একটি সন্ধ্যের কথা

নগ্নতা (মে ২০১৭)

তুহেল আহমেদ
  • ১১
যাক!
ঝিঁঝিঁ পোকাদের ঘুম ভাঙলো তাহলে। কী যে ওরা! ছেড়ে যায় না যেন কিছুই।
আজকাল আমার বড্ড বিরক্তি লাগে কেন জানি! অন্ধকারের প্রতি!
মনুষ্য সম্প্রদায়ের কেমন লাগে? অন্ধকারকে! কিংবা আমাকেই!

আমার কোন অস্তিত্ববোধ তো ছিলও না তো কোন কালে। সূর্যের নেতিয়ে পড়া সময়ের পর পথিকের কন্ঠের আলাপ শুনি। মাঝে সাঝে কিশোর-কিশোরী যুগলের চুপিচুপি দেখা করা বটের আড়ালে। কোমল হাস্যরূপ, আলতো মিহি গলা। উড়ে বেড়ানো ছটাক ছটাক আলোর কণায় ছলছল করে ওঠা চোখের দু'য়েক জলবিন্দু।

কয়েক পথিকের পথ-বিরতি দিয়ে খাবার বেলা, দলবেঁধে দাঁড়িয়ে সুর করে কিছু অচেনা ভাষায় বলে যাওয়া। আমি বুঝিনি কিছুই। অবশ্য বুঝিও না ততো। এই ঝুপঝাড়ে বট আর গুল্মলতায় বুঝার কিছু আছে কী আদৌ?
আবার আমার উপস্থিতি ক্ষণিকেরই কিনা! কেবল, পথিক হেঁটে যায়, বলে যায় উচ্চস্বরে, কথামালা। সেই পরিচিত ভাষা।

কিছু ভাষা তবু অপরিচিতই থাকে। সেদিনের সেই প্রথম প্রহরের রমণীর কথাই ধরি। তখনো আমি আসিনি স্ব-শরীরে। ধীর পায়ে এসে বসে সে, বটের মূলে। নিঃশব্দ সময়ে ক্ষণিক বিরতি দিয়ে দিয়ে শব্দের সৃষ্টি করছিল ঝরে পড়া অশ্রুর ফোঁটাগুলো। বিড়বিড় করে বলছিল কীসব যেন!
এবারও বুঝিনি কিছুই। শুধু মুহূর্ত কয়েক পরে, সু-উচ্চ বটের সবচেয়ে নিচু ডালটায় নিচের দিকে টান পড়ে। উড়ে যায় সমস্ত বৃক্ষের পাখিরা। তারপর আর সে কন্ঠ শুনিনি, ঝরে পড়া জলবিন্দুর শব্দও না।

কিন্তু সেদিনের পর থেকে পথিকের আনাগোনা কমে যায় যেন এই পথে, আমার সময়ে। অল্প কিছু পথিকের দেখা মিলতো যদিও, তাও প্রথম প্রহরের প্রথমভাগে। পথিকের গলায় বেশ অস্থিরতার ছাপ পাই।
‘কে জানি মরেছে বটে ঝুলে, তারপর থেকে এদিকে ভুতের আনাগুনা বেড়েছে।’ কমেছে পথিক। গুল্ম লতাপাতার লতায় পথও আস্তে আস্তে ঢেকে যেতে থাকে।

পথিক আসে না। মাঝে সাঝের কিশোর-কিশোরীও না। বট বৃক্ষ, লতাপাতা আর আমার ক্ষণিক জন্মের অন্ধকার। আর প্রতিটি অন্ধকারের গভীরতার সাথে সাথে আসে আমার মৃত্যুর সময়। এটা তো রোজকার রোজ নামচাই ছিল। সেই যে কবেকার ভয়ঙ্কর জঙ্গলে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে বট। আর আমি ওর সাথে সময় মেলাই। তারপর শুরু হলো পথিকের পথযাত্রা।

ক্লান্ত সময়ের সাথে একদিন কিছু লোক আসে। খুব তাড়া ছিল তাদের কন্ঠে। তারপর আরো কিছু লোক। ওরা কি জানি করে। কিছু মাপঝোক হবে হয়তো।

তার ঠিক পরের দিনের আমি, আমাকে হুট করে চিনতে পারি না। আমার কী ভুল জায়গায় চলে আসা হলো? কোথায় আমি? চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাতার ঝাঁকে ধীরে ধীরে চিনে নিতে পারি। লতাপাতার গুল্মঝুপ যেন এক ধ্বংস স্তুপ! শুধু বটের স্মৃতি স্বরূপ মূলের চিহ্নটা অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে উপরে তাকিয়ে আছে। সময়ের সাথে অন্ধকারের গভীরতা বাড়ে। বটমূলটা ঢেকে যায় ধীরে।

আজকের সন্ধ্যায় কেবল আমি আর এক নিবিড় অন্ধকার। নেই বাতাসের সাথে পাতার খেলার খিল খিল শব্দ। বিরক্তির জন্ম আমার সেখানেই। আমার অস্তিত্বেই বিরক্তি যেন।

সময় বাড়ে, বাড়তে থাকে। কাছে আসে আমার মৃত্যুর সময়। আমার আর আগের মত ততোটা খারাপ লাগে না।


আজ যে নেই এখানে কিছুই।
কিশোর-কিশোরীর প্রথম স্পর্শের আলতো মিহি হাসি।
পথিকের সেই অচেনা ভাষার সুর।
গুল্ম লতাপাতায় বাতাসের দোল।
রমনী বিড়বিড়, ঝুলে পড়া ডালের মড়মড় কিংবা ঝরে পড়া জলবিন্দুর শব্দ।
ঝিমিয়ে পড়া ঝিঁঝিঁ পোকারা ক্লান্তির ঘুমে।

শেষ মুহূর্তে কেবল চোখে ভাসে, কয়েক ছটাক নীল আলোক কণার উড়ে যাওয়া। আমার শব্দহীন সময়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু chomotkar vabna.... anek valo laglo. ( amar patai amontron roilo )
অশেষ ধন্যবাদ। সময় করে ঘুরে আসবো আপনার দিক।
এশরার লতিফ আমাদের বেশীরভাগের লেখাই মানবকেন্দ্রিক, এই লেখাটি প্রকৃতিকেন্দ্রিক। ভালো লাগলো অনেক। শুভেচ্ছা রইলো।
আপনি পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো ভাই। কৃতজ্ঞতা :)
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী দারুন ভাব গুলো ফুটে উঠছে। বেশ ভালো লেগেছে। অনেক অনেক শুভকামনা, ভোট ও আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো
অশেষ ধন্যবাদ, আমন্ত্রণ গৃহীত হলো :)
কাজী জাহাঙ্গীর ভাবুক মনের কথামালায় পাঠককেও বেশ ভাবনায় ফেলে দিয়েছেন ঘটনার গতিবিধি খুজেনিতে। যদিও বিষয়টা তেমন একটা উঁকি দেয়নি। অনেক শুভকামনা আর আমার কবিতায় আমন্ত্রণ ।
উঁকি দেয়নি? আচ্ছা, আমন্ত্রণ গৃহীত :D
ইফতেখার আহমেদ তুহেল ভাই,আপনার লেখার একজন ভক্তই বলতে পারেন। :) তবে এ গল্পে কবিতার ভাবটা বেশি পেলাম। তবু মনে হলো প্রতিটা শব্দই যেন জীবিত হয়ে চোখে ভাসছে

৩০ মে - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪