লাজে রাঙা সমাধি

লাজ (জুন ২০১৮)

শাহ আজিজ
  • 0
  • ৯১১
তোমার মনে কি পড়ে দুজন মিলে দোতালার সিঁড়িতে বসা । বেশ নির্জন বিকেল বেলা । এদিকটায় কেউ তেমন আসেনা একটা । আমরা আজই বসলাম প্রথম । এতদিন ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় বসেছি , সামনেই বকুলতলা । কাঁঠালিচাপা পাশেই । তার মৌ মৌ গন্ধ পাগল করে তোলে । তুমি আমার সদ্য প্রেমিকা । কোথা থেকে সাধু দুটো কাঁঠালিচাপা এনে করজোড়ে পেন্নামের ভঙ্গিতে দাড়িয়ে । ফুলের ব্যাপারে প্রেমিককে উদারহস্ত হতে হয়। ১ টাকা দিয়ে চিরকুমার সাধু, আমাদের মডেলকে বিদায় দিতাম । নিচু হয়ে পেছনে কয় পা হেটে করজোড়ে বিদায় নিত সাধু । কিন্তু সাধু কাঁঠালিচাপা পেতো কোথায় , নিচে তোঁ আমরা বসে। হয়ত ভোরে এসে কুড়িয়ে রেখে দিত পুরাতন নতুন যুগলদের জন্য ।
আজ বসেছি দোতালার শেষ ধাপে । সৎ বল মহৎ বলো একটা উদ্দেশ্য তো ছিলই বটে । তোমারও যে তেমন প্রাপ্তির ইচ্ছে ছিলনা তাও বলিনা , ছিল ছিল ।
‘আজ তোমায় একটা উপহার দেব’ , অবাক ভঙ্গিতে তুমি শুধালে কি উপহার? আমি চাপা হাসি হাসি । তোমার জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন তারপর তোমায় টেনে পিঠে একহাত আর গালে এক হাত চেপে আমার জলন্ত ঠোট ছুয়ে দিলাম তোমার ঠোটে । তুমি মুখ গুজলে হাঁটুতে , তোমার খোলা চুল তোমায় ঢেকে দিলো লজ্জা নিবারণের জন্য । বেশ খানিক পর তোমার হাত ধরলাম এই প্রথম । তুমি চকিতে আমার হাঁটুতে মুখ গুজে পড়ে রইলে । তোমার পিঠে আমার হাত খেলছে । দোতালার বারান্দায় পায়ের শব্দ , ফিসফিস করে বললাম কেউ আসছে!! তুমি আমার কোল থেকে মাথা উঠিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে । কেউ একজন টয়লেটের দিকে গেল । আমি বললাম এবার চল তোমায় রিক্সায় তুলে দিই । ওই যে নতশির আর ওভাবেই হেটে সামনের চত্বরে, তারপর রিক্সায় , আজ আর বললে না ‘আসি’ । আমি তাকিয়ে টি এস সির পানে যতক্ষন না তোমার রিক্সা দৃষ্টির বাইরে চলে যায়।
জীবন চলে গেছে ৩৮টি বর্ষার জলে ভেসে ভেসে মহা সমুদ্দুরে। প্রবাসী হলাম , আমরা ঘর বাধলাম, তুমিও গেলে। আমাদের কোল জুড়ে আলো ঠিকরে পড়ল । প্রথম চুমু, প্রথম সঙ্গম , প্রথম সন্তান এসবই জীবনের উজ্জ্বলতম আখ্যান ।আনন্দেই কাটছিল দিনগুলো, হটাৎ আকাশ কালো করে আলোকবর্তিকা ঢেকে দুঃসময়ের মেঘ ঢেকে দিলো আমাদের সন্তানদের জীবন সঙ্গে আমারও । তোমার লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়েছে। কি নিশ্চিন্ত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তুমি । জাগবেনা জেনেও আমরা বেডের পাশে দাড়িয়ে । তোমার সন্তানরা পরম ভালবাসায় তোমার গালে কপালে একে দিলো বিদায় চিহ্ন । আমার ভেতর এক বিপুল তাড়না উঠেছিল তোমায় বিদায় দেবার যেভাবে সিঁড়িতে বরন করেছিলাম ৩৮ টি শ্রাবন দিনে ।ধর্ম , সামাজিকতা এসব বড় বাধা এই চরম ইমোশনাল মুহূর্তগুলোতে । আমার ছেলেই তোমায় শুইয়ে দিলো মাটির বিছানায় । রাত চারটায় ফিরে ঠিক তোমার জায়গা দখল করে ঘুনিয়ে গেল । পরশু রাতেও অভ্যাসবশত তোমার হাতের পালস চেক করছি । তোমায় ধরে বাথরুমে নিচ্ছি। সকালে সুগার চেক, নাস্তা , ইন্সুলিন, ওষুধ আর সারা দিনের পরিচর্যা আজ রাত থেকে বাদ হয়ে গেল চিরকালের জন্য । ঈশ্বর বড্ড নিষ্ঠুর ।
গেলাম তোমায় দেখতে ৪০ দিনের দিন। সাদা টাইলসের আভরনে তোমার শেষ আর স্থায়ী আবাস। হাত দিয়ে সমাধি ধরে দাড়িয়ে রইলাম উচু বৃক্ষ পানে চেয়ে। কত কথা মনে জেগে উঠছে নানা ছলে নানা কৌশলে । জল ভরা চোখ নিয়ে তাকালাম সমাধির মৃত্তিকা পানে। একি !! গোটা সাদা টাইলস জবার রঙে লাল হয়ে গেছে , আমার ছুঁয়ে দেওয়া তোমায় লজ্জা দিচ্ছে , সমাধিতে শ্বশুর মশাই , শাশুড়ি , বড়দা , মেজদি সবাই আছে , ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা বলত , ওদের সামনেই আমি তোমায় ছুয়েছি ঠিক প্রথম দিনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের মতো । নাহ ঠিক হচ্ছে না ।
হাত সরিয়ে নিলাম ধীরে । তোমার জবা ফুলের লাজ মিলিয়ে যেতে শুরু করল , টাইলসগুলো রঙ বদলাল । আমি স্থানু হয়ে রচে দিলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাব্য মালা , তোমার তরে।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ সুন্দর গল্প।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আসবেন আমার গল্প আর কবিতার পাতায়।
আসাদুজ্জামান খান জীবনের এইই নিয়ম। মানতে হয় যদিও খুব কষ্ট হয়। 'মায়া'ই বোধহয় মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। শুভকামনা আপনার প্রতি। ভালো থাকবেন।
মোঃ মোখলেছুর রহমান স্মৃতিময় গল্প, ব্যথাতুর হল বুক।
তুমিই প্রথম যে লেখাটিতে মন্তব্য করেছে। ধন্যবাদ ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

লাজের স্বরূপ গল্পেই বর্ণিত আছে।

০৮ মে - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৮১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী