সংঘবদ্ধ লেখকশক্তি ও সমসাময়িকতা-২

আহমাদ মুকুল
১৬ ফেব্রুয়ারী,২০১২

সুস্থ্য প্রতিযোগিতা অনেকটা এরকম- একটি ভ্রমণ কাহিনী পড়ে মুগ্ধ হয়ে আরেক লেখক একটি ভ্রমণকাহিনী লিখলেন। তার মুখবন্ধে লিখলেন-‘‘ওমুক লেখকের তমুক বইটি পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই লেখা….।’’ এই ‘উদ্বুদ্ধ’ শব্দটি মেকি। আসলে এটার আড়ালে রয়েছে, আগের লেখকের প্রতি ঈর্ষা, অতিক্রম করে যাবার আকাংখা। এ ধরণের প্রতিযোগিতা মহৎ বিষয়। এটা নিজের ভেতরের শক্তিকে জাগরিত করে।

 

সংঘবদ্ধ লেখায় এই প্রতিযোগিতাবোধ লেখায় গতিময়তা আনবে। তবে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে এই সংঘবদ্ধতা সম্ভব কিনা প্রশ্নসাপেক্ষ। সংঘবদ্ধতা আসে প্রাণে প্রাণে, জীবনে জীবনে, মানুষে মানুষে, উত্তাপে উত্তাপে। যন্ত্রের বিকাশে পৃথিবী ভার্চুয়াল হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্র মানুষের কাজ করছে, আমরা তাই আজকাল প্রায়শঃই বাস্তব মানুষ নই, ভার্চুয়াল কিংবা অ্যাবস্ট্রাক্ট।

 

….এখন টাকা দিয়ে টাকা বানানো যায়। যেমন আমেরিকার বাজারে যা বিক্রি হয়, তার কোনটাই আমেরিকায় উৎপাদিত নয়। তাদের টাকায় বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত জিনিস তাদের বাজারে চলে। এই ব্যবস্থা টিকতে পারে না। কারণ যেখানে মানুষের শ্রম, রক্ত, ঘাম, আত্মোৎসর্গ নেই, সেখানে গুণগত আয়ু বাড়তে পারে না।

 

ভার্চুয়াল জগতে বন্ধু হওয়া সম্ভব। কিন্তু স্পর্শ, উষ্ণতা ছাড়া ওটা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম। আনন্দ, স্বপ্ন বিনিময়, পাগলামী, উন্মত্ততা-এগুলো পাশাপাশি সশরীরে উপস্থিতি ব্যতিত সম্ভব নয়। পাশাপাশি বসে অকারণে আড্ডা দেয়ারও একটা শক্তি আছে। হৃদয়ে হৃদয়ে অনুভুতির বিনিময়, কম্পিউটারে বসে প্রযুক্তির সুযোগে যতই কাছে আসা যাক, এই কৃত্রিম জগতে তা সম্ভব নয়।

 

বইও একটি ভার্চুয়াল বিষয়। পুরণো যুগের ভার্চুয়াল। জীবন, জ্ঞান, বোধ, চিন্তাকে জীবন্ত করার চেষ্টা করা হয় এই বইয়ের মাধ্যমে। প্রত্যেক যুগেরই একটি সায়েন্স আছে। একটা যুগে যেটা বিশ্বাস ছিল, এখন সেটা সায়েন্স, ব্যাখ্যাটা হয়তো ভিন্ন। এক সময়ে যেটা ছিল মানুষের বিজ্ঞান, পরবর্তী সময়ে হয়তো সেটা হয়ে গেছে ধর্মবিশ্বাস। তাই অনেকে বলে থাকেন, ‘‘রিলিজিয়ন ইজ ডেড সায়েন্স”। বিজ্ঞান যখন মরে যায়, কিংবা ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়, তখন তা ধর্মের আড়ালে চলে আসে।

 

যুদ্ধে যেমন দামামা লাগে, লাগে রণনিনাদ, সংঘেও তেমন জোশ উদ্দীপক কিছু উপাদান প্রয়োজন। আন্দোলন প্রয়োজন। প্রাণের জাগরণ দরকার। তাই এখানে এমন কিছু মাঝে মাঝে করে ফেলতে হয়, যাতে জাগরণ আসে সমষ্টির শক্তিতে।

 

‘‘মিলতা হ্যায় কেয়া নামাজ’মে, সেজদা’মে যা’কে দেখ’’। অর্থাৎ পরিপূর্ণ আত্মনিবেদন এবং সমর্পণ ছাড়া কোনকিছু হাসিল হয় না। পৃথিবীতে কোন কাজ আধা হয় না, লেখাতেও জীবনের সম্পূর্ণটা দিতে পারলে হয়তো ফলটা একদিন পাওয়া যাবে। লেখাকে ফ্যাশন হিসেবে নিলে চলবে না। ‘‘জীবনে জীবন যোগ করা….নাহলে কৃত্রিম পণ্য…….।

 

সাধনা প্রয়োজন। সাধনা শব্দটি উঠে যাচ্ছে। নগদ প্রাপ্তিযোগ এবং সংক্ষিপ্ত পথ- এটাই যুগের আপ্তবাক্য। আজকাল কোন আর্কিটেকচার নেই, প্রতিযোগিতা হচ্ছে কে কত উঁচু! কে কার চেয়ে বড়, ক্ষমতাবান, কে কার চেয়ে ঐশ্বর্যময়। মহৎ, গভীর, সুন্দর- এইসব গুণে প্রতিযোগিতা দরকার।

 

অতি সাম্প্রতিকতায় ভর করে সুপারফিসিয়াল, একরৈখিক মানুষ হওয়ার চেয়ে চিন্তাটা একটু পেছন থেকে টানলে ক্ষতি নেই। রবি ঠাকুরের উক্তি, ‘‘ফ্যাশন হলো মুখোস আর স্টাইল হলো মুখশ্রী’’। ফ্যাশনে গা না ভাসিয়ে নিজের স্টাইলে চলতে হবে। সাধনার চেহারা কেমন? একটা উদাহরণ বলা যায়, এক চলচ্চিত্রে প্রেমে ব্যর্থ এক মানুষের একদিকে হেঁটে চলা (ছবিটির নাম ‘Forest Gump’, তথ্যঃ মামুন ম. আজিজ)। এরকম ছোট কিছু করেও সবার নজর কাড়া যায়। লেখকদের কাছে আশা, আরো বড় কিছু। ব্যতিক্রমী কিছু।

 

(১১/০২/১২ খ্রি. তারিখে ‘সংকাশ’ এর প্রথম প্রয়াস ‘নৈঃশব্দ্যের শব্দযাত্রা’র মোড়ক উন্মোচন সভায় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্য হতে কিছুটা দুর্বল স্মৃতি, কিছুটা মোবাইল রেকর্ডিংয়ের সহায়তায় তৈরি নিবন্ধ)

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পাঁচ হাজার অনেকগুলো সত্য কথা জানতে পারলাম। একটুকরা স্বপ্নের মতো মনে হলো। মনে হলো আমি স্যারের সামনে বসেই শুনলাম। ধন্যবাদ মুকুল ভাইকে।
রনীল N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# আজকাল সবকিছু এতো নগদে মিলে যাচ্ছে যে মানুষ আর সাধনা করার প্রয়োজন বোধ করেনা... সবাই শুধু উপরের দিকেই যেতে চায়, ভেতরের গভীরতা নিয়ে কেউ আর ভাবেনা। স্যারের কথাগুলো সেদিন মনে খুব দাগ কেটেছিল। লিখিতরুপে উপস্থাপন করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আহমাদ মুকুল নিবন্ধ প্রবন্ধ কখনো লিখিনি। সুযোগটা নিলাম। ধন্যবাদ তোমাকে, রনীল।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা সুন্দর একটি পোস্ট দেয়ায় মুকুল ভাইকে অভিনন্দন।
আহমাদ মুকুল ধন্যবাদ রানা।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i