ত্যাগ

ত্যাগ (মার্চ ২০১৬)

গোবিন্দ বীন
স্কুলের ঘন্টা বাজলে মনটা কেঁদে উঠে সুমনের।বুকের ভেতর যেন কান্নার হাহাকার লেগে যায়।গ্রামের দক্ষিন কোনে আধপাকা দেয়ালের স্কুল।সুমন যখন দেখে,তার গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা মা-বাবার হাত ধরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাচ্ছে সে তার ইট ভাঙা বন্ধ করে ছুটে যায় তার মার কাছে । মা কে প্রশ্ন করে, আমি কি তাদের মত স্কুলে যেতে পারব না? তার মা মুখটা লুকিয়ে ছেঁড়া আচল দিয়ে অশ্রুগুলো মুছে নেয়।বুকের মধ্যে সুমনকে টেনে নিয়ে কষ্টগুলো আপন করে নেয়।সুমনকে স্বান্তনা দিয়ে বলে ,বাবা আমাদের কাছে স্কুলে ভর্তি করানোর মত টাকা পয়সা নাই।তোর বাবার অবস্থা ত জানিস। সুমন বেড়ার ফাঁক দিয়ে তার বাবাকে এক নজর দেখে কাঁদতে কাঁদতে আবার চলে যায়।কিরে তুই কাজ ছাইড়া কই গেসিলি?সুমন তার মালিকের দিকে চুপ করে চেয়ে থাকে।দাপট দিয়ে আবার বলে,আর যদি কোনদিন কাজ ছাইড়া চইলা যাস তাইলে তরে আর কাজে রাখুম না।সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পা ধরে মালিকের। আমি আর কোনদিন না কইয়া আপনারে কোনহানে যামু না,আমারে মাফ কইরা দেন। যা গিয়া কাজ কর,একথা বলে চলে যায় তার মালিক। সুমনের মা ভাতের ফেনে একটু লবন নিয়ে আসে তার জন্য।ভাত নিয়ে আসতে পারে না,হিসেব মত রান্না করে। ভাত আনলে হয়ত বাড়িতে গিয়ে উপোস করে কাটাতে হবে।এদিকে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়ে গেছে,চারদিকে গরমের উত্তাপে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে গেছে।কোথাও শান্তি নেই না কাজকর্মে না বাড়িতে। স্কুলের স্বপ্নকে বির্সজন দিয়ে সন্ধায় বাড়িতে ফেরে।সারা শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরে ।বাড়িতে একটা ফ্যান পর্যন্ত নেই,হাত পাখাটা এগিয়ে নিয়ে আসে তার মা। শান্তির বাতাস জুড়ে দেয় তার সারা শরীরে।সারাদিন পরিশ্রমের পর অল্প বাতাসে ঘুম ধরে যায়।বাতাস করতে করতে তার মাও ঘুমিয়ে পরে,হঠাৎ মনে হয় সুমন তো না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছে।সুমনের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করে,কিন্তু কিছুতেই উঠে না। এক গ্লাস জল মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তার মা। মিলির মা মা চিৎকারে ঘুম ভাঙে। ছুটে যায় তার ছোট মেয়ের কাছে,গায়ে হাত দিয়ে বুঝতে পারে জ্বর হয়েছে।একটা ওষধ কেনার সামর্থ্য নেই তাদের। কাপড়ের এক টুকরো ভিজিয়ে মিলির মাথায় দিয়ে রাখে। কিছুক্ষন পর জ্বরটা ধীরে ধীরে নেমে আসে। মিলি বলে,মা এখন আমার একটু ভাল লাগছে, তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়।মিলির জ্বরের চিন্তায় ঘুম আসে না,তবুও চোখটা বন্ধ করার চেষ্টা করে। সূর্য না উঠার আগেই ঘুম ভাঙে সুমনের,নিত্যদিনের মত একটু গুড় আর মুড়ি মুখে দিয়ে চলে যায় কাজে।।দোকানে গিয়ে জানতে পারে মালিকের খালা মারা গেছে। একদিন দোকান বন্ধ মানে,তার পরিবারকে একদিন উপোস করে কাটাতে হবে। অশ্রুভরা চোখে পুকুর ঘাটে চুপ করে বসে থাকে।তার মা অপেক্ষায় থাকে কখন আসবে সুমন। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে যায় সুমন আর ফিরে আসে না। মিলি মার পিছু পিছু ছুটতে থাকে,তাকে খেতে দিতে বলে।রাগ করে বলে,আমার কাছে কিছু চাইবি না।যা তর বাবারে গিয়া বল।মা,বাবা ত হাটবার পারে না, আমারে কিভাবে খাবার আইনা দিব?কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় মিলি। সুমন পুকুর ঘাট থেকে এসে দেখে তার মা কাঁদছে।মাকে কাঁদতে দেখে সুমনের চোখ জলে ভিজে যায়।মা তুমি কাঁন্দো কেন? সুমনকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে।মা জান আজকে আমি পুকুর ঘাটে ঘুমায়া পড়সিলাম।ঘুমের মাঝে ঐ আকাশে অনেকগুলা তারা দেখসি।লাল তারা,নীল তারা,সবুজ তারা,আরো অনেক রঙের।মা আমি কবে তারা হয়ে তাদের মত জ্বলব ? তারা গুলা কইসে ওরা আমারে তাদের সঙ্গী কইরা নিব। আমি তোমাকে সেখান থেইকা দেখমু,তোমায় ডাকমু ।মা তুমি আমারে সাড়া দিবা না?মা চুপ করে সুমনের কথা শোনে।সুমনের গালে এক থাপ্পড় দিয়ে বলে,একথা আর কোনদিন মুখে আনবি না। একথা আর যদি মুখে আনস আমি আর কোনদিন তর সাথে কথা কমু না। সুমন পকেট থেকে দশ টাকা বের করে মিলিকে দেয়।মিলি ছোট একা দোকানে যেতে চায় না।কষ্ট করে হাটতে হাটতে দোকান থেকে বিস্কিট নিয়ে আসে। আসার সময় লাঠিতে পা আটকে পড়ে যায়। বিস্কিটটা ভাসতে থাকে পানির জলে আর মিলির চোখ ভাসে কান্নার জলে।চোখের জল মুছতে মুছতে ফিরে আসে বাড়িতে।পেট ভরেছে রে মিলি? কষ্ট করে বলে, জি ভাইয়া।সেদিন ছিল শুক্রবার। সকালে ঘুম থেকে উঠে সুমনকে খড়ি কাটতে বলে।চোখে এক ঝাপটা জল দিয়ে সকালের মিষ্টি রোদে কাঠ আনতে যায়। শাড়ির আঁচল দিয়ে সন্তানের মুখ মুছতে মুছতে বলে,বাবা তরে আজকা একটা কথা কমু।কি কথা মা?বলার আগেই সুমনের মালিক এসে হাজির হয়।কিরে তুই আইজকা কাজ়ে যাইবি না?হ মালিক চলেন।সুমনের মা মনে মনে বলে,তরে কেমনে কমু তোর একটা কিডনি নষ্ট হইয়া গেসে। তরে দিয়া আমি কাজ করাইতে চাই না,কিন্তু কাজ না করলে আমরা ক্যামনে বাঁচুম।মিলির হাত ধরে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে রান্না করার মত কিছুই নাই।পাশের বাড়ি থেকে কিছু চাল এনে রান্নায় বসিয়ে দেয়।কয়েকটা কচুপাতা কুড়িয়ে এনে তার শাক রাধে। সুমনকে অবেলায় দেখে বলে,কিরে সুমন এত জলদি কাজ শেষ?না মা সকাল থেকে পেটটা খুব ব্যাথা করতাসে,কিছুতেই কমতাসে না। ওষুধ আইনা খাইসি কিছুক্ষন কমসিলো আবার শুরু হইসে। বিছানায় কিছুক্ষন ঘুমিয়ে থাক ঠিক হয়ে যাবে। মায়ের কথা শুনে বিছানায় যায়। বিছানায় একবার ডানদিকে আবার বামদিকে গড়াগড়ি করে আর মা মা চিৎকার করে। সুমনের মা তার মালিককে খবর দেয়।মালিক ছুটে এসে দেখে সুমনের অবস্থা খারাপ।তার নিজ খরচায় সুমনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মিলির বাবাকে একা রেখে মিলি ও তার মা হাসপাতালে ছুটে যায়।অনেক চিকিসার পর ব্যাথাটা কিছু কমে। অবশেষে বিভিন্ন পরিক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারে তার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।মিলি তার মাকে জিজ্ঞেস করে,কিডনি কি জিনিস? কিন্তু তার মা কোন কথার জবাব দেয় না। মিলি ছুটে গিয়ে তার ভাইকে বলে,ভাই তোমার কি- দ-নি নষ্ট হইয়া গেসে। তারিমধ্যে সুমনের চিন্তাটা তার মায়ের কথায় চলে যায়। মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,এর লাইগ্যা তুমি ঘরে বসে মাঝে মাঝে কানতা। আমি জিজ্ঞেস করলে কইতা এমনিতেই।মা কাঁদতে কাঁদতে কয়,বাবা তুই সুস্থ হয়া উঠবি। মা তুমি এত টাকা পাইবা কই?চোখ মুছে বলে ,আমি থাকতে তোর কিছু হইতে দিমু না। কিছুক্ষন পরে সুমনকে ছেড়ে চলে যায়।সুমন মনে মনে ভাবে আমি যদি না থাকি তবে আমার বাবা,মা আর ছোট বোনটারে কেডা দেখব?যেভাবেই হোক আমার সুমনরে বাঁচান। আমি সুমন রে কথা দিছি তার কিছু হইতে দিমু না।ডাক্তার কয়,সুমনরে বাচাইতে কিডনি লাগব। তাইলে আমার একটা কিডনি নিয়া নেন। এইভাবে ত আর কিডনি নেওয়া যাইব না,কিডনি যদি মিলে যায় তবেই দিতে পারবেন। কিডনি দেওয়ার ফলে সুস্থ হয়ে ওঠে সুমন।ডাক্তারকে বলে যায়, সুমন যদি জিজ্ঞেস করে আমার কথা ওরে কইবেন আমি ওর মামার বাড়িতে গেসি,আইতে আমার কয়েকদিন দেরি হইব।সুমন বাড়িতে ফিরে,কিন্তু অসুস্থ থাকার কারনে কিছুদিন কাজে যেতে পারে না।মার প্রতিক্ষায় থাকে কবে আসবে,এক মাস হয়ে যায় মা তো আর ফিরে আসে না। হঠাৎ একদিন ভোরবেলা তার মামাকে দেখতে পায় তাদের বাড়িতে। দৌড়ে গিয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরে বলে,মামা মা কই??ভাগ্নের কথা শুনে মুখ থেকে যেন কোন কথাই বের হয় না।চোখের জলে পাঞ্জাবিটা ভিজে যায়।ভাগ্নেকে জড়িয়ে ধরে,মামার অবিরাম অশ্রু ঝরতে থাকে......।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ ইয়াসির ইরফান খুব ভালো । প্যারা করে লিখলে আরো একটু হয়তো ভাল হতো ।
শিল্পী জলী আমি আগে পড়েছি, ভোটও দিয়েছি--সুন্দর গল্প।
মিলন বনিক গল্পের কাহিনীটা চমৎকার....গাঁথুনিও সুন্দর....প্যারা করে ঘটনার বর্ণনাগুলো তুলে আনলে আরো সুখপাঠ্য হতো...অনেক অনেক শুভকামনা...
ফয়েজ উল্লাহ রবি বেশ ভাল শুভেচ্ছা ভোট রইল।
Sima Das বেশ ভাল শুভেচ্ছা। ভোট রইল।
রুহুল আমীন রাজু মা জান আজকে আমি পুকুর ঘাটে ঘুমায়া পড়সিলাম।ঘুমের মাঝে ঐ আকাশে অনেকগুলা তারা দেখসি।লাল তারা,নীল তারা,সবুজ তারা,আরো অনেক রঙের।মা আমি কবে তারা হয়ে তাদের মত জ্বলব ? তারা গুলা কইসে ওরা আমারে তাদের সঙ্গী কইরা নিব। আমি তোমাকে সেখান থেইকা দেখমু,তোমায় ডাকমু ।মা তুমি আমারে সাড়া দিবা না? ...........বড় আবেগের কাহিনী ,বেশ ভালো লাগলো.
ইমরানুল হক বেলাল অসাধারণ একটি গল্প। ভালো লাগলো। ভোট লাইন বন্ধ হয়ে রয়েছে । এই জন্য ভোট দিতে পারিনি। আপনার শুভকামনা রইল।

১৫ এপ্রিল - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৪৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী