একালের নারী তোমাকেই বলছি শোন

ম্যারিনা নাসরিন সীমা
০৮ মার্চ,২০১২

 

   আমি এক সেকেলে অবগুণ্ঠনাবতী নারী । চার দেয়ালের মাঝে বন্দী ছিল আমার  জীবন । ঘরের জানালায় চোখ রেখে আকাশ দেখতাম । কতবার স্বপ্ন দেখেছি উঠোনে পা রেখে খোলা আকাশ দেখব ,রুপালী চাঁদ থেকে সোনালী স্বপ্নের সুতা গুলো আমাকে জড়িয়ে ধরবে । কখনো পূরণ হয়নি । শিশু বেলায় পিতা আর ভায়ের , বুঝতে না শিখতেই স্বামীর , আর মৃত্যু পর্যন্ত সন্তানের সেবা করেছি । তাদের পরিচয়েই কেটে গিয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি । নিজের নাম কি ছিল এখনো মনে করতে পারিনা ।

কত আগেই তোমরা উঠোন পেরিয়ে বাইরে এসেছ । শিশুর দোলনার রশির পরিবর্তে তোমাদের হাতে আজ অস্ত্র । আকাশ পথে বিমান চালাও , সমুদ্রে জাহাজ । কোন কোন জায়গায় তোমাদের জয়কার জয়কার্ , বিপরীত সেখানে অসহায় । শুনেছি নারী পুরুষ সমান এই বিতর্কে পক্ষ দলই আজ জয়ী হয় । কিন্তু আসলে কি তাই ? কিভাবে ? আমরা এখানে বসেই হাসি বিদ্রুপের । যদি সমান হবে কেন এই নারী দিবস ? পুরুষ দিবস কেন নেই ? আচ্ছা মুরগীর রানটি কি তোমার পাতে পড়ে ? নাকি ভায়ের ? বড় হয়েছ বলে কি তোমাকে আগে স্কুলে পাঠায় নাকি ছোট ভাইটিকে ? আমি এখানে ব্যতিক্রমের কথা জানতে চাইনা জানতে চাই  সর্ব সাধারনের কথা ।

 আমাদের সময় কন্যাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো । তোমাদের কে এসিড দিয়ে ঝলসে দেয় । লেখা পড়ার অপরাধে হাত কেটে ফেলে । আজো মেয়েরা সম্ভ্রম হারিয়ে রশিতে ঝুলে পড়ে । দোররার আঘাতে আজো তোমাদের শরীর কালশিটে হয় । পুরুষের মনোরঞ্জনে আমরা বাজারের বাইজী হয়েছি আর হাটে বিকিকিনির পন্য হয়েছি বারংবার । আর তোমরা ? বিজ্ঞাপন আর নীল ছবির বাজারে নিলাম হচ্ছ বারবার । এখনো লক্ষ লক্ষ নারী চারদেয়ালের মাঝে গুমরে কাঁদে । এখনো নারীরা বাবা , স্বামী আর সন্তানদের কাঁধে হাত রেখেই পার করে দেয় জীবনের পুরোটা সময় । এখনো তারা ঠিকানাহীন ।

তবে আমাদের থেকে তোমাদের পার্থক্য কোথায় ? কতটুকু পথ এগিয়েছ সেকাল থেকে একালে ? খুব বেশি নয় । কোটা নিয়ে আর কতকাল চলবে ? বেরিয়ে এস নারীদিবসে লিপিসটীক মেখে , ফুলের তোড়া নিয়ে মিষ্টি কথার ভাষণ শোনা সব পাওয়া নয় । বছরের প্রতিটা দিনই মানুষের , সুতরাং তোমারও । ঋজু হও , ঋদ্ধ হও সামনে যেতে হবে বহুদুর ! আমরা যা পারিনি তোমরাই পারবে তাই ।

মনে রেখ ,

সে যুগ হয়েছে বাসী ,

যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না , নারী আছিল দাসী ।

 

 

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খোন্দকার শাহিদুল হক আমিতো দেখি ভিন্নরূপে নারীই আছে দাসি মিথ্যেই কথায় পর্ণ বানায় বলছি ভালোবাসি। সঠিক পথে হাঁটতে হলে থাকতে হবে আলো ভিন্নপথে বন্দীশালা আঁধার এবং কাল। আবারও শুভেচ্ছা
সাইফুল করীম নারী দিবসের শুভেচ্ছা নিবেন আপা......বাংলার ঘরে ঘরে নারীরা জেগে উঠুক আপনার লিখার দ্বারা......
ম্যারিনা নাসরিন সীমা ধন্যবাদ ! আমরাও চায় নারীরা মানুষের মত বেঁচে থাককুক ।
Lutful Bari Panna ওয়াও দারুণ লিখেছেন আপু। লেখাটার বক্তব্য শিল্পগুণ সব মিলিয়ে তুখোড় একটা লেখা। নারী দিবেসের শুভেচ্ছা রইল...
ম্যারিনা নাসরিন সীমা নারী দিবসের সুভেচ্ছা পান্না ভাই । ধন্যবাদ আমি শুধু আমার ভাবনা টুকু শেয়ার করেছি আপনাদের সাথে ।
Lutful Bari Panna ভাবনাটুকুই অনেক ভাল লাগল...
খোন্দকার শাহিদুল হক লেখার বিষয়বস্তু ও চেতনা দুটোই ভাল লাগল। আরদশজন যেভাবে আহ্বান করে ঠিক সেভাবেই আপনি ডাক দিয়েছেন মুক্তাঙ্গনে। তবে বেরিয়ে এসে কী করবে ? কার সাথে লড়বে ? তার গন্তব্য কতদূর ? তার করণীয় কী কী ? তা স্পষ্ট করে বলা হলে আহুত মা-বোনদের বোধগম্য হতো বলে আমি মনে করি। এই ঢালাও আহ্বান শুনে সবাই হাতে তালিই দেবে আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে রাঙা করে রঙ্গিন কথা বলবে। সে সব কথা শুনতে শুনতেই বেলা যে বয়ে যাবে। তাই গন্তব্য চিহ্নিত হোক। আর চেতনাহোক শানিত। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।
ম্যারিনা নাসরিন সীমা এখানে তেমন ভাবে রাস্তা নির্দেশ করা হয়নি সত্য তবে সমস্যার মধ্যেই কিছু কিছুর সমাধান রয়েছে । যেমন মেয়ে সন্তানদের প্রতি পরিবারের দৃষ্টি ভঙ্গি আগের মতই থেকে গিয়েছে সেটা পরিবর্তন করা । অনেক ক্ষেত্রে এই দৃষ্টি ভঙ্গীর কারনেই বিশ্বের অশিক্ষিত জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ নারী । । কারন ছেলেকে পড়ানোর খরচ জোগাড় হলেও মেয়েদের বেলায় হয়না । নারীদের কে এগিয়ে যেতে হলে আর যে কাজটা আগে করা দরকার সেটা হল নিজেদের কে দুর্বল না ভাবা । আমাদের বেশির ভাগ নারীই যেটা মনে করেন । নারীরা যেটা নিজের যোগ্যতায় পান সেটাকে তারা অনেক সময় বাড়তি পাওয়া মনে করেন । যেটার সুযোগ পুরুষেরা নেয় । এখনো নারীদের সাফল্যকে ব্যতিক্রম হিসাবে দেখা হয় । আমি আশা করি অনেকের কথার মধ্য দিয়ে সমাধানের অনেক রাস্তা বের হয়ে আসবে । ধন্যবাদ শাহিদুল ভাই ।

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i