আত্মজা

কোমলতা (জুলাই ২০১৫)

তাপস চট্টোপাধ্যায়
আত্মজা
দ্বৈপায়ন নিজের খেয়ালে আর তার অনবদ্য তুলির টান ক্যানভাস ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছিল পাহাড় আর সমুদ্রের এক অসীম একাত্মতা।বিকালের পড়ন্ত রোদটা নেল আইল্যান্ডের সমুদ্র সৈকতের একদিকে ঘন সবুজের আস্তরণে ঢাকা উঁচু পাহাড়টা যেন পা-ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো রংবেরঙের কোরালের ওপর ঘন নীল সমুদ্রের চঞ্চল আবেগের অতলান্তে।অন্তত দ্বৈপায়ন ছবিটার মধ্যে তেমনই একটা আঙ্গিক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছিলো ।
হঠাৎই একটা শটল কর্ক উড়ে এসে সোজা ক্যানভাসের ওপর আছড়ে পড়ে । নেহাৎই কাঁচা রং এর ওপর পড়ে ছবিটার আদ্যোপান্ত নষ্ট হয়ে যায়। দৈপায়ন হাতের ইজেল আর তুলিটা পাশের চেয়ারের ওপর নামিয়ে পিছনে তাকায় ।
স্যরি আঙ্কেল,আমার জন্যই আপনার ছবিটা নষ্ট হয়ে গেল।
দৈপায়নের মাথায় একটুঁ আগেও যে বিরক্তি আর অসন্তোষের আগুন জ্বলে উঠেছিলো তা যেন এক মুহূতে মেয়েটিকে দেখে নিভে যায়। বয়স কতই বা-এগার কি বারো।শ্যামলা গায়ের রং, ছিপছিপে চেহারা। দুটো ঘন কালো বড় বড় চোখে শৈশবের ভাষা।
‘ইটস অকে। তুমি তো ইচ্ছে করেকরনি’।
ব্রজেস দুরে দাড়িয়েছিল।রেসটেই কাজ করে। দৈপান যে কদিন থাকে,ওর ফই ফরমাস খাটে।
‘তোমার নাম কি ?’
মেয়েটা সেখান থেকে সরছিলো না,হয়তো অপরাধবোধই,দৈপায়ন পরিস্থিতিটা হাল্কা করার চেষ্টা করে।
‘অন্তরা’।
এই সময় রেসটের সব বাচ্চারা সীবিচে খেলা করে। অন্তরাও ওদের সঙ্গে ব্যডমিন্টনে মেতেছিল। ভাবেনি তারই র্যা কেটের ছোঁড়া শাটাল ককটা এমন অঘটন ঘটাবে।
‘আমি আর আমার মা এসেছি। একশো সতেরো নং কটেজ।‘
অন্তরা আর দাঁড়ায় না। সন্ধে নেমেছে।ব্রজেশ আঁকার যাবতিয় সরঞ্জাম গুলো গুছিয়ে এগিয়ে যায়।পিছনে দৈপায়নও।
কফিসপের বাইরেটা বেশ নিরিবিলি ।একটু চাপা অন্ধকার।রাত খুব একটা বেশী হয়নি। দৈপায়ন এক কোনে একটু একান্তে একটা কফি আর সামান্য কিছু খাবার অড্রার দেয়। অন্তরা দূর থেকেই দৈপায়নকে দেখতে পায়।একজন মহিলা,ওর মা ই হবে,এক প্রকার জোর করেই দৈপায়নের সামনে এসে দাঁড়ায়।
‘মাম্মি,আমি বিকেলে এনারি ছবিটা নষ্ট করে দিয়েছি ’
তক্ষনে দৈপায়ন দুজনকে কাছ থেকে দেখতে পায়।
’দেখুন তো,কত লজ্জার কথা। আপনার কাজের ক্ষতি করে দিল।’
’না না ওতো না জেনেই করেছে।তাছারা সী ফেল্ট স্যরি ফর দ্যাট।”
দৈপায়ন আলো আধারির মধ্যেই মহিলা কে স্পষ্ট দেখতে পায়।অন্তরার সঙ্গে অনেকটাই মিল। নিশেষ করে চোখ দুটো মসে হয় এক শিল্পীর সৃষ্টি।
”দাড়িযওে কেন বসুন।”
দৈপায়ন কফি আর ¯স্নেক্সের অর্ডার করে ।
”আপনি নিশ্চয়ই কোলকাতা থেকে ? মহিলার প্রশ্ন।”
হ্যা, আর আপনি?
চেন্নাই থেকে। একটি কলেজে পড়াই।
অন্তরার বাবাকে দেখছি না।উনি আসেনি ?
উনি থাকেন না আমাদের সাথে।
স্যরি , আপনা কে হয়তো কষ্ট দিলাম।
নো ইসট ওকে।আমার সয়ে গেছে।
আপনার ফ্যামিলি আসেনি?
নো। আমি একাই। আসলে আমি ব্যাচেলার। ছবি আকি আর দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াই।বাউন্ডলে বলতে পারেন।

অন্তরা বলছিল,আপনি নাকি ভালো ছবি আঁকেন।
পোট ব্লেয়ার থেকে নেল জাহাজে প্রায় তিন ঘন্টার পথ। বেশ কয়েকবার এসে দৈপায়নের এই ছোট্ট দ্বীপটার উপর একটা টান জন্মেছে।বিশেষ করে এখানে সমুদ্রে নিচে রং বেরঙের করাল-এর স্বকীইয়তাকে এক দম ভিন্ন করে রেখেছে।নেল আইল্যান্ডের এই নিঃস্তব্ধ বিচে দাড়ালে দৈপায়নের মনে হয় প্রকৃতি যেন ধুসর ক্যানভাসে নিরন্তর নতুন নতুন রঙের মিশ্রণে অহরহ নতুন কিছু সৃষ্টিতে বিভোর হয়ে আছে,খেয়ালি তুলির টানে কেবলি বদলে যাচ্ছে। চল্লিশোধে দৈপায়ন অনেক চেষ্টা করেও ক্যানভাসে তাকে চিরন্তন ক্রতে পারে না।
খুব সকালেই ব্রজের আঁকার যবতীয় সরঞ্জাম গুলো সীবিচে রেখে এসেছে। দৈপায়নও এক কাপ চা খেয়ে সেখানেই পৌছে যায়।অল্প আলো ফুটেছে । দৈপায়ন সেই মুহুত টাকে তার ক্যাবভাসে আটক করার চেষ্টা ক্রে।বুঝতেও পারে না যে কখন গত সন্ধ্যের সেই স্বল্প পরিচিতা তার পেছনে দাড়িয়ে আছে।
“কতদিন আপনার নেশা ?”
দৈপায়ন পিছনে ফিরে একটু হাসে,বলে,”যবে থেকে তার জীবনের ক্যানভাসটা তার রং হারিয়েছে, তখন থেকেই।“
অন্য কে দোষ দিয়ে কি লাভকি? যখন নিজেই চেয়াছিলেন একটা বিবণ,বেরং প্রচ্ছদে নিজেকে বাঁধতে।এখন দৈপায়নের তুলির তান থেমে যায়।একবার পিছন ফিরে তাকে গভির দৃষ্টিতে আগাপাস্তলা জরীপ ক্রে,একটু মুচকি হেসে নিপুন হাতে তুলির শেষ কিছু ছোয়া সাম্নের ক্যানভাসে ওঠা সিকোয়েন্সটা প্রান পায়।
আপনি ভুল করছেন ,অথবা ভুল বুঝছেন।আজকের মত সেদিনও আমার তুলির প্রতিটি ছোঁয়ায় যতটাই আবেগ ছিল,ততোটাই ছিল বিশ্বসযোগ্যতা।তুলির শেষ টান টুকুতেও ছিল সত্য। তবুও কেঁউ বা কারা কেম্ন করে আমার খোলা ক্যানভাসর অপর অস্মপুন ছবিটাকে কালি ছিতিয়ে নষ্ট করলো তা আজও অজানা।
আপনি কি সেখানেও অন্তরাকেই দায়ী করেন ?
আমি জানি না, কারন আমার আর আমার কল্পনার মাঝে অন্তরা এখনও আমার কাছে অধরাই।
লাজিলিং-এর কনভেন্ট স্কুলে এক সতেরো আঠারো বছর বয়সের তাজা প্রানবন্ত যুবক। কোলকাতার ধনী,সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক মাত্র সন্তান। যেমন বুদ্ধি দীপ্ত চেহারা তেমনই পড়াশোনায় সকলের আগে। বাস্তবে বিশ্বসী,আবেগের ঠাই নাই।আগুন না ছুয়ে বিশ্বাস করে না উত্তপ্ত কিনা,ঝড়ের সামনে দাঁড়িয়ে তার গতিবেগ আন্দাজ করতে চায়।
অন্যদিকে তারই প্রায় সমবয়সী দোহারা চেহারার শ্যমলী মেয়েটি।ঘন কালো দু-চোখের অতলে গভিরে এক বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠীত সত্য।দিল্লিতে জন্ম হলেও আদব কায়দায় অতি সাধারন।বাবা মা দুজনেই পাইলট।মা ইরানি,একই এয়ার ক্রাফটের বন্ধ ককপিঠে পরিচয়,ভালোবাসা,বিবাহ বন্ধনে নিস্পত্তী।তার পর একসাথে চিরকাল ল্যান্ডিং আর টেকঅফে জীবন টিকে উপভোগ।বৈশালি অনেক চেষ্টা করেও দৈপায়নের ভালোবাসাকে বুঝতে পারেনা।যুবতী মনের একটু বিচার বুদ্ধী দিয়ে এত গভীরে যাওয়ার ইচ্ছেও হয় না।তার আগাই দুজনে হারিয়ে যায় এক নিবিড় ভালোবাসার টানে।বিঞ্জানের ছাত্র হলেও দৈপায়ন তার নতুন যৌবনের কিছু নতুন ওনুভতির বৈঞ্জানিক ব্যাখ্যা খুজে পায় না।বৈশালির উপস্তিত তাকে যতটা উদেবল করে,অনুপস্তিতিতে ততটাই লোনলি।কো-এডুকেশন হলেও ওদের হোস্টেলটা বৈশালিদের হোস্টেল থেকে বাশ কিছু দূরতব।ক্লাসরুম,ল্যাইবেরি,ল্যাব,কমনরুম,সেমিনার হল কিংবা ক্যান্টিন সবত্রই একে অন্য কে নজর ছাড়া করতে পারেনা।
আর একটা বছর,তারপর ফাইনাল ইয়ার।দুই কিশোর কিশোরী হয়তো দুজন কে আর কখনো খুজে পাবে না,তবুও বিচ্ছেদের সেই অভিশপ্ত মুহত্তটা মন থেকে মেনে নিতে চায় না।
‘আমি জানি তুমি কোলকাতায় গিয়ে তুই আর আমায় মনে রাখবি না।‘
সেটাই তো স্বাভাবিক,তেমনটা তো দিল্লিতে তোরও হতে পারে।
না রে,আসলে আমি শুরুতে সেটাই ভেবেছিলাম।কিন্তু গত ক্রিসমাস ছুটিতে বুঝতে পারলাম যে তোকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না।একদিনও না।
তখন সবে সন্ধ্যে হয়েছে।ক্লাস শেষ হয়েছে অনেকক্ষন।ওরা দুজন লাইব্রেরিতে স্টাডির বাহানায় কিছুক্ষন গল্প গুজবে কাটায়।তারপর দুজনেই বিল্ডিঙয়ের নিচে নেমে খলা মাঠের আলো আধারিতে মিশে যায়।মাঠ পার হলেই লেডিস হোস্টেল।বৈশালিকে গেট পযন্ত ছেড়ে দৈপায়ন হোস্টেলে ফিরে যায়।বৈশালির শেষ কথাটা দৈপায়নের কানে গেলেও নিজের ইমোশনটা চট করে প্রকাশ করতে পারে না।দ্বিধা হয়,পাছে বৈশালী ওকে দুবল ভাবে।গত ক্রিসমাসের ছুটিতে দৈপায়ন ও যে বৈশালিকে কতটা মিসস করছে,প্রতি মুহুর্ত বৈশালি ওর অনুভুতিতে কতটা ছেয়ে ছিল তা এই মুহুর্তে নিরর্থকই মনে হয়।

খোলা মাঠের ঠিক মাঝখানে ওরা থমকে দাঁড়ায় । একে অপরকে ঠিকঠাক দেখতে পায় না। দ্বৈপায়নের হাতের মুঠোয় বৈশালির হাতটা। শরীর শরীরের খুব কাছে । নিঃশ্বাস গায়ে লাগে। দুজনে অনেকটা সময় দুজনের গন্ধ নেয়। খোলা আকাশের নিচে দুটো কিশোর প্রান একে অপরের মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
সেবার সামারে স্কুল থে ট্যুরে ছেলেমেয়েরা সকলে রকগার্ডেন্স-আ এডুকেশন ট্যুর হলেও ওদের কাছে ছিলো এটা বাড়তি পাওনা । সারাদিন নানান অছিলায় একে অপরের কাছে পাওনা। ঘন জঙ্গলের মধ্যেই একটা মাঝারি জলপ্রপাত অনেকটা উপর থেকে জল নিচের নদিতে আছড়ে পড়ছে। খরস্রোতা নদিটা বয়ে চলেছে বড় ছোট অনেকগুলো পাথরের বাঁধা পেরিয়ে । চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেটুকু সমতল, সেখানেই ছাত্র ছাত্রীরা গল্প গুজবে ব্যস্ত। দ্বৈপায়ন আর বৈশালী সকলের থেকে একটু একান্তে বসে থাকে । ইদানিং দুজনেই দুজনের মধ্যে একটা পরিবর্তন খুঁজে পেয়েছে । দ্বৈপায়ন বৈশালীকে যতই কাছে টেনে নেয় ততই ওর নরম দেহটা আরো মিশে যেতে চায় । বৈশালী ওর মুখটা খুব কাছে নিয়ে যায়, দ্বৈপায়নের ঠোঁটদুটোর খুব কাছে ।
একটা অদ্ভুত নেশার দুজনকেই পেয়ে বসে, অনেকটা সময় কেটে যায়ছে ।
একটা অদ্ভুত নেশার দুজনকেই পেয়ে বসে, অনেকটা সময় কেটে যায়। হঠাৎ বৈশালী নিজেকে মুক্ত করে ভিজে পাথরের উপর দিয়ে হাটতে থাকে । দ্বৈপায়ন মানা করলেও শোনে না । ভিজে পাথরে পা পিছলে যায় ।

দ্বৈপায়ন চোখের সামনেই অসহায় দেহটা ভেসে যেতে থাকে । ততক্ষণে বাকিদেরও চোখে পড়ে । সকলেই চেঁচামেচি করে কিন্তু দ্বৈপায়ন সোজা লাফ দেয় নদিতে। অত্যান্ত পটুতার সাথে কিছুক্ষনের মধ্যেই বৈশালীর অচৈতন্য দেহটা দ্বৈপায়নের সবল হাতের বেষ্টনিতে পাড়ে উঠে আসে ।
খুব কাছেই হেলথ সেন্টার। সেখানেই বৈশালীকে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই জ্ঞান ফিরে আসে। শরীর দুর্বল থাকায় ডাক্তাররা প্রথমেই ইঞ্জেকশন দেয় । বাকি সকলেই হোস্টেলে ফিরে যায় । শুধু দুএকজনের সাথে দ্বৈপায়ন রাতটা হেল্‌থ সেন্টারে জেগে কাটিয়ে দেয়। একটা কেবিনে বৈশালী ঘুমিয়ে ছিলো। হেল্‌থ সেন্টারের ডাক্তার নার্স রোগিরা সকলেই নিজেদের কেবিনে ঘুমিয়ে আচ্ছন্ন । দ্বৈপায়নের চোখে ঘুম নেই । মাঝে মাঝেই গিয়ে কেবিনে বৈশালীকে দেখে আসে। মাঝরাতে বৈশালীর ঘুম ভেঙ্গে যায় । দ্বৈপায়ন ঠিক তখনি কেবিনে আসে । বৈশালীর সবকিছু মনে আসে । বিছানায় উঠে বসার চেষ্টা করলে দ্বৈপায়ন জোর করে বিছানায় শুইয়ে দেয়ার চেষ্টা করে । হঠাৎ বৈশালী দুটো হাতে দ্বৈপায়নকে বিছানায় টেনে নেয়।
একনিমিশে নিজেকে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত করে দ্বৈপায়নের শরীরের অধিকার নেয়। কয়েক মুহুর্ত আগে খরস্রোতা নদিতে দ্বৈপায়ন যেমন করে বৈশালীর শরীরটাকে উদ্ধার করেছিলো ঠিক তেমনি কিছু বুঝে উঠার আগেই দ্বৈপায়ন নিজেকে ওর নিরাবরন শরীরে আত্নসমর্পন করে । দুজনের জীবনেই এই প্রথম অনাবিল আনন্দ আর আদিম অনুভূতি এক উষ্ণ আবেগ যেমনটা আর কখনই ওরা এই জন্মে ফিরে পাবে না । যেন এক কোলাহল মুখর জনপদে শ্নসানের নিস্তবতা প্রত্যাশার পরিপুর্নতার অনেক গভীরে তারপর হঠাৎই মুক্ত হয়ে ক্লান্ত হয়ে পরে।

বেলা বাড়ছিলো ভাটার টানে সমুদ্র দূরে সরে যাচ্ছিলো । তারি ভেতরে যে রংবেরঙের কোরালগুলো একটা মোহময় স্বর্গীয় পরিবেশের রচনা করেছিলো এই মুহুর্তে তারা যেন নিরাবরন, নিরাভরন হয়ে পরে । একটু আগেই যে ঢেউগুলো সেই রঙ্গিন কোরালের টুকরোগুলো আচল ভরে এনে বারংবার ক্লান্ত সৈকতকে উপহার দিচ্ছিলো, অন্তরা সেইগুলোই একমনে সংগ্রহ করতে ব্যস্ত ।
তারপর ? মহিলার প্রশ্ন দ্বৈপায়নকে ,
তারপর দুমাস পরেই ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে যায়। হোস্টেল ছেড়ে যে যার বাড়ী চলে যায়।
আর বৈশালী? তার কি হোল ?

দ্বৈপায়নকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে হয় । তিন বছর পর ফিরে এসে দিল্লির ঠিকানায় যায়, কিন্তু সেখানে বৈশালীর কোন খবর পায় না।
পাওয়া যায় না , না পাওয়ার কোন চেষ্টা করা হয় না ?
সেটা একেবার অসত্য , কারন দ্বৈপায়ন সম্ভাব্য সমস্ত স্থানে এবং আশেপাশের সমস্ত বাসিন্দাদের থেকে সামান্য কিছু যোগসূত্র পাওয়ার চেষ্টার কোন ত্রুটি করে না। এটাই জানা যায় যে, সকলকে কিছু না জানিয়েই ওরা হঠাৎই স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় । একপ্রকার ইচ্ছাকৃতি তাদের সেই অন্তর্ধান।
হঠাৎ সেই অন্তর্ধানের কোন কারনেই কি দ্বৈপায়নের অনুমেয় ছিলো না? অতিতে কিছু স্মৃতি বিশ্লেষণ, যেখানে তার সাম্ভাব্য কোন কারন লুকিয়ে থাকতেওতো পারতো । সে চেষ্টারও দ্বৈপায়ন ত্রুটি করেনি । দার্জিলিঙের কনভেন্টের রেভারেন্ড ফাদার ওয়েলেসের শরণাপন্ন হয় । কিন্তু সেখানেও দ্বৈপায়নের অদৃষ্টে জোটে শুধুই বিফলতা । বৈশালীর বাবা স্কুলকে লিখিতভাবে ইন্সষ্ট্রাকসন দেয় যেন । তাদের নতুন গন্তব্যের কোন হদিস কাউকে জানানো না হয় ।
অন্তরা ফিরে এসেছে । কচিদুটো ফুলের মতো হাতের বন্ধনিতে রঙ্গিন কিছু কোরালের ভাঙ্গা টুকরো । ওই জীবাস্মগুলোর উৎপত্তিতে কোন কৌতূহল নেই তার । শুধু সৌন্দর্যের স্বীকৃতি ।
অচেনা মহিলা অন্তরায় দুহাতের মুঠো থেকে কোরালের টুকরোগুলো নিয়ে বালিতে আছড়ে দেয় । অন্তরা খুশি হয় না । মায়ের হাত ধরে ফিরে যায় । দ্বৈপায়ণ পিছু ডাকে না । কেমন যেন মনে হয় , এই গোটা ঘটনার পরিনতিটা ওই মহিলার জানা ।
সেদিন সূর্যাস্তের আগে অন্যদিনের মতই ব্রজেস আঁকার সব সরঞ্জাম তৈরি রাখে । নতুন ক্যানভাস, ইজেল, ধোয়া মোছার তুলি, তবুও দ্বৈপায়নের ইচ্ছে হয় না কোন কিছুর আঁকতে।পুরো পরিবেশে কোন আঙ্গিক খুঁজে পায় না । আজ মহিলা একাই অন্তরা তার সমবয়সি সঙ্গিসাথিদের সাথে খেলায় মত্ত।
আবার কেন এলেন? এই মুহুর্তে বৈশালীর আত্মপক্ষের সমর্থনের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।
দ্বৈপায়নের গলায় নিরাসক্তি বেশ স্পষ্ট হয় ।
বোধহয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কোন নারীর আত্মপক্ষের সমর্থন নেহায়তি অবাঞ্ছিত ।
তা কেন? অযথা পুরুষ বিদ্বেষ আজকাল আধুনিকাদের কাছে অনেকটা এক্সট্রা কসমেটিক টার্চ । আপনার কাছে এই মন্তব্যটাই প্রত্যাশিত । কিন্তু একটা অবিবাহিত অন্তঃস্বত্বা কিশোরীর কাছে আপনাদের সমাজে অস্তিত্ব বজায় রাখাটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় দায় ছিলো । একদিকে গর্ভে তার অবৈধ সন্তান, অন্যদিকে নিরাপদ বাবামায়ের সামাজিক মর্যাদাহীন । চলাফেরা ওঠা-বসা সর্বত্রই অসংখ্য কৌতূহলী চোখের এক্টাই ভাষা, সন্তানের বৈধতা তার পিতৃপরিচয়। অবশেষে রাতের অন্ধকারেই এইসব সন্দিহান চোখে দৃষ্টি এড়িয়ে অতি গোপনে অন্ত্রর্ধান দিল্লি ছেড়ে সোজা চেন্নাই ।
কিন্তু বৈশালীর কাছেতো দ্বৈপায়নের কোলকাতার বাড়ীর ঠিকানা ছিলো ।
হ্যা ছিলো । চেন্নাই থেকে সোজা ফ্লাইটে কোলকাতা গিয়ে ছিলো সে । তার কাছে তখন নিজের অস্তিতের চেয়েও তার ভাবী সন্তানের পিতৃ পরিচয় অনেক বেশী প্রয়োজন ছিলো ।
তারপর ?
দ্বৈপায়ন তখন বিদেশে । প্রঠিষ্ঠিত সম্ভ্রান্ত পরিবার , এক অচেনা অজানা সন্তান সম্ভাবা কিশোরিকে পুত্রবধুর মর্যাদা দিতে রাজি হয় না । শর্ত আসে গর্ভপাতের তাহলেই ভাবা যেতে পারে ।
বৈশালী রাজি হয়?
অসম্ভব । বৈশালীর সংগীত অন্তরা ছাড়া অসম্পুর্ন । অতয়েব খালিহাতেই ফিরে আসে । ব্রজেস অনেকক্ষন অপেক্ষা করে খালি ক্যানভাস আর আঁকার সরঞ্জাম গুলো নিয়ে রিসটে ফিরে গেছে।আজ বোধ হয় কৃষ্ণপক্ষ।সী বিচের এই অংশটায় একটা চাপা অন্ধকার।দুজনে অনেক চেষ্টাকরেও সেই মুহুর্তে দুজনের অভিব্যক্তি দেখতে পায় না।
পরদিন সকালে দৈপায়ন কোলকাতায় ফেরার জন্য তৈরি হয়ে নেয়।ইতি মধ্যেই ব্রজেস মালপত্র গাড়িতে তুলে দিয়েছে। দৈপায়ন নিজের ঘর থেকে বারিয়ে সোজা ১১৭ ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।বাইরে থেকে তালা দেওয়া।পিছোনে ব্রজেস এসে দাড়িয়েছে।
“মেমসাহেব মেয়েকে নিয়ে খুব ভোরেই চলে গেছে।“
নিদিষ্ট সময়েই নেল আইল্যান্ডের জেটি ছেড়ে জাহাজটা পোর্টব্লেয়ারের দিকে এগিয়ে যায়।মাঝ সমুদ্রের দিকে যতই এগিয়ে যায়স সুন্দরি নেল-এর উন্মক্ত সী বিচটাও দৈপায়নের থেকে অনেকটা দূরে সরে যেতে থাকে,যেমনটা তার অতীত আর তার আত্মজা।


(এই গ্লপের সকল চরিত্র কাল্পনিক)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সুখের পায়রা ভালো লাগল আপনার লিখাটি পড়ে।
কবিরুল ইসলাম কঙ্ক ভালো লাগালো । আমার কবিতা ও গল্পের পাতায় আমন্ত্রণ রইলো ।
তৌহিদুর রহমান অনেক ভালো লাগলো...পাতায় আমন্ত্রন রইলো...আমার গল্প বা কবিতা ভালো লাগলে ভোট করুন...প্লিজ...
হাসনা হেনা আজকে মোরা শপথ করি, দিব যোগ্য সম্মান। পৃথিবীতে সবার চেয়ে, বাবার শ্রেষ্ঠ মান। ভাল কথা। ধন্যবাদ।
তাপসকিরণ রায় সুন্দর ছন্দ ও ভাবনায় লেখা আপনার বাবাকে নিয়ে লেখা কবিতাটি। ধন্যবাদ।
শেখ মাহফুজ অন্যের কবিতা চুরি করে কবি হওয়া যায়না।আমার বাবা বিশেষ সংখ্যায় বাবা শিরোনামে কবিতাটির হুবহুব কপি করেছেন।
একই শিরনামে আমি একটি গল্প পাঠিয়েছিলাম দূর্ভাগ্যবসত সেটি কবিতায় রুপান্তরিত হয়।অ্যাডমিনকে লিখিত জানিয়েছি ।
এই মেঘ এই রোদ্দুর সুন্দর লিখেছেন। ভাল লাগল অনেক
গোবিন্দ বীন পৃথিবীতে সবার চেয়ে, বাবার শ্রেষ্ঠ মান।ভাল লাগল,ভোট থাকল।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
আবুযর গিফারী খুব সুন্দর লিখেছেন দাদা। ভোট থাকলো। আমার পাতায় আমন্ত্রণ থাকলো।

১৭ জুন - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী