সিনেমা হল

বিন আরফান.
১৮ ফেব্রুয়ারী,২০১২


চলচ্চিত্রের করুণ অবনতির সূচনা হয় ১৯৯৮ থেকে। যতদূর মনেপড়ে গুন্ডাপুলিশ ছবির মধ্য দিয়ে এর সূচনা। সেই থেকে সিনেমা হলে স্ববান্ধব ছবি দেখা হয়না। বছর খানেক আগে মনপুরা ছবির পোস্টার দেখে সিনেমা হলে যাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে গেলাম। শো শুরু হবার পূর্বেই বিব্রত অবস্থায় পড়ি। অশ্লিল ছবি নির্মাণে নির্মাতাগণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেও হল মালিকগণ হয়তো তা চাইছেনা। ছবি যাই হোক হলে বারবধূ আছে তো দর্শক জমজমাট। এখন তারা ছবি দেখিয়ে টাকা নেয় না, টাকা নেয় বাদাম বিক্রি করে। অনেক দর্শক ছবিও দেখেননা, বাদাম টিপে। বাদাম খাওয়া শেষ, ছবি দেখাও শেষ। অথচ এক সময় পরিবার পরিজন নিয়ে ছবি দেখতে হলে যেতাম। বিশেষকরে বিয়ের অনুষ্ঠান বা কোন আনন্দ উৎসব এলেতো কথাই ছিলনা। দামাধরে বসতাম দুলাভাই সকলকে ছবি দেখাবেন। দুলাভাইও রাজি হতেন। এসুযোগে চাচী খালারাও পিছু নিতে সংকোচ বোধ করতেননা। বর্তমানে হানিমুনের যুগ এসেছে, তখন বিবাহের পরে সময়সুযোগে নব দম্পতি একে অপরের সাথে মনের মিল গভীর করতে সিনেমা হলেই যেতেন।

সেই ছোটবেলার কথা বলছি, যখন গোটা গ্রামে টিভি বলতে একটাই ছিল। তাও আমাদের বাড়িতে, চৌদ্দ ইঞ্চি নিপ্পন সাদাকালো। বিদ্যুৎ অধিকাংশ বাড়িতে ছিলনা আর লোডশেডিং এর কথা কি বলব! বড় হয়ে এ সম্বন্ধে রচনা মুখস্ত করিনি, যা দেখেছি তা লিখেইতো শেষ করতে পারিনি। যাই হোক, সে সময়ে বিটিবিতে মাসে একদিন শুক্রবারে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাঙলা ছায়া ছবি দেখাতো। সেই ছবি দেখার জন্য গোটা গ্রামবাসী একত্রিত হতেন আমাদের বাড়িতে। দশটাকা ভাড়ায় বেটারী এনে রাখা হত যদি বিদ্যুৎ না থাকে ? মাবাবা, লোকের ভীড় সামলাতে না পেরে টিভি ঘর হতে উঠানে বের করে দিতেন । সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মনোযোগ সহকারে দেখতাম। সবাই পাটি বিছায়ে বসতেন, আমি চেয়ারে বসতাম। মোড়ল মোড়ল ভাব কাজ করতো। বেশ ভালই লাগত। কিন্তু মাসে এক ছবি দেখেকি মন ভরে ? তাই প্রায়ই বিভিন্ন বাড়িতে টিভি-ভিসিআর ভাড়া এনে সারারাত জেগে দেখা হত, আমিও বলে নাবলে দেখতে যেতাম। এখন এসব শুধুই স্বপ্ন।

গেল কিছুদিন আগে শহরে ঘুড়তে বেরুলাম। কয়েকটি পতিতা পল্লী উচ্ছেদ করে দেয়ায় তারা হোটেল, বাসাবাড়িসহ সর্বত্র ভাইরাসের ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে। হাটে, ঘাটে, পথেও তাদের বিচরণ নির্লজ্জের মত অহরহ। সেনানিবাসে প্রবেশ সংলগ্ন থেকে শুরু করে থানা সংলগ্ন হোটেলগুলোতে তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করেন। পরিবেশ এতটাই বেশামাল যে, স্ত্রীকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে করাও অনুকূলে থাকেনা। কে এস বলে, যাবি ? বা ইশাঁরায় তাই বুঝাতে চায় !

শহরের এরূপ দশা দেখে হাপিয়ে পড়লাম। এককাপ চায়ের তৃষ্ণা পেল। মাসার সিনেমা হলের মালিক আমার ছাত্রজীবনের বন্ধু, নাম রিফাত। চা যখন পান করতেই হবে ভাবলাম ওর ওখানে গেলেই ভাল হয়। বসে চা পান হল, বন্ধুটির সাথে দেখাও হল।

ও আমাকে দেখে আনন্দে উচ্ছাসিত। অনেক দিনপর দেখা কিনা তাই। জানতে চাইল সিনেমা দেখব কিনা ? লালটিপ চলছে। অবজ্ঞার স্বরে না বোধক উত্তর দিলে বন্ধু জানালো ছবিটি সামাজিক, আমার নাকি ভালো লাগবে। সামাজিক শব্দটির কাছে বাঙালি জাতি সর্বদায়ই অসহায় আর নমনীয়। আমার বেলায়ও তাই হলো। দেখতে গেলাম।

রিফাত আমাকে হলে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল কি খাবি ? ঠান্ডা না গরম ? গরমের নেশায়ইতো তোর কাছে এসেছি বলে জানালাম। ও চলে গেল।

প্রায় মিনিট দশেক পর, একজন এসে আমার নাম ধরে নিশ্চিত হতে চাইল ব্যক্তিটি আমি কিনা ? হ্যা বোধক উত্তর দিলে সে আমার পাশে বসে গায়ে হাত রাখল। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পরি। এরই মধ্যে বন্ধুটি এস বলল, কি দোস্ত, চলবে ? একবারে গরম মাল। নতুন এসেছে।

আমি গাইলামকি আর আমার সারিন্দা বাজালো কি ! বাঙলার অপপ্রয়োগ শুধু বাঙলিশ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তা এখন স্থান কাল পাত্র ভেদে বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অবশ্য এই মেয়েকে আমি আসার সময় পথে দেখেছিলাম। ভদ্র ও রুচিসম্মত বড় বাড়ির মেয়ে মনে হয়েছিল। বন্ধুর নিকট জানতে চাইলাম, তুই ওকে চিনলি কি করে ? প্রতিউত্তরে জানালো, বেদে চিনে সাপের হাসি।


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহমাদ মুকুল শহরটা নিশ্চয়ই নারায়নগঞ্জ। আমারও বাল্যকালের কিছুটা সময় এই শহরে কেটেছে। তবে তোমার চেয়ে মোটামুটি বছর বিশেক আগে হবে। তোমার বর্ণনার অনেক কিছুই সে সময়ে বোঝার বয়স হয়নি। তবে সিনেমা দেখার কথা মনে আছে। আশা, মাশার, ডায়মন্ড হলের কথা আজো মনে পড়ে। মনে পড়ে জমজমাট না.গঞ্জ নদী-বন্দর, হোশিয়ারী শিল্প, জিমখানার মাঠ! ভাল লাগলো তোমার লেখা, নস্টালজিক করলো বেশ।
বিন আরফান. হ্যা ভাই, অসংখ্য ধন্যবাদ . বেশ অনুপ্রেরণা পেলাম.
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

মার্চ ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i