ি‌তে ব‌সে বই‌য়ের পাতায় আচ্ছন্ন ছিল । মাথা তু‌লে রীতার মু‌খের দি‌কে তাকা‌তে অপ্রস্তুত হ‌য়ে যায়। আড়ষ্ট গলায় কোন রক‌মে ব‌লে "মা‌র্কে‌জের লেখা একটা বই "। রীতা আন্ত‌রিকতার সু‌রে প্রশ্ন ক‌রে এটা কি কোন উপন্যাস ?শ‌ফিক জানায় এটা এক বিপন্ন জাহা‌জের না‌বি‌কের গল্প যে তার ক‌য়েকজন সহকর্মীর সা‌থে সমুদ্র যাত্রার সময় সামু‌দ্রিক ঝ‌ড়ে কব‌লিত হ‌য়।কথা বল‌তে গি‌য়ে শ‌ফিক ইতস্তত বোধ ক‌রে । ‌কিছুটা লজ্জাও হয় তার ।রীতা ‌কোনপ্রকার দ্বিধা না ক‌রে শ‌ফি‌কের পা‌শে ব‌সে প‌ড়ে । কি‌শোরীর মত সহজাত গলায় জান‌তে চায়"না‌বিকটার শেষ পর্যন্ত কি হ‌য়ে‌ছিল?" ।শ‌ফিক জানায় না‌বি‌কের সব সঙ্গী‌দেরই স‌লিল সমা‌ধি হ‌য়ে‌ছিল । শুধু না‌বিকই দশ দি‌ন সমু‌দ্রে ভে‌সে ঐকা‌ন্তিক প্র‌চেষ্টা ,‌ধৈর্য এবং প্রবল ইচ্ছার জো‌রে বে‌চে ‌ফি‌রেছিল ।কথাগু‌লো বল‌তে গি‌য়ে শ‌ফি‌কের গলা কে‌পে ও‌ঠে । রীতা অনি‌মেষ চো‌খে তা‌কি‌য়ে থা‌কে শ‌ফি‌কের দি‌কে । যেন বুঝ‌তে চায় ছে‌লেটার প্রগাঢ় আবেগের স্রোত‌কে ।রীতার সা‌থে মেলা‌মেশা কর‌তে গি‌য়ে বেশ কিছু‌দিন পর জড়তা ভা‌ঙে শ‌ফি‌কের । র‌ীতা জান‌তে পা‌রে শ‌ফিক ভীষণ বই পাগল ছে‌লে । রীতা আর শ‌ফিকের মা‌ঝে বই নি‌য়েই গল্প হয় বেশী । রীতাও টুকটাক বই প‌ড়ে । তার পছন্দ রোমা‌ন্টিক উপন্যাস । শ‌ফিকের ভ্রমণকা‌হিনী,অ্যাড‌ভেঞ্চার বেশী পছ‌ন্দের । শ‌ফিক তার ম‌নের অত্যুগ্র বাসনার কথা ,অজানার অচেনার উদ্দে‌শ্যে পা‌ড়ি দেবার প্রবল ইচ্ছার কথা রীতা‌কে জানায় । শ‌ফি‌কের য‌দি টাকা পয়সা হয় সেও দেশ বি‌দেশ সাগর মহাসাগর ঘুর‌বে । দুর্গম পাহাড়, শ্বাপদসংকুল অরণ্যে ভ্রমণ কর‌বে । ভ্রম‌ণের সেসব লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা লি‌পিবদ্ধ কর‌বে পাতায় । শ‌ফি‌কের বু‌কের গভী‌রের প্রবল আকাঙ্খা রীতা‌কে উচ্ছ্ব‌লিত ক‌রে । রীতা পরম নির্ভরতায় শ‌ফি‌কের কা‌ধে হাত রে‌খে ব‌লে "তু‌মি পার‌বে শ‌ফিক । তু‌মি পার‌বে "। রীতার চো‌খে পূর্ণ ভরসা খু‌জে পায় শ‌ফিক ।শ‌ফিক প্রায় দুঃখ ক‌রে ব‌লে তা‌দের লাই‌ব্রেরী‌তে ভ্রম‌ণের বই হা‌তে গোনা । যাও আছে সব তার পড়া হ‌য়ে গে‌ছে দু‌তিনবার । শ‌ফিক যে সকা‌লের নাস্তার টাকা বা‌চি‌য়ে বই কে‌নে এটা শু‌নে রীতা ভীষণ কষ্ট পায় । শ‌ফিক‌কে এক‌দিন অবাক ক‌রে দি‌য়ে তার সাম‌নে ভারী একটা কার্টুন রাখল রীতা । শ‌ফিক ভীষণ অবাক হ‌য়ে জান‌তে চাইল ~"এটা কি ?" । রীতা চো‌খেমু‌খে ঈষৎ রহস্য ফু‌টি‌য়ে বলল~"খু‌লে দেখই না ।" শ‌ফিক কার্টু‌নের মুখ খু‌লে বিস্ম‌য়ে হতবাক ।বই‌য়ের বা‌ন্ডিল । সব তার এত দি‌নের দীর্ঘ আকা‌ঙ্খিত বই । কতবার যে এই বইগু‌লোর জন্য হা হুতাশ কর‌তে হ‌য়ে‌ছে তা‌কে । বইগু‌লো না পড়‌লে জীবনটা যে অধরাই থে‌কে যা‌বে কতবার রীতার সাম‌নে বিষন্ন মু‌খে ব‌লে‌ছে সে কথা । একসা‌থে এতগু‌লো প্রিয় বই পে‌য়ে শ‌ফি‌কের শিশু সুলভ আনন্দ যেন আর ধ‌রে না । শ‌ফিকের ছে‌লেমানুষী আনন্দ দে‌খে রীতার চো‌খে অকার‌নে অশ্রু এসে জমা হয় । যেন একটু টোকা দি‌লেই গ‌ড়ি‌য়ে পড়‌বে । রীতা বাষ্পরুদ্ধ ক‌ন্ঠ চে‌পে কোন রক‌মে ব‌লে," এবার থে‌কে নাস্তার টাকা বা‌চি‌য়ে বই কিন‌তে যেও না ।যা বই লা‌গে আমা‌কে ব‌লো,আ‌মি এনে দেব । " ক‌লেজ ছু‌টির পর এক‌দিন রীতা আর শ‌ফিক গেল ব্রক্ষ্ণপুত্র ন‌দের ধা‌রে ।তখন পড়ন্ত বি‌কেল । প‌শ্চি‌মের আকাশটা গাঢ় র‌ক্তিম আভায় প্লা‌বিত ।‌ছেড়া ছেড়া শুভ্র মে‌ঘের দঙ্গল ভাস‌তে ভাস‌তে দূ‌রে কোথাও হা‌রি‌য়ে যা‌চ্ছে । নদীর ধার ঘে‌ষে সাদা কাশফুলগু‌লো মৃদু মন্দ বাতা‌সে যেন একে অপ‌রের কা‌নে ফিস‌ফিস ক‌রে কিছু একটা বল‌ছে ।নদীর ওপা‌রে রাখাল শেষ বি‌কে‌লের আলো গা‌য়ে মে‌খে গরু চ‌ড়ি‌য়ে বা‌ড়ি ফির‌ছে ।দুই তিনটা জে‌লে‌দের নৌকা নদীর শান্ত শীতল জ‌লে মৃদু আলোড়ন তু‌লে ভে‌সে যা‌চ্ছে । রীতা নদীর ঢালু পাড় বে‌য়ে সন্তর্প‌ণে নে‌মে খু‌টির সা‌থে বাধা একটা নৌকার পাটাত‌নে বসল ।শ‌ফিক বসল ওর মু‌খোমু‌খি । রীতা নদীর জ‌লে হাত ডু‌বি‌য়ে গুণগুন ক‌রে গান ধর‌লো ,
"আজ যেমন ক’রে গাইছে আকাশ
তেমনি ক’রে গাও গো।
আজ যেমন ক’রে চাইছে আকাশ
তেমনি ক’রে চাও গো।।
আজ হাওয়া যেমন পাতায় পাতায়
মর্মরিয়া বনকে কাঁদায়,
তেমনি আমার বুকের মাঝে
কাঁদিয়া কাঁদাও গো।''
গাইতে গি‌য়ে ওর গলাটা ধ‌রে এলো । অবনত মুখে একদৃ‌ষ্টে চে‌য়ে রই‌লো নিশ‌ব্দে বহমান নদীর স্বচ্ছ জ‌লে । হুহু ক‌রা বাতা‌সে নদীর ছোট ছোট ঢেউ একে অন্যের গা‌য়ে ভে‌ঙে পড়‌ছে ।কাশফু‌লের গা‌য়ে বাতাস লে‌গে তা‌দের নি‌বিড় কানাকা‌নি যেন আরো বে‌ড়ে‌ছে ।আসন্ন সন্ধ্যার আগম‌নে বিমর্ষ আকা‌শের মত বিমর্ষ রীতার মুখ । যেন প্রকৃ‌তি আর নারীর অভিব্য‌ক্তি একসূ‌ত্রে গাথা । প্রকৃ‌তির মত নারীও রহস্যময়ী ।নি‌জে‌কে সদা সর্বদা রহস্য‌ঘেরা ক‌রে রাখ‌তেই এরা স্বচ্ছন্দ বোধ ক‌রে ।সেই গূঢ় রহ‌স্যের অন্তর্জাল ‌ভেদ ক‌রে এমন সাধ্য আছে কার ? শ‌ফিক কোমল গলায় বলল,"‌কি হয়ে‌ছে তোমার ? "মন খারাপ" ?। রীতা অবনত মু‌খেই উত্তর দিল ~"না " । "তাহ‌লে অমন চুপচাপ যে" । রীতা এর কোন উত্তর দিল না । সে চোখ তু‌লে চাইল সিঁদুর র‌ঙে রাঙা আকাশটার দি‌কে ।আসন্ন সন্ধ্যার কিছুটা ছাই রঙ এসে জু‌টে‌ছে সেখা‌নে ।রীতা চোখ না‌মি‌য়ে ব্যাকুল চো‌খে শ‌ফি‌কের দি‌কে তাকাল । চো‌খের ভাষায় যেন বু‌ঝি‌য়ে দি‌তে চাই‌লো অনেক কিছু । বু‌কের ভেতর ঝ‌ড় তোলা দীর্ঘ দি‌নের অব্যক্ত কথামালা যেন চো‌খের ভাষায় নি‌জে‌দের ব্যক্ত কর‌তে চাইল ।‌কিন্তু সেই দু‌বোর্ধ্য ভাষা ক'জন পড়‌তে পা‌রে । ক'জনই বা বুঝ‌তে পা‌রে তার মর্মব্যাথা ।শ‌ফিকও পার‌লো না। তারপর একসময় রীতার দীঘশ্বা‌সে নীরবতা ভাঙ‌লো ~"চ‌লো ওঠা যাক । সন্ধ্যা হ‌চ্ছে "।
(তিন)
এক‌দিন হুট ক‌রে বি‌য়ে হ‌য়ে গেল রীতার । সেইসা‌থে ক‌লেজ আসাও বন্ধ হ‌য়ে গেল তার । অ‌নেক চেষ্টা চ‌রিত্র ক‌রেও রীতার কোন ঠিকানা জোগাড় কর‌তে পারল না সে । রীতা‌দের বাসাটায় এখন অন্য কেউ ভাড়া থা‌কে । বাসার মা‌লি‌কের সা‌থে কথা ব‌লে শুধু জান‌তে পার‌লো রীতার খুলনায় বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে । ত‌বে নি‌র্দিষ্ট ক‌রে কোন ঠিকানা বল‌তে পারল না বাসার মা‌লিক । শ‌ফিকের ‌আজকাল আর লাইব্রেরী কিংবা শহীদ মিনা‌রের সি‌ড়ি‌তে ব‌সতে ভাল লা‌গে না । বই পড়ার প্র‌তি আর আগের মত উৎসাহ পায় না । বেলা‌শে‌ষে ব্রক্ষ্ণপুত্র ন‌দের পা‌ড়ে খু‌টি বাধা‌নো নৌকার পাটাত‌নে নিশ্চুপ ব‌সে থা‌কে । রীতার মত ক‌রে হাত ডু‌বি‌য়ে দেয় নদীর স্বচ্ছ গভীর জ‌লে । যেন কিছু একটা ঠাহর কর‌তে চায় ।খুব ফাকা ফাকা লা‌গে চারপাশ । বুকের ভেত‌রেও অদ্ভূত শূণ্যতা ভর ক‌রে ।মনে হয় বু‌কের পাজ‌রের দু‌তিন‌টে হাড় ক‌মে গে‌ছে । ‌টিউশ‌নি শে‌ষে রাত বিরা‌তে যখন বা‌ড়ি ফে‌রে তখন ল্যাম্প‌পো‌স্টের হলুদ আলোয় নি‌জে‌কে বড্ড একা লা‌গে তার ।স‌্ব‌প্নে আজকাল আর লি‌ভিং‌স্টোন‌কে দে‌খে না সে । দে‌খে না আফ্রীকার গহীণ অরণ্য , তুষার ঢাকা খাড়া পাহাড় ‌কিংবা বিস্তীর্ণ ‌কোন মরুভূ‌মি ।বার বার স্বপ্নপ‌টে ভে‌সে ও‌ঠে রীতার ব্যকুল চাউ‌নি । কি ব্যাকুলতা সেই আয়ত‌ চোখ দু‌টো‌তে ! কি দুর্ব‌োধ্য তার ভাষা ! আফ্রীকার গহীন অর‌ণ্যের চে‌য়েও যেন তা গহন ।কালাহা‌রি মরুভূ‌মিরে থে‌কেও যেন তা তৃষ্ণার্ত । অনেক‌ অনেক‌দিন কে‌টে গে‌ছে । শ‌ফিকের মা গত হ‌য়ে‌ছেন । শ‌ফিক গ্রা‌মে ফি‌রে গি‌য়ে একটা প্রাইমারী স্ক‌ু‌লে বাচ্চা‌দের পড়ায় । তার আর লি‌ভিং‌স্টোন হ‌য়ে ওঠা হয় নি । ত‌বে সু‌যোগ পে‌লেই দে‌শের আনা‌চে কানা‌চে নানান জায়গায় ভ্রমণ ক‌রে । এইতো সেবার শীতকা‌লে সুন্দরবন ঘু‌রে এলো সে । সুন্দরব‌নের ওপর একটা বই লিখ‌ছে সে । খুব ইচ্ছা আস‌ছে বই‌মেলায় বইটা বেরু‌বে ।বইটা উৎসর্গ কর‌বে রীতা‌কে । কেমন আছে রীতা ?খুব জান‌তে ইচ্ছা ক‌রে তার কথা ।তার ব্যাকুল করা সেই দুর্ব‌োধ্য চাহ‌নি যে আজও শ‌ফি‌কের বু‌কে তী‌রের ফলার মত বিঁ‌ধে আছে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া চমৎকার একটি গল্প। ধন্যবাদ
আহা রুবন এত ভাল একটি গল্প পড়া হয়নি!
জয় শর্মা (আকিঞ্চন) আগেই বলেছিলাম সেরা ৩ এ থাকবেন, যাই হোক অভিনন্দন।
কাজী জাহাঙ্গীর অভিনন্দন ও শুভকামনা।
Fahmida Bari Bipu অভিনন্দন ও শুভকামনা।
শামীম খান অভিনন্দন রইল ।
এম এ রউফ অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া। দোয়ার দরখাস্ত
শাহ আজিজ অভিনন্দন ! প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তিতে ।
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব সুন্দর গল্প। চমৎকার অনুভূতি। ভালো লাগলো প্রিয় লেখক। শুভ কামনা রইলো।।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল।

১৪ অক্টোবর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৭ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.২২

বিচারক স্কোরঃ ২.৮২ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৪ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী