একটু উষ্ণতার জন্যে

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

মিজানুর রহমান রানা
  • ৭৬
  • 0
  • ৭২
এক.

শীতের পাখিরা সুদূর সাইবেরিয়া থেকে শীতকালে এদেশে বেড়াতে আসে মৃদু উষ্ণতার জন্যে। এদেশের শ্যামল-উর্বর প্রান্তরের শস্যকণা খেয়ে মোটাতাজা হয়ে, জীবনকে উপভোগ করে উষ্ণতা নিয়ে এক সময় চলে যায় তাদের গন্তব্যে। আমার জীবন প্রান্তরে ঠিক তেমনিই ছিলো সোহানার দু'দিনের আগমন, যা আমি কখনোই ভাবিনি।

সোহানা আমার জীবনে এসেছিলো শীতের পাখি হয়ে, আমাকে উষ্ণতা দেবার জন্যে। কারণ, আমার যে উষ্ণতার প্রয়োজন ছিলো। উষ্ণতার অভাবে আমার লেখনি থেমে গিয়েছিলো। চরম শীতে আমি কাঁপছিলাম থরথর করে। পোশাকের উষ্ণতা তার কাছে হার মেনেছিলো। প্রয়োজন ছিলো একজন মানুষের ভালোবাসার উষ্ণতা। সেই ভালোবাসার উষ্ণতা দেবার জন্যে, আমার জীবনটাকে সার্থক করার জন্যে, আমার লেখনি চালিয়ে যাবার জন্যে সোহানাকেও আমার প্রয়োজন ছিলো। আমি ভাবছিলাম সোহানা আমার পাশে থেকে দুর্বিসহ শীতের কবল থেকে, মানসিক যন্ত্রণা থেকে আমার জীবনকে ভরিয়ে দেবে আলোর সীমানায়। তার ভালোবাসা ও প্রেরণায় আমি লিখতে থাকবো জীবনমুখী আশাপ্রদ একের পর এক কবিতা, গল্প বা সাহিত্যকর্ম। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছে ছিলো অন্যরকম।

সোহানা আমার প্রিয়তমা ছিলো। মায়াবী দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকতো তার সারাক্ষণ আমার পানে। আমি তাকে পাশে দাঁড় করিয়ে যে কতো কবিতা লিখেছি তা' ভাবতেই যেনো কেমন লাগে। যখন কোনো কবিতা, গল্প পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, পাঠকরা পাঠ করে এবং পরিচিত পাঠকরা আমাকে ফোন করে বলে, মি. সবুজ সিদ্দিকী! গল্পটির কাহিনী কি সত্যি? অথবা বলে, ভাই আপনার কবিতাটি কি আপনার কোনো ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে লেখা? আমি আনন্দিত হই। আশা-আনন্দে আরো সামনে এগুতে থাকি। লেখার পরিধি বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে।




দুই.
সোহানা আমার প্রথম প্রেম। তার পরিচয়ের পর্বটি ছিলো সত্যিই শীতের এক শিশির ভেজা ভোরে। দিনটি ছিলো একুশে ফেব্রুয়ারি। আমি কলেজ ক্লাসমেটদের সাথে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করে ফিরে আসছিলাম। পথিমধ্যে দেখলাম এক অবাক কাণ্ড।

রাস্তার পাশ দিয়ে গায়ে শাল জড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো এক যুবতী মেয়ে। পাশেই একজন অন্ধ ভিখিরি কাঁপছিলো থরথর করে। তার গায়ে ছিলো ছেঁড়া-ফাটা বস্ত্র। সেই অচেনা যুবতী নারী ভিখিরির দূরাবস্থা দেখে নিজের গায়ের শালটি ভিখারির গায়ে জড়িয়ে দিলো। ভিখারী উষ্ণতা পেয়ে উপকারী যুবতীকে অনেক দোয়া করতে লাগলো।

আমি অবাক হয়ে তার কাছে গেলাম। তার সাথে পরিচয় হলো। জানতে পারলাম, ওই যুবতী মেয়েটি আমাদের একই কলেজের ছাত্রী। তবে আমার জুনিয়র। নাম সোহানা। পরবতর্ীতে তার সাথে প্রতিদিন আমার দেখা হতো, কথা হতো। একদিন তাকে আমি বললাম, 'তুমি তো ভিখিরিদের শীতের বস্ত্র দাও উষ্ণতার জন্যে। আমিও একজন প্রেম-ভিখিরি। তোমার কাছে উষ্ণতার জন্যে প্রেম ভিক্ষা চাচ্ছি।'

সোহানা আমাকে প্রেম দিলো অনায়াসে। 'না' করলো না। তাকে পেয়ে আমি জীবনের কূল খুঁজে পেলাম। মনের মাঝে স্বপ্ন ছিলো, সে স্বপ্ন আশায় রূপান্তরিত হলো। আমি সোহানাকে নিয়ে চরম শীত ও দুর্বিসহ জীবনে আশার ভেলায় পাড়ি দিলাম।



তিন.
আমরা বিয়ে করলাম। সোহানার ইচ্ছেমতো শীতকাল এলেই আমরা দু'জন মিলে গরিব-দুঃখী মানুষদের শীত বস্ত্র বিতরণ করতাম। চেষ্টা করতাম নিঃস্ব মানুষকে একটু উষ্ণতা দেয়ার। কিন্তু একদিন যে আমার জীবনটাই ভরে যাবে হিম-শীতের করাল গ্রাসে সে কথা কে জানতো?

আমার জীবনে কখনো সুখ স্থায়ী হয়ে আসেনি। স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। সোহানাকে পেয়ে আমি ভেবেছিলাম, এই বুঝি জীবনের স্বপ্নরা আমার দুয়ারে এসে ভীড় করবে। আমি সুখী হবো। কিন্তু আমার ভালোবাসার সোহানা যে চলে গেলো চির শীতের রাজ্যে, আমাকে বোঝার সময়টুকুও দিলো না।



চার.

সোহানার ইচ্ছে হয়েছিলো সে এই শীতে বনভোজনে যাবে। আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, আনন্দ করবে। কিন্তু অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকায় আমি সে সময়টুকু করতে পারছিলাম না। হঠাৎ করেই চট্টগ্রামের নীরব ভাই ফোনে জানালেন বন্ধুদের উদ্যোগে বনভোজনের কথা। মানুষটার নাম 'নীরব' হলেও আসলে তিনি নীরব নন। তিনি একদম সরব ও সরল মানুষ। মনে পড়ে আমার একবার এ দুঃসময়ে তিনি কাণ্ডারীর মতো আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। যেখানে অন্য বন্ধুরা মিনমিনে অবস্থায় 'লম্বা লম্বা পা ফেলে পগার পার' সেখানে নীরব ভাই সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ওইদিন যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা আমৃতু্য আমার মানসপটে লিখিত থাকবে উজ্জ্বল আলোকচ্ছটায়। সেদিনের পর থেকে নীরব ভাইয়ের কোনো কথা আমার কাছে ফেলনার নয়। তবুও আমি তাকে আমার অফিসিয়াল কর্মব্যস্ততার কথা জানালাম।

পরদিন মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেন আক্তারুজ্জামান ভাই। এই আক্তারুজ্জামান ভাইও আমার কাছে একজন প্রিয় বন্ধুর তালিকায়। বয়সে বড় হলেও তিনি একজন উদারপন্থী মানুষ। লেখালেখির সুবাদে আমরা একই প্লাটফর্মে অবস্থান করছি দীর্ঘ সময়। ফলে আমাদের কাছে বয়সের কোনো ব্যবধানই সীমারেখা তৈরি করতে পারেনি। আক্তারুজ্জামান ভাইয়েরও একই কথা, এই আনন্দের মুহূর্তে আমাকে তাদের মাঝে উপস্থিত হওয়া চাই।

শুধু নীরব ও আক্তারুজ্জামান ভাইই নন, আমাদের বন্ধুদের অনেকেই ফোনে, ফেসবুকে এবং ওয়েব সাইটের বার্তায় ব্যবস্থায় আমাকে বনভোজনে যাবার তাগিদ জানিয়েছেন।

আমি তাদের নিরাশ করলাম না। বললাম, চেষ্টা করবো যেভাবেই হোক বন্ধুদের এ সুন্দর আয়োজনে উপস্থিত থাকার জন্যে। কিন্তু আমি জানি, হয়তো সেটা সম্ভব হয়ে ওঠবে না। আমি যে হাজার কাজের কাজী। পৃথিবীর সব কাজের দায়-দায়িত্ব যেনো আমারই কাঁধেই বর্তিয়েছে। আর সেই কর্মযজ্ঞের পাহাড়ের নিচে আমি এক অধম চ্যাপ্টা হয়ে বসে আছি জীবনের এই যৌবন বেলায়।



পাঁচ.
বাসায় ফিরে সোহানাকে সেকথা বলতেই সে উৎফুল্ল হয়ে বললো, 'ভালোই হলো। সুন্দর আয়োজন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বন্ধুরা বনভোজনে যোগ দেবে। চলো আমরা সব কাজকর্ম ফেলে তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করি। নিজেরাও শীতের এই জবুথবু মুহূর্তটাকে রঙিন আনন্দে ভাসিয়ে দেই।'

আমি বললাম, 'সোহানা। তোমার কোনো কথা আমি কখনো ফেলে দেইনি। আর সেটার করারও ইচ্ছে আমার নেই একদম। কিন্তু কথা হচ্ছে, বস অফিসে নেই। গিয়েছেন উত্তরবঙ্গে শিক্ষা সফরে। তাঁর আসতে দেরি হবে। এই সময়টাকে আমি কীভাবে নিজের দায়িত্বে অবহেলা করে আনন্দ ভ্রমণে বের হই? এটা তো আমার বিবেকে সায় দিচ্ছে না।'

সোহানা তাৎক্ষণাৎ তার মুঠোফোন থেকে আমার বসকে ফোন করলো। তারপর ইনিয়ে বিনিয়ে অন্য একটা জরুরি কাজে আমাদেরকে ঢাকা যেতে হবে বলে তাঁকে জানালো। বস তো দিল-দরিয়া মানুষ। তিনি সাথে সাথে মৌখিকভাবে আমাকে তিনদিনের ছুটি মঞ্জুর করে দিলেন। সোহানা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লো। আমি উচ্ছ্বসিত সোহানার উচ্ছ্বল আবেগের কাছে এবং বন্ধুদের ভালোবাসার কাছে হার মেনে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, হঁ্যা, যতো কাজই থাকুক, বনভোজনে যাবে- যাবেই।



ছয়.
নয় ডিসেম্বর বনভোজনের দিন। আমাদেরকে চাঁদপুর থেকে যেতে হবে আগের দিন। আমরা দু'জনে আট ডিসেম্বর রাত সাড়ে বারোটায় এমভি ময়ূর-২ লঞ্চে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সকাল ৫টায় ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চ ভিড়লো। নীরব ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমাদেরকে শাহবাগে পৌনে নয়টায় বনভোজনের বাসে যোগদান করতে হবে। আমরা তা-ই করলাম।

ঢাকার পূবাইলে বনভোজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গিয়ে দেখি অবাককাণ্ড! বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বন্ধুরা সবাই এসে হাজির। বেশ আনন্দ-ফুর্তিতে সারাটা দিন বন্ধুদের সাথে বনভোজনের আনন্দ উপভোগ করলাম আমরা। সোহানাও বেশ মজা করলো।



সাত.
বনভোজন শেষ হলো নির্দিষ্ট সময়। বিষণ্ন সুমন ভাই বলেছিলেন, তাঁদের বাসায় যাবার জন্যে। আমরা গেলাম। সুমন ভাইয়ের আতিথেয়তা গ্রহণ করলাম। ভাবী আমাদেরকে পেয়ে যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। কী খাওয়াবেন সেই চিন্তায়ই বিভোর থাকলেন।

তিনি আমাদেরকে বলেছিলেন তাদের বাসায় রাতযাপন করার জন্যে। কিন্তু আমরা তাতে সম্মত না হয়ে 'হোটেল ফেভার ইন'-এ ওঠলাম। বিষণ্ন সুমন ভাই রাগ করলেও কী করবো, সোহানা চায় রাতটা একান্তই নিজেদের কাছাকাছি থাকতে। তাছাড়া আমরা আগেই ফেভার ইন-এ সীট রিজার্ভ করে রেখেছিলাম। সুতরাং সুমন ভাইকে খানিকটা তেল মালিশ মানে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে হোটেলেই ওঠলাম।



আট.
হোটেল ফেভার ইন। এটি একটি ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেল। বেশ সুন্দর ও জাঁকজমকপূর্ণ। এখানে সাধারণ মানুষ তেমন একটা থাকতে পারে না। বেশ উচ্চভাড়া, যা সাধারণের পক্ষে সঙ্কুলান সম্ভব নয়।

সন্ধ্যো সাতটায় আমি রুমে প্রবেশ করে সোহানাকে বললাম, 'তুমি কী খাবে বলো?'
সোহানা বললো, 'সুমন ভাইয়ের বাসায় যা খেয়েছি, রাতে ডিনার করতে পারবো কি-না, সন্দেহ আছে। তুমি কি বাইরে যাবে?'
'হঁ্যা, আমার সিগারেট আনতে হবে। তাছাড়া আমি রাতের ডিনারের অর্ডার দিয়ে রাখবো। এখানে অর্ডার অনুসারে ডিনার দেয়া হয়। তাই আগেই জানিয়ে রাখলে সুবিধে হয়।'

সোহানা তার ব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার তিনটি নোট বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো, 'আমার খুব ইচ্ছে তোমাকে একটা লাল টি-শার্ট কিনে দেবো। চলো আমিও তোমার সাথে বাইরে যাবো।'

'আরে, টাকা তো আমার কাছে আছে। তোমার দিতে হবে না।'
'আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, তোমাকে আমার কিছু একটা গিফট দিয়ে যেতে হবে। তাই আমার টাকায়ই..।'
'যেতে হবে মানে? তুমি কোথায়ও চিরদিনের জন্যে চলে যাচ্ছে নাকি?' আমি অবাক হয়ে বললাম।
সোহানা হাসলো। তার সে হাসিখানা যেনো পরিপূর্ণ চাঁদের জোছনায়মাখা।




নয়.
রাতের ডিনার শেষ হলো। বেশ আয়েশ করেই খেলাম দু'জনে। যদিও সোহানা বলেছিলো সে ডিনার খেতে পারবে না, কিন্তু খেতে বসেই যেনো বুভূক্ষের মতো খাওয়া শুরু করলো। আমি হাসলাম। বললাম, 'তুমি তো বলেছিলো খেতে পারবে না। কিন্তু এখন তো খাচ্ছ!'
'তুমি পাশে থাকলে আসলে আমার খিদে বেড়ে যায়।' সোহানাও হাসলো।
'তাই?' তাহলে তো আমাকে একটা খাদ্য গুদামের ব্যবস্থা করতে হবে। তা-না হলে আমি পাশে থাকলে তোমার উদরপূর্তির জন্যে খাদ্য সঙ্কটে পড়ে যাবো।'

রাত প্রায় ১০টা। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে দু'জনে রুমে এলাম। টয়লেটে যাবার খুব ইচ্ছে হলো। আমি টয়লেটে প্রবেশ করলাম। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বের হতেই দেখি যেনো কামরায় জোছনার আলো ছড়িয়ে আছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম। সোহানা দ্রুত তার সাজ বদলে ফেলেছে। একদম মায়াবিনী কন্যার মতো সেজেগুঁজে বসে টিভি দেখছে।

আজ সোহানাকে বেশ দেবী দেবী লাগছে। আমি সোহানার পাশে বসলাম। তার অবয়বের পানে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। সে আমাকে বললো, 'কী দেখছো অমন করে?'
আমি বললাম, 'তোমাকে দেখছি। আজ কেনো যেনো তোমাকে অন্যরকম লাগছে।'
'আজ তোমার হৃদয়ে ভালোবাসা-প্রেম উথলে ওঠছে তো, তাই বেশি বেশি ভালো লাগছে আমাকে।' জবাব দিলো সোহানা। তারপর আদুরে গলায় বললো, 'অ্যাই, আমার কেমন যেনো শীত শীত লাগছে। তুমি একটু আমাকে জড়িয়ে ধরো না।'
আমি তাই করলাম। সোহানাকে জড়িয়ে ধরলাম। সোহানাও শীতের প্রকোপে আমার উষ্ণতায় রাঙাতে তৎপর হলো। আজ আমি অন্য এক সোহানাকে আবিষ্কার করলাম যেনো। সোহানা উজাড় করে আমাকে ভালোবাসলো। জীবনের কোনো বাধা, জড়তাই যেনো বালির বাঁধের মতো ভেঙ্গে গেলো।
সোহানা আমার কানের কাছে মুখ রেখে গুনগুন করে উচ্চারণ করলো কবি মহাদেব সাহার কবিতার কিছু অংশ ঃ

" যে ভালোবাসতে পারে না সে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পায় না
সে বধির, কানে কম শোনে;
তুমি কি জানো ভালোবাসা ছাড়া জন্মই হতো না
ভালোবাসা হচ্ছেন আদম-হাওয়া, মানুষের জন্ম।

যদি ভালোবাসতে না জানো তাহলে আকাশ
দেখার চোখ কোথায় পাবে?
কোথায় পাবে খাদ্যের স্বাদ গ্রহণের জিহ্বা
সুগন্ধ উপভোগের ঘ্রাণশক্তি?"

আমি বললাম, 'সোহানা, এই কবিতাটি আমি কয়েকশ' বার পড়েছি। যতোই পড়েছি, ততোই মুগ্ধ হয়েছি কবির লেখনিশক্তির সহজ-সরল ভাষাবোধ ও সারল্য মুগ্ধতায়। কবিকে হাজার প্রণাম।'
সোহানা আস্তে আস্তে বললো, 'ভালোবাসা থেকেই তোমার জন্ম,/ ভালোবাসা তোমার শিল্পকলা, তোমার সৌন্দর্য;...।'
আমিও নিবিড় আলিঙ্গনে থেকে সোহানাকে আস্তে আস্তে বললাম, 'সোহানা, ঠিক তাই। ভালোবাসা থেকেই আমাদের জন্ম, ভালোবাসা মনে আছে বলেই তোমাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে।'
সোহানা আর কিছু বললো না। সে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। জীবন-মনকে ভরিয়ে দিলো পরিপূর্ণতায়।



দশ.
রাত প্রায় বারটা। সোহানা কিছুক্ষণ আগে গোসল সেরে চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে বাঁধছিলো। হঠাৎ করেই মনে পড়লো, আরে! সিগারেট তো আনা হয়নি। আজ রাতে কিছু কবিতা লিখতে হবে। কেনো জানি আমার মাথায় কবিতার পোকারা কিলবিল করছে। না লেখা পর্যন্ত ওগুলোর কামড়ানি বন্ধ হবে না। আর সিগারেট পাশে না থাকলে, মগজে নিকোটিন ঢেলে দিতে না পারলে কবিতার ছন্দগুলো ঠিকমতো সাজাতে পারবো না।

আমি সোহানাকে বলে চলে এলাম বাইরে। সিগারেট নিতে যাচ্ছি, এমন সময় পেছন থেকে কে যেনো ডাক দিলো আমার নাম ধরে। আমি অবাক হয়ে পেছনে তাকালাম। দেখলাম, আমার এক পুরোনো ক্লাসমেট। যাকে আমি মামা বলে ডাকতাম, সেই হায়দার আলী। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
সে কাছে এসে বললো, 'কী মামা, অবাক হয়েছো আমাকে দেখে? এভাবে মুখ হা হয়ে থাকলে মুখে মাছি ঢুকে যাবে।' তারপর হাসলো হা হা করে।

হায়দার মামার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তার খোঁজ-খবর নিয়ে প্রায় আধাঘণ্টা পর এলাম রুমে। রুমে এসে দেখি একি! রুমের দরজা সামান্য খোলা। আমি ভেতরে প্রবেশ করেই যা দেখলাম, তাতে যেনো আমি আর আমি থাকলাম না।
সোহানা পড়ে আছে মেঝেতে। তার মাথা ফেটে রক্তধারা গড়িয়ে পড়ে ফ্লোর ভিজে গেছে। রুমের সবকিছু এলোমেলো।





এগার.
হাসপাতাল। ডাক্তার জানালেন, সোহানার মাথায় সম্ভবতঃ লোহার দণ্ড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। জলদি রক্ত দিতে হবে। আমার রক্ত গ্রুপ তার সাথে মিলে যাওয়ায় রক্ত দেয়া সম্ভব হলো। রক্তদানের পর সোহানার কিছুটা হুঁশ হলো।
আমি পাশে গেলাম। সে চোখ মেলে ফ্যালফ্যাল করে আমার পানে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কী যেনো বলতে চাইলো, পারলো না। এরপর চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো যেনো। আমি ডাকলাম, 'সোহানা, সোহানা...।'
সোহানা কোনো উত্তর দিলো না।

সোহানা শীতের পাখিদের মতো দু'দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে থেকে তারপর চলে যায় তার চির গন্তব্যে। যেখান থেকে কেউ ফেরে না; সোহানাও ফিরলো না। বেদনার অন্তিম নিয়ে তাই আমি আজো রচনা করি বিরহের কবিতা, গল্প। আমার সেই গল্প কি কখনো শেষ হবে? বন্ধুরা বলে, সবুজ সিদ্দিকীর গল্প কখনো শেষ হবে না। তাই শীত এলেই আমার মনে পড়ে যায় সোহানার গল্প। কারণ শীতের ঘনকুয়াশার চাদরে আচ্ছাদিত এক সকালেই আমি আমার মানস-প্রিয়া সোহানাকে হারিয়েছিলাম।

আমার জীবনে চির-শীতের আনাগোনা শুরু হলো আবারও। শীতে আমি কাঁপতে থাকি জবুথবু হয়ে। একটু উষ্ণতা দেবার জন্যে আমার সোহানা আর কখনো ফিরবো না।

(কাল্পনিক)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা ধন্যবাদ @ Tanjir Hossain Polash
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা আবারও ধন্যবাদ বিন আরফানকে। পড়–ন, পড়ে মতামত দিন।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১২
বিন আরফান. শুরু করেও শেষ করতে পারিনি, এটি ছোট গল্পের পাঠকদের বৈশিষ্ঠ্য. হটাত শুরু হটাত শেষ. তবে কপি করে নিয়ে গেলাম অবসর সময়ে ঝিমিয়ে পড়া যাবে.
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা ধন্যবাদ মিতা, সহমতের জন্যে শুভ কামনা ও মোবারকবাদ। @ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১২
মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান বিষন্ন সুমন ভাইয়ের সাথে একমত..........দারুন লিখেছেন.......
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা ধন্যবাদ ‘আড্ডা মারি’ ভাই। আড্ডাচ্ছলে গল্পটি নজর দেয়ার জন্যে কৃতজ্ঞতা অশেষ
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১২
হিমেল গল্পটি পড়তে পড়তে বাস্তবের মধ্যে ডুবে গিয়েছিলাম। শেষে কাল্পনিক দেখে স্বস্তি পেলাম। ভালো লেগেছে কাল্পনিক গল্প।
ভালো লাগেনি ১৮ জানুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা ধন্যবাদ পরশ দা। আমার গল্পে আপনার অভিব্যক্তি চিরদিন মনে রাখার মতো। সত্যিই মনে পড়ে আপনাদের। শুভ কামনা
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১২
এস কে পরশ রানা ভাই ....... তোমার গল্প পড়ে আমার কিন্তু চট্টগ্রাম বন্ধু মেলার কথা মনে পড়ে গেল........মনে আছে ভাই আমরা যে বৃষ্টিতে ভিজেছি.....অনেকক্ষন.......প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ........আসলে ভাই মনে রাখার মত গল্প....অসাধারন
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী