এক.
পৃথিবীতে কত ধরনের খেয়ালী মানুষই না থাকে! তার মধ্যে অন্যতম একজন রেণু মিয়া। সে এক অদ্ভুত খেয়ালী মানুষ; বিচিত্র তার চিন্তাধারা। যখন যা মনে চাইবে, তা-ই করবে। কারো বারণ শুনবে না।
লোকে যদি বলে যাও উত্তরে, সে যাবে দক্ষিণে। লোকটা এমন ত্যাড়াও বটে। একবার তার শখ হলো, কবি হবে। সুতরাং দেরি নয়, বড় ভাই ইসবগুল মিয়ার সঙ্গে চললো আলোচনা কীভাবে কবি হওয়া যাবে।
ইসুবগুল মিয়া রেণুমিয়ার খায়েশের কথা শুনে গভীর নিঃশ্বাস টেনে বললো, 'কবি হবি ভালো কথা, তবে সাধারণ, সাদামাটা, ছেঁড়া পাঞ্জাবী পরিহিত, দাঁড়িগোঁফওয়ালা কবি হলে চলবে না। হতে হবে আধুনিক, নামজাদা, মহাকবি। তার জন্যে প্রথমেই তোর যা করতে হবে...'।
বড় ভাইকে কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে সোৎসাহে বলে উঠলো রেণু মিয়া, 'বুঝেছি, পিতৃপ্রদত্ত নামটা আগে পাল্টাতে হবে, তাই না ভাইয়া?'
'হ, কথা ঠিক। তোর কাব্যিক নাম হবে কাজী জসিম উদ্দিন ঠাকুর।' পানচিবানো দাঁতগুলো ইঁদুরের মত বের করে হেসে বললো ইসবগুল মিয়া।
'এই নামটা কিঞ্চিৎ যেনো বিদঘুটে ও জটিল মনে হচ্ছে না ভাইয়া?'
'বিদঘুটে নয়রে, বিদঘুটে নয়। শোন, কবি কাজী নজরুলের নামের প্রথম অংশের 'কাজী' শব্দটি, এরপর পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের নামের দ্বিতীয় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের অংশ মিলে তোর নাম দাঁড়ালো কাজী জসিম উদ্দিন ঠাকুর বুঝলি?'
'বুঝেছি, এবার পরবতর্ী কর্মপন্থা ধীরে ধীরে বয়ান করো।'
'কবি কাজী নজরুল ইসলাম কীভাবে জাতীয় কবি হয়েছে জানিস্?' লম্বা হামিওয়ালা চুরুটে দীর্ঘ সুখটান মেরে প্রশ্ন করলো ইসবগুল মিয়া।
'না।' মাথা চুলকালো রেণু মিয়া।
'মাথা চুলকাস্ কেনো? চুলে কি উকুন পড়ছে নাকি! কাজী নজরুল আসানসোলে রুটি-পরোটার দোকানে চাকুরি করে হয়েছে জাতীয় কবি।' সবজান্তা সমশেরের মতো বলতে লাগলো ইসবগুল মিয়া, 'তাই, তোকে কবি হতে হলে কোনো রুটি-পরোটা অথবা চায়ের স্টল দিতে হবে। যেখানে মানুষের সমাগম হবে, জনতার সামনে বসে রুটিও ভাজবি সে সাথে কবিতার মস্তকও কড়াইতে ভাজবি। দেখবি দু'দিনেই তোর কেমন মহাখ্যাতি হয়ে গেছে।'
'ভাইয়া, তুমি তো একটা মহাচালাক মাল! আমি আজই চায়ের স্টল খুলে বসছি।'
'শোন্, শুধু চায়ের দোকান হলেই চলবে না। খেয়াল রাখতে হবে, তোর চায়ের দোকানটি যেনো কোনো রুটি-পরোটার দোকানের পাশাপাশি থাকে। কারণ, রুটি-পরোটার মধুময় গন্ধ না পেলে মনে কাব্যচেতনা জাগে না। আরেকটি কথা, তোর সেই চায়ের স্টলটি যেনো কোনো ব্যস্ত জায়গা- এই যেমন বাস স্ট্যান্ড, গাড়ি স্ট্যান্ড-মানে প্লাটফর্ম এসব জায়গায় থাকে। তাহলে সেখানে মানুষের সমাগম বেশি হবে।'
দুই.
পরদিনই রেণুমিয়াকে দেখা গেলো লাকসাম রেলওয়ে প্লাটফর্মের ওপর একটি চায়ের স্টল খুলে বসেছে। দোকানের পাশে সাইনবোর্ডে লেখা আছে 'এখানে চা-বিস্কিট পাওয়া যায়, সেই সাাথে উৎকৃষ্ট কবিতা পাঠ এবং ফ্রি কবিতা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।' দলে দলে লোক তার চায়ের স্টলে আসতে লাগলো। সেই সাথে শুরু হলো 'রথ দেখা কলা বেচা'র মতো কবিতার খুল্লাম খুল্লাম পাঠ।
রেণুমিয়া সেই সাথে আরেকটি কাজও সেরে ফেললো। হোমরা মিয়া, চোমরা মিয়া, পটল মিয়াসহ আরো কিছু গোপালভাঁড়কে নিয়ে একটি 'আদর্শ কবিতা পরিষদ' সৃষ্টি করে নিজেই সভাপতি এবং হোমরা-চোমরা ও অন্যান্যদের বাকি পদে আসীন করলো। রেণু মিয়া সেই 'আদর্শ কবিতা পরিষদ'-এ গিয়ে বিখ্যাত কবিদের কবিতা নকল করে নিজের নামে পাঠ করে সকলকে শোনাতে লাগলো।
মানুষজন রেণুমিয়ার কবিতা শোনে আর বলে, 'রেণুমিয়া তুমি ইচ্ছে করলেই এসব কবিতা জাতীয় পত্রিকায় পাঠাতে পারো। দেশের সবাইশুদ্ধ তোমার কবিতা শুনে ধন্য হবে।'
রেণুমিয়া তো খুশিতে আটখানা। রাস্তাঘাটে স্তাবকদলের কণ্ঠে রেণুমিয়ার নকল কবিতার জয়ধ্বনি দেখে সে ভাবলো, আমি তো তাহলে খুব বড় কবি হয়ে গেছি রে! কিন্তু আমাকে আরো বড় হতে হবে; মহাকবি।
অবশেষে রেণুমিয়া অনেক ভেবেচিন্তে একখানা কবিতা লিখলেন-
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি,
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি....।"
কবিতাখানি লিখেই রেণুমিয়া পাঠিয়ে দিলেন জাতীয় পত্রিকায়। পরদিন মানষেরা অবাক হয়ে দেখলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত জাতীয় সঙ্গীত নকল করে নিজের নামে কবিতারূপে প্রকাশ করায় রেণুমিয়াকে পুলিশ জেলে নিয়ে যাচ্ছে।
তিন.
রেণু মিয়া জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেলো প্রায় তিন মাস পর। সে তার ভাই ইসুবগুল মিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো, 'ভাইজান! আমার তো কবি হওয়ার খায়েস মিটে গেছে মহাকবির সংগীত নকল করে। এখন উপায় কী? আমি কি আর কোনোদিন কবি হতে পারবো না?'
ইসুবগুল মিয়া এবার নিজেই মাথা চুলকাতে লাগলো। রেণু মিয়া বললো, 'ভাইয়া, এবার দেখছি আমার মাথার উকুনগুলো তোমার মাথায় আক্রমণ করেছে।'
'হ রে রেণু। তুই কবিতার রেণু পোনাগুলো আমার মাথায় ঢেলে দিলি। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। তবে শোন, একটা বুদ্ধি আসছে এবার নরম ঘিলুতে আমার।'
সোৎসাহে লাফিয়ে ওঠলো রেণু মিয়া, 'ইউরেকা ... ইউরেকা ...।'
'চুপ! থাম বলছি। মানুষ জেনে যাবে। শোন, গতকাল একজনের কাছে শুনেছি একটা ওয়েব সাইট নাকে আছে। সেটার নাম 'কবিতার ভাণ্ডার'। সেখানে নাকি প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা করে তিন কবিকে শ্রেষ্ঠ কবিতার জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।'
রেণু মিয়ার চোখ প্রায় কপালে ওঠে গেলো। 'দশ হাজার! কী বলছো ভাইয়া?'
'হঁ্যা, দশ হাজার। শোন, তুই এক কাজ কর কালই ওই সাইটে গিয়ে তোর একটা প্রোফাইল খুলে কবিতা জমা দিয়ে দে। রথ দেখাও হবে আর সেই সঙ্গে কলা বেচা হবে। বুঝলি?'
'বুঝলাম। কিন্তু ভাইয়া আমার ঘিলু থেকে তো কোনোদিন অরিজিনাল কবিতা প্রসব হয় নাই। আমি তো এতোদিন নকল কইরা কইরা মানুষের কবিতা নিজের নামে প্রচার করতাম। এখন কী করবো?'
'আরো গাধা! এখনও পারবি মুর্খ কোথাকার। ওয়েব সাইটে এত্তো এত্তো কবিতার পাহাড়। ওইখানের সিন্ধু থাইক্কা একবিন্দু কবিতা চুরি করলে কেউ টের পাইবো না। আর সেইটাই তুই নিজের নামে চালায়া দিবি আরকি! বুঝছস?'
এবার রেণু মিয়া খুশিতে বাগ বাগ। খুশিতে ইসুবগুল মিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
চার.
পরদিনই ওয়েব সাইটে কবিতা সার্চ করে একখান খানদানি কবিতা সংগ্রহ করে 'কবিতার ভাণ্ডার' ওয়েব সাইটে নিজের একখান ঝাকানাকা ছবি দিয়া প্রোফাইল খুলে ওই কবিতাখানি জমা দিয়ে ফেললো।
সাইটটিতে পূর্বে গৃহীত কবিতাগুলো প্রতি মাসের এক তারিখে পাঠকদের পড়া ও কমেন্টের জন্যে উন্মোচিত করা হয়। এবারও করা হলো।
রেণু মিয়া মাসের এক তারিখেই পাতলা পায়খানা মানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় এতোদিন ওই সাইটে নিজের (!) কবিতাখানি এতোদিন দেখতে পারেনি। মাসের দশ তারিখে রেণুমিয়া একটু সুস্থ হলো।
সুস্থ হয়েই ইসুবগুল মিয়াসহ সে 'কবিতা ভাণ্ডার' সাইটে প্রবেশ করে নিজের কবিতাখানি ওপেন করলো। দেখেই সে প্রথমে খুব খুশি হয়ে বত্রিশটা দাঁত বের করে ইসুবগুল মিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
সাথে সাথেই ইসুবগুল মিয়া রেণু মিয়ার মাথায় চপেটাঘাত করলো। কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো সে হা করে ইসুবগুল মিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, 'কী হয়েছে ভাইয়া?'
'দেখ হারামজাদা! তোর কবিতার নিজে পাঠকরা কী মন্তব্য করছে।'
রেণু মিয়া তার কবিতার নিচে পাঠকদের মন্তব্য পড়তে লাগলো। দেখলো পাঠকরা তাকে ইচ্ছেমতো গালিগালাজ করেছে অন্যের কবিতা নকল করে নিজের নামে প্রকাশ করার জন্যে। পাঠকরা এও জানিয়েছে যে, রেণু মিয়া যে কবিতাটি নিজের নামে প্রকাশ করেছে সেটি হালের একজন তরুণ কবির রচিত। যে কি-না জাতীয়ভাবে ওই কবিতাটির জন্যে পুরস্কৃত হয়েছেন। সুতরাং রেণু মিয়া ওই কবির লেখা নিজের নামে প্রকাশ করায় পাঠকরা তাকে গণধিক্কার জানিয়েছে।
'আহারে! আমি বুঝি আর কবি হতে পারুম না ভাইজান। আমার ছালাও গেলো, আমও গেলো। অকূল পাথারে আছি রে ভাই, একদম মাইনকা চিপায় পড়ে গেছি।' স্বগোতোক্তির মতোই কথাগুলো বললো রেণু মিয়া।
'আরে ব্যাটা, নিজের মাথায় ঘিলু না থাকলে এমনই হয়। তোর মাথায় তো সব গোবার ঠাসা। নিজে অরিজিন্যাল কবিতা লিখতে পারিস না? মানুষের কষ্টার্জিত কবিতা নিজের নামে ক্যান চালান করে দিস?'
এমন সময় মামা কুদরত আলীর প্রবেশ। ভাগ্নে ইসুবগুল মিয়ার শেষ ডায়লগখানা তিনি শুনে ফেললেন। মিটি মিটি হাসিমাখা কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, 'কী ভাগ্নেরা কী নিয়ে কথা হচ্ছিলো। কবিতা বুঝি?'
'হ মামা।' উত্তর দিলো রেণু মিয়া।
'তারপর, বলো সমস্যা কী তোমাদের?' প্রশ্ন করলো মামা।
রেণু মিয়া একে একে সব বললো বিস্তারিত।
মামা অট্টহাসি হাসলেন। তারপর হাসি থামিয়ে বললেন, 'তুমি কবি হবে ভালো কথা। কিন্তু এই কুদরত মামার কুদরতী ছাড়া? শোনো কবি হতে হলে আগে কবিতা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করতে হয়। লিখতেই তো আর কবি হওয়া যায় না? আবার ভালো ছাত্র হলেই কেউ কেউ কবি হতে পারে না। আমাদের স্কুলের যে ফার্স্ট বয় ছিলো সে এখন কী করছে জানো?'
'কী মামা?'
'ঘোড়ার ঘাস কাটছে। হা হা হা। আমি ছিলাম থার্ড বেঞ্চের ছাত্র। তাই বলে সেই ফার্স্টবয় আমার সাথে পারতপক্ষে কথাও বলতো না। ওই ছেলেটি বিএ পাস করে এখন বাড়িতে খামার করেছে। মুরগির খামার। মুুরগির আণ্ডা বেচে আর খায়। কুক্কুরত কু ....। ' মামা মুরগির মতো ডাক দিয়ে দেখিয়ে দিলেন।
হাসলো রেণু ও ইসুবগুল মিয়া। মামা বললেন, 'একজন ভালো ছাত্র না হয়েও যেমন আমি কর্মজীবনে বেশ অধ্যবসায়ের সাথে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, ঠিক তেমনি একজন ভালো ছাত্র না হয়েও একজন ভালো কবি হওয়া যায়।'
'মামা। সেটা কী করে? ব্যাপারটা যে এতোই সহজ আমি জানতাম না।' রেণু মিয়া উৎসাহ বোধ করলো।
'আসলে ব্যাপারটা খুব সহজ, আবার সহজও নয়। একজন ভালো কবি হতে হলে সৃষ্টিশীল একটি মন- মনন, দেশাত্মবোধ এবং সর্বোপরি দেশমুক্তির চেতনার প্রয়োজন হয়, সেই সাথে সৃষ্টিশীল মানসিকতা থাকতে হয়।'
'সেটা কেমন মামা?'
'মনে করো তোমার এক বন্ধু সুন্দর একটি শার্ট বানিয়েছে। সেটা তোমার বড়ই পছন্দ। তুমি কী করবে? তার মতোই অবিকল একটা শার্ট বানাবে? হঁ্যা, বানাবে। তবে সেটা তার মতো অবিকল নয়। তুমি তোমার ভিন্নমনের পরিচয় দিতে হবে, তোমার সৃষ্টিশীল মনের আঙিনায় যে আমিত্ব ধরা দেবে সেটাই তোমার ভিন্নসৃষ্টি। তুমি সাদা চোখে যা দেখো, গণমানুষের যে দুঃখ-দুর্দশা, মনুষ্যত্ব, মানবতা, দেশপ্রেম, দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তির যে চেতনা তোমার মধ্যে জাগ্রত হয় সেটি তোমার কলমে বাণী-ছন্দে, রূপকতা, উপমা আর উৎপ্রেক্ষায় বর্ণনার নামই হচ্ছে কবিতা। এবার বুঝেছো?'
রেণু মিয়া ফ্যালফ্যাল করে মামার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছু বলতে পারলো না।
কুদরত মামা আবার বললেন, 'শোনো। এই পৃথিবীতে কবিরাই একটা ভিন্ন জাত বা শ্রেণী। একজন গায়ক হতে হলে কী করতে হয়? গান, সারগাম তথা সঙ্গীত সাধনা করতে হয় বছরের পর বছর ধরে। একজন মানুষকে বিদ্যা অর্জন করতে হলে কী করতে হয়? ক্লাসের পর ক্লাস সুন্দরভাবে পড়াশোনা করে পাস করে অন্য ক্লাসে ওঠতে হয়। তেমনি একজন কবিকেও এভাবে দিনের পর দিন অধ্যবসায়ের সাথে কবিতা সাধনা করতে হয়। কবিতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। কবিতার শব্দ, বাণী, ছন্দ-জ্ঞান, রূপকতা, কল্পদৃশ্য সম্পর্কে নিজেকে দিনের পরদিন সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে হয়।'
'মাগো এত্তোকিছু?' রেণু মিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
'হঁ্যা মামা হঁ্যা। আর এতো সাধনা করে কবিতা সৃষ্টি করেন বলেই তো তিনি কবি। কেউ কেউ তারচেয়ে বেশি সাধনা করেন বলেই তিনি মহাকবি, কেউ কবি গুরু, কেউ জাতীয় কবি।'
'মামা। কবি হওয়া সত্যিই কঠিন ব্যাপার তো?' ইসুবগুল মিয়াও যেনো আড়ষ্ট হয়ে গেছে মামার কথা শুনে।
'বলছি তো কঠিনও নয়, আবার সহজও নয়। সাধনায় সিদ্ধিলাভ। তোমার কাছে মনে হয় এমবিবিএস পাস করা কঠিন? হঁ্যা কঠিনই হবে। কিন্তু যে ওই ডাক্তার হওয়ার সাধনায় মশগুল থাকে তার জন্যে সহজ।'
'মামা এর চেয়ে বেশি সহজ আর কী আছে?' প্রশ্ন করলো রেণু মিয়া।
'তুমি যা লিখবে, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি পড়বে, সেই সাথে দেশপ্রেমের চেতনা, গণমানুষের মুক্তির চেতনা হৃদয়ে লালন করবে। একটি কথা মনে রেখো, ভালো লিখিয়ে হতে হলে ভালো পড়ুয়া বা পাঠক হতে হবে। এটাই সবচেয়ে সহজ বুঝলে?'
রেণু মিয়া অবাক হয়। এই যদি সহজ ব্যাপার হয় তাহলে কঠিন ব্যাপারটা কী? সে কী করবে ভেবে পায় না। মনে মনে চিন্তা করে, তাহলে কবিরা বহু সাধনা করেই শব্দের নির্যাস থেকে বের করে আনেন উৎকৃষ্ট একখান কবিতা।
পাঁচ.
প্রায় বছরখানেক পরের কথা। রেণু মিয়া এর মধ্যে অনেক বই কিনেছে এবং সেগুলো ক্রমে ক্রমে হৃদয়ে ধারণ করেছে। সে একুশের ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনেক বই সংগ্রহ করেছে। সেগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়েছে। সে দেখতে পেলো সব কবির মধ্যেই কিছু বিষয় কাজ করছে, আর সেগুলো হলো দেশপ্রেম, মনুষ্যত্ব, গণ-মানুষের সুখ-দুঃখ এবং মুক্তির চেতনা। সে আরো দেখতে পেলো, এ যাবত বাংলা সাহিত্যে যারাই ব্যাপক অবদান রেখেছেন, জাতীয় আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন সে রচনাগুলোর মধ্যে সবই ছিলো মানুষের সর্বাঙ্গীন মুক্তির চেতনা বিষয়ক।
রেণু মিয়া বুঝতে পারে কবিতা রচনার ক্ষেত্রে কী করতে হবে। সে এগিয়ে যায় কবিতার পানে। যেখানে থাকবে মৌলিকতা, নিজস্ব স্বকীয়তা। যেখানে থাকবে দেশপ্রেম ও গণমানুষের মুক্তির চেতনা।
(কাল্পনিক)