বিধাতা বোধ হয় মাঝে মাঝে বেশ রসিকতা করে ফেলেন। এই যে আমি পাঁচ ফিট সাত ইঞ্চি উচ্চতার একজন পুরুষ মানুষ, ওজনটা দিয়েছেন মাত্র পয়তাল্লিশ কেজি। কোন ভাবেই শরীরে মেদ জমছে না। কেমন দেখায় বলুনতো! তাও মেনে নেয়া যেত যদি দেখতে ভাল হতাম, যাকে বলে গুড লুকিং। কোন মেয়ে একবার দেখার পর আবার ফিরে তাকাবে সে আশা বুঝ হবার পর থেকেই করি না। কিন্তু কিছু দিন হল বিধাতার প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই বরং অবাক হয়ে ভাবি তার খেলার কথা-
টিট টিট হর্ণ দিয়ে সাই করে একটা মটরবাইক প্রায় গা ঘেষে চলে যায়। ভাবতে ভাবতে কখন রাস্তায় নেমে গেছি খেয়ালই করিনি। মটরবাইকে সুদর্শন এক যুবক সম্ভবত তার প্রেমিকাকে পেছনে বসিয়ে কোথাও যাচ্ছে। লোভ হয় অমন একটা বাইক যদি আমারও থাকতো! আচ্ছা কোথায় যেতে পারে ওরা? আবার আনমনেই হেসে ফেলি।
আজ ১৪ফেব্রুয়ারী। কিছু পত্রিকার কল্যাণে এ দেশেও এই দিনটা প্রেমিককুল তাদের নিজের করে নিয়েছে। আগে খুব জিদ লাগতো এই দিনটার কথা মনে হলে, আজ ভালই লাগছে। আমার ভেতর এই ভাল লাগাটা এনে দিয়েছে স্বপ্ন, আমার প্রেমিকা। সুন্দর বলে অনায়াসেই আলাদা করে চেনা যায় তাকে। হ্যা আমাকেও কেউ ভালবাসে, তাই বিধাতার প্রতি কোন অভিযোগ নেই আমার বরং কৃতজ্ঞতার পারদটা উপরেই চড়েছে।
শাহবাগের ফুলের দোকান গুলোতে আজ কোন কথা বলার সুযোগ নেই। বাসি-পান্তা ফুলও বোধ হয় থাকবে না। আমি হন্যে হয়ে সাদা গোলাপ খুজছি। এমনিতেই ফুলের বাজারে সাদা গোলাপের কদর নেই তাও এমন দিনে পাব বলে মনে হচ্ছে না। স্বপ্ন লাল রংটা পছন্দ করে না। ওর কথা হল, “লাল হচ্ছে বিপ্লবের প্রতীক, রক্তের রং। এই রংটা নিয়ে মাতামাতিটা কি ঠিক!”
আজ যখন সবাই বাসন্তি রংয়ের শাড়ী পড়ে আসবে আমি নিশ্চিত স্বপ্ন আসবে আকাশী জমিনে সাদা সুতোর কাজে জামদানী পড়ে। আমারও তাই এই রংয়ের পাঞ্জাবী পড়ে বেরুতে হয়েছে। ভীড়ের মাঝে কেমন বেখাপ্পা লাগবে! ঠিক আমার সাইজ আর গড়ণের মতো- তাই ভাবছি।
যাক্ শেষ পর্যন্ত ফুল পাওয়া গেছে। বেশ কিছু ফুল হাতে নিয়ে টিএসসির দিকে হাটতে থাকি। রাস্তা পুরোই কপোত কপোতীদের দখলে। গাড়ি যাও দুএকটা যাচ্ছে তাও পিঁপড়ের মতো। পূর্বের কথামতো স্বপ্ন রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাড়িয়ে। হাতে থাকা গোলাপগুলো ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম। সে হাত পেতে নিল না, মাথাটা কাত করে মাথায় গুজে দিতে বলল। আমি ফিসফিসিয়ে বললাম-
স্বপ্ন কেন হয় সাদাকালো
বলনা তুমি আমায় বলো
ভালবাসার ঐ রঙিন ডালে
সাদাকালো সে স্বপ্ন দোলে
পাব কি সেই রংয়ের দেখা
যেথা ভালবাসার নামটি লেখা।
আমার ভেতর স্বপ্ন ছোয়ার মায়াবী আকর্ষণ দোলা দিয়ে যায়। স্বপ্নের কানের পাশে ফুল গুজে দিলাম, বাকিগুলো তুলে দিলাম ওর হাতে। আমার ঘনিষ্ট হয়ে দুহাতে আমার বাহু জড়িয়ে ধরে বলল, “চল একটু হাটি”। নিজেকে জগতের সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হতে থাকল।
ভীড় এড়িয়ে আমরা হেটে যাচ্ছি ফুলার রোড ধরে। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা মটরবাইক আমাকে পিছনে রেখে চলে যায়, হ্যা ওই যুবকটাইতো! যে তার প্রেমিকাকে নিয়ে বেরিয়েছে। আমি আড়ষ্ট হয়ে থাকি, আমার বাহুতে কারো অস্তিত্ব খুজি। নাহ্ নেইতো! সবকিছু ঠিকই আছে শুধু স্বপ্ন পড়ে আছে পিচঢালা মসৃণ সড়কে। ওর চুলে গুজে দেয়া সাদা গোলাপগুলো মাথার রক্তে লাল হয়ে গেছে। নীল শাড়িতে ছোপ ছোপ রক্তের লালিমা ছড়িয়ে আছে, যে রংটা ওর পছন্দ হতো না।
ঘোলাটে চোখে দেখতে পাচ্ছি সবাই কি আমোদে হেটে যাচ্ছে, সুরেলা গান ভেসে আসছে দূর থেকে। গাছের ডালে বসে পাখিরাও গাইছে। ঐ দূর আকাশ থেকে বিধাতাও কি একটু মুচকি হাসলেন আমায় মনে করে? আমি কিছু ভাবতে পারছিনা। নিথর স্বপ্নের মাথাটা কোলে নিয়ে বসে আছি। বুক ফাটা আর্তনাদে চিৎকার করে কাঁদছি, কিন্ত আমার চিৎকার কারো হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে না। চারদিক অন্ধকার করে দিয়ে আমার পৃথিবী ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।