টাংকি মারা

আমার আমি (অক্টোবর ২০১৬)

খোকন রেজা
  • ১৪
অনেকদিন ধরেই মনটা ভীষন খারাপ থাকায় কোন কাজেই ভালো করে মন বসছিল না। এভাবে মন খারাপ রেখেতো আর জীবন চলতে পারেনা, তাই ভাবতে বসে গেলাম কিভাবে বিষন্ন মন পাখিটার আদর যত্ন নেয়া যায়। এভাবে ঘটা করে ভাবতে বসার পরিকল্পনাটা অবশ্য আমার অনেকদিনের পুরোনো একটা অভ্যাস। ভাবনার জন্য কিছু নিয়মনীতিও রয়েছে। যেমন পিছনে দু'হাত রেখে জমিদারী কায়দায় ছাদে অথবা বারান্দায় অবিরাম পায়চারী করা আর শুধু ভাবা আর ভাবা।
অবশেষে সিদ্ধান্তটা পেয়ে গেলাম। কিছুদিনের জন্য ভারতভ্রমণে বের হবো। যেই ভাবা সেই কাজ। ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলাম, ইটোকেন প্রাপ্তির আশায়। একদিন..দুইদিন...সাতদিন। কিছুই করা গেলোনা। ভারতীয় ভিসা কি সোনার হরিণ? শুধুমাত্র টোকেন প্রাপ্তির আশায় যে ব্যর্থ চেষ্টাটা করতে হলো সেটা কেউ পড়াশুনায় ব্যায় করলে বোধ হয় পিএইচডি....থাক সে কথা। দুনিয়াতে বোধহয় সবচেয়ে কঠিন কাজ ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদনের আয়োজন করা, ভিসা পাওয়াতো পরের কথা। ইউরোপের যে কোন দেশ এবং আমেরিকা কানাডার ভিসা পাওয়াটা এর চেয়ে অনেক অনেক বেশী সহজ। গেলাম গুলশানে ভারতীয় দুতাবাসে। ভেতরে ঢোকার অনুমতি না পেয়ে, আমার অভিযোগ জানাতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে পায়চারি না করেই সিদ্ধান্ত নিলাম খরচ অনেক বেশী হলেও সপ্তাখানেক যাই সিঙ্গাপুরে ঘুরে আসি। হাই কমিশনের অনতিদূরে পরলাম এক দালালের খপ্পরে। ডিল হলো তিন হাজার টাকায় সাতদিনের মধ্যে ভারতীয় ইটোকেন বের করে দেবে, আর এখনি তাকে দিতে হবে দুহাজার আর ইটোকেন নেয়ার সময় বাকীটা। পাসপোর্টের ফটোকপি দিয়ে, আমার মোবাইলে তার মিসকল নিয়ে নম্বরটা সেভ করে গাড়ীতে চরলাম।
সপ্তম দিনে সেভ করা নম্বরে সুকণ্ঠী জানান দিলেন 'আপনি যে নম্বরে.......প্লীজ ট্রাই লেটার'। অষ্টম নবম আর দশম দিনেও সুকণ্ঠীর একই ভাষণ।
মন পাখিটার যত্ন নেয়া বোধহয় আর হলোনা।

হঠাৎ করেই মনে পরে গেলো মিনার মাহমুদ নামে এক বন্ধুর কথা। সাবজেক্ট মেট, নট ইয়ার মেট। আশির দশকের আলোচিত সাপ্তাহিক পত্রিকা বিচিন্তার সম্পাদক মিনার মাহমুদ। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। কয়েক বছর আগে আত্মহননে বিদায় নিয়েছে। ছাত্রজীবনে একবার আমাকে বিষন্ন দেখে বলেছিলো- 'দেখেই বুঝা যাচ্ছে তোর মনটা খুব খারাপ। একটা কাজ কর। একটার পর একটা বিড়ি না ফুকে টাংকি মার, দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।'

হ্যাঁ 'টাংকি মারা'। আমাদের সময়ে তরুণদের কাছে অতি পরিচিত শব্দ ছিল এটি। একটু ডিফাইন করলে বর্তমান প্রজন্মও বেশ ভালো করেই বুঝবে। এটা আসলে একটু দূর থেকে চোখে চোখে কারো সাথে কথা বলা(Romantic Eye Contact - conveying feelings of Love through the eyes...) যেখানে দূরে থাকা মানুষটিরও কোনো আপত্তি নেই বা এতে তার পূর্ন সমর্থন রয়েছে । সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম; মনটাকে আমার সতেজ করতেই হবে। যাত্রা শুরু করলাম টাংকি মারার উদ্দেশ্যে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগুচ্ছি কিন্তূ কেমন যেন ভয় ভয় করছে। যে কাজ জীবনে কখনো করিনি, এই বয়সে লোকজন আবার ভুল করে 'ইভ টিজার' ভেবে গণপিটুনী----উফ:..মিনার! বন্ধু তুইতো আত্মহননের পথ বেছে নিলি আর আমাকে কি গণপিটুনীতে বিদায়ের পথ দেখিয়ে গেলি?

আজ নর্থ টাওয়ার আর ম্যাসকট প্লাজায় সুন্দরীদের এতো ভীড় কেন? বাহ্ চমৎকার! মেয়েগুলো সত্যিই বেশ সুন্দরী। কেউবা কারো মেয়ে,কেউবা কারো প্রেমিকা, কেউবা কারো মা, কেউবা ভগিনী । কেউ মোবাইলে কথা বলছে, কেউ জামা দেখছে, কেউবা জুতো কিনছে। চমৎকার! চমৎকার!! আমার একটা মেয়ে থাকলে সেও এমনি করেই শপিং করতো। আহা ভাবতেও কত ভালো লাগে। মিষ্টি একটা মেয়েতো আমাকে ডেকেই বসলো। আংকেল প্লিজ একটু শুনবেন? আমি কাছে যেতেই বললো- আঙ্কেল আপনার শোল্ডারের মাপটা কি একটু নিতে পারি? অবাক বিস্ময়ে কিছু না বুঝেই আমিও সন্মোহিতের মত বললাম -নাও। মেয়েটা একটা শার্ট আমার শোল্ডারে ধরে মাপ নিলো আর সেলসম্যানকে বললো শার্টটা প্যাক করে দিতে। ধন্যবাদ দিতে দিতে আমাকে বললো- বাড়ীতে বাবাকে পাঠাচ্ছি। অবিকল আপনার মত। কলেজের শিক্ষক। Thank you soooo much uncle । আমিও বলতে চাইলাম- 'আমিওতো কলেজের শিক্ষক, আমিওতো ....!' কিন্তু না। আমি কিছুই বলতে পারিনি। তবে অলৌকিকভাবে বিষন্ন মন পাখিটা হঠাৎই যেন আকাশে ডানা মেললো।
ঘুরে এলাম সিঙ্গাপুর আর ইন্ডিয়া। সজীব, সতেজ, সুস্হ্য শরীর আর মন নিয়ে একটু ভিন্ন ধাঁচের টাংকি মেরে আমি বের হয়ে এলাম মল থেকে। ধন্যবাদ মিনার, ধন্যবাদ সিঙ্গাপুর, ধন্যবাদ ইন্ডিয়া।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাস‌রিন নাহার চৌধুরী টাংকির বদলে ইভটিজার হিসেবে গণপিটুনি...হাহাহাহা ভোট দিতে গিয়ে দেখি সময় শেষ!
কাজী জাহাঙ্গীর ''আমরা সবাই মিনার হবো, সুযোগ পেলেই টাংকি মারবো' শ্লোগানটা কেমন হল হা...হা্‌... হা..., অনেক শুভেচ্ছা আর আমার গল্পে আমন্ত্রন।

১৯ অক্টোবর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪