মাজেদা তাদের পুরাতন উচু ড্রেসিং টেবিল গোছগাছ করছে । ময়লা ধুলো মুছছে একটুকরো কাপড় দিয়ে । কোরান শরিফ এটার পরেই থাকে । খাড়া করে ধুলো মুছবে এমন সময় কোরান শরিফের মাঝ বরাবর ফাক হয়ে একটুকরো কাগজ বেরুল । সাধারনত কোরানের মধ্যে কেউ এরকম কিছু রাখে না। বেশ আগ্রহ নিয়ে চিঠি লেখার প্যাডের কাগজ খুলল মাজেদা । তাতে সদ্য প্রয়াত মাজেদার মার হাতে লেখা বেশ কিছু উপদেশ দেওয়া আছে। তিনি নিয়মিত কোরান থেকে পাঠ করতেন । অসুস্থ অবস্থায় মাজেদা মায়ের পাশে বসে অনুচ্চ কণ্ঠে কোরান পাঠ করে মাকে শোনাত । গোসল সেরে পড়বে এই ভেবে আবার কোরান শরিফখানি গুছিয়ে রাখল । মায়ের খাটখানার চাদর পালটাল । ঝাড় দিল । ঘর ঝাড় দিয়ে গোসলে । এই খাটে বাবা আর মা দুজনেই ঘুমাতেন । মা একদম অচল হলে বাবা ছেলের রুমে শেয়ার শুরু করল । মাজেদা রাতজেগে মায়ের সেবা করত । বাবা রাতে ও ভোরে এসে তদারকি করতেন । রক্তচাপ , সুগার , ওষুধ পাতি সব সেরে অফিস যেতেন । বাকি কাজ মাজেদার । ছোট ভাই পড়ছে এখনো । বড় ভাই আর বড় বোন আমেরিকা আর কানাডা থাকে । মায়ের শেষ সময়ে তারা ছিল পাশে । একসময় তারাও চলে গেল । বাড়িটা আবার শোকের আবহে ফিরে গেল। মাজেদা গ্রাজুয়েট করে মায়ের সেবায় ব্যাস্ত । বিয়ের প্রস্তাব এসেছে কিন্তু মাজেদা অনড় মাকে ছেড়ে কোথাও নয় । সবাই খুব চুপচাপ থাকে এ বাড়িতে । টি ভি চলেনা, কারো মোবাইলে গান বাজেনা । খাবার সময় মাথা নিচু করে খায় তিনজন প্রাণী । বাবা এই বিছানায় আর ফেরেননি । দুপুরে একাকি খেয়ে মায়ের বিছানায় শুয়ে অতি আগ্রহে সেই চিঠি পড়তে শুরু করল । “ চেষ্টা করেছি জীবন সৎ পথে চালাতে, মনে হয় পেরেছি । পড়াশুনা ও জ্ঞানঅর্জন উত্তম বিষয় । আপন কাজ মনোযোগ দিয়ে করবে । আল্লাহ’র প্রতি বিশ্বাস রাখবে, যতটুকু পার তাকে স্মরণ করবে। আমি মাঝরাতে তাহাজ্জুদ পড়ে খুব শান্তি পেতাম। দিনের হই চই রাতের নিরবতায় বিরক্ত করত না । অভুক্তকে খাবার দেবে , বাড়তি কাপড় দান করবে । এবং আরও অনেক কিছু। মাজেদা চিঠি হাতেই ঘুমিয়ে গেল । বিকালে ঘুম ভেঙ্গে বেশ অবাক হলো হাতের মুঠোয় চিঠি দেখে। কাউকেই চিঠির কথা বলল না । চিঠি আবার কোরান শরিফের মধ্যে রেখে দিল । এ বাড়িতে মা একাই এবং শেষে মাজেদা ধর্ম কর্ম পালন করত ।গৃহকর্মী এসে রাতের খাবারের ফরমায়েশ নিল । মাজেদা নিচের একটুকরো বাগানের যত্ন আত্তি করে কিছু ফুল এনে বাবার শোয়ার ঘরে ফুলদানিতে রাখল। মাজেদার রুমটি এখন বাবার । বাবা একটু দেরিতে ফিরে কৈফিয়তের সুরে বন্ধুদের সাথে আড্ডার দোহাই দিল । তার কাছে কেউ কৈফিয়ত চায়নি – তবুও । ছেলেটি খেতে বসে বাবাকে পরের সেমিস্টারের ফি’র কথা স্মরণ করিয়ে দিল । বাবা আগামীকাল চেক নিয়ে যেতে বলল । মাজেদা বাবাকে জিজ্ঞাসা করল কাল কি খাবে, ছুটির দিন, ভাল মন্দের ব্যাপার আছে। বর্ষার দিন খিচুড়ি আর গরু ভাল জমবে , মাজেদা যোগ করলো শুঁটকি আর কাঁঠাল বিচির ভর্তা । বাবা খুশি মনে সায় দিল । সংসারে মাজেদার ভুমিকা এখন মুখ্য , তার কত কাজ। রাতে মাজেদা আবার গোসল সারল । আজকের পত্রিকা নিয়ে বেশ মনযোগী হল ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে । ভাইয়ের ঘরে গিয়ে তাকে সাবধান করলো । ভাইটি বলল আমার একদম মনে ছিলনা – তুই মনে করিয়ে দিলি , কাল মিছিলে যেতে হবে। দুজন হাসল কৌতুকের হাসি । অ্যালার্মে রাত ১২.৩০ , মাজেদা উঠে ওজু সেরে জায়নামাজে দাঁড়ালো । জানালা দিয়ে বাইরের আলো আসছে। চারদিক কি নিরব আর অন্ধকার তো আছেই । তার মা এই অদ্ভুত গভীর রাতের কথা বলেছেন । নীরবতা তার মনোযোগ বাড়িয়ে তুলল – এজন্যই মা গভীর রাতে আল্লাহর স্মরণ নিতে বলেছেন । নিয়ত করে হাত বাধতেই মনে হল ঘরে আরও কেউ আছে- শিরদাড়া নিচ থেকে ওপরে শীতল কাপন ধরাল।সাহস বেধে অনুচ্চ কণ্ঠে সুরা ত্বীন শুরু করলো । প্রথম সিজদাহর পর আগের নার্ভাস ভাব কাটল । মোনাজাতের সময় আবার মনে হল মা তার পাশে বসে মোনাজাত ধরেছেন । সাহস সঞ্চার করলো মাজেদা – এরকম মোনাজাত মাকে বিছানায় অনেকবার করাতে হয়েছে- মাজেদার ভয় কেটে গেল । জায়নামাজ তুলে হটাৎ আবিস্কার করলো অন্ধকারে দরজায় দাড়িয়ে বাবা ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ
মাঝ রাতের সবচেয়ে ঊত্তম কাজটির কথা গল্পে গল্পে স্মরণ করিয়ে দিলেন।অসাধারণ।আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযা দান করুন।আমিন।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আসবেন আমার কবিতার পাতায়, বিশেষভাবে আপনাকে আমন্ত্রণ জানালাম।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
গভীর রাতে ধ্যানস্থ হবার সুবিধা অনেক। আঁধার আর নীরবতা চিন্তা শক্তিকে বাড়িয়ে দেয় , ভাববার সুযোগ এনে দেয় । মুসলিম ধর্মে বিশ্বাসী অনেকেই গভীর রাতের আঁধারকে বেছে নেন ইবাদতের জন্য। এসময় ইবাদতে মনোযোগী হওয়ার উপযুক্ত সময়।
০৮ মে - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
৮১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।