আমার দেখা কয়েকজন “নোবেল বিজয়ী”

Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon)
১২ ফেব্রুয়ারী,২০১২

২০০৯ সালের ঘটনা। একদিন ভার্সিটির পুরানো মেইল ঘাটতে গিয়ে দেখলাম মাত্র এক সপ্তাহ আগেই একটা “Public Lecture” হয়ে গিয়েছে আর ঐ অনুষ্ঠানের বক্তা ছিলেন Professor Vernon L. Smith (Nobel Laureate in Economics 2002)। বলাই বাহুল্য রাগে মাথার চুল টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছা করলো। কেন জানি না অনেক দিন থেকেই “নোবেল জয়ী” কাউকে নিজের চোখে দেখার ইচ্ছা ছিল। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের সন্তান Professor Dr. Md. Yunus নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার পরে এই ইচ্ছা আরো অনেক বেড়ে যায়। এর একটা কারণ অবশ্য ছিল। আমাদের বাসার বারান্দা থেকে মিরপুর-২ এ অবস্থিত গ্রামীন ব্যাঙ্ক টাওয়ার দেখা যায়। অঙ্কটাই কাছে। কিন্তু উনাকে কখনই সরাসরি দেখা হয় নি। আজও অবশ্য দেখি নাই উনাকে। যাই হোক আমি সুযোগের অপেক্ষায় থাকলাম, কবে আবার ভার্সিটিতে কোন একজন নোবেল বিজয়ী আসবেন আর আমি তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাব! শুরু হল অপেক্ষার পালা।

 

এরপর ঐ একই বছরে এসে গেল আরেকটি সুযোগ। সেপ্টেম্বর মাসের কথা। ব্যানারে লেখা দেখলাম এইবার আসছেন ১৯৮৮ সালে Chemistry তে নোবেল বিজয়ী Professor Robert Huber। উনার দুইটা সেমিনার আয়োজন করেছে National University of Singapore (NUS), আর যতদূর মনে পড়ে Biopolice ও আয়োজন করেছিল উনার সেমিনার এ। আমাদের ভার্সিটিতে হওয়ার আমি সুবর্ণ সুযোগে উনার দুইটা সেমিনার এই যোগদান করি। আবারো বলা বাহুল্য যে উনার লেকচার শোনা আমার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। উনাকে দেখাটাই ছিল আমার জন্য অনেক আনন্দের। তখন ছিল রমজান মাস। ইফতারের ঠিক আগ দিয়ে আমাদের Dinner পরিবেশন করলো, আর এরপর শুরু হল উনার Lecture। বয়স্ক মানুষটা অনেক সুন্দর করে ‘The Architecture of Proteins’ বোঝালেন কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়ে উনাকেই দেখছিলাম। খুব কাছ থেকে উনাকে দেখেছি। উনার দ্বিতীয় সেমিনারে আমি উনার পাশে বসে ছবি তোলার দুর্লভ সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। ব্যবহারে খুব নরম স্বভাবের মানুষ ছিলেন।

 

(Professor Robert Huber এর সাথে আমি)

 

এরপরে এক মাসের মাথায় আবার অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এইবার সেমিনার এ আসলেন ১৯৮৬ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী Professor Wole Soyinka। ভার্সিটির Cultural Hall এ উনার সেমিনার হল। বিশাল এক Theatre রুমে উনার সেমিনার দেখলাম। উনি উনার স্বরচিত কবিতা আবৃতি করে শোনালেন। উনি রসিক ধরণের মানুষ ছিলেন। কিছু রসিকতাও করলেন। উনার ছবি কাছ থেকে তোলার সুযোগ হল না; তবুও মনে দুঃখ নেই। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কারো সাক্ষাৎ পেয়ে আমি অভিভূত ছিলাম।

 

পরের বছর ২০১০ এর ২৮শে জানুয়ারীর কথা। ঐদিন আবার আমার এক আনন্দের দিন। এবার আমাদের ভার্সিটিতে এলেন সবচাইতে লম্বা নোবেল বিজয়ী Professor Robert H. Grubbs। উনি ২০০৫ এ Chemistry তে নোবেল পুরস্কার পান। Metathesis এর উপরে অসাধারণ Lecture দিলেন। মজার কথা হল উনার বক্তব্য শোনার জন্য স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও এসেছিল। তিল ধারণের জায়গা ছিল না সেমিনার রুমে। উনার সাথে ছবি তোলার সুযোগ পেয়েও আমি হাতছাড়া করলাম না। বিশাল লম্বা মানুষটার পাশে নিজেকে কেমন লাগছিল নাই বা বললাম! উনি Metathesis Reaction Mechanism অদ্ভুত এক ভিডিও দিয়ে বোঝালেন কতগুলো মেয়ের নাচ দিয়ে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখছিল ভিডিওটা। আমাদের এক প্রফেসর সিটে জায়গা না পেয়ে সিঁড়ির উপরেই বসে গেলেন। অগত্যা আমাদের কেও কার্পেটের উপরে বসতে হল। অমায়িক ব্যবহার ছিল Professor Grubbs এর। হাসিমুখে আমাদের সাথে ছবির পোজ দিলেন।

 

এরপরে সবশেষে আমি আমার স্ত্রী সহ ২০১১ এর জুন মাসে একটি সেমিনার এ যোগ দেই University Cultural Center এ। ওখানে ২০০৯ এ Chemistry তে নোবেল বিজয়ী Professor Ada Yonath এবং ২০০৭ এ Physics এ নোবেল বিজয়ী Professor Albert Fert। উনাদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেলেও ঐ হলে ছবি তোলা নিষিদ্ধ ছিল। মনে দুঃখ পেলেও কিছু করার ছিল না। ঐদিন বিশাল আয়োজন করে Buffet Dinner খাওয়ান হল। যেমন মজা করে খেয়েছি তেমনই আনন্দ দিয়ে এই দুই কৃতী প্রফেসরের Lecture শুনলাম।

 

আমি আবারো অপেক্ষায় আছি এবার কাকে আবার দেখতে পাবো...

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i