বৈরিতা

বৈরিতা (জুন ২০১৫)

গোবিন্দ বীন
  • ১৫
সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পরে আসে একটা রাত ।যার জন্য সারাদিন পরিশ্রম করে অপেক্ষা করে সেই রাতের ।পৃথিবীর সকল জীবজন্তু থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত এই ক্ষনের জন্য প্রহর গুনে ।কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে যারা এই সময়টাও জনগনের শান্তির জন্য,কল্যানের জন্য,নিরাপত্তার জন্য কাজ করে থাকে।কিন্তু সেই রাত জাগা মানুষটিকে নিয়ে একবার ও ভাবি না।কিছু দিন আগে আমাদের গ্রামে কোন চৌকিদার ছিল না ।ছিল না বলতে চৌকিদারের প্রয়োজন হত না কিন্তু বর্তমানে চুরি,ডাকাতি যেভাবে বাজার দরের মত বাড়ছে তাতে চৌকিদারই পারে কিছুটা রক্ষা করতে।দেখা যায় নিরাপত্তার অভাবে গরীবরা তাদের শেষ সম্বল টুকু হারিয়ে ফেলছে। এ কাজের জন্য আমাদের গ্রামের অনেকজঙ্কে বলা হল,কিন্তু কেও তাদের ঘুম হারাম করে রাতের বেলা মানুষের নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে না।কিন্তু যে গরীব তার কাছে ঘুম থেকে তার পেটের কথাটা আগে চিন্তা করে।আমাদের গ্রামেরই একজন নাম রহমত আলী,তাকেই এ কাজটা দেওয়া হল।তিনি এলাকার সকল মানুষকে যথেষ্ট সম্মান করতেন।তিনি তার এ দায়িত্ব সৎভাবে পালন করতেন।রজনী হওয়ার পরপরই চৌকিদারের খাকি পোষাক পড়ে,হাতে একটা বাশি নিয়ে আর বল্লম রাখতেন নিজেকে রক্ষা করার জন্য। আধার গ্রামটা পাইচারি করতেন আর গুন গুন করে গান গাইতেন। তার পাইচারিতে ও গানে আমরা বুঝতাম আমাদের ঘুমানোর সময় হয়েছে। তিনি ঘুমের প্রতিকের মত ছিলেন। চৌকিদারিতে আসার পর থেকে গ্রামে চুরি ডাকাতি হত না বললেই চলে। রহমত আলীর একমাএ দুশমন ছিল আজগর আলী।তাকে একবার চুরির দায়ে ধরিয়ে দিয়েছিল। তার পর থেকে চৌকিদারের সর্বনাশের জন্য হাত ধুয়ে লেগে থাকত।সর্বদা তাকে ফাসানোর ফন্দি আটত।কিন্তু রহমত আলীকে সবাই বিশ্বাস করত বলে তাকে ফাসানোটা সহজ ছিল না।একরাতে রহমত আলী আজগরের বাড়ির সামনে এসে টর্চ লাইটের সাদা আলোটা ফেলতেই কোন কিছুর শব্দ পেলেন।এগিয়ে যেতেই একজন কালো পোষাকের লোক।তার দিকে টর্চ ধরতেই আধারের মাঝে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।তার চোখে কিছু যেন চমকালো,গিয়ে দেখেন অলংকারের বাক্স। হাতে নিতেই আজগরের দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পেলেন।চৌকিদার কিছু বলতেই,আজগর বলল তুই প্রহরা দেওয়ার নামে চুরি করস?গ্রামের সবাইকে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করল।গ্রামের বুড়ো,যুবক,শিশু রাতেই এসে জড়ো হল আজগরের বাড়িতে।বাড়িতে উপস্থিত না হতেই সবার নজর পড়ল রহমত আলীর ওপর।সবাই বলে,কিরে আজগর এত রাতে চেচামেচি কইরা আমগরে ডাক দিলি ক্যান?আজগর জোর গলায় বলে,আমরা যারে নিরাপত্তার লাইগ্যা রাখসি হেই আমাগরে পিঠ পিছে ছুরি মারে।এইডার একটা বিহিধ করন লাগব।রহমত শুধু আগজগরের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। গ্রামের সবাই এক কন্ঠে বলে,রহমত ভাই তোমারে আমরা এত বিশ্বাস করতাম আর তুমি এইকাজ করবার পারলা?তাদের কথায় রহমত কয়,তোরা বিশ্বাস কর আমি চুরি করি নাই।আমি চোর না।তাহলে তোমার হাতে ওইডা কি?আমরা সবাই নিজের চোখে দেখসি,এইডারে তুমি ক্যামনে ভুল বানাইবা?সে রাতেই গ্রামের মেম্বার আজগরের বাড়িতে এসে সব ঘটনা শুনল।মেম্বার কয়,রহমত তুমি ক্যামনে এই কাজ করলা?রহমতের একি উত্তর ,বিশ্বাস করেন হুজুর আমি গরীব মানুষ কিন্তু আমি চোর না।আমারে যা সাজা দিবেন আমি মাথা পাইতা নিমু।আমার শেষ নিঃশ্বাসটুকু এই কথাই কইব,আমি চুরি করি নাই।সে বারের মত রহমতকে সবাই ক্ষমা করে দিল।গয়নার বাক্সটা হাত থেকে কাইড়া নিয়া আজগর চুপিস্বারে বলে,এই বারের মতন তুই বাইচ্যা গেলি।। রহমত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না কারন তার বাড়িতে বৌ,ছেলে,মেয়ে আছে।রহমতকে আজগর প্রাননাশের হুমকি দেয়।রহমত রাতেই বাড়ি ফিরে আর মনে মনে ভাবে,চুরি না কইরাও আমারে চুরির কলঙ্ঙ্ক সারাজীবন মাথায় নিয়া বইতে হইব।মাঝে মাঝে নিজেকে গরীব বলে ধিক্কার দেয়।আল্লাহ তালারে প্রশ্ন করে,কেন তুমি আমারে গরীব ঘরে জন্ম দিলা?আর ভাল লাগে না এই কষ্টের মধ্যে,আমারে তুমি পরলোকে পাঠাইয়া দেও।রহমতের স্ত্রী আয়েশা বলে,কিগো আজকে তোমার আসঅতে এত দেরি হইল যে?তার স্ত্রী আবার শিক্ষিত,মেট্রিক পাস করেছে।তার পরে বিয়ে হয়ে গেল,স্বামীর সংসারে পড়াশোনার সুযোগ পায় নাই।রহমত অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,আরেকটা গ্রামে গেছিলাম তো তাই দেরি হইল।কারন চোখে চোখ রেখে মিথ্যা কথা বলা যায় না ।সকালে নদীর ঘাটে জল আনার সময় আয়েশাকে দেখে কয়েকজন মুখ ফুটে বলে উঠল,দেখ চুরের বৌ যাইতাসে।আয়েশা সেদিকে নজর দিল না।বাড়িতে কলসিটা রেখেই রহমতকে বলল,কিগো ওরা আমারে চুরের বৌ কয় ক্যান?রহমত বলে,কি করবা গরীব দেইখ্যা কিছু কইবার পারি না।গরীব জীবনটাই এমন খুটা খাইয়া বাইচ্যা থাকতে হয়।একথা শুনে চুপ করে থাকে আয়েশা।এভাবেই কষ্টের মাঝে দিন কাটে রহমতের ।একেকটা দিন যেন তার কাছে এক বছরের সমান ।একদিন আয়েশা তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে যায়।সেই দিন আজগর মাতব্বের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা ধার নিল । কি করবে টাকা দিয়ে , তেমন কিছু বলে নাই ।
সাঝের বেলা রহমত যখন নামাজ পড়তে যাচ্ছে , এমন সময় আজগর চুপি চুপি রহমতের ঘরে ঢুকল , ঢুকেই এদিক ওদিক তাকাতে লাগল । তার চৌকিদারে পোশাকের পকেটে সব টাকা গুজে দিল । সেদিন আয়শাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায় ।তার বৌ খাবারটা রান্না করে শিকলে বেধে টাঙিয়ে দিয়েছিল।যেন বিড়াল কুকুর খাবারটা নষ্ট না করতে পারে।মাছের তরকারিটা শিকল থেকে নামানোর সময় তার চৌকিদারি পোষাকে পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।মনে মনে ভাবে আজ তাকে সাধারন পোশাকে ডিঊটি করতে হবে।কারন রাতের মধ্যে তার শার্টটা শুকাবে না।সেদিন রাতে গ্রামে চারদিকে হৈ হুল্লোড় লেগে যায়। আজগরের ঘর থেকে টাকা চুরি হয়েছে।গ্রামের সকলকে নিয়ে একে একে করে সবার ঘর ছন্নবিন্ন করে খোজা হয়।কিন্তু কোথাও টাকা পাওয়া যায় নি।সবাই চিন্তায় পড়ে যায় ।সবার মনে হটাত প্রশ্ন জাগে,আজগর এত টাকা পেল কোথায়?আজগর উত্তরে বলে,আমি মাতব্বরের কাছ থেকে টাকা নিয়া আইসি।মাতব্বর মাথা নেড়ে তার কথার সায় দেয়।এর আগে কখনো এমন হয়নি।রহমত কোন চিন্তা করে না ,কারন সে তপ আর চুরি করে নি।হঠাত চৌকিদারকে দেখে মহাজন বলে,কি রে তর চৌকিদারি পোষাকটা কই?হুজুর সেটা নষ্ট হয়ে গেছে,কাল থেকে পইরা আমু।আজগর বলে,সবার ঘর ত দেখলাম একমাত্র চৌকিদারের ঘরডাই বাকি আসে।মেম্বার বলে,চৌকিদার এই কাজ করব ক্যান?আজগর মুখটা বেকিয়ে বলে,গরীবের তো ঠিক নাই পেটের দায়ে সবকিছু করবার পারে।আচ্ছা চল গিয়া দেহি।রহমতের বাড়িতে অন্ধকার আর অন্ধকার।একটা হারিকেন জ্বলছিল সেটাও তেলের অভাবে নিভে গেছে।রহমতের বাড়িটাকে ফুটপাতের দোকানের মত এলোমেলো করে খুজে কিমতু কোথাও কিছু পায় নাই।ছোট্র একটা ছেলে চৌকিদারের পোষাকটা নিয়ে খেলতে থাকে,এমন সময় তার পোষাকটা মাটিতে পড়ে যায়।পোষাকটা ঝাড়া দিয়ে যখন রাখতে যায় ,পকেট থেকে টাকার বান্ডিলটা নিচে পড়ে যায়।তখন কেউ কিছু খেয়াল করেনি।এমন কি রহমত ও বুঝতে পারেনি যে তার পকেটে কিছু ছিল।ঘর থেকে বের হওয়ার সময় একজনের পায়ে কিছু আটকে যায় ,পেছনে ফিরে দেখে টাকার বান্ডিল।হাতে নিতেই সবার নজর পড়ে সেই টাকার উপর।কিছু খনের জন্য রহমত একেবারে নিশ্চুপ ।টাকার বান্ডিলটা হাতে নিয়েই মেম্বার বলে,রহমত তুই শেষ পযর্ন্ত টাকা চুরি করলি?ওদের মধ্যে একজন বলে,এরলাইগাই আজকা চৌকিদারি পোষাকটা পইড়া আইসে না যদি ধরা পইরা যায়।রহমত কিছু বলার আগেই মেম্বার কয়,একটা কথাও কইবি না।জিহবাডা টাইনা ছিড়া লামু,যেই পোষাক তরে খাওন দিত হেইডার লগে তুই বেইমানি করলি?তুই এহনি গ্রাম ছাইড়া যাগা নইতো তরে কাইট্টা চিল কাওয়ারে খাওয়ামা দিমু।চুরিও করস আবার সিনাজুরিও।আজগর রহমতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসেছিল,কিন্তু কেউ সেটা লক্ষ্য করেনি।সেই রাতটা তার জীবনের শেষ চৌকিদারি রাত হবে রহমত কোনদিন সেটা কল্পনাও করেনি।গ্রামের দিকে তাকিয়ে সে রাতেই ঘর ছাড়ে ।যে রাত মানুষের জীবনে শান্তি নিয়ে আসে,সেই রাত রহমতকে ঘর ছাড়া করেছে।এ সমাজে এমন কিছু মানুষের জন্যই প্রতিনিয়ত অসহায় রহমতের মত হাজার ও মানুষকে হারাতে হচ্ছে ঘর ,আপনজন।


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কবিরুল ইসলাম কঙ্ক বেশ ভালো লাগলো। ভোট রইলো। শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ,ভাল লাগার জন্য।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ সমাজের বাস্তবতাকে সুন্দর করে তুলে ধরেছেন আপনার চমৎকার গল্পে । খুব ভাল লাগল তাই ভোট রেখে গেলাম ।
তাপস এস তপু ভালো লাগল। ভোট রেখে গেলাম। আমন্ত্রন রইল আমার লেখায় :)
শামীম খান সুন্দর লেখা । শুভ কামনা রেখে গেলাম ।
সুখের পায়রা অাপনার উপস্থাপন সুন্দর…
পারভেজ রাকসান্দ কামাল সারা দুনিয়াটার এইরকমই ভাই...ভাল লেগেছে...
ধন্যবাদ,ভাল লাগার জন্য।
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম ঘুনে ধরা সমাজে রহমতদের মত মানুষের জীবনের মূল্য আজ মূল্যহীন হয়ে গেছে । রহমতকে সেল্যুট । খুব ভাল লেগেছে ।

১৫ এপ্রিল - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৪৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী