বিনয়, বই পড়া এবং দু’জন শিক্ষক

এশরার লতিফ
২১ ডিসেম্বর,২০১২

১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের স্বর্ণ যুগ। ওখানকার পড়ালেখার মান তখন কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজের মানকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে। ১৯৪৬ কিম্বা ১৯৪৭ সালে আমার বাবা ওই কলেজের ছাত্র। তো সেখানে ইংরেজী সাহিত্য পড়াতেন অসম্ভব বিনীত এবং লাজুক একজন শিক্ষক। তিনি খুব যত্ন করেই পড়াতেন কিন্তু এই অতিরিক্ত বিনয়ের কারনে পড়াবার সময় ছাত্রদের দিকে খুব একটা চোখ তুলে তাকাতেন না। আমার বাবা এবং অন্যান্য ছাত্ররা এই নিতান্তই নিরীহ এবং গোবেচারা শিক্ষকটিকে চিনতেন জে ডি নামে। এই বিনয় দিয়েই তিনি একটা প্রাইভেসীর সীমা রেখা টেনে দিয়েছিলেন, সে কারনে তার ব্যাপারে ছাত্ররাও খুব বেশী জানতে আগ্রহ বোধ করেনি।

আরেকজন  শিক্ষকের কথা বলি। ১৯৮৫ অথবা ১৯৮৬ সাল। আমার বাবা নিজেও তখন ঢাকা বিশব্বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন । সেই সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারে থাকতাম। বেশীরভাগ শিক্ষকের ছেলেরাই বন্ধু। তখনকার রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের বাসায় তার ছেলের জন্মদিনের  ঘরোয়া দাওয়াত। দেখা গেলো আমন্ত্রিত অতিথি তিনজনঃ আমি, আমার অকালপ্রয়াত বন্ধু জিয়া (আমার তখন মাত্র হাই স্কুল লেভেলের ছাত্র) এবং কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের একজন প্রায়-মধ্যবয়সী শিক্ষক। বৈঠকখানায় সবাই বসে আছি। ওই মধ্যবয়সী শিক্ষক কারো সাথেই কোন কথা বলছেন না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বুক শেল্ফ থেকে একের পর এক বই নিয়ে গভীর মনোযোগে পড়ে যাচ্ছেন। ভাবলাম উনি কী জন্মদিনে এসেছেন না পাবলিক লাইব্রেরীতে? এরপর বহুবার ওই শিক্ষককে দেখেছি ফুলার রোডে রিকশা দিয়ে আসতে যেতে । প্রতিবারই তার হাতে কোন না কোন বই এবং যথারীতি নিবিষ্ট মনে পড়ছেন।

আমার বাবার যে শিক্ষকের কথা প্রথমেই বলেছিলা তার পুরো নাম জীবনানন্দ দাস- বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম কবিদের একজন। কেউই তখন বলেনি যে ওই জে ডি-ই হলো the  জীবনানন্দ দাস।

দ্বিতীয় যে শিক্ষকের কথা বললাম, তিনি আমাদের অন্যতম জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ। যখনকার কথা বলছি তার চার পাঁচ বছরের ভেতরেই তিনি খাতির শিখরে উঠে যাবেন।

এনাদের দুজনের কাছ থেকে দুটো শিক্ষা নেয়া যায়ঃ বিনয় এবং বই পড়া। ইদানীং এ দুটোরই অভাব নিজের এবং আশেপাশের অনেক লেখকের ভেতরেই টের পাই। 

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাহাঙ্গীর অরুণ আপনি ভাগ্যবান। স্মৃতি'র প্রাচুর্য এবং আপনার লেখার মান দুটোর জন্যই।
এশরার লতিফ ধন্যবাদ জাহাঙ্গীর ভাই, জ্বী, অনেক ঘটনাইস্মৃতি হয়ে যাবার পর মূল্যবান মনে হচ্ছে, সময়ে বুঝি নাই .
ভালো লাগেনি ২৭ ডিসেম্বর, ২০১২
তানি হক ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের স্বর্ণ যুগ। ওখানকার পড়ালেখার মান তখন কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজের মানকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে....গর্বে বুকটা ভরে গেল ভাইয়া ..ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সুন্দর এই পোস্টটির জন্য ..
এশরার লতিফ ধন্যবাদ তানি, দেশভাগের পর অনেক ভালো শিক্ষক ওপার বাংলায় চলে যাওয়ায় সব বদলে যায়..
ভালো লাগেনি ২১ ডিসেম্বর, ২০১২
Lutful Bari Panna লতিফ ভাই আমি এখন বসবাস করি পটুয়াখালীতে। বাড়ি অবশ্য বরিশালেই। নাম বললে চিনতে চেষ্টা করতে পারি।
এশরার লতিফ পান্না ভাই, বার্তা দিয়েছি.
ভালো লাগেনি ২১ ডিসেম্বর, ২০১২
সূর্য "এনাদের দুজনের কাছ থেকে দুটো শিক্ষা নেয়া যায়ঃ বিনয় এবং বই পড়া। ইদানীং এ দুটোরই অভাব নিজের এবং আশেপাশের অনেক লেখকের ভেতরেই টের পাই।" ........................... এ কথাগুলো আমরা সবাই জানি, তবে হয়েছি কি আরো অনেক "কর্তব্য" কাজের মতো আমরা এদুটোকেই আগামীদিনের জন্য ফেলে রাখি। কিছুটা ইর্ষা (আগামী সংখ্যার বিষয় বলে নয় বাস্তবেই) হচ্ছে, যারা এমন সব মানুষের সাহচার্য্য পেয়েছেন তারা কতটা ধনী ছিলেন! হঠাৎ করে আমারও কলেজ জীবনের এক স্যারের কথা লিখতে ইচ্ছে করছে।
এশরার লতিফ সূর্য ভাই, ধন্যবাদ. আসলেই অনেক কিছু হয়ে ওঠে না কর্তব্যের চাপে.
ভালো লাগেনি ২১ ডিসেম্বর, ২০১২
Lutful Bari Panna মনের মধ্যে কত অন্ধকার নিয়ে বাস করি। আপনার স্মৃতিচারণ আমাদের চোখ খুলে দিক। প্রথমজন আমাদের বরিশাল অঞ্চলের গর্ব, আর দুজনই কিংবদন্তী। গর্ব সারা বাংলা ভাষার। মনে পড়ছে প্রথমজনের মাতা কুসুমকুমারী দাশের বিখ্যাত পঙক্তি- 'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।" আর একটা কথা, আপনার বাবা আমার প্রিয় বিদ্যায়তনের ছাত্র ছিলেন।বরিশালের সাথে আপনার সম্পর্কটা জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।
এশরার লতিফ ধন্যবাদ পান্না ভাই. আমার বাবার জন্ম পটুয়াখালীর বাউফলে.
ভালো লাগেনি ২১ ডিসেম্বর, ২০১২
রোদের ছায়া আপনার লেখাটি পড়ে এই দুজন মানুষ সম্পর্কে জানলাম আর বিনয় আর বই পড়ার গুরুত্ব কতো সেটাই শিখলাম ......ধন্যবাদ আপনাকে ।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

মার্চ ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i