অসহায় ভালোবাসা

অসহায়ত্ব (আগষ্ট ২০১৪)

Suman Naskar
  • ৪৪
অসহায়ত্ব কথাটা শোনা মাত্র মনের মধ্যে কেমন একটা হয় তাই না? একটা কথা বলতে পারি প্রত্যেকটা পূর্ণ বয়স্ক মানুষ তার মনের গভীরে উঁকি মেরে যদি পুরানো সময় গুলো নেড়ে চেড়ে দেখে, তাহলে সে অবশ্যই দেখতে পাবে, যে সে কোনো না কোনোদিন, কোনো না কোনো সময়ে, কোনো না কোনো কারণের জন্য এই মায়াবী অসহায়ত্বের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে৷
আর যদি কেউ মনে ভাবে যে, সে কোনোদিন এই অসহায়ত্বের মায়াবী জালে পড়েনি, তাহলে আমি তাদেরকে একটা কথা বলতে পারি, অপেক্ষা কর-এই এতবড় জীবনে কোনো সময়ে তার সাথে ঠিক দেখা হয়ে যাবে৷
এই অসহায়ত্ব নিয়ে কথা বলতে বলতে আমার মনেও একটি ছোট্ট ,অসহায় ভালবাসার, গল্প উঁকি মেরে যাচ্ছে৷ আজ সেই গল্পটা সবাই কে শোনাতে চাই৷
+++++++++
একদা নীলকুমার নামে একটি ছেলে ছিল৷ সে ছোট থেকে খুব বদমেজাজী, রাগী, একগুঁয়ে প্রকৃতির ছেলে ছিল৷ সে কারর সাথে বেশি মিশত না৷ কারর সাথে বেশি কথাও বলত না৷ সবসময় একা একা থাকতে বেশি ভালোবাসত৷ তাই জন্য তার কোন বন্ধুও ছিল না৷
নীলকুমারের সবথেকে বড় একটি দোষ ছিল৷ যে সে কোন মেয়েকে একদম পছন্দ করতে পারত না৷ মেয়েদের কে দেখলে তার ভীষণ রাগ৷ কেন জানি না, মেয়েরা তার কাছে আসলে তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসত৷ এটা যেন তার কাছে একটা বড়ো অসস্থির কারণ ছিল৷
কিন্তু সে পড়াশুনায় ভালো ছিল৷ একসময় সে মাধ্যমিক পাশ করেও গেল৷ নীলকুমারদের স্কুলটি ছিল দশম শ্রেণী প্রযন্ত৷ তাই তাকে বাধ্য হয়ে অন্য আরেকটি স্কুলে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হতে হয়েছিল৷ এখানে তার অসস্থির ভাব আর দশ গুণ বেড়ে গেছিল৷ কারণ হল, যে মেয়ে দের কে দেখলে তার রাগ, এখানে সেই মেয়েদের সঙ্গে একসঙ্গে পড়াশুনা করতে হয়৷
প্রথমের দিকে নতুন স্কুলে অনেকে তার সাথে বন্ধুত্ব করতে এগিয়ে এসেছিল৷ কিন্তু তার এই গুম্ট একরোখা বদমেজাজী ভাব দেখে, কেউ আর তেমন আগ্রহ দেখায় নি৷ এইজন্য এই নতুন স্কুলেও সে একদম একা হয়ে গেছিল৷ নীলকুমার একদম ক্লাসের শেষ বেঞ্চের একটি কোণে সবসময় বসে থাকত৷
টিফিন হলে সবাই বাইরে যেত৷ কিন্তু নীলকুমার কোনো দিন ঘর ও তার জায়গা ছেড়ে উঠত না৷ সে ঐ সময় তার জায়গায় বসে, আনমনা হয়ে কী যেন লেখা লেখি করত৷ এটা লক্ষ্য করত ঐ ক্লাসের আর একজন৷ সে হল এই ক্লাসের একটি ছাত্রী নাম মিতা৷
ক্লাসের সবাই নীলকুমার কে দূরে ঠেলে রেখেদিলে কি হবে৷ একমাত্র এই মিতা মেয়েটির মনে, নীলকুমারের প্রতি খুব আগ্রহ ও কৌতুহল ছিল৷ তার কাছে এই নীলকুমারের বর্বর অসভ্য ভাবটাকে যেন খুব ভালো মনে হত৷ সেই জন্য সে সবসময় নীলকুমারের সাথে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী ছিল৷ কিন্তু নীলকুমার মিতা কে একদম পছন্দ করতে পারত না৷ মিতা যত তার কাছে ঘোরা ঘুরি করত, সে তত মিতার উপরে রেগে যেত৷
কিন্তু মিতা এইজন্য কিছু মনে করত না৷ সে বরং মনে মনে আর বেশি খুশী হত৷ এবং বেশি তার কাছে ঘোরা ঘুরি করত৷
সেদিন মিতা শরীর খারাপ নিয়ে স্কুলে এসেছিল৷ তাই সেদিন সে টিফিনে বাইরে গেল না৷ বেঞ্চের উপর মাথা রেখে নীলকুমারকে দেখতে লাগল ৷নীলকুমারও প্রতিদিনের মত নিজের জায়গায় বসে কি যেন লিখেই চলেছে ৷
হঠাৎ নীলকুমার খাতাটি ব্যাগে, রেখে বাইরে কী কারণে যেন বেরিয়ে গেল ৷ এটি দেখে মিতা কৌতুহলের বশে নীলকুমারের খাতাটি নিয়ে দেখতে লাগলো ৷ ঠিক সেই সময়ে নীলকুমার ঘরে ফিরে এল ৷
মিতার হাতে নিজের খাতাটা দেখে সে ভীষণ রেগে গেল৷ রাগের মাথায় একটা বড় ভূল করে বসল সে,৷ নীলকুমার মিতাকে একটি চড় মেরে বসলো ৷ সঙ্গে সঙ্গে মিতা মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে গেল৷
এই ঘটনা টি দেখতে পেয়ে কিছুজন ছুটে এসে মিতাকে মাটি থেকে ধরে তুলল৷ আর কিছু জন গিয়ে প্রধান মাস্টার মশাইকে কথাটা জানাল৷ সব জানার পর মাস্টার মশাই দারুণ রেগে গিয়ে নীল কুমারকে ডেকে পাঠাল৷ ততক্ষণে নীল কুমার বুঝতে পেরেছে, সে এটা ভুল করেছে৷ এর জন্য শাস্তি তাকে পেতে হবে৷
যথা সময়ে মাস্টার মশাইয়ের সামনে গিয়ে হাজির হয়ে, মাথা নিচু করে দাঁড়ীয়ে রইলো নীলকুমার৷ মাস্টার মশাই একের পর এক কড়া সুরে প্রশ্ন করে যেতে থাকলো৷ কিন্তু সে কোন উত্তর দিল না৷
কিছুক্ষণ পরে মাস্টার মশাই বেঁতের বাড়ি নিয়ে, তার দিকে সজোরে এগিয়ে এল৷ তখন পিছন থেকে মিতা বলে উঠল, ওকে মারবেন না, ওর কোন দোষ নেই৷ আমি নিজে মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলাম৷ এ কথা শুনে মাস্টার আর তাকে মারল না৷ কিন্তু এ কথা শোনা মাত্র নীল কুমার ‘থ’ হয়ে গেল৷ সে বুঝতে পারলো না এটা কী হোল, যে মিতাকে সে মারল৷ সেই মিতা তাকে বাঁচানর জন্য মিথ্যা কথা বলল ৷ তার কাছে প্রশ্ন গুল যেন গোলমাল পাকিয়ে যেতে লাগল৷ সারাক্ষণ এই কথাটা চিন্তা করতে থাকল৷ এমনকি বাড়িতে ফিরেও মনে মনে ছটফট করে যাচ্ছিল৷ নীল কুমার শুধু মনে মনে ভাবতে লাগল, মিতা কেন বাচাল তাকে ?
কিন্তু এর উত্তর একমাত্র মিতার জানা ছিল ৷ পরের দিন টিফিনে সে মিতাকে এই প্রশ্ন টা করল৷ কিন্তু মিতা তার কোন উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল৷ এতে নীল কুমারের মন আর উত্তরএর জন্য দ্বিগুণ ছটফট করতে শুরু করল ৷ যে নীল কুমার কোনদিন কোন মেয়েদের সহ্য করতে পারত না৷ সেই নীলকুমার আজ একটি কথা জানার জন্য এতই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল যে শেষে মিতার হাত ধরতে বাধ্য হল সে৷
এবং সে মিতাকে আবার প্রশ্ন করল কেন তাকে বাঁচিয়েছে৷ এবার মিতা শুধু বলল ,বন্ধু বন্ধুকে কোনদিন কষ্ট দিতে পারে না৷ এই কথাটা শোনা মাত্র নীল কুমার আর কোন কথা বলল না৷ চুপ করে চলে গেল৷ সে বাড়িতে গিয়ে শুধু ভাবতে লাগল সে এতদিন কত ভুল করে গেছে৷ নিজেকে নিজেই ঘৃণা করতে লাগল৷
তার মনে মেয়েদের নিয়ে যে ভুল ধারনা ছিল, সেটা এক মুহূর্তে মিতা মুছে দিয়েছিল৷ কিছু সময়ের মধ্যেই মিতা যেন তার বন্ধুর জায়গাটা তার অজান্তেই দখল করে নিয়েছে৷ সে মনে মনে একটু হাসল৷ কিন্তু কেন হাসল সে নিজেও বুঝতে পারল না৷ পরের দিন সে দেরি করে স্কুলে গেল আজ যেন তার মধ্যে কেমন একটা নতুন ভাব দেখা দিয়েছে৷ সে সেদিন আর কোন ক্লাস করলনা৷সারাক্ষন ক্যান্টিনে বসে কি যেন চিন্তা করছিল৷
এদিকে মিতা ও যেন একটু অবাক, যে ছেলেটা স্কুলে সারাক্ষণ নিজের জায়গা থেকে উঠতোনা৷ সে আজ সারাক্ষণ স্কুলের বাইরে কাটিয়ে দিচ্ছে৷ হঠাৎ মিতা দেখতে পেল৷ নীল কুমার, তার দিকে এগিয়ে আসছে৷ সে ইচ্ছা করে মাথাটা ঘুরিয়ে নিল৷
নীল কুমার গিয়ে মিতার পাশে বসল ৷ এবং কাঁপা কাঁপা সুরে সে মিতাকে বলল আমার কোন বন্ধু নেয় তুমি কি আমার বন্ধু হবে৷ কথাটা শোন মাত্র, মিতা যেন হতবাক হয়ে গেল৷ সে যেন তার নিজের কানকে ও বিশ্বাস কোরতে পারছে না৷ মিতা মনে মনে ভাবতে লাগল সে কোন ভুল শুনছে না তো৷
এমনকি ক্লাস এর সবাই যেন আজ অবাক, যে ছেলে টা কারর সাথে কথা বলে না, মেয়েদের দিকে ফিরেও তাকায় না৷ সে আজ মিতাকে গিয়ে তার বন্ধু হবে কিনা জিজ্ঞাসা করছে৷
যখন মিতার কাছ থেকে কোন উত্তর পেল না ৷ তখন আবার সে চলে গেল৷ নীল কুমার চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মিতার মনে যেন কেমন একটা হল৷ সে নীল কুমারের পিছনে পিছনে গেল৷ এবং নীল কুমারকে বলল সে তার বন্ধু হতে রাজি আছে৷ কথাটা শোনা মাত্র নীল কুমার যেন খুশিতে প্রায় কেঁদে ফেলে ফেলে ভাব৷ সে মনে মনে ভাবল এত খুশি সে এর আগে কখন হয় নি৷
তার পর যত দিন যেতে লাগল, তাদের বন্ধুত্ব ও তত বাড়তে লাগল৷ এমনকি নীল কুমারও আস্তে আস্তে, পরিবর্তন হতে থাকল ৷ এক বছরে মিতা নীল কুমারকে পুরোটা পরিবর্তন করে ফেলল৷ এখন তাকে দেখলে সহজে চেনা যায় না৷ যে নীল কুমার স্কুলের কারর সাথে কথা বলত না৷ সেই আজ সবার প্রিয় হয়ে উঠেছে৷
স্কুলে দুজন দুজনকে একটি সময়ের জন্যও চোখের আড়াল হতে দিত না৷ টিফিনে একে অপর কে খাইয়ে দিত৷ যদি দুজনের মধ্যে একজনার শরীর খারাপ হত তাহলে দুজনে যেন সমান কষ্ট অনুভব করত৷ তারা দুজনে মিলে স্কুলকে মাতিয়ে রাখত৷
তাদের বন্ধুত্ব তাদের অজান্তে কখন ভালবাসায় পরিণত হয়ে গেল, তারা নিজেরা ও জানতে পারল না৷ কিন্তু এই ভালবাসা তাদের দুজনার মনের মধ্যে আটকে রইল৷
কেউ কাওকে বলতে সাহস পেল না৷ তাদের দুজনের মনে একটি ভয় ছিল৷ তারা দুজনা মনে মনে ভয় পেত ৷ মিতা ভাবত নীল কুমার যদি তাকে ভুল বোঝে, আবার নীল কুমার ও ভাবত মিতা যদি রেগে যায়৷ সেজন্য তারা নিজেদের মধ্যে কথাটা চেপে রাখল৷ কিন্তু দুজনেয় মনে মনে অসহায় পাখির মত ছটফট করতে থাকল৷ কিন্তু তাদের কাছে কোন উপায় জানা ছিল না৷
এমনি ভাবে ‘এক বছর- ছয় মাস’ কেটে গেল একদিন নীল কুমারের মন খুব চঞ্চল হয়ে উঠেছিল, ৷ সে আর এ কথা চেপে রাখতে পারছিল না৷ সে একদিন মনে মনে ঠিক করে ফেলল, সে মিতাকে আজ সব বলবে৷ সেদিন নীল কুমার সবার আগে স্কুলে পোঁছে গেল৷ গিয়ে মিতার জায়গায় বসে মিতার আসার জন্য সময় গুনতে থাকল৷
ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল, মিতা আর সেদিন স্কুলে এল না৷ মিতা কে দেখতে না পেয়ে, নীল কুমার পাগলের মত হয়ে রইল৷ টিফিন হবার সঙ্গে সঙ্গে নীল কুমার বেরিয়ে গেল স্কুল থেকে,৷
মিতাদের গ্রামের নাম তার জানা ছিল, কিন্তু তাদের বাড়িটা চিনত না৷ সেজন্য মিতাকে আর সেদিন দেখতে পেল না৷
অসহায় হয়ে সে বাড়ি ফিরে গেল সে৷ সে দিন সে বাড়িতে গিয়ে না খেয়ে থাকল, সারারাত ঘুমোতে পারল না৷ পরের দিন আবার সে মন মরা হয়ে স্কুলে এল ৷ আবার সেই পথের দিকে তাকিয়ে বসে রইল মিতার, যে পথ দিয়ে মিতা স্কুলে আসে৷ অনেকক্ষন পরে মিতাকে আসতে দেখতে পেল৷ দেখে মিতার দিকে ছুটে গেল৷ তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে মিতা প্রায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল৷ নীল কুমারের ও চোখের কোন থেকে জল টোপতে থাকল৷
অবশেষে নীলকুমার কাঁদো কাঁদো শুরে প্রশ্ন করল তোমার কি হয়েছে৷ আমাকে বল, নীলকুমারের কথায় সে আরো কেঁদে ফেলল, কেঁদে কেঁদে নীলকুমারকে জানাল বাড়ি থেকে তার বিয়ের ঠিক করে ফেলেছে, সে এই বিয়ে করতে রাজি নয়৷
এই কথা শুনে নীলকুমারের মনে যেন পাহাড় ভেঙে পড়ল, মুহুর্তে যেন তার চারিদিকে অন্ধকার নেমে এল, সে বুঝতে পারল না এটা কী হচ্ছে৷ সে আর মনের কথা বলতে পারল না৷ তার মনের ভালোবাসা মনে আটকে গেল৷ নীলকুমার বুঝতে পারল না কি বলে সান্তনা দেবে, সে নিজেই তো মনে মনে ভেঙে পড়েছে৷
তার পর থেকে সে স্কুলে আসা ছেড়ে দিল৷ ওদিকে মিতার বাড়ি থেকে আর স্কুলে আসতে দেয় না, দুজন দুজনকে দেখতে না পেয়ে মন তাদের পাষান হয়ে গেছিল৷ তাদের কান্না ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা৷ নীল কুমার আজ অসহায় সে বুঝতে পারছে না কি করবে৷ অসহায় অন্ধের মতো আশার পথ খুঁজতে লাগল৷ কিন্তু এটা ও বুঝতে পারল এটা তার বিথা চিন্তা৷ সে কিছুই করতে পারবে না৷ নীলকুমার সেদিন কতটা অসহায় সে নিজেই বুঝতে পারল৷ না পারছিল, কাউকে মনের কষ্ট বলতে৷ না পারছিল কিছু করতে৷
সময় যেতে যেতে মিতার বিয়ের দিন এসে গেল৷ সেদিন নীলকুমার আর থাকতে পারছিল না৷ এতদিন সে না খেয়ে না ঘুমিয়ে, শুধু মিতা র কথা ভেবেছে৷ সে মনে মনে এটা মানতে পারছে না৷ মিতা তাকে ছেড়ে অন্যের কাছে চলে যাবে৷ মিতার বিয়ের দিন নীল কুমারকে সারাদিন বাড়িতে দেখা গেল না৷ সারাদিন সে পাগলের মতো নিজেকে নিয়ে লুকিয়ে রাখতে চাইল৷ কিন্তু আর সে পারল না৷ রাত্রে মিতাকে একবার দেখতে তার গ্রামে ছুটে গেল৷ সেখানে গিয়ে অসহায় পাগলের মতো মিতার বাড়িটা খুঁজতে থাকল৷
অবশেষে ভগবান তার পথ দেখাল৷ হঠাত তার কানে ভেষে এল বিয়েবাড়ির সানাই, এর আওয়াজ৷ সেই শব্দ অনুসরণ করে নীলকুমার পাগলের মতো দৌড়ে গেল৷ সেখানে গিয়ে দূর থেকে দেখতে পেল, মিতার বিয়ে হয়ে গেছে৷মিতার চোখের কোণে জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে৷ নীলকুমার আজ উল্মাদ৷ তার মুখে আর কোন কথা নেই৷ ওখান থেকে ঐ যে চলে গেল৷ বিয়ের পরেও মিতা নীল কুমার কে ফোন করত৷ তার সঙ্গে কথা বলত৷ নীল কুমার একদিন মনে মনে ভাবল এটা সে ঠিক করছে না৷ এর জন্য মিতার কলঙ্ক হতে পারে, তার বর তাকে ভুল বুঝতে পারে৷ সে মিতাকে আর কোনো কষ্ট দিতে চাইল না৷ তাই মিতা কে ভালরাখার জন্য নিজের নাম্বার পরিবর্তন করে ফেলল৷ তারপর থেকে কোন দিন আর নীলকুমারকে গ্রামে দেখা পাওয়া গেল না৷
যত দিন যেতে লাগল৷ নীলকুমার কে সবাই ভুলে যেতে থাকল৷ একসময় সবাই মনে মনে ভেবেই নিল৷ নীল কুমার আর বেঁচে নেই৷
পাঁচ বছর পরে
পাঁচ বছর পরে গ্রামে একদিন নীলকুমার ফিরে এল৷ তাকে দেখে প্রথমে কেউ চিনতে পারল না৷ তার বাড়ির লোকও তাকে চিনতে পারল না৷ কারণ এই পাঁচ বছরে নীল কুমারের অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে৷ মুখ ভরা দাড়ি, আগের থেকে অনেক রোগা হয়ে গেছে সে৷ বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে গিয়ে কি যেন খোঁজা খুঁজি করতে লাগল৷ তার মন যেন আজ খুব চঞ্চল৷ হঠাৎ একটি কাগজের টুকর পেয়ে আনন্দে চিতকার করে উঠল৷ পেয়েছি পেয়েছি বলে৷ ঐ কাগজের টুকরই লেখা ছিল মিতার দেওয়া সেই ফোন নাম্বার৷ নাম্বারটা নিয়ে সে ভাবতে লাগল, মিতাকে ফোন করবে না করবে না৷ আবার ভাবল এই নাম্বার এখন তার কাছে আছে কি ? শেষে আর কিছু না ভেবে ফোনটা করেই ফেলল৷
তখন ফোনের ওপার থেকে একটি মিষ্টি বাচ্ছাছেলের কান্না ভরা গলা ভেষে এল৷ নীলকুমার কৌতুহলে প্রশ্ন করল তুমি কে বলছে৷ তখন ফোনের ওদিক থেকে উত্তর এল আমার নাম নীলকুমার৷ নীলকুমার এই কথাটা শুনেই কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে কি যেন ভাবতে লাগল সেই সময় নীলকুমার শুনতে পেল ফোনের ওদিকে কারা যেন খুব কান্নাকাটি করছে৷
নীলকুমার কিছুক্ষণ পরে আবার প্রশ্ন করল বাড়িতে তোমার মা বাবা নেই৷ মার কথা শোনা মাত্র বাচ্ছাছেলেটা যেন এবার আরো জোরে কেঁদে ফেলল৷ ঠিক সেই সময়ে নীলকুমারের ফোনটি টিক টিক শব্দে কেটে গেল৷
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আখতারুজ্জামান সোহাগ শেষ দিকে বেশ কিছু ইংগিত রেখে গল্পটা শেষ করেছেন, যেটা আমার ভীষণ পছন্দের। টিন এজ প্রেম এবং বিরহ নিয়ে লেখা গল্প ভালো লেগেছে। শুভকামনা সব সময়।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু মূল্যবান চিত্র। খুব ভাল লাগল।
শামীম খান নীলকুমারের কষ্টটা বুঝতে পারলাম । ভাল লেগেছে । ভাল থাকবেন ।
আফরান মোল্লা ভালো লিখেছেন।শুভকামনা।

২৫ জুন - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪