নিজশহরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের উপর এত ঘৃণা কেন?

শামস্ বিশ্বাস
০৮ এপ্রিল,২০১৩

স্কুলের এক জুনিয়ারের বিশাল হাস্যকর স্ট্যাটাস দেখে চরম হতাশ হলাম। ছেলেটা রাজশাহী ওয়াসা-তে সহকারী প্রকৌশলী (ইলেক্ট্রিক্যাল) পদে যখন মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেছিলে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল 'রাজশাহীতে একটি গ্রন্থাগার আছে যেখানে গান্ধীজী, নেতাজী এরা এসেছিলেন, সেটার নাম'। জিজ্ঞেস করা হয়েছিল 'রবীন্দ্রনাথ কবে রাজশাহী এসেছিলেন?' 'কাজী নজরুল ইসলাম কবে রাজশাহী তে এসেছিলেন?'
এটা নিয়ে চরম বিরক্ত ও বিব্রত। সে এ সব প্রশ্নকে ''ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার পেলের বউ এর জন্মদিন কবে' টাইপের সাথে তুলনা করে; এবং সিলেবাসে সাধারণ জ্ঞান হিসাবে অন্তর্ভুক্তির দাবি করে।

ছেলেটির মাতম দেখে হাসি কারণ, সে যে শহরে ১৯৮৯ থেকে আছো। যে শহরে তার পুরো শিক্ষা জীবন (SSC, HSC, B.Sc in EEE, MBA) শেষ হয়েছে। সেই শহরের ওয়াসা-তে সহকারী প্রকৌশলী (ইলেক্ট্রিক্যাল) পদে যখন মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেছিলে তখন তাকে সেই শহরের ঐতিহ্য নিয়েই প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার পেলের বউ এর জন্মদিন কবে' সেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি। বুঝতে পারলাম না নিজশহরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের উপর এত ঘৃণা কেন? হয়তো হোম টাউনের প্রতি আগ্রহ দেখতে চেয়েছিল। যে শহরে সে বড় হওয়ার পরেও সেই শহরের গর্ব করার মত বিষয় নিয়ে যখন কিছুই জানো না, তখন সেই শহরের জন্য কাজ করার সময় কতটা দায়িত্বশীল ও পেশাদার হবে সেটা কিন্তু চিন্তার বিষয়। হোমটাউন নিয়েও যদি এদের সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত করে পড়াতে হয়, তাহলে এই দুঃখ রাখার জায়গা দেখি না। উল্টা সকল সাবেক-বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা যায়।

যাইহোক এই টাইপের পোলাপানদের কাছে অনুরোধ নিজ শহরের কোন প্রতিষ্ঠানে আর চাকুরীর জন্য আবেদন করো না, আবার তোমাদেরকে ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে প্রশ্ন করে বিব্রত করতে পারে। আরেকটা জিনিষ, সব সময় হাতে করে সিলেবাস নিয়ে ঘুরবে। যখন তোমাকে কেও নিজ এলাকা বা শহর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে সিলেবাসটা ধরিয়ে দিয়ে বলবে, সিলেবাস থেকে প্রশ্ন করতে





প্রশ্নের উত্তরগুলা হলো:

(১) রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার, নগরীর মিয়াপাড়া এলাকায় ১৮৮৪ সালে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এই গ্রন্থাগারের আদি নাম ছিলো রাজশাহী সাধারণ পুস্তকালয়। ১৯৭৫ সালের গঠনতন্ত্র সংশোধনীর মাধ্যমে নামকরণ হয় রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার। । এটি প্রতিষ্ঠিায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেন কাশিমপুরের জমিদার রায়বাহদুর কেদারনাথ লাহিড়ী ও দীঘাপতিয়ার জমিদার রাজা প্রমোদনাথ এবং নাটোরের জমিদার রাজা চন্দ্রনাথ রায় বাহদুর। এসময় বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বিনামূল্যে বিপুল পরিমান বই দেয়া হতো। এসময় এই লাইব্রেরীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে মাঝে মধ্যে বহু গুণী ব্যক্তিত এখানে আসতেন। এদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলেন, মহাত্মা গান্ধী, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুলস্নাহ, আচার্য প্রফুলস্ন চন্দ্র রায়, সুভাষ চন্দ্র বোস, রমা প্রসাদ মুখাজী প্রমুখ।

(২) রাজশাহীতে রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন একাধিকবার ৷ পতিসরে ছিলো তা৺র নিজের জমিদারী ৷ ১৮৯২ সালে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার রাজশাহী আসেন ৷ বন্ধু লোকেন পালিতের আতিথ্য গ্রহন করেন এখানে ৷ রাজশাহী এ্যাসোসিয়েশনের সভায় তিনি পড়ে শোনান “শিক্ষার হেরফের” প্রবন্ধটি ৷ “পঞ্চভূতের ডায়রী” বইটির রচনা শুরু করেন রাজশাহীতে থাকার সময়ই ৷ পরে বইটি উৎসর্গ করেন নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথকে ৷ ১৮৯৪ সালে রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয়বার রাজশাহীতে এলেন আবার লোকেন পালিতের অতিথি হয়েই ৷ “এবার ফিরাও মোরে” কবিতাটি লেখেন রামপুর-বোয়ালিয়াতে বসেই ৷ এরপরও পতিসরে জমিদারী দেখতে এসেছিলেন বেশ কয়েকবার 

(৩) কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৯ সাল ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি রাজশাহীতে এসেছিলেন। নাটোর রেলওয়ে স্টেশনে নেমে মোটরযোগে রাজশাহীতে আসেন। উঠে ছিলেন জাতীয় চারনেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান হেনার দাদা জমিদার হাজী লাল মোহাম্মদ সরদারের বাড়ীতে।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকা প্রতিটি নাগরিকের জন্য খুবই জরুরী । এই ধারনাকে সাধারন জ্ঞানও বলা যেতে পারে । কিন্তু অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে যখন এর অথেনটিক সীমার আওতায় প্রবেশের চেষ্টা করা হয়---সমস্যা বা বিব্রত হওয়ার ব্যাপারটা তখনই ঘটে । সাধারন জ্ঞানের নামে আমাদের দেশে যে চর্চা চলছে---, সেটা প্রায় প্রায় অসাধারন সীমাকেও অতিক্রম করে যায় । এতে আর্থ-সামাজিক---, কোনোদিক থেকেই মানুষের তেমন কোনো উপকারের সম্ভাবনা থাকে না । এর বিপজ্জনক বাহাদুরীর প্রকাশ দিনদিন বেড়েই চলেছে ।
প্রসেসসর মন্তেব্যের জন্য ধন্যবাদ

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i