দুপুরে আব্বা এবং মায়ের মধ্যে একপশলা ঝগড়া ঝাটি হল। একসময় মাকে একলা পেয়ে আব্বা তার চুলের ঝুটি ধরলেন এবং মা চেচামেচি শুরু করলেন । ভাবী নাউজুবিল্লাহ বলতে বলতে আব্বার পায়ে পড়লেন। কাজের স্থায়ী মহিলাটির চেষ্টায় পাক-ভারত যুদ্ধ বন্ধ হল। সারাটি বাড়ি নীরব এবং থমথম করছে। এমনিতেই আব্বা বাড়িতে থাকলে কেউ জোরে কথা বলেনা বা হৈ হট্টগোল করেনা। আমার ক্ষিধে পেয়েছে তাই টেবিলে একাকি বসে খেয়ে নিলাম। মা সাধারনত আমাদের প্লেটে ভাত বেড়ে দেন কিন্তু মা এখন কোথায় তাও বলতে পারছি না। আব্বাকে কেউ খেতে দিলনা আজ কারন মা ছাড়া তার খাবার কেউ দেয়না বা রান্নাও করেনা। বাবা অন্য কার রান্না পছন্দ করেননা। আজ স্বভাববশত হাক পাড়লেন না ‘কই আমার খাবার কোথায়’। খেয়াল করলাম তিনি বাইরে যাবার কাপড় পরছেন। অবাক আমি ভীষণ। আমার ডাক পড়ল গম্ভীর গলায়। ‘শুধু জামা গায় দে, হাফ প্যান্টেই চলবে। ‘ আমরা সোসাইটি সিনেমার বিপরীতে বিহারিদের নাম করা হোটেলটিতে চলে এলাম। যাওয়ার দৃশ্যটি দোতালার রেলিঙের ফাক দিয়ে সবাই দেখতে লাগলো। আমরা ভিতরের শেষ রুমটিতে এক টেবিলে দুজন বসলাম। তিনি বিরিয়ানির অর্ডার দিলেন। বেয়ারাকে আমি মানা করলাম আমার খাবার না দিতে। তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন কেন , হাফ প্লেট খা ! আমি মাথা নাড়লাম। বললাম আমি দুপুরের ভাত খেয়ে নিয়েছি।। তো, তাহলে শুধু কাবাব খা ! না । তাহলে ফিরনি খা ! মনে মনে ভাবলাম এটা খাওয়া যায়। মাথা নেড়ে হ্যা সুচক সায় দিলাম। কিযে ভুল করেছি দুপুরে খেয়ে নিয়ে , আজ মিস হয়ে গেল মজাদার বিরিয়ানি ! ধুস শালা! আচ্ছা ওরা আরেকটু আগে ঝগড়াটা করলেতো আজ এই মুখে লালা ঝরানো বিরিয়ানি মিস হতো না। খাবার আসতে সময় নিচ্ছে আর আমি মাথা নিচু করে টেবিলের ময়লা খুঁটছি নখ দিয়ে। হটাত আব্বা আমায় ডাক দিলেন , আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। তিনি বললেন প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে , আমি বিব্রত আশপাশের লোকদের নিয়ে , কিন্তু তারা কেউ এদিকে নজর দিচ্ছেন না আর আব্বাও বেশ নিচু স্বরে বয়ান করছিলেন। ‘ দ্যাখ তোর মা কি করেছে ! তিনি তার পাঞ্জাবীর হাতা টেনে গোটালেন’। হ্যা তাইতো আব্বার হাতে গভীর ক্ষত ! রক্ত গড়িয়ে পড়ে শুকিয়ে আছে। তিনি এবার বা হাত দিয়ে আমার হাত টেনে তা তার ক্ষতস্থানের উপর রাখলেন। আমি এতটাই বিব্রত ও ভীত হচ্ছিলাম বোঝাতে পারব না। তার চোখে পানি ! পৃথিবীর এই কঠিন মানুষটির চোখে পানি। তার দুচোখে একধরনের আকুতি যেন আমি কিছু বলি। কিন্তু আমাদের পারিবারিক কাঠামো এমন নয় বা এই ঘটনা কখনই ঘটেনি , বাবা ও ছেলেদের মধ্যে তেমন কথা বা অনুভুতির ভাগাভাগি নেই। কঠিন শৃঙ্খলার মধ্যে মানুষ হতে গিয়ে আব্বার জন্য আজ অনুভুতির প্রকাশ হচ্ছে না বা কিভাবে করতে হয় তাও জানা নেই । ‘তোর মা আমায় এভাবে খামচালো ?? আমি সাহস ফিরে পেলাম এবং আড় চোখে তার ক্ষতস্থান দেখলাম। তিনি চাইছিলেন তাই আমার হাতটি তার হাতের উপর রাখলাম । এবার আমি মাথা ঘুরিয়ে একটিমাত্র খোলা জানালা দিয়ে ঈষৎ নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। জনক ও জননীর মধ্যকার সম্পর্ক সন্মন্ধে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা আমায় ভিন রকমের ভাবালুতায় আচ্ছন্ন করে ফেলল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
আব্বা আমায় তার সুখ দুঃখের সাথী করেছিলেন শেষবেলায় । ওই অতটুকু শিশুকেও বুঝতে হয়েছিল জীবনাচার ।
০৮ মে - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
৮১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।