বর্ষা চারণ..............

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

ধ্রুব সরকার
  • ১৩
  • 0
  • ৬৫
দিনগুলো মেটেও স্বাভাবিক ছিলনা। অনুভূতিগুলো স্বব্ধ ছিল আমি কিছুই ভাবতে পারতাম না।
অঁমঁংঃ ু ২০০৪. বাংলায় তখন বর্ষাকাল চলছিল। যতদূর মনে পড়ে বর্ষাটা তিন মসের মত স্থায়ী ছিল।কিন্তু যা নিয়ে গেছে আমার কাছ থেকে তার স্থায়ীত্ব আমরণ থাকবে আমার কাছে।এস.এস. সি'র রেজাল্ট বের হয়েছে। কলেজে ভর্তি নিয়ে বেশ উচ্ছস্বিত আমরা। আমি আর রুহুল ঠিক করলাম আমরা সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ভর্তি হব। সময়টা বেশ উপলব্ধি করছিলাম। কলেজে ভর্তি হব ,নতুন জায়গায় থাকব খুব উল্লাস ছিল মনে।
চারপাশে থই থই পানি নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়া যায়না। আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় আমরা গোসল করতাম। শেষতক উঠোন পর্যন্ত পানি উঠেছিল। মাটির চুলায় রান্না করা যেতনা পানি আসতো। অনেক দুর্দশার মধ্যে ছিল গরীব লোকগুলো। আমাদের উঠোনে এসে থাকত অনেকে। খাবার দাবারের অনেক কষ্ট হত। তারা কাজ করতে পারতনা তাই খাবার কিনতেও পারতনা। তারা দিন মুজুর ছিল ।এই দুঃখবোধটা তখন আমার ছিলনা। আমি কেবল নতুন কিছু পাবার অধির আগ্রহে দিনগুনছিলাম। আমার দুঃখবোধটা না জাগলে কি হবে এক মন্ত্রি এসেছিলেন তারটা দেখাতে। বড় একটা নৌকা ভর্তি এাণ সামগ্রী নিয়ে। বিশাল বিশাল লম্বা লম্বা লাইনের মধ্যে কেবল দু'জন মাএ এাণ পেয়েছিল। তাই দেখাচ্ছিল পরদিন বিটিবির সংবাদে।
সেপ্টেম্বর ৪. আমাদের কলেজের নবীন বরণ। ঠিক হল ঐদিন আমরা মেস ঠিক করে আসব। নবীন বরণ অনুষ্ঠানের জন্য আমরা মার্কেট করলাম। দেখতে দেখতে ৪ তারিখ চলে এল। আমরা সকাল সকাল রেডি হলাম, সবাইকে বলে নৌকায় উঠলাম। বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত য়েতে প্রায় ৪ কিলো রাস্তা নৌকায় য়েতে হয়। আমরা নৌকা থেকে নেমে বাসে চড়ে কলেজে গেলাম । স্পষ্টই মনে আছে কলেজ মাঠে প্রথম পা,কত অপরিচিত মুখ, বড় একটা হল রুম আমরা বসে আছি। হাতে একটা করে রজনিগন্ধার স্টিক। শিক্ষকদের নীতি বাক্য, চলার পথ আর শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।আমারাও পারফর্ম করলাম রুহুল গান আর আমি আবৃত্তি । রুহুলের গানের গলাটা চমৎকার। অনেক মজা করলাম শেষে মেস খোঁজার পালা। শহরের কোথায় কি আছে কিছুই চিনতাম না। বিকাল অবধি লেগেছিল মেস ঠিকঠাক করতে। ভাল একটা রুম পেয়েছিলাম। সবমিলিয়ে সবকিছু যেন পরিপুর্ণ ভাবে এগুচ্ছে। আমরা তাড়াতাড়ি বাস স্টান্ডে চলে এলাম সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই একটু চিন্তা হচ্ছিল। আমাদের কারো ফোন ছিল না তখন। বর্ষার দিন বাড়ীতে চিন্তা করছে মনে হচ্ছে। রাত হয়ে গেলে নৌকা পাওয়া যাবে না বাড়ীতে যাওয়ার। বাসে উঠেই শুনলাম বাস ঘুরে যাবে মুজিব সড়ক দিয়ে। সামনের রাস্তায় ব্রিজ নাকি ডেবে গেছে। চিন্তাতাটা এবার ভয়ে রুপ নিল। মুজিব সড়ক দিয়ে ঘুরে গেলে রাত হবে নিশ্চিত। নৌকা পাব কিনা সন্দেহ তাছাড়া আকাশের অবস্থাও ভাল না বেশ মেঘ জমেছে। আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম কিন্তু রুহুলকে একদই চিন্তিত মনে হচ্ছিলনা। অনেক উৎফল্ল, সারাদিনের স্মৃতি রোমন্থন করছে।
রাত পনে নয়টা, আমরা বাস থেকে নামলাম। চার পাশে অন্ধকার লোকজন তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। বিদু্যৎ চমকানোর আলোয় আমরা নৌকার ঘাটে আসলাম ।একটাও নৌকা নেই! হতাস হয়ে বসে আছি আর হৃদপিণ্ডের থর থর কম্পন অনুভব করছি।রুহুলএবার কিছুটা নিশ্চুপ, নৌকা খোঁজা খুঁিজ করছে। আধা ঘণ্টা বসে থাকার পর রুহুল একটা লোককে নিয়ে এল যে একটা মাঝিকে চেনে। সামইে বাড়ি। তার কাছে নিয়ে যাবে আমাদের। মাঝির বাড়িতে গেলাম।মাঝি তখন স্বপরিবারে খাচ্ছিল। খাওয়া শেষ অবধি আমরা বাহিরে অপেক্ষা করলাম। খাওয়া শেষ করে মাঝি বাহিরে আসল। কিন্তু রাত করে এত দুর যেতে সে রাজি হচ্ছিলনা।আকাশের অবস্থা ভাল না, যখন তখন ঝড় উঠতে পারে। আমি কেঁদে ফেললাম। মাঝি রাতটা তার বাড়িতে থাকতে বলল সকালে পৌছে দেবে। বাড়িতে সবাই কন্নাকাটি করবে আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম। রুহুল থাকতে চাচ্ছিল আমি কাঁদতে লাগলাম। আমার কান্না দেখে মাঝির বউয়ের খুব মায়া হচ্ছিল বুঝলাম। সে মাঝিকে খুব করে অনুরোধ করছিল আমাদের পৌছে দেবার জন্য। শেষে মাঝি রাজি হল বউয়ের কথায়। আমি অনেক খুশি হয়ে ছিলাম। অমরা সবাই নৌকায় উঠলাম মাঝি নৌকা ছেড়ে দেবে ঠিক তখনই চিৎকার শুরু করল মাঝির ছোট মেয়ে -'আমি বাবার সাথে যাব। ' সব উপেক্ষা করে আমরা চলা শুরু করলাম। মাঝি লগি দিয়ে নৌকা ঠেলছিল আর আমরা বৈঠা দিয়ে। একটা বড় বিল পাড় হতে হবে আমাদের। ভয়টা সেখানেই কারণ বিলের মধ্যে ঢেউগুলো বড় হয়। ঢেউ বড় হলে নৌকাতে পানি উঠে এমনকি নৌকা উল্টিয়ে পর্যন্ত যায়।আমরা বেশ তাড়াতাড়িই এগুচ্ছিলাম। বিলের কাছাকাছি যেতেই ঢেউগুলো বড় হয়ে আসছিল। আমরা খুব অস্থির হয়ে নৌকা চালাচ্ছিলাম। বিলের মাঝা মাঝি গিয়ে লক্ষ্য করলাম নৌকা আর এগুচ্ছেনা। বড় বড় ঢেউ আর বাতাস আমাদের পিছনে ঠেলছে। রুহুল খুব নিশ্চুপ হয়ে ঢেউয়ে নৌকায় ওঠা পানি সেঁচছে। আমি আর মাঝি প্রান প্রনে বৈঠা ঠেলছি। অনেক্ষণ একই জায়গায় আছি কিছুতেই এগুতে পারছিনা। বাতাস বাড়ার সাথে ঢেউ ক্রমশ বড় হচ্ছে। এখন সবাই ভয় পাচ্ছি। ঢেউয়ের সাথে নৌকাও দুলছে। মনে হচ্ছে নৌকাটা এখনই উল্টে যাবে। ঠিক তাই হল। প্রাণ প্রনে হাত পা চালাচ্ছিলাম ঢেউয়ের সাথে বাঁচার জন্য। কিছুক্ষণ পর এক ডুবন্ত ব্রিজের উপর উঠলাম। বোধ হয় বাঁচলাম। কিন্তু রুহুল কোথায় আর মাঝি! কিছক্ষণ পর মাঝির চিৎকার শুনলাম । মাঝি এল রুহুল এলনা। আমরা দু'জন চুপচাপ,নিথর।কিছু ভাবতে বা বলতে পারছিনা শুধু এদিক ওদিক দৃষ্টির ছুটা ছুটি। বিদু্যৎ না চমকালে কিছুই দেখা যায়না হাত দিয়ে স্পর্শ করে নিজের অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে হয়। বাতাশে ঢেউয়ের শব্দে রুহুলকে মনে হয়। রাত ভোর হচ্ছে সব কিছু দেখা যাচ্ছে কেবল রুহুলকে ছাড়া। উপলব্ধি করলাম বর্ষাকে, রাতভর তার জলে দাড়িয়ে - কতটা নিষ্ঠুর সে।এই একটা রাত জীবন্ত ছবির মত উপস্থিত হয় বাকি সবগুলো রাতে ঘুমোবার আগে। বর্ষার ঐ রাত আমার প্রান শক্তির অর্ধেকটা নিয়ে গেছে। বাঁকিটা নিয়ে লড়ছি ভাল থাকার যুদ্ধে - ভাল আছি কি?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম আরা চৌধুরী একটু অগোছালো মনে হয়। তাছাড়া প্যারা দিলে ভাল হতো। ধন্যবাদ
Rajib Ferdous সিরাজগঞ্জের কথা বলায় একটু নড়েচড়ে বসলাম। আপনার বাড়ি কি সিরাজগঞ্জ? আমার কিন্তু ওখানেই। কত যে গেছি সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজের ক্যাম্পাসে। বাবার ইচ্ছা ছিল আমি এসএসসির পর ওখানেই পড়ি। কিন্তু আমি গো ধরলাম। ঢাকা আসবো। তাই আর ওখানে পড়ে হলনা। যাইহোক, গল্প ভাল লাগলো। টাইপ জনিত সমস্যা যদিও ছিল। কিন্তু কি আর করা এখানে যেহেতু প্রুফের কোন ব্যবস্থা নেই তাই ওগুলো হজম করতে হবেই। আর একটা কথা গল্পে টেন্সের (Tense) ব্যবহার কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার গল্পে দু একজায়গায় তার সমস্যা দেখা গেছে। ওটার প্রতি নজর রাখবেন আশা করি।
সেলিনা ইসলাম রুহুলের জন্য কষ্ট লেগেছে । কিছু কিছু জায়গায় লেখা থমকে গেছে, গল্পটা বেশ তাড়াতাড়িই শেষ করেছেন আবেগটা আরও একটু ফুটিয়ে তুলতে পারতেন আর বেশ কিছু প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে গল্পটা । আপনি বেশ ভাল লিখতে পারেন নিঃসন্দেহে । আশ্চর্য লাগছে লেখকের অনুপস্থিতি । ভাল আছেন তো ? ভাল থাকুন , ভালো লিখুন সেই কামনায় ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা ।
Akther Hossain (আকাশ) সুন্ধর একটি গল্প ! ভালো লাগলো !
রনীল N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# ভালো আছি কি নেই- সেটা এখন আর বড় কথা নয়... বেঁচে থাকাটাই যেখানে একটা চ্যালেঞ্জ, সেখানে ভালো থাকা- খারাপ থাকার কথা ভাবার অবকাশ আছে কি! গল্পটা মনে হয় বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে লিখেছেন... রুহুলের জন্য হাহাকারটা হৃদয় স্পর্শ করলো... ভালো লিখেছেন ভাই। দোয়া করি আল্লাহ যেন আপনাকে ভালো রাখেন।
M.A.HALIM ভালো লাগলো ভালো থাকুন।
ইয়াসির আরাফাত ভাল না থাকলেও ভাল আছি বলতে হবে । নৌকা নদী স্বপ্নের মত হতে কতটা পথ বাকি ? সুন্দর লিখেছেন ।
প্রজাপতি মন খুবই করুন কাহিনী, রুহুলের জন্য খুব কষ্ট লাগছে. আচ্ছা এটা কি সত্যি কাহিনী? মাঝির মেয়েটার কি হলো?
sakil বেশ ভালো গল্প তবে লেখার দিকে একটু খেয়াল করলে আরো ভালো গল্প হতে পারত নিসন্দেহে . শুভকামনা রইলো .

০৫ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪