ভাই (ছোট গল্প)

Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon)
২৯ ফেব্রুয়ারী,২০১২

 

এলিজা আর রাফায়েলের আজকে অনেক আনন্দ। আজকে ওদের ১৩ তম জন্মদিন। আজকের পর থেকে ওদের টিনেজ শুরু হবে। এলিজা ছোট থেকেই  অনেক বেশী চঞ্চল আর রাফায়েল ঠিক উল্টো। রাফায়েল বেশ গম্ভীর থাকে। কথা বার্তা বিশেষ বলে না। এলিজার সাথেও না। দু’ভাইবোন যমজ হলেও ওদের চেহারা আর আচরণে কোন মিল নেই। এলিজার ধারণা মা রাফায়েলকে বেশী আদর করে। অবশ্য কে বেশী আদর করুক বা না করুক সেটা নিয়ে রাফায়েলের মাথা ব্যথা নেই। জন্মদিন উপলক্ষে মা ওদের কে নতুন জামা কিনে দিয়েছে। টমাস আঙ্কেল দিয়েছে বড় এক বাক্স চকলেট। বাবা এখনও কোন গিফট দেয় নি। গত জন্মদিনে বাবা এলিজাকে একটা পেইন্টিং সেট আর রাফায়েলকে একটা স্কুটার কিনে দিয়েছে। আজকে সারাদিন বাবার দেখা নেই। মা কে জিজ্ঞাসা করেছে এলিজা, মা কোন উত্তর দেয় নি। আজকে মায়ের মন কেন যেন খুব খারাপ।

-রাফি, এই রাফি! ভাই রাফায়েলকে এলিজা রাফি বলে ডাকে। ভাইটার জন্য ওর অনেক মায়া কিন্তু ভাইটা ওর সাথে ঠিকমত কথাও বলে না।
-কি বল। গেমস থেকে মুখ না সরিয়ে উত্তর দিল রাফায়েল।
-মা কে একটু জিজ্ঞাসা কর না বাবা কোথায় গেছে?
-আমি কেন? তুই জিজ্ঞাসা কর।
-আরে কর না। তুই করলে মা বলবে। আমাকে বলবে না।
-কে বলছে তোকে বলবে না? এইবার এলিজার দিকে তাকায় রাফায়েল।
-আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম। বলে নাই। দেখি মন খারাপ করে খাটে বসে আছে।
-তাহলে আমাকে বলবে তা ভাবছিস কেন? রাফায়েলের নির্লিপ্ত উত্তর।
-ধুৎ। তোকে বলাই ভুল হইসে। এলিজা রেগে যায়।
-ভুল হলে বলিস না। রাফায়েল আবার গেম খেলতে শুরু করে।
রাগে গজগজ করতে করতে এলিজা ওর ঘরের দিকে যায়।

রাত নয়টা বেজে গেছে। এলিজার এইবার দুশ্চিন্তা হতে শুরু করে। বাবা তো এত দেরি করে না কখনও। এলিজা একবার দরজার কাছে যায় আর একবার মায়ের কাছে যায়। কিন্তু মাকে কিছু বলতে সাহস পায় না। কি করবে ভেবে পায় না। অস্থির লাগতে থাকে। এক্সময় এলিজার কান্না পেতে থাকে। মনে মনে বলে, আমাদের কিছু লাগবে না বাবা। তুমি ঘরে আসো তাড়াতাড়ি। আমার ভালো লাগছে না বাবা।

গেটের পাশ দিয়ে এক একটা গাড়ি যায় আর এলিজার মনে হয় এই বুঝি বাবা এলো। রাফায়েল বসে বসে টিভি দেখছে। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ লাগছে এলিজার। কিন্তু কিছু করার নেই। মন খারাপ করে জানালার পাশে বসে গেটের দিকে তাকিয়ে থাকে এলিজা।

ঘুম এসে চোখ লেগে গেছিলো কখন সেটা এলিজা টের পায় নি। গেট খোলার শব্দে জেগে যায়। চোখ ডলতে ডলতে দেখে গাড়ি নিয়ে বাবা ঢুকছে। এক দৌড়ে গেটের কাছে চলে যায়। বাবা দরজার কাছে আসা মাত্রই বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে এলিজা। বাবা জিজ্ঞাসা করে, কি হয়েছে মা? কাঁদছো কেন? রাফালেয়ের সাথে ঝগড়া করেছো?
-তুমি এতো দেরী করে আসলে কেন? ফোঁপাতে ফোঁপাতে এলিজা অভিযোগ করে।
-ও এই কথা? মেয়ের চোখ মুছতে মুছতে মার্টিন বললেন, তোমাদের জন্য একটা জিনিস আনতে গেছিলাম মা।
-আমাদের কিচ্ছু লাগবে না।
-পাগল বলে কি! মেয়ের দুই গালে চুমু দিলেন মার্টিন। ঘরে ঢুকে রাফায়েলের গালেও চুমু দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন। রাফায়েলের তেমন কোন বিকার নেই। বরং টিভি দেখার মাঝখানে ছেদ পড়ায় একটু ব্যস্ত হয়ে শুভেচ্ছাটা নিল। আর বাবাকে জানালো, থ্যাঙ্ক ইউ বাবা। মার্টিন গাড়ি থেকে বড় একটা বাক্স বের করে আনলেন। এলিজা কয়েকবার জিজ্ঞাসা করলো কি সেটা। বাবা বললেন, তোমাদের উপহার। এখনই বলবো না। উপহার বলতে গিয়েও বাবা কেমন যেন মনমরা হয়ে গেলেন। মুখের হাসি নেই। এলিজা লক্ষ করলো এটা।

রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। মা খাবার দিয়ে চলে গেল। মা শুধু বসলো না খেতে। রাফায়েল চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। মা ওর জন্য পিজা আর আপেল পাই বানিয়েছে। তাই কপকপ করে খাচ্ছে। অন্য কোন দিকে নজর নেই। এলিজার জন্য মা বানিয়েছে স্ট্রবেরী ক্রিম দেয়া কেক। এলিজা পছন্দ করে। বাবা ওদের জন্য বাইরে থেকে চিকেন ফ্রাই নিয়ে এসেছে। মা আমাদের সাথে কেন খাচ্ছে না? অবশেষে রাফায়েল জিজ্ঞাসা করে। রাফায়েলের মুখে প্রশ্ন শুনে এলিজা আর বাবা একসাথে তাকায়।
-তোমার মায়ের মন ভালো না।
-মায়ের মন কেন ভাল না আমি জানি। বলেই রাফায়েল আবার খাওয়া শুরু করলো। এলিজার মনে হল ওকে একবার জিজ্ঞাসা করে কি হইছে? কিন্তু বাদ দিলো। রাফায়েল নিজে থেকে বা বললে হাজার প্রশ্ন করলেও উত্তর দিবে না।

টেবিলের সামনে সবাই সেই বড় বাক্সটা গিরে দাঁড়িয়েছে। মা এখানেও নেই। বাবার মুখে কেন যেন হাসি নেই। বাবা এমন কেন করছে আজকে? আজ ওদের জন্মদিন। আগে তো বাবাকে এমন দেখে নাই। এক্সময় বাবা নিরবতা ভেঙ্গে বলেন, আমি আজকে তোমাদের জন্য যা এনেছি হয়ত তোমাদের তা দেখে মন খারাপ হবে। কিন্তু এখন তোমরা বড়ো হচ্ছো। হয়ত মানতে পারবে।
-কি এনেছো বাবা? এলিজা প্রশ্ন করে।
-এখনই দেখতে পারবে।
-আমি জানি কি এনেছো। রাফায়েল রহস্যময় ভঙ্গিতে বলে। পিটারকে এনেছো।
-পিটার? সে কে? বাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে এলিজা।
-তুমি কিভাবে জানলে রাফায়েল? মার্টিন অবাক হয়।
-জানি আমি। মায়ের ডেস্কে আমি মেডিক্যাল সেন্টার থেকে পাঠানো চিঠিটা পড়েছি। রাফায়েলের এই রহস্যঘেরা কথার মানে এলিজা বুঝে না। সে মনে মনে অধৈর্য্য হয়ে উঠে। বাবা খোলে না কেন?
-ঠিকি বলেছো রাফায়েল। পিটার কে এনেছি।
-বাবা আমার ভালো লাগছে না। পিটার কে?

মার্টিন এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওদের সামনেই বাক্সটা খুলে ফেললেন। একটা বড়সড় কাঁচের বোতল বের হল। তার ভিতর সাদা রঙের একটা মাংসের দলা, হাল্কা হলুদ রঙের পানির মধ্যে ডোবানো। এলিজা প্রথমে বুঝে নাই। পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখলো ওটা একটা সদ্যজাত বাচ্চা ছেলের লাশ। কোন একটা তরলের মধ্যে ডোবানো আছে। এত কিছু থাকতে বাবা কেন এই জিনিস উপহার হিসাবে আনলেন সেটা এলিজার বুঝে আসে না। কি এটা বাবা? প্রশ্ন করে।

-মা শোন। তোমরা জানতে যে তোমার যমজ ভাই বোন। আসলে সেটা না। তোমাদের এতদিন বলা হয় নাই। তোমরা ছিলে আসলে ট্রিপ্লেট।
-ট্রিপ্লেট মানে?
-তুমি, রাফায়েল আর পিটার তোমার তিনজন একসাথে তোমাদের মায়ের পেটে জন্মাও। তিনজন ছিলে বলে ট্রিপ্লেট বলে। তুমি আর পিটার তোমার মায়ের পেটে একই স্যাক এ ছিলে। আর রাফায়েল ছিল আলাদা একটায়। প্রথমে রাফায়েলের জন্ম হয়। এরপর পিটার আর সবশেষে তোমাকে তোমার মায়ের পেট থেকে বের করা হয় এলিজা। তোমরা দুইজন বেঁচে গেলে। শুধু মারা গেল পিটার। জন্মের পর মাত্র ৫ ঘণ্টার জন্য বেঁচে ছিল। তোমার মায়ের কোলের উপরেই সে মারা যায়। তোমার মা পাগলের মত হয়ে গেল। আমি তোমাদের মা কে বলেছি যে পিটারকে কবর দিয়েছি। কিন্তু আমার মন মানে নি। আমি মেডিক্যাল সেন্টার এর সাথে আলাপ করে পিটারকে এখানে রেখে দিয়েছি। তোমাদের মা এতোদিন সেটা জানতো না। আমি শুধু তোমাদের জন্মদিনে গিয়ে পিটারকে দেখে আসতাম।
-তারমানে এইটা আমাদের ভাই? আমরা একসাথে জন্মাই? এলিজা প্রশ্ন করে।
-হ্যা মা। এটা তোমাদের ভাই। একটু আদর করে দেবে না তোমার ভাই কে? বলতে বলতে মার্টিনের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।

এমন সময় মা কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে ছুটে এসে বোতলটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে, আমার ছেলে! তুমি কেন আমাকে এতদিন বলনি মার্টিন? কেন আমাকে বলনি? মা ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে। রাফায়েল আর এলিজা দুপাশ থেকে ওদের মাকে জড়িয়ে ধরে রাখে।

 

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Mohammad Anisur Rahman Shanto সরি ভাইয়া । কেন জানি ভালো লাগলো না ।
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) কষ্ট করে পড়েছেন এইজন্যই ধন্যবাদ! সেই সাথে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনাকে!
নিলাঞ্জনা নীল অনেক সুন্দর একটি গল্প শাওন ভাই....... আবেগ খুব সুন্দর ফুটে উঠেছে...
Lutful Bari Panna দারুণ ক্লাসিক। নীরোর সাথে একমত। টুইষ্টটা অনবদ্য...
নাজমুল হাসান নিরো হাহাহা দাদা. আমি যেটা ধারনা করে এগুচ্ছিলাম সেটা মেলে নি। গল্পটা যেভাবে সাদামাটাভাবে এগুচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছিল শেষে একটা চরম টুইষ্ট আছে, যেটা সব পুষিয়ে দেবে। হয়ত টিনএজ জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতার একটা উদাহরনকে টুইষ্ট হিসেবে দিলে মনে হয় সবচেয়ে বেশি টুইষ্ট পেতাম। যাহোক ক্ল্যাসিক হিসেবে খুব ভাল হয়েছে বলতেই হবে। রেশটা যেন আলবেয়ার ক্যামুর সেই ছেঁড়া জুতার মত লাগল।
এফ, আই , জুয়েল # জন্মদিনের এক অন্যরকম উপহার । অপূর্ব রোমাঞ্চের শিহরন । সব মিলিয়ে---গুদ ,
আহমাদ মুকুল ওহ.....অদ্ভূত সুন্দর কাহিনী। কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়েছিলাম গল্পটি পড়ে! এটা কি মৌলিক, নাকি অনুবাদ?
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) সম্পূর্ণ মৌলিক ভাই. অনুবাদ হলে তো লিখে দিতাম! ধন্যবাদ আপনাকে ভাই!
আহমাদ মুকুল তোমার ভাবনার বৈচিত্র্য মুগ্ধ করে। ধন্যবাদ তোমাকেও।

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i