কবি হাবীবুর রহমান অধুনা প্রায় বিস্মৃত একটি নাম। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে তিনি বিপুল খ্যাতি পেয়েছিলেন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে। শিশুসংগঠক হিসেবেও ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। তাঁর হাতে গড়া খেলাঘর আসর এখন দেশের অন্যতম প্রধান শিশুসংগঠন। দৈনিক সংবাদের ছোটদের সাহিত্য পাতা ‘খেলাঘর’-এর তিনিই প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘ভাইয়া’ নামে তা পরিচালনা করতেন। তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে প্রবর্তন করা হয়েছে ‘কবি হাবীবুর রহমান সাহিত্য পুরস্কার’।
তাঁর জন্ম ১৯২৩ সালের ১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে। ১৯৪০ সালে কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে; কিন্তু আর্থিক সঙ্কটের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৩ সালে তিনি আসানসোলের কয়লাখনিতে শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কিছু দিন কলকাতা মডেল হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি বিখ্যাত পত্রিকা দৈনিক আজাদে যোগ দেন। এ বছরই দেশ বিভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন। দৈনিক আজাদ স্থানান্তরিত হলে ১৯৪৮ সালে তিনি ওই পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। তারপর একে একে দৈনিক সংবাদ, সাপ্তাহিক কাফেলা, মাসিক সওগাত, মহিলাদের সাপ্তাহিক বেগমসহ পত্রপত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পত্রপত্রিকায় কাজ করা ছাড়াও তিনি দেশী-বিদেশী অনেক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৫-৫৬ সালে তিনি মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা ‘সিলভার বার্ডেট কোম্পানি’; ১৯৫৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ‘ইউসিস’ এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ‘ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামস’-এর বাংলা বইয়ের অনুবাদ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক পদে। অন্য দিকে তিনি দৈনিক আজাদের ছোটদের পাতা ‘মুকুলের মাহফিল’ পরিচালনা করেছেন ‘বাগবান’ নামে। হাবীবুর রহমান সৃষ্টিশীল লেখক হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুন তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।
তিনি কবিতা, শিশুসাহিত্য, উপন্যাস, রূপকথা ও জীবনীগ্রন্থসহ সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হলো- কাব্যগ্রন্থ : উপাত্ত (১৯৬২)। শিশুসাহিত্য : আগডুম-বাগডুম (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৬২); সাগর পারের রূপকথা (১৯৬২); বিজন বনের রাজকন্যা (১৯৬১); লেজ দিয়ে যায় চেনা (১৯৬৩); বনে বাদাড়ে (১৯৬৩); পুতুলের মিউজিয়াম (১৯৬৩); গল্পের ফুলঝুরি (১৯৬৩); হীরা মতি পান্না (১৯৬৭); বনমোরগের বাসা (১৯৭৫)। অনুবাদ : চীনা প্রেমের গল্প (১৯৬২); জন কেনেডি (১৯৬২); জীবনের জয়গান (১৯৬২); পাল তুলে দাও (১৯৬২)। সম্পাদনা : কিশোর সঙ্কলন সপ্তডিঙ্গা (১৯৬২)। হাবীবুর রহমান শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন সংগঠনের সাথেও যুক্ত ছিলেন। তার রচিত গীতিনাট্য ও নাটক বেতার, টেলিভিশন ও মঞ্চে বহুবার পরিবেশিত ও অভিনীত হয়েছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।