আমি তো আর পুরোপুরি অমানুষ না। তাই না?

ঘৃণা (সেপ্টেম্বর ২০১৬)

Sayeed Mustakim Billah
স্যান্ডেল ছিড়ে গেছে। রাস্তার শতশত অপরিচিত মানুষের মাঝে স্যান্ডেল হাতে নিয়ে হাঁটতে লজ্জা পাচ্ছি।
ছেড়া স্যান্ডেল পড়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছি আর সামনে দিয়ে হেটে আসা মানুষগুলোর চোখে চোখ রেখে দেখার চেষ্টা করছি, তারা আমার ছেড়া স্যান্ডেল লক্ষ্য করছে কিনা।
চোখে চোখ পড়লে চোখ নামিয়ে নিচ্ছি। লজ্জা পাচ্ছি।

কিন্তু নাহ! তারা কেউ আমাকে লক্ষ্য করছে না। লক্ষ্য করলেও ভ্রু কুচকে তাকাচ্ছে না। তাদের হাতে সেই সময়টুকুও নাই।

এবার ছেড়া স্যান্ডেলটা হাতে নিলাম। আর লজ্জা লাগছে না। অপরিচিতরা কেউ আমাকে লক্ষ্য করছে না।
দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে আগুন দিয়ে ধরালাম।

আবারো রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম। রাস্তার অপরিচিতরা একটু চেয়ে চেয়ে দেখলো। কেউ কেউ একটু ভ্রু কুচকালো। তাতে কি এসে যায়?
তারা তো আমার অপরিচিত। তাদেরকে গ্রাহ্য করলাম না, কেননা আমি এতোক্ষণে অভ্যস্ত।

সাহস বেড়ে গেল।

সামনে দিয়ে হেটে যাওয়া মেয়েটাকে টিচ করলাম। মেয়েটা মাথা নিচু করে চলে গেল। কিন্তু ব্যস্ত মানুষের ভিড় থেকে কেউ প্রতিবাদ করলো না।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

আরো দুই তিনটা মেয়েকে টিচ করলাম। কেউ প্রতিবাদ করলো না। পাশ দিয়ে যাওয়া বয়ষ্ক লোকটা কড়া চোখে আমার দিকে তাকালো। ভয় পেলাম, হয়ত ধমক দিবে আমাকে। শাসন করবে আমাকে। কিন্তু তিনি মনে হয় কোনো ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাননি। তাইতো তিনি কড়া চোখে তাকিয়েই চলে গেলেন। কেননা তিনি হয়ত ভেবেছেন, তার তো কোনো ক্ষতি হয়নি।

আমার সাহস আরো বেড়ে গেল।
ইতিমধ্যেই আমি জেনে গেছি, বুঝে গেছি, আমি যত যাই করি না কেন, কেউ আমাকে কিছু বলবে না।

দোকান থেকে চাকু কিনলাম। সন্ধ্যা নেমে গেছে। চারপাশে অন্ধকার দেখে একটা জায়গায় গিয়ে চুপ করে বসে রইলাম।
ঐ যে একটা মানুষ এদিকে আসছে। লোকটা আমার সামনে আসতেই চাকু ধরে সবকিছু ছিনিয়ে নিলাম। বাড়ি যাবার ভাড়াটা যদিও দিয়ে দিয়েছি, কেননা এখনো পুরোপুরি অমানুষ হতে পারিনি।

ছিনতাই করা টাকা দিয়ে বড় হোটেলে ডিনার করে আনন্দ ফুর্তি করে রাত তিনটার দিকে যখন রাস্তা দিয়ে ফিরে আসছিলাম তখন একটা বখাটে ছেলে আমার সবকিছুই কেড়ে নিতে চাইলো।

আরে! আমি মনে হয় তাকে বখাটে বললাম!
সে কি আসলেই বখাটে নাকি আমার প্রতিচ্ছবি?
তার দিকে তাকিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম।

সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করলাম। টাকা পয়সা দিতে অস্বীকৃতি জানালাম।
আমার হাতে চাকু মেরে টাকা পয়সা সব কেড়ে নিয়ে চলে গেল।
আমি রাস্তায় শুয়ে শুয়ে কোঁকাতে লাগলাম।

কোথা থেকে এক লোককে দৌড়ে আমার দিকে আসতে দেখলাম।
কাছে আসার পর দেখলাম,আরে! এটাই তো সেই বৃদ্ধ।
সে আমাকে দেখেই দৌড়ে আবার চলে গেল।
ভাবলাম, সবই আমার কৃতকর্মের ফল। লোকটা আমাকে চিনে ফেলেছে। তাই সাহায্য করবে না বলে চলে গেল।
গভীর রাতে এই রক্তক্ষরণেই আমাকে একা একাই মরতে হবে। কাক পক্ষীও টের পাবে না।

আমার সব ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করার জন্যই মনে হয় বৃদ্ধটি রিক্সা নিয়ে হাজির হলো।
আমাকে রিক্সায় উঠিতে টানতে টানতে রিক্সাটা মেডিকেলের দিকে নিয়ে চললো।

তাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, 'আপনি আমার মত মানুষের উপকার করছেন কেন?'

বৃদ্ধ উত্তর দিলো, 'তোমার মতো অমানুষ হতে পারিনি তাই।'

নিজেকে খুব ছোট মনে হলো তখন। খুব ছোট। ঘৃণা হলো নিজের প্রতি। তখন মনে মনে একটা ছোটখাটো শপথ করে ফেললাম।

আমার সামনে হওয়া কোনো নৈতিক অবক্ষয়কে প্রশ্রয় দিবো না। নিজেও করবো না।

জানি, সব অবক্ষয় আমার সামনে ঘটবে না। কিন্তু আমার সামনে ঘটা কোনো অবক্ষয়কে প্রশ্রয় দিবো না।

আমি তো আর পুরোপুরি অমানুষ না। তাই না?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক সুন্দর গল্প...একটা টার্ন আছে...শেষের চার লাইন না থাকলে গল্পটার আকর্ষণ আরো বাড়তো...শুভকামনা...
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
পন্ডিত মাহী গল্পটা আরো বড় হতে পারতো, আরো অনেক কথা থাকতে পারতো... কেমন একটা আক্ষেপ রেখে গেল মনে... ভালোলাগা
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আহা রুবন একটা ছোট স্ফুলিঙ্গ। লিখতে থাকুন এক সময় নিশ্চয় আগুন জ্বলবে। শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
অসংখ্য ধন্যবাদ :)
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
nice
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
ফেরদৌস আলম বাহ্‌ ! ভাবনাটা তো দারুণ !
ধন্যবাদ :)
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

২৩ আগষ্ট - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪