ব্যথা

ব্যথা (জানুয়ারী ২০১৫)

Shimul Shikder
  • ২৫
শ্যামবাজারের অভয়দাস লেনের ২৫১/৫/২এ বাড়িটার সামনে গাড়ী এসে থামল। গাড়ী থেকে নেমে চারিদিকে তাকালাম। প্লাস্টারবিহীন দোতালা বাড়িটার আশেপাশে টিনের কতগুলো ছোট ছোট ঘর। আশেপাশের বাড়ির লোকজন উঁকিঝুঁকি মারছে। এরকম দুর্গম গলিতে স্যুট-টাই পড়া গাড়ীওয়ালা দেখতে তারা অভ্যস্ত না। দোতালা বাড়িটির নিচে দর্জির দোকান থেকে ঘটর ঘটর সেলাই মেশিনের শব্দ আসছে।

বাড়িটার পাশ দিয়ে সরু গলিটার শেষ মাথায় অন্ধকার সিঁড়ির গোঁড়ার দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে গেলো। ভিতর থেকে সে বলল, চিনে আসতে পেরেছিস! আয়, ভিতরে আয়।

ছোট্ট কামরার মেঝেটার একপাশে একটা চাদর বিছানো, আর এক পাশে একটা খালি তোষক আর একটা বালিশ। সে নিজে চাদরের উপর আধ শোয়া হয়ে আমাকে বসতে বলল। ঘরে কোনো আসবাবপত্র নেই। আমার হাতের পলিথিনের ব্যাগ দুটো তার সামনে রেখে আমি তোষকের উপর বসলাম। ঘরটা অন্ধকার। টয়লেটের দরজাটা খোলা। সেখান দিয়ে যতটুকু আলো আসছে তার চেয়ে বেশী আসছে দুর্গন্ধ। ঘরের একমাত্র জানালা খুলতে খুলতে সে বলল,
- লাইটটা নষ্ট হয়ে গেছে। রতনকে বলে দিয়েছি আসার সময় একটা লাইট নিয়ে আসতে।
- রতন কে?
- আমার সাথে থাকে।
- এই তোষকে?
- তোষকে থাকবে কেন? এই বাসায় থাকে।

সে আবার এসে চাদরের উপর বসলো। এবার তার চেহারাটা ভালভাবে দেখতে পেলাম। খালি গায়ে ময়লা একটা লুঙ্গি পড়া। বুকের হাড়গুলো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, চোখ যেন আরো গর্তে ঢুকে গেছে। কাঁচাপাকা দাঁড়ি গোঁফে মুখ ভর্তি । কে বলবে সে আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। দেখলে মনে হয় তার বয়স আমার চেয়ে অন্তত দশ বছরের বেশী। পলিথিনের ব্যাগে উঁকি মেরে বলল, বার্গার এনেছিস মনে হচ্ছে!
- তোমার প্রিয় বার্গার, সাসলিক আর কিছু স্যান্ডউইচ এনেছি।
বার্গারে কামড় দিতে দিতে বলল,
- আহ, কতদিন পরে যে কিং বার্গার খাচ্ছি! তোর মনে পড়ে একবার মা’র জন্মদিন করেছিলাম ঢাকা ক্লাবে? সেবার...
- পুরো ঢাকা চষে বাবা শুধু তোমার প্রিয় সব খাবার গুলোই এনে হাজির করেছিলো। সুমি বলছিল, জন্মদিনটা কী মা’র না কী তোমার?
- সুমি কেমন আছে রে?
- ওর তো মেয়ে হয়েছে, ওরা সিয়াটল থেকে ক্যালিফোর্নিয়া চলে গিয়েছে। কয়েক মাস আগে গিয়েছিলাম ওর ওখানে। ভালই আছে ওরা।
বার্গার খেতে খেতে তাঁকে অন্য মনস্ক মনে হল। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
- তোমার মোবাইল ফোনে কী হয়েছে?
- ক্রেডিট নাই মনে হয়।
ঠাণ্ডা সাসলিক খেতে খেতে সে বলল, তোকে তো বলা হয়নি। বারো কোটি টাকার একটা কাজের ব্যাপারে কথা হচ্ছে। ব্রিজ বানাবো। সচিবালয়ে রতনের ভাল জানাশোনা আছে। মনে হয় কাজটা পেয়েই যাবো। কাজটা পেলে আর সমস্যা থাকবে না।
- ঠিকাদারির কাজ যে করবে, লাইসেন্স আছে?
- আমার শ্বশুরের আছে না?
- সে কী এখনো তোমার শ্বশুর আছে? শুনেছি, তোমার স্ত্রী আবার বিয়ে করেছে।
- ও নিয়ে ভাবিস না। দুনিয়াটা তো টাকার খেলা। ব্রান্ড নিউ বি এম ডাবলু গাড়ী নিয়ে যখন ওর বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াবো, নুতন স্বামী ছেড়ে দেখবি সুড়সুড় করে আমার পাশে এসে বসেছে।

তেল চিটচিটে বালিশের নিচ থেকে আধা খাওয়া সিগারেট ধরিয়ে টান দিতে দিতে বলল, সব কথা তো সবাইকে বলা যায় না, তোকে বলি। লাইফ নিয়ে সামনে কিছু মাস্টার প্লান আছে। বড় বড় কিছু প্রোজেক্টে হাত দিচ্ছি। কাজগুলো উঠাতে পারলে সাঁইসাঁই করে বিশ ত্রিশ কোটি টাকা হাতে চলে আসবে। গুলশান লেকের পাড়ে ভাবছি তোকে একটা ফ্লাট কিনে দিবো। আর আমেরিকা গিয়ে সুমিকেও একবার দেখে আসা যাবে। তুইও কিন্তু যাবি আমার সাথে, কী বলিস?
- আমার উঠতে হবে। আর আধা ঘণ্টার মধ্যে মনিকার ডিউটি শেষ হয়ে যাবে। ও অপেক্ষা করবে।
- মনিকা এখন কোন হাসপাতালে আছে?
- পিজি তে।
পকেট থেকে দশ হাজার টাকার বান্ডিলটা বের করে তার সামনে রাখলাম। সে ছোঁ মেরে বান্ডিলটা হাতে নিয়ে হেসে বলল,
- ভালই করেছিস। হাত একদম খালি। কিছু টাকার খুব দরকার ছিল। তবে টাকাটা কিন্তু ধার হিসেবে নিচ্ছি। প্রোজেক্টগুলো শেষ হলেই তোর টাকা আমি পাই পাই করে ফেরত দিয়ে দিবো। তোর কিন্তু তখন ফেরত নিতে হবে।

আমি বেরিয়ে এলাম। অন্ধকারে পুরো এলাকা ডুবে আছে। মনে হয় লোড শেডিং।

জীবিত কালে বাবা মা কী কল্পনা করতে পেরেছিল যে তাদের সবচেয়ে আদরের সন্তানটি অযত্ন অবহেলায় নিজের জীবনটাকে আস্তাকুর বানিয়ে ফেলবে? তারা কী ভাবতে পেরেছিল, ঢাকার অলি গলি খুঁজে তাদের এই আদরের সন্তানের হাতে কিছু টাকা গুঁজে না দিলে তার জীবন চলে না।

গাড়ী চলছে। পেছনের অন্ধকার ফেলে সামনের আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই আলোটা আমার খুব অসহ্য লাগছে। কারণ অন্ধকারে যে বসে আছে আমার একমাত্র ভাই, আমার প্রানপ্রিয় বড় ভাই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ গল্পটা পড়তে পড়তে চোখের পাতাটা বেশ ভারি হয়ে গেল ! আসলে পৃথিবীটা কেমন যেন !
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৫
Thanks
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৫
শামীম খান আপনার লেখার হাত সুন্দর । লেখাটি পছন্দ করলাম , ভোটও দিলাম । শুভ কামনা ।
ভালো লাগেনি ৭ জানুয়ারী, ২০১৫
Thanks for your support............
ভালো লাগেনি ৭ জানুয়ারী, ২০১৫
মনজুরুল ইসলাম feeling good.my suggestion is you could enhance the story with more variations.good luck always.
ভালো লাগেনি ৪ জানুয়ারী, ২০১৫
Thanks for your advice. I will keep it in my mind
ভালো লাগেনি ৪ জানুয়ারী, ২০১৫

১৬ অক্টোবর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪