সম্পূর্নার পথ ( একটি দর্শন মিশ্রিত রোমান্টিক বিকেল )

দিগন্ত (মার্চ ২০১৫)

রাব্বি রহমান
  • ১০
বন্ধু মহলে চাপাবাজ হিসেবে বেশ ভালই নাম ডাক অলিন্দের। অলিন্দ সব চেয়ে ভাল যে কাজটি পারে তা হল বানিয়ে বানিয়ে কথা বলা। নিজের উপর আত্নবিশ্বাস বলতে কিছুই নেই অলিন্দের। তার সবসময় মনে হয় সে যা চিন্তা করে তার কিছুই ভুল । নিজের চিন্তাধারা কে ঝালিয়ে দেখতে অলিন্দ নতুনএক পন্থা অবলম্বন করে । প্রায়ই তার মাথায় আসা চিন্তাগুলো ফেসবুক অথবা ব্লগে সে শেয়ার করে বিভন্ন বিখ্যাত ব্যাক্তিদের নাম দিয়ে। যার মাধ্যমে সে বোঝার চেষ্টা করে তার নিজের মতামত এর গুরুত্ব মানুষের কাছে কি রকমের ?
বিগ্রহ আর ক্রোধ অলিন্দের সমার্থক শব্দ । সারাদিনই মানুষের সাথে বিবাধে জড়িয়ে থাকে সে ।
তার মতে সে যে টা করে সেটা চাপাবাজি নয় এটি বাগ্নিতা । বাগ্নিতা হচ্ছে সামাজিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তার তার বক্তব্য সবার কাছে গ্রহনযোগ্য করে তোলা যায় । চাপাবাজ হলেও অলিন্দ অনেকটা বিজ্ঞান মনস্ক ছেলে । বিজ্ঞানের অনেক বড় বড় প্রকাশনা সে পড়ে থাকে ।

দৃশ্যপটের পরিবর্তন মেঘলা শ্রাবণের এক বিকেলে। সেদিনের আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন ছিল । বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল অলিন্দ, আর তার আম্মুর শোনানো ছোট বেলারর কথা মনে করছিল -
আকাশের অনেক রং, মেঘের দিকে তাকিয়ে যে ছবি কল্পনা করা হয় মেঘের উপরে সেই ছবিই আকা যায় । গুমোট হয়ে থাকা আকাশটা অল্প অল্প করে সাদা হতে থাকে। মেঘদের ভেসে বেড়ানো শুরু হয়। অলিন্দের মনোকল্পেও অংকিত হয় এক মেঘো বর্ণ তরুণীর মুখাবয়ব । টানা টানা চোখ, লম্বা চুল। অনেকটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পরে সে ।
"ভাইয়া একটু সরে বসুন "
হকচকিয়ে উঠে সে দেখতে পায় পাশে রাখা কাপ ভর্তি চা ঠান্ডা হয়ে গেছে,আংুলের মাঝে রাখা সিগারেটটাও পুড়ে শেষ।
মৃদু হাসি দিয়ে "অবশ্যই" বলে চা ওয়ালার কাছে আর একটা সিগারেটের জন্য বলে সে। মেয়েটি নিজ থেকেই বলে
- আমি সম্পূর্না
- ও আচ্ছা বলেই অলিন্দ চুপ হয়ে যায়।
- আপনি সিগারেট কেন খান ?
- সিগারেট খাই নিজের শরীরের ক্ষতি করার জন্য
- সিগারেটে তো শরীরের ক্ষতি নেই
- কে বললো ?
মেয়েটি " আমি বলছি- যে সব কর্মকান্ড মানুষ কে মানসিক তৃপ্তি দেয় , সে সব কখনো মানুষের অভন্তরীন কাঠামোতে আঘাত করতে পারে না "
অলিন্দ আস্তে করে বলে বিজ্ঞান তো সেটা বলে না।
সম্পূর্না জানতে চায় বিজ্ঞান কি বলে ?য়
অলিন্দ জানায় বিজ্ঞান বাস্তব সম্মত কথাই বলে এবং ইহা প্রমানিত ।
অনেকটা আগ্রহ নিয়ে অলিন্দ জানতে চায় আপনি কি বিজ্ঞানে আস্থা রাখেন না বা বিশ্বাস করেন না ।
মেয়েটি বলে না।
আগ্রহ ভরেই অলিন্দ জানতে চায় কেন ?
সম্পূর্না বলতে শুরু করে-
আমি বিজ্ঞানে বিশ্বাস রাখি এবং আস্থাও রাখি তবে বিজ্ঞানের সাথে দর্শনের মিশ্রন টা কম হওয়ার ফলে আমার প্রচলিত ধারার বিজ্ঞানে আস্থা নেই ।
Philosophical Anarchism এর প্রবক্তা ফেয়ারবন্ড বলেছেন " যদি বিজ্ঞানীরা বিশেষ আদর্শ প্রকরনে বন্দী না হয়ে বিজ্ঞান চর্চা করতো তবেই বিজ্ঞানের প্রকৃত বিকাশ সম্ভব ছিল"
অলিন্দ জানতে চায় কিভাবে ?
সম্পূর্না "সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি মাত্র পদ্ধতি নয় , বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে " - এই যেমন ধরুন একজন ক্যানসার আক্রান্ত লোকের আদরের বউ তার কাছের বন্ধুর হাত ধরে চলে গেল । লোকটি তার কষ্ট দূর করার জন্য নিয়মিত মদ খেত । আমাদের আদর্শ প্রকরনের চিকিৎসা বিজ্ঞান বলবে আপনি মদ খাওয়া ছেড়েদিন, না হলে আর বাচবেন না ।
কিন্তু Chos Theory বিজ্ঞানের এই সমস্থিতির বিন্যস্ততা সমর্থন করবে না । যদি লোকটির মানসিক কষ্ট দূর করার জন্য তাকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী চলাচল করত্র দেয়া হয় , তবে তার শারীরিক-মানসিক সকল সমস্যাই দূর হবে । এই যায়গাতে ই আমি বিজ্ঞানের সমর্থন করিনা সম্পূর্না জানায় ।


সন্ধ্যা নেমে এসেছে, অলিন্দ জানতে চায় চা খাবেন ?
মেয়েটি " না "
অলিন্দ " আপনি কোথায় পড়াশুনা করেন ? "
সপ্মূর্না " ঢাকা মেডিকেল কলেজ,৩য় বর্ষ "
অলিন্দ " তাহলে বিজ্ঞান নিয়ে আপনার এত আপত্তি কেন ? "
সম্পূর্না " আপনার Paradigm Theory জানা আছে "
অলিন্দ- না
সম্পূর্না " সকল বৈজ্ঞানিক তত্বই ভবিষ্যবাণীর নিমিত্ত মাত্র"
- কিভাবে ?
- এই যেমন আজ একটা তত্ব দিলেন যে সিগারেট খেলে স্বরন শক্তিবৃদ্ধি পায় । তার পরের বছর বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করা ১০০% ছেলেই দেখা গেল ধুমপায়ী সুতারং সমাজে আপনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠিত। এরপরে কয়েকটি ইকুয়েশন দাড় করিয়ে নিলেই হবে ।
অলিন্দ বলে তাহলে মার্ক ব্রাউতো যথার্থই বলেছে " সকল উপাত্তই হল তত্ব-ভারাক্রান্ত আর সকল তত্বই হল মূল্যবোধে ভারাক্রান্ত "
তা অবশ্য ঠিক, সম্পূর্না জানায় সে এক কাপচা খেতে চায় ।
অলিন্দ জানায় আমি অর্বাচীন দর্শন পুরোপুরি না বুঝলেও ঠাট্টা তামাশাটা বুঝি । সম্পূর্না আমাকে এসব বলে লাভ নেই আমি বহু বিখ্যাত দার্শনিকের তত্ব নিজে লিখেছি ।
সম্পুর্না আস্তে করে বলে আপনি বিখ্যাত দার্শনিক লুডভিগ স্টাইনের এই মতবাদটি জানেন না " A serious and good philosophical work could be written consistingentirely of jokes. "


আমি কি দার্শনিক অলিন্দ জানতে চায় ?

সম্পূর্না" হতেও পারেন "
অলিন্দ বলে " আপনি কি সংশয়বাদী ? হতেও পারেন বললেন আবার হাসি ঠাট্টা করে দর্শন গ্রন্থ রচনার তত্ব দিলেন ?
সম্পূর্না আস্তে করে পুনরায় শুরু করে-
দর্শনের জগতে সংশয়বাদ অনেক পুরোনো মতবাদ । দুই হাজার বছর আগে প্রখ্যাত গ্রীক দার্শনিক আরসেসিলস লিখেছিলেন " কোন কিছুই নিশ্চিত নয় , এমন কি যা বললুম তাও নয় "
ও আচ্ছা বলে অলিন্দ আরেকটা সিগারেট ধরায় । আর জানতে চায় " তাহলে কেন আমরা অনুমান নির্ভর হবো ? "
সম্পূর্না বলে এটা দার্শনিক কীটসের(Liar Paradox) " মিথ্যুকের আপাত স্ববিরোধী সত্য " । কীটস মনে করতেন সত্য বলে কিছু নেই , শুধু সত্য নামধারী কিছু ব্যাখ্যা আছে । কীটসের বক্তব্য যদি সঠিক হয় তাহলে সত্য সম্পর্কে তার ব্যাখ্যাও সঠিক নয় । এ ব্যাখ্যাও মিথ্যা ।


অলিন্দ বুদ হয়ে তাকিয়ে থাকে আর বলে সম্পূর্না আপনি অনেক সুন্দর করেকথা বলেন।


সম্পূর্না আবারও শুরু করে -
জনাব বিজ্ঞান মনস্ক পুরুষ ;
বার্ট্রান্ড রাসেল অনেক চমৎকার ভাবে বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে পার্থক্য দেখিয়েছেন " Science is what you know ,Philosophy is what you do not know . "
অলিন্দ অনেকটা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরে । ঘোর কাটে সম্পূর্নার ডাকে ।
সম্পূর্না " সময় অনেক হয়েছে ভাইয়া , আমাকে উঠতে হবে হলের গেট বন্ধ হয়ে যাবে"
অলিন্দ ঘরির দিকে তাকায় রাতপ্রায় ১১টা বাজে । এত সময় যে কিভাবে গড়িয়ে গেল টেরই পায়নি সে ।


এই প্রথম চায়ের দোকানের কুপির লাল আলোয় সে সম্পূর্নার দিকে তাকায় । দেখতে পায় বিকেলে মেঘের মাঝে যার ছবি সে আকছিল;সে তার সামনে বসা ।
সম্পূর্না চলে যাবার জন্য উঠে দাড়ায় আর বলে-
" অলিন্দ অপরিবর্তনীয় সত্য জানতে চায় আর আমি সম্পূর্নার আনন্দ সত্যের আপাত-স্ববিরোধিতায়"
এরপরে সম্পূর্না বলে ভাল থাকবেন আর দার্শনিক Kierkegaard এর " The thinker without a paradox is like a lover without feeling , a paltry mediocrity. " কথাটা মনে রাখবেন এবং ভাল থাকবেন , চললুম ।


অলিন্দ সম্পূর্নার চলার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে আর বিড়বিড় করে বলতে থাকে-
" ওটি কি পশ্চিমের পথ ?
অবাস্তবতম পথ ?
গভীর স্বপ্নে থাকলে দিক দিগন্ত নিরর্থক হয়ে ওঠে;
সম্পূর্না তুমি হাটতে থাক ,
আমিও পশ্চিমের পথে আসছি-
আমার স্বপ্নের দিকে-
যা বুঝতে পারলে আমি বাস্তবায়ন করতে পারবো আমার স্বপ্নকে। "


সেই বিকেল থেকেই অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ অলিন্দ । বিকেল হলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে । চায়ের দোকানে সম্পূর্নাকে খুজে বেড়ায় আর বিড় বিড় করে-
" ওটি কি পশ্চিমের পথ?
অবাস্তবতম পথ? "
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Syed Injamul Huq vlo laglo, amar patay amontron rolilo.
Syed Injamul Huq vlo laglo, amar patay amontron rolilo.
রুহুল আমীন রাজু valo laglo ....dhonnobad.(amar patai 'kalo chad' golpoti porar amontron roilo )
শফিক রহমান ভাই দার্শনিক কবি, চমৎকার লিখেছেন ।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ আচ্ছা, আপনি যদি দর্শন নিয়ে গবেষনা করে থাকেন, তবে দয়া করে আমার একটা হিসেব মিলিয়ে দিলে খুশি হব । হিসেবটা এ রকম, বেশ কিছুদিন আগে যেটা এসেছিল, তখন সেটা ভাল ছিল । পরে অন্য দু’টো এসে চাকচিক্য দেখিয়ে আগেরটা কে সেকেলে বলে বিদায় করে দিল । পরের ‍দু ‘টোর মধ্যে একটা অন্যটাকে ভূল প্রমান করে সবার কাছে অপাংক্তেয় করে দিল । শেষে যেটা টিকে থাকল, সে নিজেও অদুরদর্শী, আকৃতিহীন,নিষ্ঠুর এবং খামখেয়ালী তে পরিপূর্ণ বলে পরিত্যাজ্য হবার পথে, অথচ নতুন কোন কিছুর অস্তিত্বও আপাত দৃষ্টিতে দৃশ্যমান নয় ! তাহলে এরপর কী হতে পারে ? আপনার দার্শনিকগণ কী বলেন, বলবেন কী ? শুভ কামনা রইল ।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
এমএআর শায়েল একটা বা দুটো বানান ভুল আছে। যেমন-বিভিন্ন। ভাইয়া কিছুই বুঝতে পারলাম না। এটা প্রেমের গল্প। নাকি প্রেমিক-প্রেমিকার কথোকপথন। নাকি, আপনি দর্শন ও বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমি নিজেও দর্শনে অর্নাস করেছি। আপনি গল্পের নায়িকা চরিত্রকে ভাল করে ফুটাতে পারেননি। যেমন-আপনি গল্পের ছলে কয়েকজন দার্শনিক-বৈজ্ঞানিকদের উক্তি দিচ্ছিলেন। আর বেচারী নায়িকা চরিত্র আপনাকেই দার্শনিক ভেবে বসে আছে। মোট-কথা প্রত্যেক মানুষই একজন দার্শনিক। আপনি আপনার লেখায় অতিরিক্ত উক্তি ব্যবহার করেছেন। তাদের উক্তি কম দিয়ে নিজের উক্তি ব্যবহার করবেন ভবিষ্যতে এই আশা করছি।এটা যদি নাটকের স্ক্রিপট হয় তাহলে ভিন্ন কথা। ভাইয়া প্রায় দুই বছর পর আবার লিখা শুরু করলাম। দিগন্ত সংখ্যায় আমার লেখা গল্প( আমাকে ভালবাসা পাপ!) পড়ার আমন্ত্রন রইল। সেই সাথে গঠন মূলক সমালোচনা আশা করছি। তবে কিছু যুক্ত বর্ণ ভাঙ্গা রয়েছে। যেমন, ক্ষমা ইত্যাদি।
মনজুরুল ইসলাম Golper kahini ovinobo abong informative.Shuvo kamona.

১২ অক্টোবর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী