স্বামী বিবেকানন্দ: অবদান যার অসীম

প্রসেসসর
০৪ জুলাই,২০১৪

স্বামী বিবেকানন্দ

সন্ন্যাস জীবনে স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত নরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৬৩ খ্রীষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কলকাতার সিমুলিয়া পল্লীর বিশ্বনাথ দত্ত এবং মা ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনি মার কাছে শেখেন স্বধর্ম, বাবা পরিচয় করিয়ে দেন এক উদার সংস্কৃতির সঙ্গে। সাধারণ বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে তিনি সঙ্গীত ও ব্যায়ামেও পারদর্শী হন। যৌবনে তিনি ব্রাক্ষ্মসমাজ ও পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বি.এ. পাশ করে আইন পড়বার সময় পিতৃবিয়োগ হওয়ায় অর্থাভাবে তাঁকে অনাহারে পর্যন্ত দিন কাটাতে হয়েছিল। ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে শ্রীরামকৃষ্ণের দেহত্যাগের পর গৃহী ভক্তদের অর্থানুকূল্যে তিনি অন্য গুরুভাইদের সঙ্গে বরানগরে প্রথম শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ স্থাপন করেন। ১৮৯০ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি পরিব্রাজনায় বেরিয়ে ভারত ও ভারতবাসীদের প্রতক্ষ পরিচয় লাভ করেন। এই সময়ে তিনি নানান শাস্ত্রও অধ্যয়ন করেন।

১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসে তিনি শিকাগো ধর্ম মহাসভায় হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মাদ্রাজবাসী ও অন্যান্য বন্ধুদের সাহায্যে আমেরিকায় যান। সেপ্টেম্বরে এই সভার অধিবেশনে স্বামীজির বক্তৃতার ফলে ভারতের ধর্মমত ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে বিদেশীদের শ্রদ্ধা বহুগুণে বেড়ে যায়। আরও কিছুদিন ইউরোপে ও আমেরিকায় থেকে তিনি বক্তৃতা, শাস্ত্রব্যাখ্যা, বইলেখা ও ব্যক্তিগত আলোচনার মধ্যে দিয়ে ভারতীয় জীবন ও চিন্তাধারা সম্বন্ধে বিদেশীদের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার কাজে নিযুক্ত থাকেন। ১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দে ভগিনী নিবেদিতা বিবেকানন্দকে সর্বপ্রথম দেখেন। স্বামীজির বাণী তাঁর হৃদয়ে অসামান্য প্রভাব বিস্তার করে। ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে তিনি স্বামীজির আহবানে ভারতে আসেন। ১৮৯৭ খ্রীষ্টাব্দে বিবেকানন্দ স্বদেশে ফেরেন আর দেশবাসীর কাছ থেকে তুমুল সম্বর্ধনা পান।

বিবেকানন্দ এক নবজাগরণের বাণী শুনিয়ে ও নতুন কর্মপস্থার নির্দেশ দিয়ে ভারতের আত্মাকে সমগ্ররূপে উদ্বোথিত করেছিলেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজেকে না জড়ালেও তাঁর বক্তৃতা ও রচনা তেজ, বীর্য, কর্তব্যপরায়ণতা, স্বদেশপ্রেম, স্বাধীনতার আকাঙক্ষা, ভারতের ভাবী সম্ভাবনা ও অতীত মহিমার গৌরবানুভবের বার্তা প্রতিনিয়ত ধবনিত করে দেশের যুবকদের প্রাণে ও রাষ্ট্রজীবনে এক অভূতপূর্ব অনুভূতি ও উদ্বোধন এনেছিল। তিনি রাষ্ট্রজীবনে স্বাধীনতার দ্বার অর্গলমুক্ত করেছিলেন। তিনি ছিলেন সাম্যের বার্তাবহ, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। ধর্ম ও সমাজের যুক্তিহীন চাপে জাতি কর্মশক্তি হারাবে এটা বিবেকানন্দের কাছে অসহ্য ছিল।

স্বামী বিবেকানন্দ সমাজসংস্ফারের বিরোধি না হলেও ভাঙবার পথে চলতে চাইতেন না। শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাহায্যে নবীন জীবন গড়ে তোলাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তিনি গতানুগতিকতার বিরোধী ছিলেন কিন্তু ভারতের শাশ্বত আত্মাকে অস্বীকার করেননি। তাঁর মতে ভারতের সমাজ ধর্মভিত্তিকা কিন্তু সে ধর্ম আচারগত নয়; এটা সর্বসমাজের, সর্বকালের, সর্বমানবের অন্তর্নিহিত চরম সত্য-দেশকালপাত্রানুযায়ী এর বিকাশ বিভিন্ন।

তিনি বুঝেছিলেন, বাল্যবিবাহ, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে শক্তিক্ষয় করার চেয়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিয়ে মানবমনকে পরিশীলিত করে উদারভুমিতে তুলে নিলে নীচতা ও ক্ষুদ্রতা সহজেই দূর হবে। শিক্ষার ফলে নারীসমাজ স্বাধীনভাবে নিজেদের সমস্যার সমাধান করবে। সে শিক্ষা হবে সর্বতোমুখী-দৈহিক, মানসিক, আখ্যাত্মিক এবং তা মানবের অন্তরাত্মাকে বিকশিত করবে।

বিবেকানন্দের মতে জাতীয় জীবনে উপনিষদের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত রেখে বাইরের জগত থেকে ভাবধারা ও কর্মকৌশল আহরণ করতে হবে। বিজ্ঞান, সংঘবদ্ধভাবে কার্যপরিচালনা, উদার সামাজিক দৃষ্টি ইত্যাদি আধুনিক জগতের অবদানকে অস্বীকার করলে চলবে না। তিনি পাশ্চাত্যবাসীকে বলতেন, ভারত শুধু বিদেশীদের দ্বারে ভিখারী নয়, অপরকে শেখাবার মত উদার আধ্যাত্মিক সম্পদ ও শাশ্বত সত্যভূমিতে প্রতিষ্ঠিত সভ্যতারও সে অধিকারী। তিনি চাইতেন, ভারতবাসী সাহসভরে ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে সসম্মানে বিদেশীদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করুক।

বিবেকানন্দের মতে ত্যাগ ও বৈরাগ্যই ভারতের চিরন্তন আদর্শ। তিনি ভারতের ইতিহাসে সমাজ সেবার এক নতুন অধ্যায় রচনা করেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রদর্শিত শিবজ্ঞানে জীবসেবার উদ্দেশ্যে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন (১৮৭৯ খ্রী) প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে সফল কথ্যভাষায় তিনি অন্যতম প্রথম প্রচারক। তাঁর মূল ইংরেজী ও বাংলা রচনাবলী বহু অনুদিত হয়েছে।

১৮৯৯ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসে তিনি আবার পাশ্চাত্য দেশে যান এবং আগের বারের মতই প্রচারে সফলতা লাভ করেন। বিদেশে কয়েকটি স্থায়ী বেদান্ত কেন্দ্র স্থাপন করে ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের শেষে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দের ৪ জুলাই বেলুড় মঠে তিনি দেহত্যাগ করেন।

বিবেকানন্দ বহু বই লিখেছিলেন। তাঁর সমগ্র ইংরেজী রচনাবলী আট খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রধান বইগুলি হলঃ 'পরিব্রাজক' (১৯০৩ খ্রী); 'ভাববার কথা' (১৯০৫ খ্রী); 'বর্তমান ভারত' (১৯০৫ খ্রী); 'প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য'; Karmayoga; Rajayoga; Jnanayoga; Bhaktoyoga।

- গল্পকবিতা ডেক্স

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Shyamal Som অভিনন্দন আপনাকে, এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব মহান দেশ বিশ্ব প্রেমিক, যিনি পৃথিবীর মানুষদের সাবধান, সতর্ক করেছিলেন বহু বহু যুগ আগে ক্ষমতা প্রদর্শনের এই যুদ্ধ যুদ্ধ প্রতিযোগী বন্ধ হোক। ধন্যবাদ আপনাকে।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

মার্চ ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i