যে থাকে আঁখিপল্লবে.....

কি যেন একটা (জানুয়ারী ২০১৭)

আতিকুর রহমান আতিক
  • 0
  • 0
পনেরো মিনিট হলো ছেড়েছে ট্রেন। ঝকঝক শব্দটা এখন সয়ে গেছে কানে!
এয়ারফোনটা কানে গুজে দিয়ে প্লে-লিস্টটা অন করে বাইরের দিকে নীরব
দৃষ্টিতে তাকালো আবির।

দোকানপাট, ঘরবাড়ি, ব্যস্ত মানুষগুলো সব পেছনে সরে যাচ্ছে। ট্রাফিক
পুলিশ ক্রসিং আটকে দিয়ে সগৌরবে সামনে দাঁড়িয়ে আছে , হেলমেট পরা এক মোটা
ভুঁড়িওয়ালার মটরসাইকেলের পেছনের বসে আছে টুকটুকে একটা বউ। কাঁধে
হাত দিয়ে চেপে ধরেছে , মুখে একটা হাসি লেগে আছে মেয়েটার।
ওরা কি খুব সুখী?
একটু হাসলো আবির! মানুষের মনের কথা ওই একজনই জানেন, উনিই অন্তর্যামী!
আর আমরা সবাই অভিনয় করছি সুখী থাকার ।

- কি গান শুনছেন?

হঠাৎ করে জোরে একটা প্রশ্ন ভেসে আসলো কানে । অনেকক্ষণ ধরে বাজতে থাকা
একটা সুর বুঝি কেটে গেলো ! কে ডাকছে! ফিরে তাকাতেই দেখলো, চশমা পরা
ছোটখাটো একটা মেয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে । একটু ঘাবড়ে
গেলো । দৃষ্টি তখনও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি বুঝতে পেরে এয়ারফোনটা এক কান থেকে
সরিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

- জ্বী, আমাকে কিছু বলছেন ?

- আপনাকেই তো বলছি । দু'বার ডাকলাম শুনতেই পাচ্ছেন না ! ধ্যানে বসেছেন যেন !

- ওহ্ দুঃখিত আমি সত্যিই । বাইরে কিছু একটা দেখছিলাম।

- কি গান শুনছেন এটা কি আরও দুবার জিজ্ঞেস করতে হবে তাহলে?

নিজেকে দুর্বল মনে হলো অনেক। খেয়াল করলো কি গান শুনছে ও এখন!
- কফি হাউজ শুনছি- নচিকেতার।
- অসম্ভব সুন্দর একটা গান। ধ্যানে চলে যাওয়ারই কথা , আপনাকে দেখেও
অবশ্য ওরকম মনে হয়!
- কি রকম? ফুঁসে উঠলো আবির।
- এইতো কবি কবি, সাধক টাইপ।
- না না আমি এসব কিছুই না।
- আপনি কবিতা পড়েননা ? কোন উপন্যাসও না!
মনে হলো আকাশ থেকে পড়লো মেয়েটা !
- আমার অভ্যেস নেই তবে কয়েকটা সায়েন্স ফিকশান পড়েছি।
- আমি বিশ্বাসই করতে পারি না একজন বাঙালি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, সৈয়দ শামসুল হকের লেখা না পড়ে কিভাবে বাঁচতে পারে !
- আমাকে কি অবাঙালি মনে হচ্ছে ?
- দেখুন আমি ওভাবে বলতে চাইনি, তবে আপনার অবশ্যই পড়া উচিত ।
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো আবির। অবাক হয়ে উপলব্ধি করলো এ মেয়ের সঙ্গে কথা
বলতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু ট্রেনে ওঠার সময় তো ওকে সামনে দেখেনি !
হঠাৎ আসলো কোত্থেকে? নীরবতা ভাঙলো আবির।
- আপনাকে তো ওঠার সময় দেখলাম না আমার সামনে ! উঠলেন কখন?
- দুজন মহিলা একসঙ্গে এসেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তাদের টিকিট পাশাপাশি পায়নি। তাই আমার সিটটা বদল করে তাদের বসতে দিতে হলো। এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো মেয়েটা!
- ওহ্ আচ্ছা !
কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও শব্দগুলো খুঁজে পাচ্ছিলোনা ও। অপরিচিত মেয়ের
সঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে কি কথা বলতে হয়, কিভাবে বলতে হয় জানেনা আবির,
কখনো ভাবেনি ও! নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য আনস্মার্ট মনে হলো ।
এবার মেয়েটি কথা বললোঃ
- আপনি কি বিরক্ত বোধ করছেন আমার কথায়?
বোবা হয়ে গেলো ও! কি বলছে এই মেয়ে !
- না না !
সঙ্গ পেয়ে ভালোই লাগছে।
- আপনার কাছে পানি আছে ? আমি আনতে ভুলে গেছি।
- অপরিচিতদের কিছু খেতে নেই জানেন না ! আদেশের সুরেই বললো আবির।
- আপনি তো অনেক কিউট!
- জ্বী?
- আমার তৃষ্ণা লেগেছে । আপনি তাড়াতাড়ি পরিচয় দিয়ে আমাকে পানি দিন!
- আবির আমি । ঢাবিতে ইতিহাসে সেকেন্ড ইয়ার।
ব্যাগটা খুলে মাকে মনে পড়লো। মায়েরা এত কিছু মনে রাখেন কিভাবে? কিছুই কি ভোলেন না মায়েরা! পানির বোতলটা কখনো কোনদিন দিতে
ভুল করেনি, ছেলের কখন লাগে! আজকে আম্মার প্রতি একটু বেশীই কৃতজ্ঞ হলো মেয়েটাকে পানি পান করতে দিতে পারলো বলে!

হঠাৎ কারও ঠেলায় ঘুম ভেঙে উঠে দেখলো রাত হয়ে গেছে প্রায়। ট্রেনটা
ঢাকায় পৌছেঁ গেছে। সামনে তাকিয়ে হুঁশ ফিরতেই খেয়াল হলো, মেয়েটা নেই !
কোলের উপর একটা সাদা কাগজ চারভাজ করা। সহসা খুলতেই সুন্দর হাতের লেখায়
কিছু অক্ষর ছড়ানোছিটানো দেখতে পেলো আবির।

-আমি নিশা । আপনার সামনের আসনে বসেছিলাম। আপনি নাম জিজ্ঞেস
করেননি তাই বলা হয়নি তখন!
আমিও ঢাবিতে প্রথম বর্ষে পড়ি । এটাও বলা হয়নি। বোধহয় আপনি কথা কম বলেন তাই ভদ্রতা করেও জিজ্ঞেস করেননি!
আপনি হয়তোবা টায়ার্ড ছিলেন তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমার কমলাপুরের আগের
স্টেশনেই নামতে হয়েছে, একটা বান্ধবীর বাসায় । আপনাকে ডাকতে সাহস পাইনি।
কিন্তু বলে যাওয়াটা উচিত ছিলো তাই এই ছোট্ট চিরকুট!
ভালো থাকবেন আপনি ।
আর শুনুন, কবিতার বই অবশ্যই পড়া শুরু করবেন।

চিরকুট শেষ করে নিজেকে বড্ড বেশী অসহায় মনে হচ্ছিলো ! বেশকিছুক্ষণ কথা
বলেছিলো মেয়েটার সঙ্গে। এরপর আর শব্দ খুঁজে না পেয়ে চুপচাপ থেকেছে। কখন
যে ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পেলোনা! মোবাইল নাম্বারটাতো নেওয়াই হয়নি! এমনকি
নাম, কোন বিভাগে পড়ে কিছুই জানা হলো না.....
আবির ভাবে, এভাবেই জীবনে কিছু মানুষ আসে ছোটগল্পের মতো! দূরে থেকেও থাকে আঁখিপল্লবে!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

০৩ অক্টোবর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪